Ajker Patrika

অবৈধ ইটভাটার ধোঁয়ায় ফসল-পরিবেশের ক্ষতি

  • এক জেলাতেই ১১৯টি ইটভাটা, ২৪টিই অবৈধ।
  • ধোঁয়া ও বিষাক্ত গ্যাসে আশপাশের জমির ফসল ও গাছপালার ক্ষতি।
  • ইট ও মাটি পরিবহনে ক্ষতিগ্রস্ত গ্রামীণ সড়ক।
  • কার্যকর ব্যবস্থা না নেওয়ার অভিযোগ।
সহিবুর রহমান, হবিগঞ্জ 
আপডেট : ১৯ মে ২০২৫, ০৭: ২২
বসতবাড়ির আশপাশে গড়ে তোলা ইটভাটা। সম্প্রতি হবিগঞ্জের বাহুবল উপজেলার মিরপুর ইউনিয়নে। ছবি: আজকের পত্রিকা
বসতবাড়ির আশপাশে গড়ে তোলা ইটভাটা। সম্প্রতি হবিগঞ্জের বাহুবল উপজেলার মিরপুর ইউনিয়নে। ছবি: আজকের পত্রিকা

হবিগঞ্জ জেলায় ১১৯টি ইটভাটা চলছে। এর মধ্যে ২৪টিই চলছে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়া। এসব ইটভাটার কালো ধোঁয়া, ধুলা-বালু আর বিষাক্ত গ্যাসে আশপাশের জমির ফসল, বসতবাড়ির গাছপালা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ধোঁয়ায় ইটভাটার আশপাশের মানুষ স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়েছেন।

জেলা প্রশাসনের তথ্যমতে, হবিগঞ্জ জেলায় বর্তমানে ১১৯টি ইটভাটা রয়েছে। এর মধ্যে ২৪টির পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নেই।

সম্প্রতি সরেজমিনে জেলার বেশ কয়েকটি ইটভাটা ও আশপাশের এলাকার বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা হয়। এ সময় তাঁরা কাঠ দিয়ে

ইটভাটায় ইট পোড়ানোর কারণে নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন বলে জানান। কৃষি ও বসতবাড়ির ফলগাছসহ বিভিন্ন গাছপালাও বিবর্ণ অবস্থায় দেখা গেছে।

বানিয়াচং উপজেলার হাওর এলাকা সুবিদপুর ইউনিয়নের বলাকিপুর গ্রামের রত্না বাজারের আবিদ আতিয়া ব্রিকস। ইটভাটাটি বানিয়াচং উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা যুবলীগের সভাপতি আবুল কাশেম চৌধুরীর পারিবারিক সম্পত্তি। স্থানীয় ও রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে আশপাশের বাসিন্দারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

সুবিদপুর ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামের বাসিন্দারা নাম না প্রকাশের অনুরোধে জানিয়ে বলেন, ইউনিয়নের সব কটি গ্রামের জমি থেকে ট্রাক্টরের মাধ্যমে ফসলি জমির মাটি কেটে ইটভাটায় নেওয়া হয়। যে কারণে গ্রামীণ সড়ক সারা বছর ভাঙা থাকে। বহু বছর ধরে ইটভাটার কারণে চলাচলে দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে। কেউ আবাদি জমির উপরিভাগ বিক্রি করতে চাইলে তাঁকে আবুল কাশেমের পরিবারের নানা ধরনের হুমকি পেতে হয়েছে।

ভাটি এলাকায় ইটভাটা চলার কারণে হাওরাঞ্চলের প্রাকৃতিক পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত হলেও জেলায় কয়েকটি ইটভাটা রয়েছে। বানিয়াচংয়ের পুকড়া গ্রামে কে এম ব্রিকস, হাওরবেষ্টিত উপজেলা আজমিরীগঞ্জের কাকাইলছেও গ্রামে ভূইয়া ব্রাদার্স ব্রিকস, লাখাই উপজেলার স্বজন গ্রামের লাখাই ব্রিকস, একই উপজেলার মোড়াকরি ইউনিয়নের সিএমসি ব্রিকস ও তিতাস ব্রিকস।

বাহুবল উপজেলার মিরপুর ইউনিয়নে জেলার সবচেয়ে বেশি ইটভাটা রয়েছে। এই ইউনিয়নে ৩০টির বেশি ইটভাটা রয়েছে। ঢাকা-সিলেট পুরোনো মহাসড়কের দুই পাশে মাত্র পাঁচ কিলোমিটার এলাকার মধ্যে দাঁড়িয়ে আছে ইটভাটাগুলো। ইটভাটাগুলোর নানামুখী অত্যাচারে পুরো এলাকার মানুষ অতিষ্ঠ।

মিরপুর ইউনিয়নের লাকুড়িপাড়া গ্রামের দিদার এলাহী সাজু বলেন, ‘রাস্তার দুই পাশে ধোঁয়ার কুণ্ডলী ও ধুলাবালুর কারণে আমাদের কষ্ট হয়। ইট পোড়ানোর বিষাক্ত ধোঁয়ার কারণে গাছপালা বিবর্ণ হয়ে গেছে। ফলন বন্ধ হয়ে গেছে। খেতখামারে ফসলও ভালো হচ্ছে না।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) হবিগঞ্জ জেলার শাখার সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল সোহেল বলেন, এতগুলো ইটভাটা চোখের সামনে পরিবেশের ক্ষতি করছে। তবু পরিবেশ অধিদপ্তরের চোখে কেন পড়ে না? ইটভাটায় অপরিশোধিত কয়লা ও কাঠ ব্যবহার করা হচ্ছে। ফলে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে পরিবেশ। অনেক ইটভাটা হাওরাঞ্চল, বিদ্যালয়, কৃষিজমি ও বসতবাড়ির খুব কাছাকাছি স্থাপন করা হয়েছে। পরিবেশ সংরক্ষণ আইনে নিষিদ্ধ হলেও এসবের বিরুদ্ধে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা দেখা যাচ্ছে না। এর মধ্যে বেশ কয়েকটি ইটভাটা পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়াই চলছে।

হবিগঞ্জ পরিবেশ অধিদপ্তর কার্যালয়ের উপপরিচালক ড. মো. ইউসুফ আলী প্রথমে এ বিষয়ে কথা বলতে চাননি। পরে আবারও যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘আমি এই অফিসে নতুন যোগদান করেছি। জেলার ইটভাটা নিয়ে আমার পুরো তথ্য জানা নেই।’

হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসক ড. ফরিদুর রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমরা এরই মধ্যে চারটি অবৈধ ইটভাটা গুঁড়িয়ে দিয়েছি। যেসব ইটভাটা পরিবেশ আইন না মেনে চলছে, সে সবের বিরুদ্ধে ধাপে ধাপে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। নিয়মিত ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে অবৈধ ভাটামালিকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত