Ajker Patrika

ভেদরগঞ্জে একই ব্যক্তির নামে দুটি ভিন্ন ওয়ারিশ সনদ ইস্যু, মুখোমুখি দুই পক্ষ

শরীয়তপুর প্রতিনিধি
ভেদরগঞ্জ উপজেলার সখীপুর ইউনিয়ন পরিষদ ভবন। ছবি: আজকের পত্রিকা
ভেদরগঞ্জ উপজেলার সখীপুর ইউনিয়ন পরিষদ ভবন। ছবি: আজকের পত্রিকা

শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলার সখীপুর ইউনিয়নের ব্যাপারীকান্দি গ্রামে আইয়ুব আলী ঢালীর ওয়ারিশ নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। একই আবেদনের ভিত্তিতে ইউনিয়ন পরিষদ কর্তৃপক্ষ দুটি ভিন্ন ওয়ারিশ সনদপত্র প্রদান করায় দুই পক্ষের মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি হয়েছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, প্রায় ৭৫-৮০ বছর আগে আইয়ুব আলী ঢালী মারা যান। মৃত্যুকালে তিনি প্রায় ৩ একর ২০ শতাংশ জমি রেখে যান। তার প্রথম স্ত্রীর ঘরে মঙ্গল ঢালী ও নবু ঢালী নামে দুই ছেলে এবং দ্বিতীয় স্ত্রীর ঘরে নূর মোহাম্মদ ঢালী ও কয়ছর আহম্মেদ ঢালী নামে আরও দুই ছেলে ছিলেন। বর্তমানে চার ছেলের মধ্যে তিনজন মারা গেছেন, জীবিত আছেন শুধু ছোট ছেলে কয়ছর আহম্মেদ ঢালী (৮০)।

আইয়ুব আলী ঢালীর নাতি-নাতনি ও তাঁদের পরবর্তী প্রজন্ম বর্তমানে জমির ওয়ারিশ। প্রথম স্ত্রীর ঘরের ওয়ারিশ জামাল হোসেন ঢালী ওয়ারিশ সনদপত্রের জন্য সখীপুর ইউনিয়ন পরিষদে আবেদন করেন। ওই আবেদনের ভিত্তিতে চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান মানিক সরদার ও ১ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য কামাল ব্যাপারী গত ২০২৪ সালের ২ ডিসেম্বর আইয়ুব আলী ঢালীর চার ছেলে ও দ্বিতীয় স্ত্রী ছোট বিবিকে মোট পাঁচজন ওয়ারিশ দেখিয়ে সনদপত্র প্রদান করেন।

কিন্তু একই তারিখে একই আবেদনের ওপর ভিত্তি করে চেয়ারম্যান এবং ওই ইউপি সদস্যের স্বাক্ষরযুক্ত আরেকটি সনদপত্রে আইয়ুব আলী ঢালীর সাতজন ওয়ারিশ দেখানো হয়। সেখানে দ্বিতীয় স্ত্রীর ঘরে তকদির হোসেন ও নজির হোসেন নামে আরও দুই ছেলের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

এ ঘটনায় দুই স্ত্রীর ঘরের ওয়ারিশদের মধ্যে জমি বণ্টন নিয়ে তীব্র বিরোধ শুরু হয়। এ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে একাধিকবার মারামারির ঘটনাও ঘটেছে এবং মামলা-মোকদ্দমা চলছে।

দুই পক্ষের দুই ওয়ারিশ সনদ। ছবি: আজকের পত্রিকা
দুই পক্ষের দুই ওয়ারিশ সনদ। ছবি: আজকের পত্রিকা

প্রথম স্ত্রীর ঘরের ওয়ারিশদের দাবি, প্রকৃতপক্ষে আইয়ুব আলী ঢালীর দ্বিতীয় স্ত্রীর ঘরে মাত্র দুই ছেলে ছিল। কয়ছর ঢালীর ছেলেরা বেশি সম্পত্তি দখলের জন্য ভুয়া ওয়ারিশ সনদপত্র তৈরি করেছেন। অন্যদিকে কয়ছর ঢালী দাবি করেন, তকদির ও নজির নামে তাঁর আরও দুই ভাই ছিল, যারা ছোটবেলায় মারা গেছে।

এলাকার প্রবীণ মুরুব্বি সিরাজুল হক মুতাইত, বাচ্চু মিয়াসহ অনেকে জানান, তাঁরা সব সময়ই শুনে এসেছেন আইয়ুব আলী ঢালীর দুই স্ত্রীর ঘরে চার ছেলেই ছিল। তকদির ও নজির নামে আরও দুই ছেলের কথা তাঁরা কখনো শোনেননি।

দুই পক্ষের দুই ওয়ারিশ সনদ। ছবি: আজকের পত্রিকা
দুই পক্ষের দুই ওয়ারিশ সনদ। ছবি: আজকের পত্রিকা

ইউপি সদস্য কামাল ব্যাপারী বলেন, ‘আমি দলিল-পর্চা দেখে এবং মুরুব্বিদের কাছ থেকে জেনে চার ছেলে ও এক স্ত্রী মিলিয়ে পাঁচজন ওয়ারিশের সনদপত্রে স্বাক্ষর করেছি। সাতজনের নামে সনদপত্রের বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। আমার স্বাক্ষর জাল করে ভুয়া সনদপত্র বানানো হয়েছে।’

চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান মানিক সরদার বলেন, ‘প্রথমে পাঁচজনের নামে সনদপত্র দেওয়া হলেও পরে দ্বিতীয় স্ত্রীর ঘরের ওয়ারিশরা সাতজন দাবি করেন। পরে যাচাই-বাছাই করে সাতজনের নামে নতুন সনদ দেওয়া হয়।’ তবে একই তারিখে কীভাবে দুই সনদপত্র ইস্যু হলো—এ ব্যাপারে তিনি সদুত্তর দিতে পারেননি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত