Ajker Patrika

৪ বছর ধরে শিকলবন্দী প্রতিবন্ধী আনোয়ার

নীলফামারী ও ডিমলা প্রতিনিধি
৪ বছর ধরে শিকলবন্দী প্রতিবন্ধী আনোয়ার

নীলফামারীর ডিমলায় ৪ বছর ধরে শিকলবন্দী জীবন কাটছেন মানসিক প্রতিবন্ধী আনোয়ার হোসেনের (২২)। পালিত বৃদ্ধ বাবা-মা অন্যের বাড়িতে কাজ করে খাবার জোটান। তাই টাকার অভাবে মানসিক ভারসাম্যহীন ছেলের চিকিৎসা হচ্ছে না। এমতাবস্থায় আনোয়ার হোসেনের ভবিষ্যৎ জীবনধারণ অনিশ্চিতের মুখে পড়েছে। আনোয়ার উপজেলার সদর ইউনিয়নের উত্তর তিতপাড়া গ্রামের মৃত সামোন্তো বেগমের ছেলে। 

জানা যায়, আনোয়ারের মা ছিলেন মানসিক ভারসাম্যহীন। ঘুরে বেড়াতেন বিভিন্ন জায়গায়। কোনো একজনের লালসার শিকারে হয়ে জন্ম দেন পিতৃপরিচয়হীন আনোয়ারকে। আনোয়ারের জন্মের কিছুদিন পরেই মৃত্যু হয় মা সামোন্তো বেগমের। পরে শিশু আনোয়ারকে দত্তক নেন নিঃসন্তান দম্পতি আনোয়ারা বেগম ও মজিবর রহমান দম্পতি। 

জন্ম থেকেই মানসিক প্রতিবন্ধী ছিলেন আনোয়ার। দরিদ্র পালিত বাবা দিনমজুর মজিবরের জন্য বিষয়টি বিরাট পাহাড়ের মতো বোঝা হলেও স্নেহের কমতি ছিল না। অন্যের বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করেন মা আনোয়ারা খাতুন। তাই আনোয়ারকে বাড়িতে রেখে কাজে যাওয়া ওই দম্পতির জন্য দুষ্কর ছিল। 

এদিকে, স্বাভাবিকভাবে বেড়ে না ওঠায় আনোয়ারকে নিয়ে ওই দম্পতি বিপাকে পড়েন। নিজে নিজে কোনো কিছু করার ক্ষমতা নেই আনোয়ারের। শরীর থেকে জামাকাপড় খুলে ফেলে দেয়। সুযোগ পেলেই বাড়ি থেকে পালিয়ে যায়।  অনেক খোঁজাখুঁজি করে ফিরিয়ে আনতে হয়। তাই বাধ্য হয়ে তাঁকে শিকলবন্দী করে রাখতে হয়। অর্থাভাবে শিশুকাল থেকেই মা-বাবা ছেলেকে কোনো বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যেতে পারেননি। স্থানীয় বিভিন্ন কবিরাজ ও তাবিজ-কবচের চিকিৎসা করিয়েছেন। কিন্তু তাতে কোনো কাজ হয়নি। 

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ছোট্ট একটি জরাজীর্ণ টিনের চালা ঘরের খুঁটির সঙ্গে একটি শিকল লাগিয়ে আনোয়ারকে তালাবদ্ধ করে রাখা হয়েছে। ধুলোবালি মাখা অর্ধনগ্ন শরীর তাঁর। শুধু মায়াভরা দুটি চোখ দিয়ে ফ্যালফ্যাল করে এদিক-ওদিক তাকিয়ে থাকে। মাঝে মাঝে চিৎকার করে। কিন্তু তাতেও মুক্তি মেলে না তার। 

এ সময় কথা হয় আনোয়ারের পালিত বাবার মজিবরের সঙ্গে। তিনি বলেন, এ ছেলেকে ২২ বছর ধইরে টানতাছি। অহন ছেলের সঙ্গে আর পারি না। কিন্তু ছাইড়াও রাখবার পারতাছি না। কখন কই যায়, নাকি কোনো পুকুরেই পইড়া যায়। তাই বাধ্য হইয়াই ছেলের হাতে পায়ে শিকল পরাই বাইন্ধা রাখি। ছেলের কষ্ট দেইখা বুকটা ফাইটা যায়। কিন্তু কী করমু কোনো উপায় তো নাই। 

ছেলের চিকিৎসার জন্য সাহায্য পেতে বিভিন্ন দপ্তর ও জনপ্রতিনিধিদের কাছে বহুবার যেতে হয়েছে। কিন্তু কোনো চেষ্টাতেই সাহায্য মেলেনি। নানা জায়গায় ধরনা দিয়েও সাহায্য না পেয়ে হতাশায় আশাও ছেড়ে দিয়েছি। 

এ বিষয়ে আনোয়ারা বেগম বলেন, প্রতিদিন সকালে প্রস্রাব-পায়খানা পরিষ্কার করে ছেলের পায়ে শিকল পরাই। এরপর রান্না করে ছেলেকে খাওয়ানোর পর নিজে খেয়ে ঘরের দরজা বন্ধ করে কাজে বেরিয়ে পড়ি। সারা দিন ছেলেটি না খেয়ে শিকলবন্দী হয়ে থাকেন। 

ডিমলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বেলায়েত হোসেন জানান, আনোয়ারকে বিশেষজ্ঞ ডাক্তার দেখানোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তাঁর উন্নত চিকিৎসার জন্য সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দেন তিনি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মামলার আসামিসহ বিএসইসির ২২ কর্মকর্তাকে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত

‘ভারতে ঢুকে’ পাকিস্তানি সেনাদের গুলি, সীমান্তে সংঘাত গড়াল ষষ্ঠ দিনে

বন্ধুকে ছাত্রলীগ সাজিয়ে পুলিশে দিয়ে তাঁর প্রেমিকাকে ধর্ষণ করলেন ছাত্রদল নেতা

মানিকগঞ্জে রাতের আঁধারে স্থানান্তর করা বিদ্যালয় ভবন পরিদর্শনে কর্মকর্তারা

পরিপাকতন্ত্রের ওষুধের পেছনেই মানুষের ব্যয় সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকা

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত