Ajker Patrika

দৃষ্টিশক্তি হারিয়েও হার মানেননি বায়েজিদ, পুঁজির অভাবে চলছে টানাপোড়েন

আশরাফুল আলম, কাজীপুর (সিরাজগঞ্জ) 
দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী হওয়া সত্ত্বেও ‘টক ব্যাক’ ফাংশন ব্যবহার করে দক্ষতার সঙ্গে ব্যবসা চালান হাফেজ কারি মো. বায়েজিদ। ছবি: আজকের পত্রিকা
দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী হওয়া সত্ত্বেও ‘টক ব্যাক’ ফাংশন ব্যবহার করে দক্ষতার সঙ্গে ব্যবসা চালান হাফেজ কারি মো. বায়েজিদ। ছবি: আজকের পত্রিকা

জন্মের চার বছর পর চোখ ওঠা রোগ হয় বায়েজিদের। এরপর ধীরে ধীরে এক চোখে কম দেখতে থাকেন। অসচ্ছল পরিবার অর্থাভাবে তাঁকে কবিরাজি চিকিৎসা করিয়েছে। কবিরাজের ভুল চিকিৎসায় দুই চোখের দৃষ্টি হারান বায়েজিদ। পরে ধারদেনা করে ভালো চিকিৎসক দেখালেও স্বপ্ন ভঙ্গ হয় তাঁর। ডাক্তার বলেন, চোখ আর ভালো হবে না। সেই থেকে মো. বায়েজিদ দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী।

সিরাজগঞ্জের কাজীপুর উপজেলার চালিতাডাঙ্গা ইউনিয়নের গাড়াবেড় গ্রামে মো. বায়েজিদের বাড়ি। তিনি ওই গ্রামের আছাব আলীর ছেলে। চোখ হারানোর পরও বায়েজিদ ভেঙে পড়েননি। তিনি হাফেজি ও কারিয়ানা পাস করেন।

আছাব আলীর ছেলে হাফেজ কারি মো. বায়েজিদ একসময় নীলফামারীর একটি মাদ্রাসায় ব্রেইল পদ্ধতিতে শিক্ষকতা করতেন। বর্তমানে তিনি গ্রামের একটি মসজিদে পেশ ইমামের দায়িত্ব পালন করেন। মসজিদের যৎসামান্য বেতনে স্ত্রী ও এক পুত্রসন্তানের ভরণপোষণ কঠিন হওয়ায় বন্ধুর পরামর্শে মাত্র ১৫ হাজার টাকা পুঁজি নিয়ে এক বছর আগে রাস্তার পাশে একটি টিনের একচালা ঘরে ফ্লেক্সিলোডের দোকান দেন।

বায়েজিদ জানান, দোকানে বসে তিনি মোবাইল রিচার্জ, বিদ্যুৎ বিল, বিকাশ ও নগদে টাকা লেনদেন করেন। দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী হওয়া সত্ত্বেও ‘টক ব্যাক’ ফাংশন ব্যবহার করে একটি বাটন ও একটি স্মার্টফোন দিয়ে তিনি দক্ষতার সঙ্গে ব্যবসা চালান।

দোকান থেকে মাস শেষে তাঁর ২ হাজার টাকা লাভ হয়। সঙ্গে পান প্রতিবন্ধী ভাতা। বায়েজিদ বলেন, ‘পারিবারিক টানাপোড়েন থেকে বাঁচতে বন্ধুর পরামর্শে মাত্র ১৫ হাজার টাকা পুঁজি নিয়ে এক বছর আগে ফ্লেক্সিলোডের দোকান দিয়েছি। এখানে একটি টেবিলে বসে মোবাইল রিচার্জ, বিদ্যুৎ বিল, বিকাশ ও নগদে টাকা লেনদেন করি। মাস শেষে হাজার দুয়েক টাকা লাভ হয়। পাশাপাশি প্রতিবন্ধী ভাতা পাই। এ দিয়ে টেনেটুনে সংসার চলছে।’

বর্তমানে পুঁজির অভাবে বায়েজিদের ব্যবসা বড় করা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে পারিবারিক টানাপোড়েন লেগে আছে। বায়েজিদ সরকার অথবা সমাজের বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আকুতি জানিয়ে বলেন, ‘আমি যদি আর্থিক সহযোগিতা পেতাম, তাহলে ফ্লেক্সিলোডের পাশাপাশি অন্য ব্যবসা করার সুযোগ পেতাম। নিশ্চিন্তে দুবেলা দুমুঠো ভাত খেয়ে ঘুমাতে পারতাম।’

স্থানীয় বাসিন্দা নজরুল ইসলাম ও রব্বানী বলেন, ‘বায়েজিদ হুজুর খুব ভালো মানুষ। তিনি কারও কাছে হাত না পেতে নিজের চেষ্টায় ব্যবসা করে খাচ্ছেন। তাঁর ব্যবসায় বেশি পুঁজি খাটানো গেলে সংসারটা ভালো চলত।’

স্থানীয় ইউপি সদস্য এরশাদ হোসেন বায়েজিদের শোচনীয় অবস্থার কথা স্বীকার করে বলেন, ‘সরকার বা বিত্তবান কেউ সহযোগিতা করলে হয়তো ব্যবসাটা বড় করতে পারত এবং বায়েজিদ কিছুটা স্বস্তি পেত।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত