Ajker Patrika

শেরপুরের নালিতাবাড়ী: পিঁপড়ার ডিমে জীবিকা তাঁদের

অভিজিৎ সাহা, নালিতাবাড়ী (শেরপুর) 
পিঁপড়ার বাসা থেকে ডিম সংগ্রহ করছেন এক ব্যক্তি। 	ছবি: আজকের পত্রিকা
পিঁপড়ার বাসা থেকে ডিম সংগ্রহ করছেন এক ব্যক্তি। ছবি: আজকের পত্রিকা

গারো পাহাড়ের জঙ্গলে সকাল থেকেই দেখা যায় একদল মানুষের দৌড়ঝাঁপ। কারও হাতে লম্বা লাঠি, তাতে বাঁধা জাল। তাঁদের লক্ষ্য একটাই—গাছের ডালে ঝুলে থাকা পিঁপড়ার বাসা খুঁজে বের করে সেখান থেকে ডিম সংগ্রহ করা। পিঁপড়ার হুলে জর্জরিত শরীর, তবুও মুখে হাসি। কারণ এভাবেই চলছে তাঁদের সংসার। শেরপুরের নালিতাবাড়ী ও ঝিনাইগাতী উপজেলার সীমান্তবর্তী গারো পাহাড়ে শতাধিক পরিবারের জীবিকার একমাত্র অবলম্বন এখন এই পিঁপড়ার ডিম।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, নালিতাবাড়ীর সমসচূড়া ও রামচন্দ্রকুড়া, আর ঝিনাইগাতীর বাঁকাকুড়া, গজনী, নয়া রাংটিয়া, বউবাজার ও বটতলা গ্রামের বাসিন্দারা পিঁপড়ার ডিম সংগ্রহের সঙ্গে জড়িত। ভোর থেকে শুরু হয় তাঁদের ডিম সংগ্রহ অভিযান, চলে দুপুর পর্যন্ত। এরপর বিকেলে গ্রামের বাজারে বসে পিঁপড়ার ডিমের হাট। বিশেষ করে রাংটিয়া, বউবাজার ও বটতলা বাজারে প্রতিদিনই জমে ওঠে এ বিশেষ বেচাকেনা।

প্রতি কেজি ডিম বিক্রি হয় ১ হাজার থেকে ১২০০ টাকা দরে। একজন সংগ্রাহক দিনে গড়ে ৪০০-৭০০ গ্রাম পর্যন্ত ডিম সংগ্রহ করতে পারেন। পরে ডিমগুলো ওজন করে কার্টনে ভরে মহাজনের কাছে পাঠানো হয়। সন্ধ্যায় তালিকা অনুযায়ী সংগ্রহ করা ব্যক্তিদের হাতে তুলে দেওয়া হয় প্রাপ্য টাকা। এভাবেই পাহাড়ের এই দরিদ্র পরিবারগুলো চালায় সংসার, মেটায় সন্তানের পড়াশোনার খরচও।

বড়শি দিয়ে মাছ ধরেন এমন শিকারিরাই এ ডিমের প্রধান ক্রেতা। কারণ, মাছ ধরার সময় এই ডিম প্রাকৃতিক টোপ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। তাই মাছ ধরার মৌসুম কিংবা প্রতিযোগিতা শুরু হলে পিঁপড়ার ডিমের চাহিদা কয়েক গুণ বেড়ে যায়।

দুই থেকে চারজন মিলে দল গঠন করে সংগ্রাহকেরা পাহাড়ের শাল-গজারি বন, ঝোপঝাড় ও বড় গাছ থেকে ডিম সংগ্রহ করেন। তাঁরা ব্যবহার করেন জাল মোড়ানো বিশেষ লাঠি, যা দিয়ে নিরাপদ দূরত্ব থেকে পিঁপড়ার বাসা নামিয়ে আনা যায়। তবে ডিম তোলার সময় পিঁপড়ার দংশন থেকে রেহাই মেলে না কারও। তীব্র জ্বালা-যন্ত্রণা সহ্য করেই তাঁরা সংগ্রহ চালিয়ে যান পেটের দায়ে, টিকে থাকার তাগিদে।

জানতে চাইলে ডিম সংগ্রাহক কোপেন্দ্র কোচ (৪৫) বলেন, ‘আগে পাহাড়ে প্রচুর ডিম পাওয়া যেত। এখন গাছপালা কমে যাওয়ায় বাসাও কমে গেছে। তবু আয়-রুজির আশায় প্রতিদিন ভোর থেকে ডিম খুঁজে বেড়াই।’ ডিম সংগ্রহ করা বেশ কষ্টসাধ্য জানিয়ে শোয়েব হাসান (৩৮) বলেন, ‘পিঁপড়ার কামড়ে ম্যালা কষ্ট হয়। কিন্তু আয় আর সংসারের কথা ভেবে সহ্য করা লাগে। এখন এ কষ্ট সইয়া গেছে।’

ক্রেতা ইলিয়াস উদ্দীন (৪২) বলেন, ‘আমরা স্থানীয় বাজার থেকে ডিম সংগ্রহ করার পর প্যাকেটজাত করে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় পাঠাই। বর্ষা ও শীত মৌসুমে লাল পিঁপড়ার ডিমের জোগান থাকে সবচেয়ে বেশি, তখন বিক্রিও ভালো হয়।’

এ বিষয়ে গারো পাহাড়, বন্য প্রাণী ও নদী রক্ষা পরিষদের উপদেষ্টা আব্দুল মান্নান সোহেল বলেন, মানুষগুলোর প্রতিদিনের এ সংগ্রাম, পাহাড়ি প্রকৃতির সঙ্গে মিশে থাকা জীবনের গল্প যেন গারো পাহাড়ের মানুষের অদম্য টিকে থাকার প্রতিচ্ছবি। প্রকৃতির দান পিঁপড়ার ডিমই হয়ে উঠেছে তাঁদের জীবনের রুটি-রুজির একমাত্র উৎস।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

গাজার শাসনকাঠামো নিয়ে মুখোমুখি যুক্তরাষ্ট্র–রাশিয়া, জাতিসংঘে পাল্টাপাল্টি প্রস্তাব

ছেলে খুনের ঘটনায় মামলা করলেন বিচারক

ভেড়ামারায় আওয়ামী লীগ নেতার কবর জিয়ারত করলেন বিএনপি প্রার্থী

আরোপিত আদেশ দিয়ে সংসদের সার্বভৌমত্বে হস্তক্ষেপ করা যাবে না: সালাহউদ্দিন

ভোলায় বিএনপিতে যোগ দিলেন জামায়াতের ৩০ নেতা-কর্মী

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ