Ajker Patrika

নাগরিক সুবিধাবঞ্চিত খাসিয়ারা

  • জেলার ৭ উপজেলায় ৬১টি পুঞ্জিতে খাসিয়া উপজাতির ২৫ হাজার মানুষের বসবাস।
  • অধিকাংশ পুঞ্জিতে পৌঁছায়নি বিদ্যুৎ, সরকারি চিকিৎসাব্যবস্থা নেই, যোগাযোগব্যবস্থাও নাজুক।
মাহিদুল ইসলাম, মৌলভীবাজার
মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার জিমাই খাসিয়াপুঞ্জি। ছবিটি সম্প্রতি তোলা। আজকের পত্রিকা
মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার জিমাই খাসিয়াপুঞ্জি। ছবিটি সম্প্রতি তোলা। আজকের পত্রিকা

ভারতের আসাম থেকে কয়েক শ বছর আগে বাংলাদেশে এসে বসতি গড়ে খাসিয়া উপজাতির মানুষ। বসবাসের জন্য সিলেটের পাহাড়ি এলাকায় বন বিভাগের জমিতে নির্মাণ করে বসতঘর। তাদের পাড়াগুলো পুঞ্জি হিসেবে পরিচিত। মৌলভীবাজার জেলার ৭ উপজেলায় এমন ৬১টি পুঞ্জি রয়েছে খাসিয়াদের। কিন্তু সমতল থেকে দূরে থাকা এবং বন বিভাগের সরকারি জমিতে বসতি হওয়ায় নানান নাগরিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত এসব মানুষ।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মৌলভীবাজারের এসব পুঞ্জিতে অন্তত ২৫ হাজার খাসিয়া বসবাস করছে। তাদের বেশির ভাগ পুঞ্জিতে বন বিভাগের বাধার কারণে বিদ্যুতের সংযোগ পৌঁছায়নি। শিশুদের শিক্ষার জন্য নেই কোনো সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। স্থানীয়ভাবে সরকারি কোনো চিকিসা কেন্দ্রও নেই। যোগাযোগব্যবস্থা খুব খারাপ। বিশুদ্ধ খাওয়ার পানির তীব্র অভাব। তাদের জীবিকা নির্বাহের একমাত্র মাধ্যম পাহাড়ি এলাকায় পান ও সুপারি চাষ।

জানা গেছে, সিলেট বিভাগে ৭৩টি খাসিয়াপুঞ্জি রয়েছে। এর মধ্যে মৌলভীবাজারে ৬১টি, সিলেট জেলায় ৭ এবং হবিগঞ্জ-মৌলভীবাজার সীমান্তে ৫টি খাসিয়াপুঞ্জি রয়েছে। মৌলভীবাজারে প্রায় ৪০ পুঞ্জিতে এখনো বিদ্যুতের লাইন স্থাপন করা হয়নি। এতে তাদের জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে। এসব পুঞ্জির একেকটিতে ৩০ থেকে ৬০ পরিবারের বসবাস। পুঞ্জিগুলোয় মাত্র দুটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। শিশুদের পড়াশোনার জন্য নিজেরা অন্তত ৪০টি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করে। এসব বিদ্যালয়ে প্রায় ৫ হাজার শিক্ষার্থী রয়েছে।

সম্প্রতি কমলগঞ্জ, কুলাউড়া ও বড়লেখা উপজেলার কয়েকটি পুঞ্জিতে গিয়ে খাসিয়াদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এসব পুঞ্জিতে বিদ্যুৎ-সংযোগ নেই। অনেকে সৌরবিদ্যুতের ব্যবস্থা করেছে। বিশুদ্ধ পানির অভাব রয়েছে। শুষ্ক মৌসুমে অনেক নলকূপে পানি ওঠে না। দূর থেকে খাওয়ার পানি সংগ্রহ করতে হয়। তীব্র গরমে বিদ্যালয়গুলোয় ক্লাস নেওয়া হচ্ছে। এতে শিক্ষার্থীদের অনেক কষ্টে ক্লাস করতে হয়। কয়েকটি পুঞ্জি ছাড়া বেশির ভাগ পুঞ্জিতে যোগাযোগের ভালো ব্যবস্থা নেই। কোথাও কোথাও ওপরে ওঠার জন্য সিঁড়ি থাকলেও অধিকাংশ পুঞ্জিতে এই ব্যবস্থা দেখা যায়নি।

খাসি সোশ্যাল কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদক ও শ্রীমঙ্গল লাউয়াছড়া পুঞ্জির প্রধান (হেডম্যান) ফিলা পতমী জানান, খাসিয়ারা নাগরিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত। বিশেষ করে তাদের বিদ্যুৎ ছাড়া বসবাস করতে হচ্ছে। শিশুদের পড়ালেখা হচ্ছে না। মাত্র দুটি সরকারি বিদ্যালয় রয়েছে। উঁচু জায়গায় বসবাস, অথচ ওপরে ওঠার রাস্তা নেই অনেক পুঞ্জিতে।

খাসি সোশ্যাল কাউন্সিলের সভাপতি ও মাগুরছড়া খাসিয়াপুঞ্জির হেডম্যান জিডিশনপ্রধান সুচিয়াং বলেন, ‘বেশির ভাগ পুঞ্জিতে বিদ্যুৎ নেই। অথচ শতভাগ বিদ্যুতায়ন জেলা ঘোষণা করা হয়েছে। আমরা ভূমির অধিকার এখনো পাইনি। আমাদের খাসিয়াপুঞ্জিতে নিজস্ব অর্থায়নে বিদ্যালয়গুলো পরিচালনা করতে হচ্ছে। সরকারিভাবে বিদ্যালয়গুলোতে একটি ভবনও করা হয়নি। আমরা বিদ্যুতের কথা বললে, বিদ্যুৎ বিভাগ বলে, বন বিভাগের পক্ষ থেকে আপত্তি আছে। এ ছাড়া চিকিৎসা ও যাতায়াতব্যবস্থা একেবারে নাজুক।’

মৌলভীবাজার বন বিভাগের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) মো. নাজমুল আলম বলেন, ‘সংরক্ষিত বনে খাসিয়াপুঞ্জি থাকায় বন বিভাগ থেকে বিদ্যুৎ বা রাস্তার জন্য অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না। সরকার যদি অনুমতি দেয়, তাহলে আমাদের বাধা দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই।’

মৌলভীবাজার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির মহাব্যবস্থাপক এ বি এম মিজানুর রহমান বলেন, ‘খাসিয়াপুঞ্জিতে বিদ্যুতের সংযোগ দিতে আমাদের পক্ষ থেকে কোনো বাধা নেই। পুঞ্জিগুলো সংরক্ষিত বনের ভেতর হওয়ায় বন বিভাগের আপত্তির কারণে বিদ্যুৎ-সংযোগ দেওয়া যাচ্ছে না।’

মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক মো. ইসরাইল হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, খাসিয়াপুঞ্জিগুলো পাহাড়ের ওপরে। এসব পুঞ্জিতে ওঠার সিঁড়িসহ অন্যান্য কাজের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে ১০ কোটি টাকা বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। এ ছাড়া পাঁচ-ছয়টি বিদ্যালয় স্থাপনের জন্য গত বছর ২-৩ লাখ টাকা করে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এ বছরও কয়েকটি বিদ্যালয়কে সহযোগিতা করা হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

হাসিনার পতনের আগের দিন ড. ইউনূসের সঙ্গে সরকার গঠন নিয়ে আলোচনা হয়: নাহিদ

ডিএমপি কমিশনারের বার্তা: ঝটিকা মিছিল হলে ওসি ও পরিদর্শক প্রত্যাহার

কুমিল্লায় ৪ মাজারে হামলা-ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ, পুলিশ-সেনাবাহিনী মোতায়েন

শেষ ওভারে নবির ছক্কাবৃষ্টি, বাংলাদেশের সমীকরণ কী দাঁড়াল

দিয়াবাড়ির কাশবনে নারীর অর্ধগলিত লাশ, মৃত্যু ১০-১২ দিন আগে: পুলিশ

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত