Ajker Patrika

১২ শিক্ষকের এক শিক্ষার্থী, তবু ফেল

পীরগাছা (রংপুর) প্রতিনিধি 
কান্দিরহাট স্কুল অ্যান্ড কলেজ। ছবি: আজকের পত্রিকা
কান্দিরহাট স্কুল অ্যান্ড কলেজ। ছবি: আজকের পত্রিকা

কলেজ সেকশনে ১২ জন শিক্ষক রয়েছেন। আর কলেজ থেকে মাত্র একজন শিক্ষার্থী এবার এইচএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন। কিন্তু সেই শিক্ষার্থীও ফেল করেছেন। রংপুরের পীরগাছা উপজেলার কান্দিরহাট স্কুল অ্যান্ড কলেজের এইচএসসি পরীক্ষায় এমন ফল বিপর্যয়ের চিত্র মিলেছে।

অধ্যক্ষের দাবি, ১০৫ জন শিক্ষার্থী ভর্তি করা হলেও এবার এইচএসসি পরীক্ষায় মাত্র একজন অংশগ্রহণ করেছিলেন। গতকাল বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) দিনাজপুর বোর্ডের প্রকাশিত ফলাফলে দেখা গেছে, সেই শিক্ষার্থীও ফেল করেছেন। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া লক্ষ করা গেছে। অনেকেই বলছেন, প্রতিষ্ঠানটির এমন করুণ অবস্থার জন্য প্রতিষ্ঠানের প্রধান ও শিক্ষকেরা দায়ী।

জানা গেছে, কান্দিরহাট স্কুল অ্যান্ড কলেজটি ১৯৫৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। এর স্কুল সেকশন এমপিওভুক্ত হলেও কলেজ সেকশন এখনো এমপিওভুক্ত হয়নি। ২০১১ সালে কলেজ শাখা চালু করা হয়। কলেজটিতে বিজ্ঞান, মানবিক ও বাণিজ্য বিভাগে ১২ জন শিক্ষক থাকলেও এবারের এইচএসসি পরীক্ষায় শুধু মানবিক বিভাগ থেকে একজন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন। বাকি দুই বিভাগে কোনো শিক্ষার্থী ভর্তি ছিল না। প্রকাশিত ফলাফলে দেখা গেছে, সেই একমাত্র শিক্ষার্থী ফেল করেছেন।

এ বিষয়ে কান্দিরহাট স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ এ বি এম মিজানুর রহমান বলেন, ‘কলেজটি দীর্ঘদিনেও মঞ্জুরিপ্রাপ্ত না হওয়ায় শিক্ষকেরা কোনো বেতন পান না। এ জন্য শিক্ষকেরা কেউ কলেজে আসেন না। শিক্ষার্থী ভর্তির ব্যাপারে তাঁরা কাজ করেন না। আমি একাই চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। প্রতিবছর নিজের পকেট থেকে টাকা খরচ করছি। এবারও ১ লাখ টাকা খরচ করে ১০৫ জন শিক্ষার্থী ভর্তি করিয়েছি। স্বীকৃতির আশায় এত কিছু করলাম, তা-ও লাভ হচ্ছে না। তবে আমাদের স্কুল সেকশনের ফলাফল বরাবরই ভালো।’

পীরগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ মো. রাসেল বলেন, ‘এবার সারা দেশের পাসের হার কম। কেননা সরকার আগের অবস্থার চেয়ে একটা পরিবর্তন এনেছে। আগের মতো গণহারে পাস, এ বিষয়টি সরকার পছন্দ করছে না। মূলত কোয়ালিটি এডুকেশন নিয়ে সবাই পাস করুক, সেভাবে একটা মূল্যায়ন পদ্ধতিতেও পরিবর্তন এসেছে। এটা ঠিক, পড়াশোনার গুণগত মান উন্নত হয়নি। এগুলো নিয়ে আমরা কাজ করব। কান্দিরহাট কলেজটি যেহেতু মঞ্জুরি পায়নি, তাই হয়তো তাঁরা শিক্ষার্থী পান না। বেতন না পেলে শিক্ষকেরা ভালো শিক্ষা দেবেন না, এটাই স্বাভাবিক। তবু তাঁরা যেহেতু একটা ভিশন নিয়ে যাত্রা শুরু করেছেন। তাদেরকে আমাদের সাহায্য করতে হবে। শিক্ষার মান উন্নয়ন ও প্রতিষ্ঠানটির এই সংকট থেকে উত্তরণে আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

নদীভাঙনের কবলে মাদ্রাসা, খোলা আকাশের নিচে পাঠদান

­হাতিয়া (নোয়াখালী) প্রতিনিধি
মাদ্রাসার জমি নদীভাঙনে বিলীন হয়ে পড়ছে। ছবি: আজকের পত্রিকা
মাদ্রাসার জমি নদীভাঙনে বিলীন হয়ে পড়ছে। ছবি: আজকের পত্রিকা

নদীর একের পর এক ঢেউ ক্রমাগত গ্রাস করে নিচ্ছে মাদ্রাসার ভূমি। স্থানীয় বাসিন্দাদের সহযোগিতায় দুটি টিনশেড ঘরের বেড়া ও চাল খুলে রাখা হয়েছে রাস্তার পাশে। বাধ্য হয়ে খোলা আকাশের নিচে শিশুদের পড়ালেখা করাচ্ছেন শিক্ষকেরা। এই দৃশ্য নোয়াখালী হাতিয়ার চানন্দী ইউনিয়নের ইসলামপুর দাখিল মাদ্রাসার।

সম্প্রতি ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, ইসলামপুর বাজারের দক্ষিণ পাশে মাদ্রাসাপ্রধান মাওলানা আব্দুল আহাদের বাড়িতে চলছে শিশুদের পাঠদান। ১০-১২টি বেঞ্চে অর্ধশতাধিক শিশুকে পাঠদানে ব্যস্ত দুজন শিক্ষক। প্রচণ্ড গরমে ঘামছে শিশুরা। নদীতে ভেঙে পড়ার মুখে মাদ্রাসার ভিটার অবশিষ্ট অংশ। দু-একদিনের মধ্যে হয়তো মাদ্রাসার কোনো চিহ্ন আর পাওয়া যাবে না। পাশেই আধা পাকা মসজিদটি ভাঙনের ঝুঁকি মাথায় নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। রাস্তার ওপর মাদ্রাসার টিনশেডের ঘরগুলো খুলে রাখা হয়েছে কয়েকটি ভাগে ভাগ করে।

মাদ্রাসার সহকারী শিক্ষক এ টি এম আমিরুল ইসলাম জানান, ৩০০ ছাত্র-ছাত্রী ছিল এই মাদ্রাসায়। মাদ্রাসার সঙ্গে অনেকে ঘরবাড়ি নদীতে বিলীন হওয়ায় অনেকে অন্যত্র চলে গেছেন। এখনো প্রায় শতাধিক শিক্ষার্থী আসেন অস্থায়ী ভিত্তিতে চলা এই পাঠদান ক্লাসে। সবাইকে জায়গা দেওয়া যায় না। দু-তিন ভাগে ভাগ করে পড়াতে হয়। রোধের মধ্যে তারা বেশি সময় থাকতে পারে না। আবার খোলা আকাশের নিচে বৃষ্টি এলে সবাইকে চলে যেতে হয়। এখন আর কেউ বেতন-ভাতা দেয় না। নিজেরা মাদ্রাসাকে টিকিয়ে রাখার জন্য অনাহারে-অর্ধাহারে থেকে চেষ্টা করে যাচ্ছেন।

ইসলামপুর বাজারের ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আব্দুল খালেক জানান, স্থানীয় বাসিন্দাদের সহযোগিতায় ২০০১ সালে মাদ্রাসাটি প্রতিষ্ঠা করা হয়। এই অঞ্চলে ভালো কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছিল না। এ জন্য এখানে ছাত্র-ছাত্রীও ছিল অনেক। সবাই সহযোগিতা করেছেন। কিন্তু নদীভাঙনে এখন সব শেষ। তিনি আরও জানান, গত ১০ বছরে চানন্দী ইউনিয়নের অব্যাহত ভাঙনে অর্ধশতাধিক মসজিদ, মাদ্রাসা, প্রাথমিক বিদ্যালয় নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এখনো ভাঙন অব্যাহত আছে।

গাছতলায় বসে পড়ছে শিশুরা। ছবি: আজকের পত্রিকা
গাছতলায় বসে পড়ছে শিশুরা। ছবি: আজকের পত্রিকা

মাদ্রাসার প্রধান মাওলানা আব্দুল আহাদ বলেন, নদী একেবারে কাছে চলে আসায় দুই মাস আগে মাদ্রাসায় পাঠদান বন্ধ করে দেওয়া হয়। তখনো মাদ্রাসায় ছাত্র-ছাত্রী ছিল ২৮৫ জন। এরপর মাদ্রাসার ঘরের বেড়া ও চাল খুলে ফেলা হয়। এর পর থেকে অনেক দিন পাঠদান বন্ধ। অনেক শিক্ষার্থী অন্য কাজে ঢুকে গেছে। অনেকে পড়ালেখা বন্ধ করে দিয়েছে। নদীভাঙনে এই অঞ্চলের মানুষ অর্থনৈতিকভাবে পঙ্গু হয়ে পড়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

গোপালগঞ্জে যুবককে কুপিয়ে হত্যা

গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

গোপালগঞ্জ সদরের চরপাথালিয়া এলাকায় আল আমিন মোল্লা (২০) নামের এক যুবককে কুপিয়ে হত্যার অভিযোগ পাওয়া গেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে এই ঘটনা ঘটে। এই ঘটনায় আল রাফি শেখ (১৯) নামের এক যুবককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

নিহত আল আমিন মোল্লা গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার চর পাথালিয়া গ্রামের লায়েব আলী মোল্লার ছেলে।

গ্রেপ্তার রাফি বাগেরহাটের ফকিরহাট উপজেলার বারইপাড়া গ্রামের আসলাম শেখের ছেলে।

এলাকাবাসী ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, আল আমিন একজন গাড়ির ড্রাইভার। সদর উপজেলার চরপাথালিয়া এলাকায় ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে দোলা পাম্পের পাশে একটি গ্যারেজে গাড়ির কাজ করানোর সময় মোবাইল ফোনে চার্জ দেওয়াকে কেন্দ্র করে আল রাফি শেখের সঙ্গে তাঁর কথা-কাটাকাটি হয়। কাজ শেষ করে রাত ১২টার পর বাড়ি ফেরার পথে আল রাফি শেখের নেতৃত্বে চার-পাঁচজন তাঁকে রাস্তায় আটকিয়ে দেশীয় অস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি কোপায়। খবর পেয়ে পরিবারের সদস্যরা তাঁকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে গোপালগঞ্জ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়।

ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে গোপালগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শাহ আলম বলেন, ঘটনার সঙ্গে জড়িত আল রাফি শেখকে হত্যায় ব্যবহৃত অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এই ঘটনায় জড়িত অন্যদেরকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

আত্রাইয়ে ধান ব্যবসায়ীর সাড়ে ৭ লাখ টাকা ছিনতাইয়ের অভিযোগ

রাণীনগর (নওগাঁ) প্রতিনিধি 
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

নওগাঁর আত্রাইয়ে সবুজ হোসেন (২৬) নামের এক ধান ব্যবসায়ীকে মারধর করে প্রায় সাড়ে ৭ লাখ টাকা ছিনতাইয়ের অভিযোগ উঠেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে উপজেলার কালীগঞ্জ-আত্রাই সড়কের বারোবিঘা ডাবল ব্রিজ এলাকায় এই ঘটনা ঘটে।

ভুক্তভোগী ধান ব্যবসায়ী সবুজ হোসেন উপজেলার ভোঁপাড়া পশ্চিমপাড়া গ্রামের রফিকুল ইসলামের ছেলে।

সবুজ হোসেনের ভাই ইউপি মেম্বার বিপ্লব হোসেন জানান, তাঁর ভাই ভোঁপাড়া বাজারে ধানের ব্যবসা করেন। গতকাল উপজেলার পতিসর বাজারে ধানের টাকা নিতে যান সবুজ। রাত প্রায় পৌনে ৮টা নাগাদ ৭ লাখ ৪৫ হাজার টাকাসহ আরেক ভাই সজিবকে নিয়ে মোটরসাইকেলে ফিরে আসছিলেন তাঁরা। এ সময় কালীগঞ্জ-আত্রাই সড়কের বারোবিঘা ডাবল ব্রিজ এলাকায় পৌঁছালে ছিনতাইকারীরা তাঁদের মারধর করে টাকা এবং একটি মোবাইল ফোন ছিনতাই করে নিয়ে যায়। বিপ্লব হোসেন আরও জানান, ছিনতাইকারীরা চারটি মোটরসাইকেলে ৮-১০ জন ছিল এবং সবাই হেলমেট পরিহিত অবস্থায় ছিল।

আত্রাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনসুর রহমান বলেন, খবর পেয়ে রাতেই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা হয়েছে। প্রাথমিক তদন্তে ঘটনাটি রহস্যজনক বলে মনে হলেও প্রকৃত ঘটনা উদ্‌ঘাটনে সুষ্ঠু তদন্ত করা হচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ফিলিস্তিনি ভাই-বোনদের এই বিজয় উৎসর্গ করতে চাই: রাকসু নবনির্বাচিত জিএস

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী
রাকসুর নবনির্বাচিত জিএস সালাহউদ্দিন আম্মার। ছবি: আজকের পত্রিকা
রাকসুর নবনির্বাচিত জিএস সালাহউদ্দিন আম্মার। ছবি: আজকের পত্রিকা

দলীয় পরিচয়ের বাইরে গিয়ে সবাইকে নিয়ে একসঙ্গে কাজ করতে চান রাকসুর নবনির্বাচিত জিএস সালাহউদ্দিন আম্মার। শুক্রবার সকালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার পর সাংবাদিকদের ব্রিফিংয়ের সময় তিনি এসব কথা বলেন।

আম্মার বলেন, ‘আমরা একসাথেই কাজ করতে চাই। দলীয় পরিচয়ের বাইরে গিয়ে আমরা এক হয়ে কাজ করব। আমাদের পরিচয় হবে ভিপি, জিএস-এজিএস এভাবে। কোনো দলীয় পরিচয় নয়।’ তিনি বলেন, ‘সবার অক্লান্ত পরিশ্রমের ফসল এসেছে। এ বিজয়টা উৎসর্গ করতে চাই ফিলিস্তিনের মুসলিম ভাই-বোনদের। উৎসর্গ করতে চাই আমার বাবাকে, যে বাবা আমার আন্দোলন-সংগ্রামের জন্য নির্যাতন সহ্য করেছেন। বিজয় উৎসর্গ করতে চাই আমার মাকে। যিনি অভ্যুত্থান থেকে এ পর্যন্ত চলতে আমাকে নীরবে-নিভৃতে পরামর্শ দিয়ে এসেছেন।’

খুলনার কয়রার ছেলে সালাহউদ্দিন আম্মার রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী। তিনি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক সমন্বয়ক।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত