Ajker Patrika

ভারতের ট্রান্সশিপমেন্ট বন্ধে নতুন সুযোগ, সিলেটে বিমানবন্দরে কার্গো ফ্লাইট চালু

ইয়াহ্‌ইয়া মারুফ, সিলেট
আপডেট : ২৭ এপ্রিল ২০২৫, ২৩: ২১
ছবি: আজকের পত্রিকা
ছবি: আজকের পত্রিকা

ভারত ট্রান্সশিপমেন্ট বন্ধ করার পর বাংলাদেশের রপ্তানি তাৎক্ষণিকভাবে কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হলেও এটি নতুন সুযোগ হিসেবে দেখা দিয়েছে। বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে সিলেট এম এ জি ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে কার্গো ফ্লাইট চালু করা হয়েছে। আজ রোববার বাণিজ্য এবং বেসামরিক বিমান ও পর্যটন উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন ‘এক্সপোর্ট কার্গো কমপ্লেক্স’ উদ্বোধন করার পরপরই উন্নত বিশ্বে পণ্য রপ্তানি কার্যক্রম শুরু হয়।

সন্ধ্যা ৭টায় ৬০ টন তৈরি পোশাক নিয়ে স্পেনের উদ্দেশে উড়াল দেয় প্রথম কার্গো ফ্লাইট। এর মাধ্যমে দেশের রপ্তানিতে নতুন সম্ভাবনার সুযোগ সৃষ্টি হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

ছবি: আজকের পত্রিকা
ছবি: আজকের পত্রিকা

ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পর এই প্রথম আরএ-থ্রি প্রটোকল অনুসরণ করে চালু হচ্ছে কোনো কার্গো টার্মিনাল। ভারতের ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বন্ধ হওয়ায় এটি দেশের রপ্তানি খাতে নতুন বিকল্প হয়ে উঠবে বলে মনে করা হচ্ছে।

গতকাল শনিবার সরেজমিনে দেখা গেছে, কার্গো কমপ্লেক্সের ভেতরে ও বাইরের সব প্রস্তুতি শেষ করা হয়েছে। ভেতরে ইভিএস ও ডুয়েল এক্স-রে মেশিনসহ স্ক্যানিং মেশিন প্রস্তুত রয়েছে। বিদ্যুতের সাবস্টেশনও প্রস্তুত রাখা হয়েছে। কমপ্লেক্সের ভেতরের দুটি অংশের মধ্যে একটি পণ্য রাখার জন্য এবং অপর অংশে যন্ত্রপাতি বসানো হয়েছে। ইতিমধ্যে ৬০ টন পণ্য স্ক্যানিং করে ফ্লাইটের জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

ওসমানী বিমানবন্দরের পরিচালক মো. হাফিজ আহমদ আজকের পত্রিকাকে জানান, ‘দেশে আরএ-থ্রি প্রটোকল অনুসরণ করে চালু হচ্ছে দ্বিতীয় কার্গো টার্মিনাল। আর ওসমানী বিমানবন্দরের ইতিহাসে এই প্রথম কোনো কার্গো ফ্লাইট ইউরোপে যাচ্ছে।’

ছবি: আজকের পত্রিকা
ছবি: আজকের পত্রিকা

বিমানবন্দরের তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ সালে প্রক্রিয়া শুরুর দুই বছরের মাথায় উন্নত বিশ্বের মতো সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে মানসম্পন্ন এক্সপোর্ট কার্গো কমপ্লেক্স নির্মাণ করে বন্দর কর্তৃপক্ষ। ২০২২ সালে সেটি আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি লাভ করে। কার্গো কমপ্লেক্সের ধারণক্ষমতা প্রায় ১০০ টন। এটা নির্মাণে ব্যয় হয় প্রায় ৫০ কোটি টাকা।

কমপ্লেক্সটি আন্তর্জাতিক মানের হওয়ায় দুই বছর আগে স্বীকৃতি প্রদান করা হলেও নানা কারণে কার্গো ফ্লাইট চালু হয়নি। কার্গো কমপ্লেক্সের সুবিধাদির মধ্যে রয়েছে, অত্যাধুনিক এক্সপ্লোসিভ ডিটেকশন সিস্টেম (ইডিএস), ডুয়েল ভিউ স্ক্যানিং মেশিন ও এক্সপ্লোসিভ ট্রেস ডিটেকশন মেশিন।

বিমানবন্দরের কয়েক কর্মকর্তা জানান, ভারতের চেয়ে বাংলাদেশ কার্গোর হ্যান্ডেলিং চার্জ বেশি। যেখানে ভারতে প্রতি কেজি মালামালের হ্যান্ডেলিং চার্জ ৩ সেন্ট, সেখানে বাংলাদেশে এ চার্জ ২৯ সেন্ট। পাশাপাশি ঢাকা থেকে মালামাল পরিবহন খাতে কেজিপ্রতি খরচ পড়ছে ২০-২৫ সেন্ট। এ অবস্থায় হ্যান্ডেলিং চার্জ কমানোর দাবি রপ্তানিকারকদের।

প্যাকিং হাউস ও কুলিং সেন্টার চান সিলেটের ব্যবসায়ীরা

বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে পার্টনার নামে একটি নতুন প্রকল্পে সিলেটে একটি প্যাকিং হাউস নির্মাণের বিষয়টি অন্তর্ভুক্তির কথা ছিল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের। তবে সরকার পরিবর্তনের পর এ প্রকল্পের তেমন অগ্রগতি হয়নি বলে জানা গেছে। একজন প্রবাসী ও একজন বাংলাদেশি সিলেটে বেসরকারি উদ্যোগে একটি প্যাকিং হাউস নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছিলেন। কিন্তু, সে উদ্যোগও তেমন এগোয়নি।

ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা জানান, বিমানবন্দরের অবকাঠামো ব্যবহার করে মধ্যপ্রাচ্য, মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুরে পণ্য রপ্তানি করা যাবে। তবে ইউরোপীয় ইউনিয়নের জন্য প্যাকিং হাউস বাধ্যতামূলক।

সিলেটের রপ্তানিকারকেরা জানান, প্যাকিং হাউস না থাকায় যুক্তরাজ্য ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে দীর্ঘদিন থেকে তাঁরা ভোগান্তির শিকার। এ অবস্থায় শিগগির সিলেটে পূর্ণাঙ্গ প্যাকিং হাউস নির্মাণের দাবি তাঁদের। পূর্ণাঙ্গ প্যাকিং হাউস চালুর আগে বেসরকারি ভবন কিংবা স্পেস ভাড়া নিয়ে প্যাকিং হাউস চালু করা যেতে পারে বলে কেউ কেউ প্রস্তাব দিয়েছেন।

সিলেটের বিশিষ্ট রপ্তানিকারক ও বাংলাদেশ ফ্রেইট ফরওয়ার্ডারস অ্যাসোসিয়েশন (বাফা) সিলেট এম এ জি ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সাবকমিটির চেয়ারম্যান হিজকিল গুলজার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‌‘এখন সিলেটসহ বিভিন্ন অঞ্চলের ব্যবসায়ীরা গার্মেন্টস পণ্য রপ্তানি করতে পারবেন। আমাদের সিলেটের মাটির শাকসবজি, ফলমূলসহ ফসলাদির ইউরোপের বাজারে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। ইউরো স্ট্যান্ডার্ডের প্যাকিং হাউস নির্মিত হলে আমরা এখান থেকে এসব বিদেশে রপ্তানি করতে পারব। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে রপ্তানিকারকদের সুবিধার্থে সিলেটে পূর্ণাঙ্গ প্যাকিং হাউস নির্মাণ করা না গেলেও বেসরকারি ভবন কিংবা স্পেস ভাড়া নিয়ে প্যাকিং হাউস নির্মাণ করা যেতে পারে। তবে বেসরকারিভাবে প্যাকিং হাউস স্থাপন করতে হলে আগে মার্কেটিং চেইন ঠিক করতে হবে।’

সিলেট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মুজিবুর রহমান মিন্টু আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘দীর্ঘ ১২ বছর আমরা কার্গো টার্মিনাল, প্যাকিং হাউস, কুলিং সেন্টার, সার্টিফিকেশন ল্যাব ও হিমাগার স্থাপনের দাবি জানিয়ে আসছিলাম। মাত্র একটি অংশ পূরণ হলো, বাকিগুলো পূরণ না হলে এসবের পূর্ণাঙ্গ সুফল পাওয়া যাবে না।’

সিলেটের আমদানি ও রপ্তানিকারকেরা জানিয়েছেন, এ অঞ্চলের শাকসবজি ছাড়াও জারা লেবু, পান, নাগা মরিচ, ফ্রোজেন ফিশ, নানা জাতের সুগন্ধি চাল, ঐতিহ্যবাহী মণিপুরি শাড়ি, সাতকরা, বেতের আসবাব ও নকশিকাঁথার বিশাল বাজার রয়েছে বহির্বিশ্বে। ঢাকা থেকে তাঁরা বিদেশে পণ্য রপ্তানি করে আসছেন। সিলেট থেকে রপ্তানির সুযোগ পেলে তাঁরা সময় ও অর্থের দিক থেকে লাভবান হবেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এবার সরানো হলো জ্বালানি উপদেষ্টার পিএসকে

সব রুফটপ রেস্তোরাঁর ট্রেড লাইসেন্স বাতিল

উদ্দীপনের ২০০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে সাবেক সচিব মিহির কান্তির বিরুদ্ধে ৬ মামলা

ঈদ শুভেচ্ছা কার্টুনে কুকুরের ছবি: প্রথম আলো সম্পাদকের বিরুদ্ধে মামলার আবেদন

মন্ত্রণালয়ের মতামত ছাড়াই ইশরাককে মেয়র ঘোষণা: আইন উপদেষ্টা

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত