Ajker Patrika

শ্যামপুর সুগার মিল: ফের আটকে গেল চিনি উৎপাদন

  • ১৩ জুলাই অর্থ মঞ্জুর ও ছাড় করার জন্য শিল্প মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে অর্থ বিভাগে চিঠি পাঠায় সরকার
  • তবে ৩০ জুলাই এক চিঠির মাধ্যমে অর্থ বরাদ্দের বিষয়ে অর্থ বিভাগ অসম্মতি জানিয়েছে
শিপুল ইসলাম, রংপুর 
আপডেট : ১৮ অক্টোবর ২০২৫, ০৮: ৫৫
৯ মাস আগে পুনরায় চালুর ঘোষণা এলেও এখনো বন্ধই পড়ে আছে ভারী শিল্প শ্যামপুর সুগার মিল। ছবি: আজকের পত্রিকা
৯ মাস আগে পুনরায় চালুর ঘোষণা এলেও এখনো বন্ধই পড়ে আছে ভারী শিল্প শ্যামপুর সুগার মিল। ছবি: আজকের পত্রিকা

একসময় আখের মিষ্টি গন্ধে মুখর থাকত রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলার গ্রামগুলো। চিনিকলের সাইরেন বাজলেই প্রাণ ফিরত শ্রমিকপল্লিতে, জমজমাট হতো স্থানীয় বাজার। কিন্তু সেই সাইরেন বহুদিন বন্ধ। ৯ মাস আগে পুনরায় চালুর ঘোষণা এলেও এখনো বন্ধই পড়ে আছে এখানকার একমাত্র ভারী শিল্প শ্যামপুর সুগার মিল। অর্থ বরাদ্দ না পেয়ে থমকে আছে টাস্কফোর্সের পরিকল্পনা, হতাশ শ্রমিক ও চাষিরা।

শ্যামপুর সুগার মিল সূত্রে জানা গেছে, ১৯৬৪ সালে প্রায় ১১১ দশমিক ৪৫ একর জমিতে চিনিকলটি স্থাপিত হয়। ১৯৬৭ সালে আখ মাড়াই শুরু হয়। সক্ষমতা ছিল দৈনিক ১ হাজার ১৬ টন আখ মাড়াইয়ের। বার্ষিক চিনি উৎপাদনক্ষমতা ছিল ১০ হাজার ১৬১ টন। এলাকায় ১০ হাজার একরে আখ চাষ হতো। এর সঙ্গে জড়িয়ে ছিলেন ১০ সহস্রাধিক চাষি। ২২৬ কোটি টাকা লোকসানের মুখে ২০২০-২১ অর্থবছরে ওই চিনিকলে আখ মাড়াই কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হয়। ফলে ওই সব জমিতে আখ চাষ করছেন না চাষিরা। কিন্তু জমিগুলোতে অন্য ফসল চাষে তাঁরা তেমন লাভবানও হচ্ছেন না। এতে ক্রমান্বয়ে ওই চাষিরা অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছেন।

তবে, ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে বন্ধ থাকা চিনিকল পুনরায় চালু ও লাভজনকভাবে চালানোর লক্ষ্যে টাস্কফোর্সের সুপারিশ ও মতামতের আলোকে এবং পর্যাপ্ত আখ পাওয়া সাপেক্ষে শ্যামপুর সুগার মিলে মাড়াই কার্যক্রম চালু করার উদ্যোগ নেয় বর্তমান সরকার।

মিলটি চালু করার জন্য ২০২৪-২৫ অর্থবছরে আখ চাষ উন্নয়ন ও রোপণসংক্রান্ত সম্ভাব্য ব্যয়ের প্রাক্কলন এবং ২০২৫-২৬ ও ২০২৬-২৭ অর্থবছরের সম্ভাব্য ব্যয়ের হিসাব করা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য যথাক্রমে ৫৩৭ কোটি টাকা মঞ্জুর ও ছাড় করার লক্ষ্যে চলতি বছরের ১০ ফেব্রুয়ারি শিল্প মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে অর্থ বিভাগে চিঠি পাঠায় সরকার। পরে ১৩ জুলাই পুনরায় ২০২৪-২৫ ও ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য শ্যামপুর চিনিকলের জন্য অর্থ মঞ্জুর ও ছাড় করার জন্য শিল্প মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে অর্থ বিভাগে চিঠি পাঠায় সরকার। তবে ৩০ জুলাই এক চিঠির মাধ্যমে অর্থ বরাদ্দের বিষয়ে অসম্মতি জানায় অর্থ বিভাগ।

সম্প্রতি শ্যামপুর সুগার মিল সরেজমিনে দেখা যায়, চিনিকল চত্বরজুড়ে এখন নিস্তব্ধতা। চারপাশ গাছগাছালিতে ঢেকে গেছে। নেই কোনো কোলাহল বা যান্ত্রিক শব্দ। আখ পরিবহনের ট্রাক্টর-ট্রলিগুলো অযত্নে পড়ে আছে। ঝোপঝাড় ও লতাপাতায় ঢেকে গেছে সেগুলো। রোদ-বৃষ্টিতে মরিচা পড়ে নষ্ট হওয়ার উপক্রম। চিনিকলের বিভিন্ন যন্ত্রাংশও পড়ে আছে যত্রতত্র।

শ্যামপুর গ্রামের আখচাষি ফজলুল হক বলেন, তাঁরা বিভিন্ন সময় মিল চালুর জন্য আন্দোলন-সমাবেশ করেছেন। শ্যামপুর মিল চালুর আশ্বাসও দিয়েছিল বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার। এখন শুনছেন মিল চালু হবে না। তিনি মিলটি চালু করার দাবি জানান।

আরেক চাষি আনারুল ইসলাম আক্ষেপ করে বলেন, চিনিকল বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর থেকে শ্যামপুর অঞ্চলের অর্থনীতি প্রায় ধ্বংস হয়ে গেছে। একসময় আখ চাষ, কেনাবেচা করে কোটি কোটি টাকার বাণিজ্য হতো। কৃষক, ব্যবসায়ী সবাই শহরের মানের জীবনযাপন করতেন। কিন্তু কল বন্ধ থাকায় অন্য ফসলে তেমন লাভ হয় না। ব্যবসা-বাণিজ্যেও ভাটা পড়েছে।

শ্যামপুর সুগার মিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মোশাররফ হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘প্রথম পর্যায়ে শ্যামপুর চিনিকল চালু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু অর্থ ছাড়ের বিষয় অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে না করেছে। এ কারণে চালু হয়নি। আমাদের চেয়ারম্যান, ডিরেক্টর অর্থ মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করছেন। আমাদের বেতনভাতা আপডেট আছে। আমরা চাই মিল দ্রুত চালু হোক।’

শ্যামপুর এলাকার বাসিন্দা, বন্ধ চিনিকল টাস্কফোর্স কমিটির সদস্য আলতাফ হোসেন বলেন, ‘টাস্কফোর্সের সুপারিশে ছিল কীভাবে মিলগুলোকে আধুনিকায়ন করে লাভজনক করা যায়। অর্থ বরাদ্দ না পাওয়ায় আবারও মিলগুলোর কার্যক্রমে অনিশ্চয়তা দেখা দিল। হাজার হাজার কোটি টাকার এসব সম্পদকে কাজে লাগানো গেলে লোকসান নয়; লাভের মুখ দেখবে এসব প্রতিষ্ঠান।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

পলাশবাড়ীতে ভুল চিকিৎসায় প্রসূতি-নবজাতকের মৃত্যুর অভিযোগ, ক্লিনিকে অগ্নিসংযোগের চেষ্টা

পলাশবাড়ী (গাইবান্ধা) প্রতিনিধি 
লাশ নিয়ে যাচ্ছেন স্বজনেরা। ছবি: আজকের পত্রিকা
লাশ নিয়ে যাচ্ছেন স্বজনেরা। ছবি: আজকের পত্রিকা

গাইবান্ধার পলাশবাড়ীতে ভুল চিকিৎসায় পারভীন আক্তার পারুল বেগম (২৫) নামের এক প্রসূতি ও তাঁর নবজাতকের মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। শনিবার (১৮ অক্টোবর) ভোরে পৌর শহরের ঘোড়াঘাট রোডে ‘মা ক্লিনিক অ্যান্ড নার্সিং হোমে’ এই ঘটনা ঘটে। প্রসূতির মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়তেই ক্ষুব্ধ স্বজনেরা ক্লিনিকে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের চেষ্টা চালান। খবর পেয়ে পুলিশ, সেনাবাহিনী ও ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।

পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, শুক্রবার (১৭ অক্টোবর) সন্ধ্যায় পারুল বেগমকে সিজারিয়ান অপারেশনের জন্য মা ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়। রাত সাড়ে ১১টার দিকে অস্ত্রোপচার শুরু হয়। এরপর ভোর ৪টার দিকে পারুল ও নবজাতক উভয়ের মৃত্যু হয়।

এ সময় ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ গোপনে মরদেহ রংপুরে স্থানান্তরের চেষ্টা করলে স্বজনেরা বিষয়টি বুঝে ফেলেন। তাঁরা ক্ষোভে ফেটে পড়েন এবং ক্লিনিকে ভাঙচুর শুরু করেন।

মারা যাওয়া পারুল বেগম পলাশবাড়ী পৌরসভার জামালপুর গ্রামের বাদশা মিয়ার মেয়ে এবং মহদীপুর ইউনিয়নের বিশ্রামগাছী গ্রামের শামীম মিয়ার স্ত্রী। তিনি দুই সন্তানের জননী ছিলেন।

মা ক্লিনিক অ্যান্ড নার্সিং হোম। ছবি: আজকের পত্রিকা
মা ক্লিনিক অ্যান্ড নার্সিং হোম। ছবি: আজকের পত্রিকা

স্বজনদের অভিযোগ, এর আগে পারুলের দুটি সন্তান সিজারের মাধ্যমে জন্ম নিলেও তৃতীয় সিজারের সময় চিকিৎসায় অবহেলার কারণে তাঁর মৃত্যু হয়েছে। তাঁরা সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক ও ক্লিনিকের মালিকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি এবং অবিলম্বে ক্লিনিকটি বন্ধের দাবি জানিয়েছেন।

বিষয়টি নিশ্চিত করে পলাশবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জুলফিকার আলী ভুট্টু বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সহায়তায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে। প্রসূতির মৃত্যুর ঘটনায় লিখিত অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

উল্লেখ্য, পলাশবাড়ী পৌর শহরের নুনিয়াগাড়ী এলাকার সরকারি কবরস্থানের পাশে মা ক্লিনিক অ্যান্ড নার্সিং হোমটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সিনিয়র স্টাফ নার্স ফাতেমা বেগমের মালিকানাধীন ভবনে পরিচালিত হয়ে আসছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

দীর্ঘদিনের দুর্ভোগ লাঘবে নেছারাবাদে ব্যক্তিগত উদ্যোগে পুল-রাস্তা সংস্কার

নেছারাবাদ (পিরোজপুর) প্রতিনিধি 
গতকাল নেছারাবাদের বলদিয়া ইউনিয়নের একটি পুল নির্মাণে কাজ করা হয়। ছবি: আজকের পত্রিকা
গতকাল নেছারাবাদের বলদিয়া ইউনিয়নের একটি পুল নির্মাণে কাজ করা হয়। ছবি: আজকের পত্রিকা

পিরোজপুরের নেছারাবাদ উপজেলার বলদিয়া ইউনিয়নে পথচারীদের দীর্ঘদিনের দুর্ভোগ লাঘবে নিজস্ব অর্থায়ন ও স্বেচ্ছাশ্রমে সংস্কার করা হচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ পুল ও রাস্তা। প্রতি শুক্রবার শতাধিক যুবক অংশ নিচ্ছেন এই জনকল্যাণমূলক কাজে। স্থানীয় বাসিন্দাদের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অনুদানে ইতিমধ্যে ১৮টি অকেজো পুল সংস্কার ও নতুনভাবে নির্মিত হয়েছে।

সরকারি উদ্যোগের অভাবে যখন রাস্তাঘাট চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছিল, তখন স্থানীয় একটি দল এই জনকল্যাণমূলক কাজে এগিয়ে আসে। এতে নেতৃত্ব দেন নেছারাবাদ উপজেলা বিএনপির সাবেক সদস্যসচিব আব্দুল্লাহ আল-বেরুনী সৈকত। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের স্বনির্ভর আন্দোলনের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে ইউনিয়ন বিএনপির সদস্যসচিব মো. সাইফুল ইসলাম এলাকাবাসীকে সঙ্গে নিয়ে এক মাস ধরে এই উন্নয়ন কর্মকাণ্ড চালাচ্ছেন।

দীর্ঘদিন সরকারি উদ্যোগে কোনো উন্নয়ন না হওয়ায় বলদিয়া ইউনিয়নের রাস্তাঘাট ও পুলগুলো চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছিল। ফলে ২০ মিনিটের পথ পার হতে প্রায় এক ঘণ্টা লাগত। এই দুর্ভোগ দূর করতেই স্থানীয় বাসিন্দারা ঐক্যবদ্ধ হয়েছেন।

এই উন্নয়ন কার্যক্রমের অংশ হিসেবে ইতিমধ্যে মধ্য বলদিয়া মলুহার বালিকা বিদ্যালয়ের পাশে ছাউনি-সংবলিত নতুন পুল নির্মাণ করা হয়েছে। এ ছাড়া কেরামদ্দি, কাটাখালী, রাজাবাড়ী ও সোনারঘোপ এলাকায় একাধিক পুল ও রাস্তা সংস্কার করা হয়েছে। আরও কয়েকটি প্রকল্প বর্তমানে চলমান রয়েছে।

স্বরূপকাঠি সরকারি কলেজ ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘সরকারি বরাদ্দ না পেয়ে আমরা নিজেরাই অর্থ জোগাড় করে কাজ করছি। সৈকত ভাই আমাদের এই কাজে প্রতিনিয়ত প্রেরণা জুগিয়ে যাচ্ছেন।’

নেছারাবাদ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. জাহিদুল ইসলাম যুবসমাজের এই উদ্যোগের প্রশংসা করেছেন। তিনি বলেন, ‘যুবসমাজের এই স্বেচ্ছাশ্রমমূলক উদ্যোগ প্রশংসনীয়। তারা প্রমাণ করেছে যে উন্নয়নের জন্য শুধু জনপ্রতিনিধির ওপর নির্ভর না করে জনগণও অনেক কিছু করতে পারে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

চট্টগ্রাম বন্দরে এন্ট্রি ফি বৃদ্ধির প্রতিবাদে ট্রাক-ট্রেইলার প্রবেশ বন্ধ

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম
আপডেট : ১৮ অক্টোবর ২০২৫, ১৩: ০২
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের (চবক) পক্ষ থেকে ভারী যানবাহনের প্রবেশ ফি চার গুণেরও বেশি বৃদ্ধির প্রতিবাদে সব ধরনের কনটেইনার ও পণ্যবাহী যানবাহন প্রবেশ বন্ধ করে দিয়েছে পরিবহন অপারেটররা। আজ শনিবার সকাল থেকে বন্দর এলাকায় ভারী যানবাহন প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না।

এতে দেশের প্রধান সমুদ্রবন্দরে পণ্য পরিবহন ও হ্যান্ডলিং কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।

পরিবহন মালিক ও শ্রমিক সংগঠনগুলো জানিয়েছে, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের নিরাপত্তা বিভাগ ১৩ অক্টোবর একটি অফিস আদেশ (নং ২২৩/২৫) জারি করে। সেই আদেশ অনুযায়ী, প্রতিটি ভারী যানবাহনের জন্য নতুন এন্ট্রি ফি নির্ধারণ করা হয়েছে ২০০ টাকা। এর সঙ্গে ১৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) যুক্ত হয়ে মোট ফি দাঁড়িয়েছে ২৩০ টাকা। এই ফি আগে ছিল মাত্র ৫৭ দশমিক ৫০ টাকা।

পরিবহন সংগঠনগুলোর অভিযোগ, প্রধান অংশীজনদের সঙ্গে কোনো আলোচনা বা পরামর্শ ছাড়াই ‘জোরপূর্বক’ এই বর্ধিত ফি আরোপ করা হয়েছে।

এর আগে গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় এক জরুরি সভার পর চট্টগ্রাম আন্তজেলা পণ্য পরিবহন সমিতি, চট্টগ্রাম ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান ওয়ার্কার্স ইউনিয়ন এবং প্রাইম মুভার অ্যান্ড ফ্ল্যাটবেড ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন—এই তিনটি প্রধান সংগঠন এক যৌথ বিবৃতি প্রকাশ করে।

বিবৃতিতে সংগঠনগুলো উল্লেখ করে, ‘আমরা বন্দরের প্রায় ৮৫ শতাংশ কার্গো পরিবহন কার্যক্রম পরিচালনা করি। এমন গুরুত্বপূর্ণ ও বড় ধরনের পরিবর্তনের আগে প্রধান স্টেকহোল্ডার হিসেবে আমাদের সঙ্গে আলোচনা করা অত্যাবশ্যক ছিল। ফি প্রত্যাহারের অনুরোধ জানিয়ে আমরা আগেও প্রতিবাদ জানিয়েছি, কিন্তু বন্দর কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।’

বর্ধিত ফি প্রত্যাহারের দাবিতে বৃহস্পতিবারের সভায় চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে শনিবার সকাল ৬টা থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সব ধরনের গাড়ির বন্দরে প্রবেশ ‘অস্থায়ীভাবে স্থগিত’ থাকবে। সংগঠনগুলোর নেতারা তাঁদের সদস্য এবং সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে এই সিদ্ধান্ত কঠোরভাবে মেনে চলতে অনুরোধ জানিয়েছেন।

চট্টগ্রাম প্রাইম মুভার ও ফ্ল্যাটবেড ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ হোসেন জানান, এটি কোনো আনুষ্ঠানিক ধর্মঘট বা কর্মবিরতি নয়, বরং প্রাইম মুভার মালিকেরা বর্ধিত ২৩০ টাকার পাস ফি নিয়ে দ্বিধায় থাকায় গাড়ি চালানো বন্ধ রেখেছেন। তিনি বলেন, এই বাড়তি টাকা শ্রমিকেরা দেবেন নাকি মালিকেরা দেবেন, সে বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

মোহাম্মদ হোসেন বলেন, সাধারণত চট্টগ্রাম থেকে ভারী গাড়ি (প্রাইম মুভার, ট্রেইলার, লং ভেহিকেল) যখন ঢাকা বা অন্য গন্তব্যে যায়, তখন তাদের লাইন খরচ (ফি, টোল, বকশিশ) নির্দিষ্ট করা থাকে, যা তেলের দাম বাড়লে নতুন করে নির্ধারিত হয়। তিনি জানান, তাঁরা বিষয়টি নিয়ে বন্দরের পরিচালকের (নিরাপত্তা) সঙ্গে কথা বলেছেন এবং বন্দর চেয়ারম্যান ঢাকা থেকে ফিরলে পুনরায় আলোচনার আশা করছেন।

মোহাম্মদ হোসেন নিশ্চিত করেন, ১৪ অক্টোবর রাত থেকেই তাঁদের ট্রেইলার চলাচল বন্ধ রয়েছে।

বেসরকারি ডিপো মালিকদের সংগঠন বিকডার মহাসচিব রুহুল আমিন সিকদার জানান, শনিবার থেকে অপডকে পণ্য পরিবহন বন্ধ রয়েছে। প্রাইম মুভার মালিকদের গাড়ি চলাচল না করার কারণে ডিপোর ট্রেইলারের মাধ্যমে বন্দর থেকে কনটেইনার আনা-নেওয়ার কাজ চরমভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে।

এদিকে প্রাইম মুভার মালিকদের এই স্বেচ্ছায় কর্মবিরতির কারণে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বন্দর ব্যবহারকারীরা। তাঁরা আশঙ্কা করছেন, এই অচলাবস্থা চলতে থাকলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার নেবে। তাই দ্রুত পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে অংশীজনদের মধ্যে আলোচনা ও সমন্বয় প্রয়োজন বলে তাঁরা মনে করেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

নিঝুম দ্বীপ সি-বিচ থেকে বালু উত্তোলন: সাবেক ইউপি সদস্যসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা

­হাতিয়া (নোয়াখালী) প্রতিনিধি
ড্রেজার মেশিন বসিয়ে পাওয়ার টিলারের মাধ্যমে বালু তুলে বিভিন্ন জায়গায় বিক্রি করা হয়। ছবি: আজকের পত্রিকা
ড্রেজার মেশিন বসিয়ে পাওয়ার টিলারের মাধ্যমে বালু তুলে বিভিন্ন জায়গায় বিক্রি করা হয়। ছবি: আজকের পত্রিকা

নোয়াখালীর হাতিয়ায় নিঝুম দ্বীপের সি-বিচ এলাকা থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের অভিযোগে সাবেক দুই ইউপি সদস্যসহ মোট ছয়জনের নামে মামলা করেছে প্রশাসন। গতকাল শুক্রবার (১৭ অক্টোবর) বিকেলে হাতিয়া থানায় মামলাটি দায়ের করেন জাহাজমারা ইউনিয়নের সহকারী ভূমি কর্মকর্তা মো. হুমায়ুন কবির।

মামলার আসামিদের মধ্যে অন্যতম হলেন নিঝুম দ্বীপ ইউনিয়নের সাবেক মেম্বার আনোয়ার হোসেন, যিনি সম্প্রতি বিলুপ্ত হওয়া কমিটির সভাপতি ছিলেন। অন্যজন হলেন একই কমিটির সহসভাপতি সাহেদ উদ্দিন মেম্বার। এ ছাড়া অন্য আসামিরাও বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত বলে জানা গেছে।

জানা যায়, কয়েকদিন ধরে নিঝুম দ্বীপ জাতীয় উদ্যানের নামার বাজার এলাকার সি-বিচ থেকে একটি চক্র অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছিল। তারা সরাসরি ড্রেজার মেশিন বসিয়ে পাওয়ার টিলারের মাধ্যমে এই বালু তুলে বিভিন্ন জায়গায় বিক্রি করে আসছিল। প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রথমে তাদের বাধা দেওয়া হলেও তারা তা উপেক্ষা করে বালু উত্তোলন চালিয়ে যায়।

পরে প্রশাসনের পক্ষ থেকে অভিযান চালিয়ে বালু উত্তোলনে ব্যবহৃত ড্রেজার মেশিনসহ বিভিন্ন যন্ত্রপাতি জব্দ করা হয়। এই অবৈধ কাজের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে প্রশাসন মামলা দায়ের করেছে।

মামলার আসামি সাহেদ উদ্দিন মেম্বার দাবি করেছেন যে বালু উত্তোলনের সঙ্গে তিনি জড়িত ছিলেন না। তাঁকে সম্পূর্ণ পরিকল্পিতভাবে মামলায় আসামি করা হয়েছে। প্রকৃত অপরাধীদের তদন্ত করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানান তিনি।

এ বিষয়ে হাতিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আলাউদ্দিন বলেন, হাতিয়ার বিভিন্ন স্থানে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের চেষ্টা করা হচ্ছে, যা কঠোরভাবে প্রতিহত করা হচ্ছে। তিনি বলেন, নিঝুম দ্বীপ একটি পর্যটন এলাকা। সেখানে সি-বিচ থেকে বালু উত্তোলন করে অন্যত্র নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে মামলা হয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে আসামিদের আইনের আওতায় আনা হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত