Ajker Patrika

৪ পুলিশ সদস্যকে পেটানোর ঘটনায় মামলা, ৮০ পরিবারের ঘরে তালা

গঙ্গাচড়া (রংপুর) প্রতিনিধি
৪ পুলিশ সদস্যকে পেটানোর ঘটনায় মামলা, ৮০ পরিবারের ঘরে তালা

রংপুরের গঙ্গাচড়ায় জমি সংক্রান্ত একটি অভিযোগ তদন্ত করতে গিয়ে পুলিশের চার সদস্যকে পিটিয়ে আহত করার অভিযোগে রেজায়ে রাব্বি নামের এক উপপরিদর্শক বাদী হয়ে গতকাল শুক্রবার রাতে গঙ্গাচড়া মডেল থানায় ৮ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা বেশ কয়েকজনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেছেন। গঙ্গাচড়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দুলাল হোসেন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। 

গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে উপজেলার বড়বিল ইউনিয়নের দক্ষিণ পানাপুকুর চৌধুরীহাট দোলাপাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। দায়ের করা মামলায় ওই পুলিশ উপপরিদর্শক অভিযোগ করেছেন, পুলিশের সরকারি কাজে বাধা দেওয়া, পুলিশ সদস্যকে মারপিট এবং জখম করায় এ মামলা করা হয়েছে। 

আজ শনিবার ওই এলাকায় সরেজমিনে গেছে, গ্রামটি প্রায় ৮০টি পরিবারের ঘরে তালা ঝুলছে এবং ঘটনার পর থেকে পুলিশ আতঙ্কে গ্রাম ছাড়া হয়েছেন প্রায় ৮০টি পরিবারের লোকজন। পুলিশকে মারপিটের ঘটনায় এলাকাটিতে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। 

এ সময় আশপাশের লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রংপুর নগরীর সিও বাজার এলাকার মাহবুবুর রহমান (৭০) উপজেলার বড়বিল ইউনিয়নের দক্ষিণ পানাপুকুর চৌধুরীহাট দোলাপাড়া এলাকার আশরাফুলের (৪০) কাছ থেকে ৭৫ শতক জমি বায়নাপত্র করেন। তাতে উল্লেখ রয়েছে, ছয় মাসের মধ্যে জমির সম্পূর্ণ টাকা বুঝিয়ে দিয়ে জমির মালিকের কাছ থেকে দলিল করে নেবেন মাহবুবুর রহমান। কিন্তু ছয় মাস পেরিয়ে গেলেও টাকা বুঝিয়ে দিয়ে জমি দলিল নিতে ব্যর্থ হন তিনি। ফলে গতকাল শুক্রবার জমির মালিক আশরাফুল তার জমিতে গাছ লাগাতে গেলে মাহবুবুর থানায় অভিযোগ দেন। অভিযোগ পেয়ে পাঁচ পুলিশ সদস্য অভিযোগের তদন্ত করতে ঘটনাস্থলে যান। 

চার পুলিশ সদস্যকে পিটিয়া আহতর ঘটনায় এলাকা ছাড়া প্রায় ৮০ পরিবার। এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। ছবি: আজকের পত্রিকা এ সময় আশরাফুলকে পুলিশ গাড়িতে তুলে নিয়ে আসতে ধরলে গ্রামের লোকজন বাধা দেন এবং পুলিশের কাছে থাকা অস্ত্র কেড়ে নিয়ে তাদের মারধর করেন। এতে চারজন পুলিশ সদস্য আহত হন। 

খবর পেয়ে গঙ্গাচড়া মডেল থানার পুলিশ তাদের উদ্ধার করতে গেলে একপর্যায়ে স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া হয়। পরে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন রংপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এ সার্কেল) হোসাইন মুহাম্মদ রায়হান। এ সময় এক নারীসহ তিনজনকে আটক করেছে পুলিশ। তারা হলেন জাকির হোসেন (৩৭), ময়না বেগম (৪০) ও মিরকুলাল (৪৫)। 

অভিযুক্ত আশরাফুল ইসলামের চাচাতো ভাই আবদুল বাতেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘‘আমার ভাই আশরাফুল ১১ মাস আগে মাহবুবুর রহমান নামের এক ব্যক্তির কাছে তার জমি বিক্রির জন্য একটি বায়নাপত্র করেন। এতে বলা হয় মাহবুবুর ৬ মাসের মধ্যে জমির সম্পূর্ণ টাকা বুঝিয়ে দিয়ে আমার ভাইয়ের কাছ থেকে তিনি জমি লিখে নেবেন। কিন্তু ৬ মাস পার হয়ে প্রায় ১১ মাস অতিবাহিত হলেও তিনি টাকাও দেননি জমিও লিখে নেননি। এমন অবস্থায় মাহবুবুর জমিটি তার লোকজন দিয়ে ঘিরে ফেলেন এবং অটো রাইস মিল দেওয়ার জন্য মাটি ভরাট করেন। 

 ‘এমন অবস্থায় আমরা গত শুক্রবার সকালে থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দেই এবং আমরা আমাদের জমিতে গাছ লাগাতে গেলে। মাহবুবুর থানায় ফোন দিলে পুলিশ এসে আমার ভাইকে তাদের গাড়িতে তুলে নিয়ে যেতে ধরে এ সময় বাজার থাকা লোকজন বাধা দিলে পুলিশ তাদের দিকে পিস্তল তাক করে গুলি করার ভয় দেখান। একপর্যায়ে পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তি করে আমার ভাইকে তাদের কাছ থেকে ছাড়িয়ে নেন লোকজন। আমরা পুলিশের গায়ে কোনো প্রাকার হাত তুলি নাই এবং তাদের মারপিটও করি নাই। এই জমিরে বিষয় আমরা চেয়ারম্যানকে অনেক বার বিচার দিয়েছি চেয়ারম্যান সামলিতে না পারায় বাধ্য হয়ে ওই জমিতে গাছ লাগাতে গেছি।’ 

এ বিষয়ে বড়বিল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শহীদ চৌধুরী দ্বীপ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বিষয়টি অনাকাঙ্ক্ষিত এ জন্য আমি বিষয় নিয়ে আমি দুঃখ প্রকাশ করছি। তবে জমির মালিক আশরাফুল আমাকে ওই জমি সম্পর্কে অনেকবার অভিযোগও দিয়েছেন এমনকি আমি মাহাবুবুর রহমানের সঙ্গে বসে চার থেকে পাঁচবার মীমাংসা করে দিয়েছি। কিন্তু মাহবুবুর টাকা না দিয়ে জমিতে প্রাচীর দেয় এ জন্যই আশরাফুল বাধা দিয়েছেন।’ 

চার পুলিশ সদস্যকে পিটিয়া আহতর ঘটনায় এলাকা ছাড়া প্রায় ৮০ পরিবার। এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। ছবি: আজকের পত্রিকা এ বিষয়ে মাহবুবুর রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘জমি বায়নাপত্র হওয়ার পর আমি তাদের কাছে অনেক বার জমি লিখে নেওয়ার জন্য বসে ছিলাম। তারা আমার কাছে জামির দামের চেয়েও অনেক টাকা বেশি চায়, তাই আমি বাধ্য হয়ে পুলিশের কাছে যাই।’ 

গঙ্গাচড়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দুলাল হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, শুক্রবার আমাদের ফোনে আসে যে বড়বিল ইউনিয়নের চৌধুরীর হাট বাজারে জমি সংক্রান্ত বিষয়ে দুই গ্রুপের সংঘর্ষ বেঁধেছে খবর পেয়ে ঘটনা স্থানে আমি তাৎক্ষণিক ওই ইউনিয়নের বিট অফিসার রেজায়ে রাব্বিসহ চার পুলিশ সদস্যকে পাঠিয়ে দেই এবং তারা ঘটনাস্থলের গিয়ে পরিবেশ শান্ত করার চেষ্টা করলে আশরাফুল গ্রুপের লোকজন আমার পুলিশের ওপর অতিরিক্ত হামলা করে এতে করে ঘটনাস্থলে থাকা আমার ৪ পুলিশ সদস্য আহত হয়। পরে আমরা গিয়ে তাদের উদ্ধার করি এবং হাসপাতালে ভর্তি করাই।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত