Ajker Patrika

বইয়ের বদলে প্রসাধনী পণ্য

আনিসুল হক জুয়েল, দিনাজপুর
আপডেট : ২৪ আগস্ট ২০২১, ১৩: ৩১
বইয়ের বদলে প্রসাধনী পণ্য

দীর্ঘ পাঁচ দশকেরও বেশি সময়ের জমজমাট ব্যবসা। একনামেই চেনে সবাই। মুন্সিপাড়ায় কিনতে গেলে যে কয়টি দোকানে সব রকম বই পাওয়া যায়, তার মধ্যে সোবহানিয়া লাইব্রেরি অন্যতম। দাদার আমল থেকে সুনামের সঙ্গে চলছিল ব্যবসা। পরিধি বাড়াতে শহরের দিনাজপুর সরকারি কলেজ মোড়ে লাইব্রেরির শাখা করে। পাশাপাশি ব্যবসায় নান্দনিকতা আনতে শুরু করেন দৃষ্টিনন্দন কফি শপ।

কলেজ মোড়ের লাইব্রেরিটি ও কফি শপ ছাত্রছাত্রীদের কোলাহলে মুখরিত থাকত সব সময়। কিন্তু করোনার ধাক্কায় তাতে ভাটা পড়ে। ব্যাংকের ঋণ আর ঋণের সুদ সামলাতে না পেরে ব্যবসা বন্ধ হয়ে গেছে। সপরিবারে এলাকা ছেড়েছেন সোবহানিয়া লাইব্রেরির কর্ণধার সিরাজ পাটোয়ারী। তাঁর বকেয়া আদায়ে লাইব্রেরিসহ সব সম্পদ নিলামে তুলেছে ব্যাংক।

রমরমা ব্যবসায় হঠাৎ ছন্দপতন। যে দোকানে সকাল থেকে রাত অবধি ভিড় লেগে থাকত, সেখানে করোনার শুরু থেকে ঝাঁপ ফেলে আবারও সুদিনের অপেক্ষায় রয়েছেন হাসমত বুক ডিপোর স্বত্বাধিকারী এবং বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতি দিনাজপুর জেলা শাখার সহসভাপতি আহসানউল্লাহ ভূঁইয়া কনক। দীর্ঘ দেড় বছর দোকান বন্ধ করে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার আশায় নিজের পুঁজি ভেঙে সংসার চালাচ্ছেন তিনি।

জেলার কাহারোলের ১০ মাইলে লাইব্রেরির ব্যবসা করেন শহীদুল ইসলাম। করোনায় বই বেচাকেনা না থাকায় বাধ্য হয়ে তা বন্ধ রেখে শুরু করেছেন কসমেটিকস, মনোহারীসহ হরেক মালের ব্যবসা। শহীদুল ইসলাম বলেন, ‘স্কুল-কলেজ বন্ধ, কবে খুলবে তার ঠিক নেই। বই বিক্রি একবারেই বন্ধ। বাধ্য হয়ে ব্যবসায় পরিবর্তন এনেছি।’

জেলার বিরলের চৌরঙ্গী বাজারে খায়রুল লাইব্রেরির মালিক খায়রুল ইসলাম। ব্যবসা না থাকায় সব বই ফেরত দিয়েছেন। পরিবর্তে তুলেছেন কসমেটিকসহ জুতা। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আবারও বইয়ের ব্যবসা শুরু করবেন তিনি।

শুধু শহীদুল বা খায়রুল নয়। দিনাজপুরে বইয়ের দোকানগুলো এখন প্রায় ক্রেতাশূন্য। দোকানদারেরা প্রতিদিন নিয়মমাফিক দোকান খুলে বসে থাকেন ক্রেতাদের আশায়। সারা দিন শূন্য দৃষ্টি খুঁজে ফেরে তাঁদের। কিন্তু আর দেখা মেলে না। গতকাল শহরের মুন্সিপাড়ায় দেখা যায়, অধিকাংশ লাইব্রেরি বন্ধ। যারা খুলেছেন, তাঁরা সারা দিন বসে থাকেন ক্রেতাদের আশায়।

মুন্সিপাড়ার রবিউল লাইব্রেরির মালিক রবিউল ইসলাম বলেন, ‘সকাল থেকে সারা দিনে বিক্রি করেছি ৬০ টাকার। গত বৃহস্পতিবার বিক্রি হয়েছে মাত্র ২০ টাকার। আগে যেখানে মৌসুমে দৈনিক লক্ষাধিক টাকার বিক্রি হতো। অন্য সময়ে খুব কম হলেও ১০ হাজার টাকার হতো। এখন সারা মাসেও ১০ হাজার টাকার বিক্রি হয় না। কিন্তু দোকানভাড়া, বিদ্যুৎ বিল, কর্মচারীর বেতন আগের মতোই আছে। পরিস্থিতি ভালো হওয়ার আশায় দেড় বছর ধরে পুঁজি ভেঙে চলছি। আর পারছি না। এখন যেকোনো সময় দোকান বন্ধ করে দিতে হবে।’

বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতি দিনাজপুর শাখার কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, জেলায় তাদের নিবন্ধিত সদস্য সংখ্যা ২২৫ জন। গত বছর করোনায় নিবন্ধন করেছিলেন ১১৫ জন। আর এ বছর গতকাল পর্যন্ত নিবন্ধন করেছেন মাত্র ৩৩ জন। অধিকাংশ ব্যবসায়ীই ব্যবসা পাল্টানোর চিন্তা করছেন।

বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতি জেলা শাখার সভাপতি ও গ্রীণ লাইব্রেরির স্বত্বাধিকারী মফিদুল ইসলাম সাদেক (স্বপন) বলেন, এ ব্যবসার সঙ্গে লক্ষাধিক পরিবারের জীবিকা জড়িত। কিন্তু এ দীর্ঘ সময়েও আমরা সরকারের পক্ষ থেকে কোনো প্রণোদনা কিংবা সাহায্য-সহযোগিতা পাইনি। কর্তৃপক্ষ আমাদের বিষয়টি বিবেচনা করলে এর সঙ্গে জড়িত কয়েক লাখ লোকের মুখে হাসি ফুটবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মামলার আসামিসহ বিএসইসির ২২ কর্মকর্তাকে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত

সরকারি টাকায় ব্যক্তিগত সড়ক কার্পেটিং বিচারপতি খিজির হায়াতের, প্রমাণ পেয়েছে দুদক

অভিনেতা সিদ্দিককে মারধর করে থানায় সোপর্দ, ছিঁড়ে ফেলা হয় পরনের পোশাক

ঐকমত্য কমিশনের সদস্যদের তেলের বরাদ্দ ২৫০ থেকে বেড়ে ৫০০ লিটার

বগুড়ায় ছাত্রদল নেতার ওপর হামলা, পাঁচ নেতা-কর্মীকে শোকজ

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত