৮ মাসে ৬৪ জেলা ঘুরে ডিসিদের স্মারকলিপি দিয়েছেন ‘হানিফ বাংলাদেশি’

‘স্বাধীনতার ৫১ বছর ধরে চলমান দুর্নীতি-দুঃশাসনের বিরুদ্ধে বদলে যাও, বদলে দাও’—এই স্লোগানে ঘুষ, দুর্নীতি, দুঃশাসন, অর্থ পাচারসহ রাষ্ট্রের নানা অনিয়ম, অসংগতি ও নৈতিক অবক্ষয়ের বিরুদ্ধে ৬৪ জেলা প্রশাসক এবং ৪৯৫ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) স্মারকলিপি দিয়েছেন ‘হানিফ বাংলাদেশি’ নামে পরিচয় দেওয়া এক ব্যক্তি।

আজ বুধবার দুপুর ১২টায় পঞ্চগড় জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের হেল্প ডেস্কে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি দিয়ে তিনি কর্মসূচি সমাপ্ত করেন। তিনি নিজেকে বাংলাদেশি হিসেবে পরিচয় দেন।

এর আগে তিনি গত ৫ জুন কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলা থেকে শুরু করে ৮ মাস ধরে তিনি ৪৯৫টি উপজেলায় যান। সর্বশেষ গতকাল পঞ্চগড় জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের এসে কর্মসূচি সমাপ্ত করেন।

কর্মসূচি সম্পর্কে ‘হানিফ বাংলাদেশি’ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ঘুষ, দুনীতি ও অর্থ পাচার সর্বগ্রাসী রূপ নিয়েছে। সমাজ, রাষ্ট্রব্যবস্থার সর্বক্ষেত্রে সামাজিক, পারিবারিক, মানবিক মূল্যবোধের চরম অবক্ষয় চলছে। ভোট, গণতন্ত্র, আইনের শাসনের ওপর পূর্বের সরকারে যারা ছিলেন, সে সময়েও নগ্ন হস্তক্ষেপ হয়েছে, ঘুষ-দুর্নীতি-অর্থ পাচার হয়েছে। সামাজিক, মানবিক, পারিবারিক মূল্যবোধের অবক্ষয় পূর্বেও ছিল, এখন আরও চরম আকার ধারণ করেছে। আমাদের দেশের কৃষক উৎপাদনশীল, শ্রমিকেরা পরিশ্রমী, ছাত্র-যুবকেরা মেধাবী, কিন্তু দুর্বৃত্তায়িত রাজনীতি, দুর্নীতিগ্রস্ত রাজনীতিবিদ, দুর্নীতিগ্রস্ত সরকারি আমলা-অফিসার, দুর্নীতিগ্রস্ত বড় বড় ব্যবসায়ীরা দেশ থেকে লক্ষকোটি টাকা বিদেশ পাচার করে, আমাদের সকল অর্জনকে ব্যাহত করছে।’

হানিফ বাংলাদেশি আরও বলেন, ‘এত সম্ভাবনা থাকার পরেও দেশ যতটুকু এগিয়ে যাওয়ার কথা, ততটুকু দুর্নীতির কারণে যাচ্ছে না। দেশে অবকাঠামোগত অনেক উন্নয়ন হচ্ছে, কিন্তু মানবিক মূল্যবোধের পতন হচ্ছে। আশা করি, সম্ভাবনাময় এই অগ্রযাত্রা এগিয়ে নিতে এবং চলমান উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে সরকার ঘুষ, দুর্নীতি ও অর্থ পাচার বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। পাচারকৃত অর্থ ফেরত এনে বেকার যুবকদের মাঝে আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে সহজ শর্তে, সহজ কিস্তিতে, ঋণ ও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে, ভোট, গণতন্ত্র, আইনের শাসনের মান উন্নয়নে আরও যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করলে, বিশ্বে একটি আত্মমর্যাদাশীল দেশ হিসেবে বাংলাদেশ মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে।’

হানিফ জানান, দেশের নানা অসংগতি নিয়ে সব সময় প্রতিবাদমুখর থাকেন। এর আগেও ঢাকা শহরসহ দেশের জনবহুল স্থানে পাবলিক টয়লেট স্থাপনের আন্দোলন করেছেন। ২০১৩-১৪ সালে দেশে যখন জ্বালাও-পোড়াও করে মানুষ হত্যা শুরু হয়, তখন এই অপরাজনীতি বন্ধের দাবিতে দুই দলের নেত্রী বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছেন।

২০১৯ সালের মার্চ মাসে ভোটাধিকারের দাবিতে টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া ৪৬ দিন পদযাত্রা করেছেন। নির্বাচন কমিশনকে পচা আপেল দিয়ে প্রতিবাদ করেছেন। ২০২০ সালে সর্বগ্রাসী দুর্নীতির বিরুদ্ধে ৬৪ জেলা প্রদক্ষিণ করে জেলা প্রশাসকের অফিসে স্মারকলিপি প্রদান এবং দুর্নীতিবাজদের উদ্দেশে প্রতীকী লালকার্ড প্রদর্শন করেছেন।

২০২০ সালে সীমান্ত হত্যা বন্ধের দাবিতে প্রতীকী লাশ নিয়ে পদযাত্রা এবং ২০২১ সালে গণতন্ত্রের জন্য দেশব্যাপী মার্চ ফর ডেমোক্রেসি আন্দোলনে জন্য ৬৭ হাজার গণস্বাক্ষর সংগ্রহ করেন।

এ ছাড়া বেকার যুবকদের কর্মসংস্থানের দাবিতে সংসদ ভবনের সামনে ঘণ্টা বাজিয়ে প্রতিবাদসহ ২০২১ সালে নির্বাচন কমিশন গঠনে আইন প্রণয়নের দাবিতে মাথায় ভোটের বাক্স নিয়ে, ৬৪ জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছেন।

হানিফ বলেন, ‘৫০ বছর ধরে চলমান দুর্নীতি-দুঃশাসনে বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিতে ৫ জুন টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী অফিসারের মাধ্যমে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি দেওয়ার উদ্যোগ নিয়ে, দীর্ঘ ৮ মাসে ১৬০ কর্মদিবসে সারা দেশ সফর করে ২৫ জানুয়ারি পঞ্চগড়ে এসে কর্মসূচি শেষ করছি। আমার এই শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে বিভিন্ন জেলায় কিছু কুচক্রী মহল নানাভাবে হেয়প্রতিপন্ন করেছে, তাদের ধিক্কার জানাই। সেই সঙ্গে এই কর্মসূচিতে দেশবাসী, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও গণমাধ্যমকর্মীসহ সকলের সহযোগিতার জন্য ধন্যবাদ জানাই।’