Ajker Patrika

সন্তান নেই, তবুও পেয়েছেন মাতৃ ভাতা

প্রতিনিধি, বোদা (পঞ্চগড়)
সন্তান নেই, তবুও পেয়েছেন মাতৃ ভাতা

গর্ভবতী ও সন্তান নেই তবুও পেলেন মাতৃ ভাতা। সম্প্রতি এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গেছে পঞ্চগড় জেলার বোদা উপজেলার ঝলইশালশিঁড়ি ইউনিয়নে। এ ব্যাপারে ওই ইউনিয়নের বাসিন্দাদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। অবৈধভাবে মাতৃ ভাতা বন্ধের দাবিতে স্থানীয় কয়েকজন ব্যক্তি সংশ্লিষ্ট দপ্তরসহ বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ করেছেন।

অভিযোগে জানা যায়, ২০২০-২০২১ অর্থ বছরে মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের অধীনে মাতৃ ভাতার জন্য প্রণয়ন দেওয়া হয়। প্রণয়নকৃত তালিকা অনুযায়ী মাতৃ ভাতার প্রথম অবস্থায় সাড়ে ৯ হাজার করে টাকা পাবেন প্রসূতিরা। এরই মধ্যে তাঁদের মোবাইলে সে টাকা জমা হয়েছে। দু'একদিনের মধ্যে ফিঙ্গার প্রিন্ট হলে সে টাকা তোলা যাবে। 

বোদার ঝলইশালশিড়ি ইউনিয়নে ১৫৬ জন প্রসূতি মা মাতৃ ভাতার জন্য মনোনীত হন। তাঁদের মধ্যে প্রায় অর্ধেকের অনিয়মের মাধ্যমে কার্ড হয়েছে। তাঁদের মধ্যে কারও সন্তান না থেকেও পেয়েছেন মাতৃ ভাতার কার্ড। অনেকে এলাকায় থাকেন না আবার অনেকের সন্তান লেখাপড়া করছেন স্কুলে। এমন মানুষও মাতৃ ভাতার জন্য মনোনীত হন।

সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, ওই ইউনিয়নের ইউপি সদস্যা মেরিনা আক্তারের নামে মাতৃ ভাতার কার্ডপ্রাপ্ত হয়েছেন। অথচ মেরিনা আক্তারের নেই কোন শিশু সন্তান। সবচেয়ে যে ছোট সন্তানটি রয়েছে তারও বয়স ১২ বছর। পরে দ্বিতীয় শ্রেণিতে। একই অবস্থা সে ইউনিয়নের অ্যাকটিভিটিং ভিলেজ কোর্টস ইন বাংলাদেশ প্রকল্পের সুপারভাইজার মোছা: বুলবুলি আক্তারের। তারও নেই কোন সন্তান। সেও মাতৃ ভাতার কার্ড পেয়েছেন।

মেরিনা ও বুলবুলি নামে দুজন বলেন, আমাদের সন্তান নেই। তবুও মাতৃ ভাতা পেয়েছি। জানি এটা ঠিক না। অনেকে এভাবে নিয়ে আসছেন। আমরাও সে সুযোগ নিয়েছি। 

ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবুল হোসেন বলেন, আমিসহ ৩ জন ইউপি সদস্য এটি তৈরি করি। তবে তাঁদের বরাদ্দ পাওয়া তালিকায় মেম্বার মেরিনার যে নাম ছিল সেটি আমি দেখিনি। আর বুলবুলি'র নামটি আমি অনেক পরে জেনেছি।

নাম না প্রকাশে একজন সুবিধাভোগী জানান, যাদের সন্তান নেই তাঁদের প্রথমে যে কাজটি করতে হয় সেটি হল, বিভিন্ন ক্লিনিক ও প্যাথলজিতে গিয়ে ভুয়া (গর্ভবতী আছে) একটি কাগজপত্র নেওয়া। তবে এ ক্ষেত্রে তাঁদের দিতে হয় ২ হাজার টাকা।

অভিযোগ রয়েছে, উপজেলার ১০টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় যারা মনোনীত হয়েছেন তাঁদের অর্ধেকের ক্ষেত্রে রয়েছে অভিযোগ। বোদা মহিলা বিষয়ক অফিসকে ম্যানেজ করে বছর পর বছর ধরে এ অনিয়ম চলে আসছে। তবে এ নিয়মের জন্য সবচেয়ে বেশি যাকে দোষারোপ করা হচ্ছে সে বোদা উপজেলা মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের অ্যাকাউন্টে মিন্টু। লোকবল কম থাকায় প্রায় সময় দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে আরও ৩টি উপজেলা দেখভাল করতে হয়। সে সুযোগে মিন্টু মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে এ কাজগুলো করে আসছেন।

এ বিষয়ে মিন্টু বলেন, কিছু কিছু ব্যক্তির এমন সুপারিশ আসে যেগুলো তালিকা থেকে বাদ দেওয়া কঠিন হয়। সে কারণে অনেক সময় কিছু অনিয়ম হয়। আর টাকা নিয়ে কার্ড করে দেওয়ার বিষয়টি সম্পূর্ণ মিথ্যা।

বোদা উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা একেএম ওয়াহিদুজ্জামান জানান, আমি সেখানকার দায়িত্বে আছি ঠিকই কিন্তু এর বাইরেও আমাকে আরও কয়েকটি উপজেলা চালাতে হয়। সে কারণে আমি অতটা লক্ষ্য রাখতে পারি না। তবে মিন্টু সব ঠিক করে আমাকে দিলে আমি সেটাতে স্বাক্ষর করি। 

বোদা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সোলেমান আলী বলেন, আমি বিষয়টি শুনেছি। তবে এটি সাধারণত ইউনিয়ন পরিষদ থেকে কার্যকর হয়। আর এটি যাচাই বাছাই করার কথা সংশ্লিষ্ট কমিটির। এরপরে যদি অভিযোগ আসে তাহলে বিষয়টি আমি খতিয়ে দেখব।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

টাকা দিয়ে নারীর চাবুকের ঘা খাচ্ছিলেন পুরুষ, দুজন গ্রেপ্তার

মানবিক করিডর না ভূরাজনৈতিক কৌশল? সীমান্তে যুক্তরাষ্ট্রের তৎপরতায় উদ্বেগ

বাংলাদেশ ও পাকিস্তানে স্টারলিংকের প্রস্তাবিত কার্যক্রমের বিস্তারিত চায় ভারত

নির্দেশনা মানেননি পাইলট, মদিনা–ঢাকা ফ্লাইটকে নামতে হলো সিলেটে

ভারত–বাংলাদেশ বাণিজ্য বিধিনিষেধের মূল্য গুনছেন ব্যবসায়ীরা

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত