Ajker Patrika

রংপুরের পীরগাছা: আশ্রয়ণের ঘর যেন জঙ্গল

  • স্থানীয় ভূমিহীনদের বরাদ্দ না দিয়ে বাইরের মানুষদের দেওয়া হয়েছে।
  • রাস্তা না থাকায় কিছুদিন পরই তাঁরা চলে গেছেন।
  • নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রীর কারণে অনেক ঘরে ফাটল।
  • রাস্তা তৈরির পর কেউ না থাকলে নতুন করে বরাদ্দ: ইউএনও
তাজরুল ইসলাম, পীরগাছা (রংপুর)
লতাপাতা ও ঝোপঝাড়ে ভরে রয়েছে আশ্রয়ণের ঘরগুলো। সম্প্রতি পীরগাছা উপজেলার প্রতিপাল গ্রামে। ছবি: আজকের পত্রিকা
লতাপাতা ও ঝোপঝাড়ে ভরে রয়েছে আশ্রয়ণের ঘরগুলো। সম্প্রতি পীরগাছা উপজেলার প্রতিপাল গ্রামে। ছবি: আজকের পত্রিকা

চারদিকে ঝোপঝাড়। বিদ্যুৎ-সংযোগ বিচ্ছিন্ন। নেই টিউবওয়েল। এ দৃশ্য রংপুরের পীরগাছা উপজেলার প্রতিপাল গ্রামের আশ্রয়ণ প্রকল্পে। বর্তমানে সেখানকার ২৮ ঘরই তালাবদ্ধ। বারান্দায় খড়, লাকড়ি স্তূপ করে রাখা। কোথাও ধরেছে ফাটল, কোথাও দেখা দিয়েছে ভাঙন। অভিযোগ রয়েছে, স্থানীয় ভূমিহীনদের ঘর বরাদ্দ না দিয়ে বাইরের এলাকার মানুষদের দেওয়া হয়েছে। রাস্তা না থাকায় কিছুদিন পরই তাঁরা চলে গেছেন।

অপরিকল্পিতভাবে নদীর পাড়ে এসব ঘর নির্মাণ করায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করেন সচেতন মহল।

জানা যায়, ২০২১-২২ অর্থবছরে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আশ্রয়ণ প্রকল্প-২-এর আওতায় উপজেলার তাম্বুলপুর ইউনিয়নের প্রতিপাল গ্রামে বুড়াইল নদীর পাড়ে ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারের থাকার জন্য ২৮টি ঘর নির্মাণ করা হয়। প্রতিটি ঘরের জন্য বরাদ্দ ছিল ১ লাখ ৭১ হাজার টাকা। বেশির ভাগ ঘর বরাদ্দ দেওয়া হয় পীরগাছা রেলওয়ে স্টেশন এলাকার অস্থায়ী বাসিন্দাদের। বছরখানেক সেখানে থাকার পর একে একে সবাই চলে যান।

সরেজমিনে দেখা যায়, প্রতিটি ঘর তালাবদ্ধ। অল্প কিছু ঘরে যাওয়ার জন্য রাস্তা থাকলেও বেশির ভাগ ঘরে যাওয়ার রাস্তা নেই। অন্যের বাড়ির আশপাশ দিয়ে যেতে হয়। দীর্ঘদিন ধরে কেউ না থাকায় সেগুলো লতাপাতা, ঝোপঝাড়ে ভরে গেছে। স্থানীয়রা ঘরগুলোর বারান্দায় খড়, লাকড়ি স্তূপ করে রেখেছেন। বিদ্যুৎ-সংযোগ বিচ্ছিন্ন, নেই টিউবওয়েল।

বিশেষ করে যে নদীর পাড়ে প্রকল্পটি করা হয়েছে, সেই নদী পুনঃখননের কারণে মারাত্মক হুমকির মুখে পড়েছে ঘরগুলো। ভেঙে পড়ছে অবকাঠামো।

জানতে চাইলে স্থানীয় কয়েকজন অভিযোগ করে বলেন, স্থানীয় ভূমিহীনদের ঘর বরাদ্দ না দিয়ে বাইরের এলাকার মানুষদের বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। রাস্তা না থাকায় ওই ব্যক্তিরা কিছুদিন পর চলে গেছেন।

অনেক খোঁজাখুঁজির পর পীরগাছা রেলওয়ে স্টেশন এলাকায় দেখা হয় ওই আশ্রয়ণ প্রকল্পের কয়েকজন বাসিন্দার সঙ্গে। তাঁরা অভিযোগ করে বলেন, সেখানে জীবিকার কোনো ব্যবস্থা নেই। অনেকে ভ্যান-রিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন। কিন্তু রাস্তা না থাকায় তাঁরা আর সেখানে থাকেন না। এ ছাড়াও নিম্নমানের নির্মাণের কারণে অনেক ঘরে ফাটল ধরেছে। এ জন্যও সবাই সেখান থেকে চলে এসেছেন।

স্টেশনের ভ্রাম্যমাণ কলা বিক্রেতা প্রকাশ চন্দ্র মোহন্ত জানান, তাঁর তিন সন্তান। তিনজনই স্টেশনের পাশে স্কুলে পড়ে। আশ্রয়ণ প্রকল্প স্কুল থেকে বেশ দূরে। প্রতিদিন তিনিসহ চারজনের যাতায়াত খরচ কুলাতে না পেরে আর সেখানে থাকেন না।

তাম্বুলপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান বজলুর রশিদ মুকুল জানান, প্রকল্পে যাওয়ার জন্য নদীর পাড় বেঁধে রাস্তা তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে। এরপরও সেখানে কেউ না থাকলে নোটিশ দিয়ে নতুন করে ভূমিহীনদের মধ্যে সেগুলো বরাদ্দ দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ মো. রাসেল বলেন, ‘বিষয়টি শুনেছি। সেখানে রাস্তা তৈরি করা হবে। জীবিকার ব্যবস্থাসহ আরও কিছু সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করার ব্যবস্থা নেব। এরপরও কেউ না থাকলে নতুন করে ভূমিহীনদের মধ্যে সেগুলো বরাদ্দ দেওয়া হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বেসরকারি স্কুল-কলেজে কর্মচারী নিয়োগের কর্তৃত্ব হারাল পরিচালনা পর্ষদ

৪ দিন ধরে পুলিশ ফাঁড়িতে আটক যুবকের মৃত্যু, ইনচার্জ গ্রেপ্তার

টিকটকে পরিচয়, মোবাইল উপহার দিতে ডেকে দলবদ্ধ ধর্ষণ

খাগড়াছড়ি সহিংসতা: ‘ভুয়া ধর্ষণ’ মন্তব্যের জন্য ক্ষমা চাইলেন হান্নান মাসউদ

বিসিবিতে কাজ করতে আগ্রহী ওয়াসিম আকরাম, তবে...

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত