Ajker Patrika

মৌলভীবাজারে বাঙাল আর মৎস্যজীবী আলাদা জাত! পালিয়ে বেড়াচ্ছেন নবদম্পতি

আপডেট : ২৮ মার্চ ২০২৩, ২১: ৪৯
মৌলভীবাজারে বাঙাল আর মৎস্যজীবী আলাদা জাত! পালিয়ে বেড়াচ্ছেন নবদম্পতি

মৌলভীবাজারে নবদম্পতি নিজেদের বাড়িতে উঠতে পারছেন না বলে অভিযোগ উঠেছে। ওই নবদম্পতির দাবি, তাঁদের পরিবারের আপত্তি না থাকলেও স্থানীয় মুরব্বিরা তাঁদের বিয়ের সম্পর্ক মেনে না নেওয়ার জন্য পরিবারকে হুমকি-ধমকি দিচ্ছেন। ফলে বিয়ের পর থেকেই তাঁরা ঘরছাড়া হয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। 

এ ঘটনায় কয়েকজনের নাম উল্লেখ করে গত শুক্রবার জেলা পুলিশ সুপারের কাছে হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে লিখিত অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী নববধূ। 

ভুক্তভোগী নবদম্পতি হলেন—মৌলভীবাজার সদর উপজেলার আপার কাগাবালা ইউনিয়নের উত্তর কাগাবলা গ্রামের ইমন মিয়া (২৯) ও একই ইউনিয়নের সাতবাক গ্রামের পলি আক্তার (২৫)। 

জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জাকারিয়া আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘পলি আক্তার নামে একজন আমার হোয়াটসঅ্যাপে অভিযোগ করেছেন। আমি তাঁকে বলেছি সরাসরি এসে অভিযোগ করার জন্য। ইতিমধ্যে অভিযোগটি মৌলভীবাজার মডেল থানার ওসিকে জানানো হয়েছে। বিষয়টি তিনি খতিয়ে দেখবেন।’ 

আপার কাগাবলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইমন মোস্তফা আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমি বিষয়টি জেনেছি। এখানে সামাজিক বাধা আছে। বিষয়টি সমাধানের জন্য কেউ এগিয়ে আসেনি। কেউ এখনো এই ঘটনা নিয়ে কোনো সংঘাতে জড়ায়নি।’ 

সামাজিক বাধার বিষয়ে স্পষ্ট করে জানতে চাইলে চেয়ারম্যান বলেন, ‘তাঁরা (নবদম্পতি) নিজেরাই আতঙ্কিত। তাঁদেরকে বাড়িতে আসতে কেউ বাধা দেয়নি। বাঙাল সমাজ ও মৎস্যজীবীদের মধ্যে সাধারণত বিবাহ হয় না। এ জন্য ছেলেপক্ষরা নিজেরাই ভয় পাচ্ছে।’ 

ভুক্তভোগী নবদম্পতি সূত্রে জানা যায়, ১৯ মার্চ ইমন মিয়া ধর্মীয় বিধান অনুযায়ী মোহরানা নির্ধারণ করে, নিকাহনামা রেজিস্ট্রারের মাধ্যমে পলি আক্তারকে বিয়ে করেন। বিয়ের কথা এলাকায় জানাজানি হওয়ার পর বাধা হয়ে দাঁড়ান স্থানীয় পঞ্চায়েতের মুরব্বিরা। গত শনিবার নববধূ পলি আক্তার তাঁর ফেসবুক আইডিতে এ নিয়ে পোস্ট দেওয়ার পর বিষয়টি আলোচনায় আসে। 

নববধূ পলি আক্তার লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করেন, ‘আমার মা শিল্পী বেগম একজন সহজ সরল মানুষ। তিনি আমার বিয়ের বিষয়ে আমার দূর সম্পর্কের আত্মীয় ও এলাকার মুরব্বিদের জানালে তাঁরা আমার বিয়েকে অস্বীকার করেন। বরং আমার স্বামী আমাকে অপহরণ-ধর্ষণ করেছেন বলে মিথ্যা মামলা প্রদানের জন্য আমার মাকে কু-মন্ত্রণা প্রদান করে যাচ্ছেন গ্রামের মুরব্বিরা। আমার স্বামীর আত্মীয়স্বজনকেও বিভিন্নভাবে হুমকি প্রদান করে যাচ্ছেন তাঁরা। এমনকি তাঁরা আমার স্বামীকে হত্যা করে লাশ গুম করে ফেলবে বলে আমার মাকে জানিয়েছেন।’ 

পলি আরও উল্লেখ করেন, ‘বিয়ের পর থেকে আমরা খুব কষ্টের মধ্যে আছি। গ্রামের মোড়লদের হুমকি-ধমকির কারণে আমি ও আমার স্বামী উভয়ে বর্তমানে একসঙ্গে আত্মগোপনে আছি। আমি আমার স্বামীর বাড়িতে যেতে চাই। আমাদের সুন্দর জীবন দেওয়ার জন্য প্রশাসনসহ সকলের সাহায্য চাচ্ছি।’ 

অভিযোগে আপার কাগাবলা বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি খলকু মিয়া (৫৫), আগিহুন গ্রামের রুজিনা আক্তার (৪০), সাতবাক গ্রামের বশির আহমদ সুনু মিয়ার (৪০) নাম উল্লেখ করে অভিযোগ করেছেন তিনি। 

এ বিষয়ে ভুক্তভোগী সদ্য বিবাহিত ইমন মিয়া আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমি ১৯ মার্চ পলিকে বিয়ে করেছি। আমি মাছের ব্যবসা করি। আর পলি অন্য জাতের হওয়ায় তাঁরা আমাদের বিয়ে মেনে নিচ্ছেন না। বিয়ে করার পর আমাদের পাশের গ্রাম ও বাজারের কিছু মোড়লের বাধায় পড়েছি। তাঁরা আমাকে ও আমার পরিবারকে বিভিন্ন রকম হুমকি দিয়ে আসছেন। যার কারণে আমি আমার স্ত্রীকে নিয়ে ঘরে উঠতে পারছি না।’

এ বিষয়ে অভিযুক্ত আপার কাগাবলা বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি খলকু মিয়ার কাছে জানতে চাইলে তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এখানে দুইটি আলাদা সমাজ আছে। বিয়ে হলে তাদের মধ্যে ঝামেলা আসবে। কনের পক্ষ আমার কাছে এসেছিল, আমি তাদের সান্ত্বনা দিয়েছি। আমি কাউকে হুমকি-ধমকি এসব কিছু দিইনি। কেউ এর প্রমাণ দিতে পারবে না।’ 

মৌলভীবাজার সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. শরীফ উদ্দিন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ওই দম্পতি বিষয়টি আমাকে জানিয়েছেন। আমি তাঁদেরকে থানায় গিয়ে আইনের আশ্রয় নেওয়ার জন্য বলেছি। আমরা তাদেরকে সব ধরনের সহযোগিতা করব।’ 

এ বিষয়ে মৌলভীবাজার মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ হারুনুর রশীদ চৌধুরী আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এ বিষয়ে আমরা অভিযোগ পেয়েছি। প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত