Ajker Patrika

সিলেটে চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে খাবার পানি

নাজমুল হাসান সাগর, সিলেট থেকে
আপডেট : ২২ মে ২০২২, ১২: ১৬
সিলেটে চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে খাবার পানি

সকাল সাড়ে ৯টা। হালকা রোদের আবেশী ভাব কাটেনি তখনো। বন্যাকবলিত সিলেটের রাস্তা-ঘাটে লাগেনি নাগরিক ব্যস্ততা। মূল সড়কগুলোতে টুকটাক সিএনজি আর রিকশা চলছে। সেসবে যাতায়াত যারা করছেন তাদের অধিকাংশই চাকুরে। 

দেশের অন্যান্য বিভাগীয় শহরগুলোর সঙ্গে এই পর্যটন নগরীর মূল পার্থক্য—এই শহরের মানুষ ঘুম থেকে ওঠে দেরিতে। তাই বলা হয়, সিলেট শহর জাগে দেরিতে। সকালে নগরীর মিরের ময়দান পয়েন্ট থেকে তালতলা হয়ে বন্দর এলাকার জেলা প্রশাসনের কার্যালয় পর্যন্ত সড়ক ছিলো সুনসান। কিছু ভবঘুরে, হাতে গোনা ত্রাণ প্রত্যাশী মানুষ ও দুজন স্থানীয় টেলিভিশন সংবাদ কর্মী ছাড়া আর তেমন কাউকে দেখা গেল না এই পথে। তালতলা পয়েন্টের সড়কগুলোতে এখনো পানি থাকায় সেখানে দোকানপাটও খুব বেশি খোলা হয়নি। দুই একটি যা খোলা হয়েছে, সেগুলোর পানি কতটুকু কমেছে তা দেখার জন্য। 

তালতলা পয়েন্টের সুফিয়া মেনশনের অদূরেই দেখা মিলল বিশেষভাবে বানানো ঠেলা গাড়ির। সেখানে আঠারোটি টিনের বাক্স বিশেষভাবে বসানো। সেসব বাক্সে ভরা হচ্ছে বিশুদ্ধ পানি। পানি ভরছেন সাইফুল ইসলাম। তিনি একজন পেশাদার পানি বিক্রেতা। কথা বলে জানা গেলো, বন্যার কারণে শহরের অধিকাংশ বিশুদ্ধ পানির লাইন নষ্ট। তাই খাবার পানির সরবরাহ না থাকায় ব্যবসায়িক ব্যস্ততা বেড়েছে। স্বাভাবিক সময়ে নির্দিষ্ট কিছু হোটেল ও রেস্টুরেন্টে পানি সরবরাহ করলেও এখন সেই হোটেল ও রেস্টুরেন্টের সংখ্যা অনেক বেড়েছে। সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বাসা-বাড়িতে পানি সরবরাহের কাজ। 

সাইফুল ইসলাম বলেন, আগে যদি ১০ গাড়ি পানি বিক্রি করতাম এখন সেখানে ২০ গাড়ি বিক্রি করছি। চাহিদা এর থেকে বেশি হলেও, আমার একার পক্ষে তা পূরণ করা সম্ভব না। চাহিদা যেহেতু বাড়ছে তাই দামও তো বেড়েছে? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ, আগে এক গাড়ি পানি ১০০ টাকা বিক্রি করতাম এখন দেড় শ টাকা বিক্রি করি। কখনো ২০০ টাকাও বিক্রি করি। সময়, জায়গা আর কাস্টমারের ওপর নির্ভর করে দামটা।’ 

সাইফুল যে গভীর নলকূপ থেকে পানি নেন সেই নলকূপের মালিককে দিনে দিতে হয় ৮০০ টাকা। বিনিময়ে সারা দিন সে পানি নিতে পারবে। কোন বাধা ধরা পরিমাণ নেই। দিনে দেড় হাজার টাকার মতো পানি বিক্রি করেন তিনি। এতে করে চুক্তির টাকা বাদ দিলে তার ৪০০ থেকে ৭০০ টাকা টিকে দিন শেষে। 

সকাল সাড়ে ৯টার দিকে ছবিগুলো তালতলা পয়েন্ট থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকাবন্যাকবলিত অসহায় নগরবাসী বাধ্য হয়েই কিনছেন ঠেলায় টানা এসব পানি। তাঁদের একজন তালতলারই বাসিন্দা নজরুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘দাম বেশি হলেও পানি কিনে খেতে হবে। পানির তো কোন বিকল্প নেই। তবে বাসার কাছে হওয়ায় আমরা কমদামেই কিনতেছি। মাঝে মাঝে দুই, এক বালতি পানি এই নলকূপ থেকে ফ্রীতেও নেই।’ 

বন্যার কারণে সিলেট নগরবাসী যেসব সমস্যার মুখোমুখি হয়েছেন তার অন্যতম হলো বিশুদ্ধ পানি। পানির অভাবে ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা বাড়ছে নগরীর হাসপাতালগুলোতে। অনেক ভাড়াটিয়া বাসিন্দারা শহর ছাড়ছেন শুধু বিশুদ্ধ পানির অভাবে। খাবার পানির সংকটের পাশাপাশি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে নানা পানিবাহিত রোগ। 

খাবার পানির সংকট চরমে বিষয়টি স্বীকার করেছেন সিলেট জেলা প্রশাসক মো. মজিবুর রহমান। এই সংকট মোকাবিলায় নানা পদক্ষেপও নেওয়া হয়েছে। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সিলেটের বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। তবে প্লাবিত এলাকাগুলো থেকে পানি এখনো নামেনি। সরকার বন্যার্তদের সব ধরনের সহায়তা দিচ্ছে। আমাদের জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগ ও স্বাস্থ্য বিভাগ পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট বিতরণ করছে। সেই সঙ্গে বিশুদ্ধ পানি সংরক্ষণের জন্য বিভিন্ন পাত্র বিতরণ করছে আশ্রয় কেন্দ্রসহ পানিবন্দী এলাকায়। দেওয়া হচ্ছে খাবার স্যালাইনও। আমরা প্রস্তুত আছি। বন্যা মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় যা যা পদক্ষেপ দরকার তার সবই আমরা গ্রহণ করব।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

তেহরান ওপর থেকে সুন্দর, একদিন যেতে চাই: ইরানে বোমা ফেলা ইসরায়েলি পাইলট

ইরানের পরমাণু কর্মসূচিতে ৩০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের কথা ভাবছেন ট্রাম্প

জুলাই অভ্যুত্থান: নিজেদের মামলা তদন্তে ‘বেশি সতর্ক’ পুলিশ

সাইপ্রাসে বিপুল জমি কিনছে ইসরায়েলিরা, দেশ বেদখলের শঙ্কা রাজনীতিবিদদের

অনুকূল পরিবেশে বাংলাদেশের সঙ্গে সব বিষয়ে কাজ করতে প্রস্তুত ভারত: রণধীর জয়সওয়াল

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত