Ajker Patrika

উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে ২১ ঘণ্টা ধরে অনশনে শাবিপ্রবি শিক্ষার্থীরা

শাবিপ্রবি প্রতিনিধি
আপডেট : ২০ জানুয়ারি ২০২২, ১৩: ৫২
উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে ২১ ঘণ্টা ধরে অনশনে শাবিপ্রবি শিক্ষার্থীরা

উপাচার্যের পদত্যাগ দাবিতে ২১ ঘণ্টা ধরে অনশনে আছেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। এখনো পর্যন্ত পদত্যাগ নিয়ে কোনো সদুত্তর না আসায় অনশন চালিয়ে যাচ্ছেন তাঁরা। এদিকে দীর্ঘ সময় অনশনে থাকায় অনেক শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। গতকাল বুধবার রাতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের দুজনকে রাগিব রাবেয়া মেডিকেলে ভর্তি করা হয়। 

গতকাল বুধবার দুপুর ২টা ৫০ মিনিটের দিকে স্বেচ্ছায় অনশন শুরু করেন তাঁরা। অনশনকারী শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছাত্রী ৯ জন ও ছাত্র ১৫ জন।

আজ বেলা ১১টায় অনশনরত শিক্ষার্থীদের মেডিকেল চেকআপ করানো হয়েছে। এরপর সাড়ে ১১টায় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলন করা হয়। এতে আন্দোলনের শুরু থেকে আজ পর্যন্ত ঘটনা পাঠ করে শোনান তাঁরা। 

সরকারে পক্ষ থেকে কোনো তদন্ত কমিটি করা হলে তারা মেনে নেবেন কি না—এমন প্রশ্ন করা হলে তাঁরা বলেন, এখন তাঁরা সেই পরিস্থিতিতে নেই। তাঁদের একটাই দাবি, উপাচার্যের পদত্যাগ। 

কিন্তু গতকাল রাতে শতাধিক সিনিয়র শিক্ষক তাঁদের সঙ্গে কথা বলতে আসেন। কিন্তু দীর্ঘ আড়াই ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকেও কোনো সম্মতি না দেওয়ায় তাঁরা ব্যর্থ হয়ে ফিরে যান।  

এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ারুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা এসেছিলাম আমাদের শিক্ষার্থীদের অনশন ভাঙাতে। আমরা তাদের কাছে সেই সময়টুকু চেয়েছি, যেন এ ঘটনার পেছনে কারা জড়িত সেটা খুঁজে বের করতে পারি। শিক্ষার্থীরা আমাদের ওই সুযোগটা দেয়নি। আমরা আবার চেষ্টা করব, যেন তাদের বোঝাতে পারি।’ 

এ সময় শিক্ষকেরা আন্দোলনস্থলে উপস্থিত হলে শিক্ষার্থীদের স্লোগানে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে ক্যাম্পাস। শিক্ষার্থীরা শিক্ষকদের কাছে এক দফা দাবির সঙ্গে একমত কি না, তা ‘হ্যাঁ’ অথবা ‘না’—এই দুটির যেকোনো একটি জানতে চান। 

আমরণ অনশনে অংশগ্রহণ করা শিক্ষার্থীরাশিক্ষার্থীরা বলেন, ‘যদি আপনারা আমাদের এক দফা দাবির সঙ্গে একমত পোষণ করেন, তাহলে আমরা আপনাদের সঙ্গে কথা বলব। এ ছাড়া আমরা আপনাদের সঙ্গে কোনো ধরনের কথা বলতে রাজি নই।’ 

শিক্ষকদের কথা বলার সুযোগ কেন দেওয়া হচ্ছে না—এ বিষয়ে জানতে চাইলে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা জানান, তাঁদের দাবির সঙ্গে শিক্ষকেরা একাত্মতা পোষণ করছেন না। তাঁদের দাবির সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করলেই তাঁরা সব ধরনের আলোচনায় বসবেন। 

উল্লেখ্য, বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগে শাবিপ্রবির একটি আবাসিক হলের প্রভোস্ট সহযোগী অধ্যাপক জাফরিন আহমেদ লিজার পদত্যাগসহ তিন দফা দাবিতে আন্দোলন করে আসছিলেন শিক্ষার্থীরা। গত শনিবার রাতে আন্দোলনরতদের ওপরে হামলার অভিযোগ ওঠে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে। পরদিন হামলার বিচারের দাবিতে শিক্ষার্থীরা ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে সড়ক অবরোধ করেন।

রোববার বিকেলে উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ কার্যালয় থেকে বের হলে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ক্ষোভের মুখে পড়েন। এ সময় শিক্ষার্থীরা উপাচার্যকে অবরুদ্ধ করে রাখলে পুলিশ এসে তাদের লাঠিপেটা করে। পুলিশ রাবার বুলেট, টিয়ার শেল ও সাউন্ড গ্রেনেডও নিক্ষেপ করে। এতে অন্তত ৫০ জন শিক্ষার্থীসহ অনেকে আহত হন। এ ঘটনার পর অনির্দিষ্টকালের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়।

এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগের জন্য বুধবার বেলা ১২টা পর্যন্ত সময় বেঁধে দেন শিক্ষার্থীরা। কিন্তু নির্দিষ্ট সময়ে পদত্যাগ না করায় গতকাল থেকে অনশনে বসেন তাঁরা।

শাবিপ্রবি সম্পর্কিত আরও পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ঢাবি ছাত্রদল নেতা সাম্য হত্যা মামলার অভিযোগপত্রে যা বলেছে ডিবি

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
শাহরিয়ার আলম সাম্য। ছবি: সংগৃহীত
শাহরিয়ার আলম সাম্য। ছবি: সংগৃহীত

গত ১৩ মে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ছুরিকাঘাতে নিহত হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) শাখা ছাত্রদল নেতা শাহরিয়ার আলম সাম্য। এ ঘটনায় করা হত্যা মামলায় সাতজনকে অভিযুক্ত করে গত বৃহস্পতিবার ঢাকার চিফ ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে অভিযোগপত্র জমা দিয়েছে তদন্তের দায়িত্বে থাকা পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)। অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গাঁজা বিক্রি করতে নিষেধ করায় সাম্যকে ছুরিকাঘাত করা হয়।

অভিযোগপত্রভুক্ত আসামিরা হলেন—মেহেদী হাসান, মো. রাব্বি ওরফে কবুতর রাব্বি, মো. রিপন ওরফে আকাশ, নাহিদ হাসান পাপেল, মো. হৃদয় ইসলাম, মো. হারুন অর রশিদ সোহাগ ওরফে লম্বু সোহাগ ও মো. রবিন। অভিযুক্তদের সবাই মাদক কারবারি বলে অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে।

আর অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় অভিযোগপত্রে চারজনকে অব্যাহতির সুপারিশ করা হয়েছে। অব্যাহতির সুপারিশ পাওয়া চারজন হলেন—তামিম হাওলাদার, সম্রাট মল্লিক, পলাশ সরদার ও সুজন সরকার।

উল্লেখ্য, গত ১৩ মে রাত সাড়ে ১১টার দিকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ভেতর ছুরিকাঘাতে আহত হন সাম্য। রাত ১২টার দিকে রক্তাক্ত অবস্থায় বন্ধুরা সাম্যকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।

সাম্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটে পড়তেন। ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের এই শিক্ষার্থী এ এফ রহমান হলের আবাসিক ছাত্র ছিলেন। একই হলে ছাত্রদলের সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক ছিলেন তিনি। তার বাড়ি সিরাজগঞ্জের বেলকুচিতে।

এ ঘটনায় ১৪ মে সকালে সাম্যর বড় ভাই শরীফুল ইসলাম শাহবাগ থানায় ১০ থেকে ১২ জনকে আসামি করে মামলা করেন।

অভিযোগপত্রে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) উল্লেখ করেছে, অভিযুক্ত মেহেদী, রিপন, কবুতর রাব্বি, পাপেল, হৃদয়, রবিন, সোহাগরা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে চিহ্নিত মাদক বিক্রেতা। মেহেদীর নেতৃত্বে উদ্যানে কার্যক্রম চালায় তারা। মেহেদীর কাছ থেকে গাঁজা নিয়ে বাকিরা উদ্যানের মন্দির গেট এলাকায় বিক্রি করত। বিক্রি শেষে সব টাকা মেহেদীর কাছে জমা দেওয়া হতো। ঘটনার আগে রিপন ও রাব্বি মেহেদীকে ঠিকমতো টাকা না দিয়ে বলে— কিছু মাস্তান তাদের গাঁজা বিক্রির টাকা জোর করে নিয়ে গেছে, এ কারণে তারা গাঁজা বিক্রির টাকা নিয়মিত জমা দিতে পারছে না। এ পরিস্থিতিতে মেহেদী সবাইকে এক হয়ে ওই মাস্তানদের প্রতিহত করার কথা বলে। কয়েকজনকে সুইচ গিয়ার (চাকু) ও ইলেকট্রিক টেজারগান কিনে দেয়। সাম্য ও তাঁর বন্ধুরা মেহেদী, কবুতর রাব্বি ও রিপনদের উদ্যানে গাঁজা বিক্রি করতে নিষেধ করেছিলেন। এ থেকে তাঁদের মধ্যে শত্রুতার সৃষ্টি হয়।

অভিযোগপত্রে আরও বলা হয়েছে, প্রতিদিনের মতো ঘটনার দিন ১৩ মে রাতে কবুতর রাব্বি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মুক্তমঞ্চের কাছে গাঁজা বিক্রি করছিল। তার কাছে সে সময় একটি টেজারগান ছিল। কবুতর রাব্বি টেজারগান এবং সুইচ গিয়ার নিয়ে সব সময় চলাফেরা করত ও মাদক বিক্রি করত। কবুতর রাব্বির সঙ্গে পাপেল ও রিপন সব সময় থাকত। ওই রাতে সাম্য দুই বন্ধুকে নিয়ে মোটরসাইকেলে মুক্তমঞ্চের দিকে গেলে কবুতর রাব্বির হাতে ইলেকট্রিক টেজারগান দেখতে পেয়ে তাকে থামতে বলেন।

রাব্বি তখন মুক্তমঞ্চ থেকে ৩০-৩৫ গজ দূরে ঘটনাস্থল গোলপুকুরের (পুরাতন ফোয়ারা) দিকে দৌড় দেয়। সাম্য মোটরসাইকেলে চড়ে তাকে ধাওয়া করে ধরে ফেলে এবং টেজারগানটি কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। টেজারগানটি না দিলে সাম্য রাব্বিকে চড়-থাপ্পর মারেন। রাব্বির চিৎকারে পাপেল, মন্দিরের পাশে ক্যান্টিন থেকে রিপন, মেহেদী, সোহাগ, হৃদয় ও রবিনরা ঘটনাস্থলে এগিয়ে এলে সাম্য ও তাঁর বন্ধুদের সঙ্গে হাতাহাতি হয়। তাঁদের ধস্তাধস্তিতে ঘটনাস্থলে আগে থেকে দাঁড়িয়ে থাকা এক ব্যক্তির মোটরসাইকেল পড়ে গিয়ে লুকিং গ্লাস ভেঙে যায়। তখন ওই মোটরসাইকেলের আরোহী একজন (পলাশ সর্দার) তাদের অন্যত্র গিয়ে মারামারি করতে বলেন। মেহেদী মোটরসাইকেলের সেই ব্যক্তিকে (পলাশ) চোখে-মুখে ঘুষি মেরে অজ্ঞান করে ফেলে। তা দেখে তাঁদের সঙ্গে থাকা অপর একজন (সম্রাট মল্লিক) এগিয়ে গেলে মেহেদী তার কাছে থাকা সুইচ গিয়ার (চাকু) দিয়ে তাঁর ডান পায়ের উরুতে ছুরিকাঘাত করে, এতে তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন।

একই সময়ে সাম্যর সঙ্গে হাতাহাতি করতে থাকা পাপেলকে ছাড়িয়ে নিতে মেহেদী সাম্যর বুকে ঘুষি মারে এবং কবুতর রাব্বির কাছে থাকা সুইচ গিয়ার (চাকু) দিয়ে সাম্যর ডান পায়ের রানে আঘাত করে। এতে সাম্য মাটিতে লুটিয়ে পড়েন।

সাম্যর বন্ধুদের (রাফি, বায়েজিদ) সঙ্গে মোটরসাইকেলের অপর ব্যক্তির মারামারি চলাকালে সবার চিৎকারে মন্দিরের ভেতরে থাকা লোকজন এগিয়ে এলে এবং আশপাশের আরও লোকজন ঘটনাস্থলের দিকে আসতে থাকলে আসামিরা দক্ষিণ দিকে দৌড়ে পালিয়ে যায়। মন্দিরের প্রবেশ গেটের কাছে আগে থেকেই রাখা একটি মোটরসাইকেলে করে কবুতর রাব্বিকে নিয়ে মন্দিরের উত্তর পূর্ব পাশের পেছন দিকে মেহেদীর আস্তানায় পালিয়ে যায় রিপন।

মামলার অভিযোগপত্রে আরও বলা হয়, অব্যাহতির সুপারিশ পাওয়া সুজন সরকারের সঙ্গে থাকা অপর লোকজন ঘটনাস্থলে এসে সাম্যকে রক্তাক্ত অবস্থায় মাটিতে পড়ে থাকতে দেখে। তারা সাম্যর বন্ধুদের তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলে। পরে সুজন সরকার মিডিয়ার মাধ্যমে জানতে পারেন সাম্য মারা গেছেন। তখন ফেসবুক লাইভে এসে জানান, সাম্যর বন্ধুরা যদি দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যেত তাহলে এত রক্তক্ষরণে সাম্য মারা যেতেন না। ওই লাইভ পরে ভাইরাল হয়। কিন্তু মারামারির সময় ঘটনাস্থলে তাঁর উপস্থিতি ছিল না। আসামিদের সঙ্গে তাঁর কোনো পূর্ব পরিচিতি বা যোগসূত্র ছিল বলে প্রমাণ পাওয়া যায়নি। সুজন সরকার তাঁর গ্রামের বাড়িতে থাকেন। ঘটনার দিন তিনি ঢাকাতে ব্যক্তিগত কাজে এসেছিলেন এবং তাঁর এক আত্মীয়ের বাসায় দুপুরের খেয়ে সন্ধ্যার পর তাঁর দুই আত্মীয়সহ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ঘুরতে এসেছিলেন। ঘটনার পরে কালীমন্দিরের গেট দিয়ে বাসায় ফেরার পথে আহতদের ঘটনাস্থলে পড়ে থাকতে দেখেন তাঁরা।

পরদিন সাম্যর মৃত্যুর সংবাদ জানতে পেরে তিনি ফেসবুকে ওই ঘটনা নিয়ে পোস্ট করেন। সাম্যর বন্ধু আশরাফুল আলম রাফি এবং আসামি সুজন সরকার একই গ্রামের হওয়ায় তাঁদের মধ্যে পূর্বশত্রুতার কারণে সাক্ষীরা তাঁকে ‘ওই ঘটনায় জড়িত’ বলে সন্দেহ করায় তাঁকে গ্রেপ্তার করে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। কিন্তু তদন্তকালে এই ব্যক্তির হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কোনো সাক্ষ্য প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

অভিযোগপত্রে বলা হয়, ঘটনাস্থলে আরেক মোটরসাইকেলে ছিলেন তামিম, সম্রাট, পলাশ। তাঁদের মোটরসাইকেলটি ক্ষতিগ্রস্ত হলে মারামারিতে অংশগ্রহণকারী অন্যদের থামানোর চেষ্টা করলে তাঁরাও আসামিদের হাতে আঘাতপ্রাপ্ত হন। উপস্থিত সাক্ষীসহ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আগত অন্য লোকজন ঘটনাস্থলে এগিয়ে এলে আসামিরা দ্রুত পালিয়ে যায়। তবে তাঁরা তিনজন আহত অবস্থায় সেই স্থানে অবস্থান করেন।

সাম্যর সঙ্গে থাকা তাঁর বন্ধু ও মামলার সাক্ষী রাফি এবং বায়েজিদ তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। তখন তামিম, সম্রাট ও পলাশ তুলনামূলক কম আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে ঘটনাস্থলেই থাকেন। পরে তাঁরা মোটরসাইকেলে করে চিকিৎসার জন্য পান্থপথের শমরিতা হাসপাতালে যান এবং একজন রাজাবাজার এলাকায় যান।

প্রত্যক্ষদর্শী মোটরসাইকেল চালক নাসিরের ৯৯৯-এ ফোনকলের পরিপ্রেক্ষিতে শাহবাগ থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে আসে। সাক্ষীদের বক্তব্য শুনে প্রকৃত আসামিদের গ্রেপ্তারে তৎপর হয়। তখন তামিম, সম্রাট ও পলাশদের শমরিতা হাসপাতাল ও রাজাবাজার এলাকা থেকে ঘটনায় জড়িত সন্দেহে গ্রেপ্তার করে।

তদন্তকালে জানা যায়, আসামি মো. তামিম হাওলাদার, সম্রাট মল্লিক (২৮), ঢাকার গুলিস্তান ও ফার্মগেট এলাকায় ফুটপাতে ভ্যানগাড়িতে জামা-কাপড় বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করেন। আসামি মো. পলাশ সরদার (৩০) গ্রামের বাড়িতে রাজমিস্ত্রির সহযোগী হিসেবে কাজ করেন। তাঁরা ঘনিষ্ঠ বন্ধু হওয়ায় ফুটপাতে ব্যবসা শেষে রাতের বেলা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে একত্রে ঘুরতে আসেন এবং ঘটনাস্থলে মোটরসাইকেল রেখে গল্প করছিলেন। তঁদের সঙ্গে ঘটনায় প্রত্যক্ষভাবে জড়িত আসামি মেহেদী ও তাঁর গ্রুপের কোনো সদস্যের পূর্ব পরিচয় ছিল না। এ ছাড়া সাম্য ও তাঁর বন্ধু বায়েজিদ, রাফিদের সঙ্গেও কোনো পূর্ব পরিচয় ছিল না। এজাহারে বর্ণিত ঘটনার সঙ্গে তাঁদের সংশ্লিষ্টতার কোনো সাক্ষ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়নি।

মামলার অভিযুক্ত আসামিদের হাত থেকে সাম্যকে রক্ষা করতে এসে তামিম হাওলাদার মাথায় ইটের আঘাত, সম্রাট পায়ে ছুরির আঘাত এবং পলাশের চোখে জখম হয়। তাঁরা এই মামলার ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার কোনো তথ্য প্রমাণ পাওয়ায় যায়নি উল্লেখ করে তাঁদের মামলার অভিযোগ থেকে অব্যাহতির সুপারিশ করা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

নরসিংদীতে মাইকে ঘোষণা দিয়ে ফের দুই পক্ষের টেঁটাযুদ্ধ, আহত ১৫

নরসিংদী প্রতিনিধি
আজ সকালে মাইকে ঘোষণা দিয়ে দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে নামে দুই পক্ষ। ছবি: আজকের পত্রিকা
আজ সকালে মাইকে ঘোষণা দিয়ে দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে নামে দুই পক্ষ। ছবি: আজকের পত্রিকা

নরসিংদীতে খেয়াঘাটে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করার জেরে ফের বিবদমান দুই পক্ষের সংঘর্ষে টেঁটাবিদ্ধসহ ১৫ জন আহত হয়েছেন। শনিবার (৮ নভেম্বর) সকালে মাইকে ঘোষণার পর দুই দফায় এই সংঘর্ষ হয়। সদর উপজেলার মাধবদী থানার চরাঞ্চল চরদিঘলদী ইউনিয়নের জিতরামপুরে এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

পুলিশ ও স্থানীয় লোকজন জানায়, চরদিঘলদী ইউনিয়নের জিতরামপুরে খেয়াঘাটে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় ও আধিপত্য বিস্তার করা নিয়ে স্থানীয় শহিদ মেম্বার ও চাঁন মিয়া গ্রুপের মধ্যে বিরোধ চলছিল। এ নিয়ে গত সোম ও মঙ্গলবার দুই পক্ষের সংঘর্ষে ১০ জন আহত হওয়ার পর এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করা হয়।

শনিবার সকালে পুলিশ না থাকার সুযোগে মাইকে ঘোষণা দিয়ে ফের টেঁটা ও দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে জড়ায় দুই পক্ষের লোকজন। এতে টেঁটাবিদ্ধসহ উভয় পক্ষের ১৫ জন আহত হন। আহত ব্যক্তিদের মধ্যে বেশ কয়েকজন নরসিংদী সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিলেও পুলিশি গ্রেপ্তারের ভয়ে অনেকে বিভিন্ন স্থানে গোপনে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন।

মাধবদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘ভোরে পুলিশের উপস্থিতি দেখতে না পেয়ে দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে অবস্থানের পর থেকে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। দু-তিনজন সামান্য আহত হয়ে হাসপাতালে গেছেন।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

কাপ্তাইয়ে অনুষ্ঠিত হলো জোন কমান্ডার’স স্কলারশিপ, অংশ নিল ৩৪০ পরীক্ষার্থী

কাপ্তাই ( রাঙামাটি) প্রতিনিধি
আজ সকাল সাড়ে ৯টায় শিশু নিকেতন স্কুল কাপ্তাই কেন্দ্রে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। ছবি: আজকের পত্রিকা
আজ সকাল সাড়ে ৯টায় শিশু নিকেতন স্কুল কাপ্তাই কেন্দ্রে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। ছবি: আজকের পত্রিকা

রাঙামাটির কাপ্তাইয়ে আনন্দঘন ও উৎসবের আমেজে দ্বিতীয়বারের মতো অনুষ্ঠিত হলো বাংলাদেশ সেনাবাহিনী পরিচালিত জোন কমান্ডার’স স্কলারশিপ-২৫। কাপ্তাই জোনের ৩৮ বীরের পরিচালনায় এবং শিশু নিকেতন স্কুল কাপ্তাইয়ের আয়োজনে এই বৃত্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। শনিবার (৮ নভেম্বর) সকাল সাড়ে ৯টা থেকে বেলা সোয়া ১১টা পর্যন্ত এই পরীক্ষা শিশু নিকেতন স্কুল কাপ্তাই কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হয়।

শিশু নিকেতন স্কুলের অধ্যক্ষ রেহানা আক্তার বলেন, কাপ্তাই, রাঙ্গুনিয়া উপজেলাসহ পার্শ্ববর্তী উপজেলার ২৮টি প্রাথমিক ও ১৩টি মাধ্যমিক স্কুল থেকে তৃতীয় শ্রেণি থেকে অষ্টম শ্রেণির ৩৪০ জন পরীক্ষার্থী এই স্কলারশিপ পরীক্ষায় অংশ নেয়।

রেহানা আক্তার আরও বলেন, শিক্ষার্থীদের দুটি বিভাগে ভাগ করা হয়। ক বিভাগ হলো, তৃতীয় থেকে পঞ্চম শ্রেণি এবং খ বিভাগ ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণি।

অর্জিত নম্বরের ভিত্তিতে বিগত বছরের মতো ট্যালেন্টপুল ও সাধারণ গ্রেড ক্যাটাগরিতে বৃত্তি দেওয়া হবে। এ ছাড়া সর্বোচ্চ নম্বরপ্রাপ্ত দুই শিক্ষার্থীকে বিশেষ সম্মাননা ক্রেস্ট, শিক্ষা উপকরণ এবং মাসিক স্কলারশিপ দেওয়া হবে।

অধ্যক্ষ রেহানা আক্তার বলেন, ‘এই স্কলারশিপের মাধ্যমে এলাকার শিক্ষার্থীদের মেধার বহিঃপ্রকাশ ঘটে এবং এটি ভবিষ্যতে আরও বেশি প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় অংশ নিতে তাদের উদ্বুদ্ধ করে।’ তিনি কাপ্তাই জোনের অধিনায়কের প্রতি অনুরোধ জানান যেন কোমলমতি শিক্ষার্থীদের কথা বিবেচনা করে এই স্কলারশিপ কার্যক্রম চলমান থাকে।

এদিকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ৩৮ বীরের অধিনায়ক লে. কর্নেল নাজমুল কাদির শুভ সকাল সাড়ে ১০টায় পরীক্ষাকেন্দ্র পরিদর্শন করেন। পরিদর্শনকালে ৩৮ বীরের উপ-অধিনায়ক মেজর মোহাম্মদ জিয়াউর রহমান এবং শিশু নিকেতন স্কুলের অধ্যক্ষ রেহানা আক্তার উপস্থিত ছিলেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

গাঁজা বিক্রিতে নিষেধ করায় খুন হন ঢাবি ছাত্রদল নেতা সাম্য: অভিযোগপত্রে ডিবি

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ০৮ নভেম্বর ২০২৫, ১৩: ২৯
শাহরিয়ার আলম সাম্য
শাহরিয়ার আলম সাম্য

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গাঁজা বিক্রি করতে নিষেধ করায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ছাত্রদল নেতা শাহরিয়ার আলম সাম্যকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়েছে। আদালতে জমা দেওয়া অভিযোগপত্রে এমনটি বলেছে মামলার তদন্তের দায়িত্বে থাকা পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)।

গত বৃহস্পতিবার সাতজনকে অভিযুক্ত করে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেওয়া হয়। আজ শনিবার গণমাধ্যমকে এসব কথা জানান মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের পরিদর্শক আখতার মোর্শেদ।

অভিযোগপত্রভুক্ত আসামিরা হলেন মেহেদী হাসান, মো. রাব্বি ওরফে কবুতর রাব্বি, মো. রিপন ওরফে আকাশ, নাহিদ হাসান পাপেল, মো. হৃদয় ইসলাম, মো. হারুন অর রশিদ সোহাগ ওরফে লম্বু সোহাগ ও মো. রবিন। অভিযুক্ত ব্যক্তিরা মাদক কারবারি বলে অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে।

অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় চারজনকে অব্যাহতির সুপারিশ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন আখতার মোর্শেদ। অব্যাহতির সুপারিশ পাওয়া চারজন হলেন তামিম হাওলাদার, সম্রাট মল্লিক, পলাশ সরদার ও সুজন সরকার।

গত ১৩ মে রাত ১১টার দিকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ভেতরে ছুরিকাঘাতে আহত হন শাহরিয়ার আলম সাম্য (২৫)। ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেওয়া হলে ১২টার দিকে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। এই ঘটনায় পরদিন ১৪ মে সকালে নিহত ব্যক্তির বড় ভাই শরীফুল ইসলাম শাহবাগ থানায় ১০-১২ জনকে আসামি করে মামলা করেন।

শাহরিয়ার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র এবং এফ রহমান হল ছাত্রদলের সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত