Ajker Patrika

আগের রাতে ভাঙচুর, পরের রাতে প্রতিমা উধাও

কুড়িগ্রাম ও উলিপুর (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি
আপডেট : ১৬ মার্চ ২০২৩, ১৫: ০৯
আগের রাতে ভাঙচুর, পরের রাতে প্রতিমা উধাও

কুড়িগ্রামের উলিপুরে গত দুদিনে একাধিক মন্দিরে প্রতিমা ভাঙচুর ও মন্দির থেকে প্রতিমা তুলে নিয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। গত মঙ্গলবার ও বুধবার দিবাগত রাতে উপজেলার পৌর এলাকার যোদ্দারপাড়া ও খেওয়ারপাড় কেন্দ্রীয় শ্মশান মন্দিরে এ ঘটনা ঘটেছে বলে জানা গেছে।

পুলিশ বলছে, বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে। সংশ্লিষ্টদের আটকের চেষ্টা করছে।

আজ বৃহস্পতিবার সকালে উলিপুরে ঘটনাস্থলগুলোতে গিয়ে দেখা গেছে, যোদ্দারপাড়ার সন্ন্যাসীতলা মন্দিরের কালী প্রতিমাটি মন্দিরের নির্ধারিত স্থানে নেই। মন্দিরের ভেতরে পায়ের ছাপ। পাশে কয়েকটি স্থানে প্রতিমার ভাঙা টুকরা ও এক গুচ্ছ চুল পড়ে আছে।

স্থানীয় যুবক শৌমিক আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘মন্দিরটি প্রায় সারা বছর তালাবদ্ধ থাকে। ভক্তরা প্রতিদিন বাইরে থেকে ঠাকুরকে পূজা দিয়ে যান। মন্দিরের গ্রিলের ওপরের ফাঁকা জায়গা দিয়ে কেউ ভেতরে প্রবেশ করে প্রতিমাটি নিয়ে গেছে। বাইরে সিসি ক্যামেরা লাগানো রয়েছে। সেগুলোর ফুটেজ পরীক্ষা করলে আগন্তুককে চিহ্নিত করা যেতে পারে।’

এ বিষয়ে সন্ন্যাসীতলা মন্দির কমিটির সাধারণ সম্পাদক সুদীপ্ত দেব ধ্রুব আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘প্রতিদিনের মতো সকালে পূজা করতে গিয়ে দেখি মন্দিরের প্রতিমা উধাও। আশপাশে প্রতিমার টুকরা পড়ে আছে। এটা খুবই দুঃখজনক।’

কুড়িগ্রামের উলিপুরে গত দুদিনে একাধিক মন্দিরে প্রতিমা ভাঙচুর ও মন্দির থেকে প্রতিমা তুলে নিয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছেধ্রুব আরও বলেন, ‘আমাদের এলাকায় সকল ধর্মের মানুষ সম্প্রীতির সাথে বাস করি। এ ধরনের কাজ স্থানীয় কেউ করেনি। নির্বাচনকে সামনে রেখে সরকারকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলতে, পরিকল্পিতভাবে মন্দিরের প্রতিমা ভাঙা হচ্ছে।’

সন্ন্যাসীতলা মন্দিরের দক্ষিণে কিছু দূর গেলেই বটতলা মন্দির। সেখানে গিয়ে দেখা যায় ওই মন্দিরের একাধিক প্রতিমা ভাঙা হয়েছে। কালী প্রতিমার নিচের বড় অংশ জুড়ে ভাঙা। আজকের পত্রিকাকে এই মন্দিরের ভাঙা প্রতিমা দেখান স্থানীয় নারী টুকু রানী। তিনি জানান, মঙ্গলবার দিবাগত রাতে তাঁরা মন্দিরের কালী প্রতিমা ভাঙা দেখতে পান। খবর পেয়ে রাতেই পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে।

স্থানীয় হিন্দুধর্মাবলম্বীরা বলছেন, মন্দিরের গ্রিল তালা দেওয়া থাকলেও গ্রিলের ফাঁক দিয়ে বাঁশ ঢুকিয়ে খুঁচিয়ে প্রতিমা ভাঙা হয়েছে। স্থানীয় বসতি ও সড়কের পাশের এই মন্দিরের প্রতিমা ভাঙায় স্থানীয়রা নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।

ওই এলাকার যুবক শাওন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘কোন দুনিয়াত আসলাম। এভাবে চলতে পারে না। বাইরের কোনো গ্রুপ এলাকায় এসে এ কাজ করে থাকতে পারে। স্থানীয় কারও এমন সাহস করার কথা নয়।’

প্রিতম নামের আরেক যুবক বলেন, ‘পরশু (মঙ্গলবার) রাত সাড়ে ১২টার দিকে অল্প বয়সী এক ছেলেকে বাঁশ নিয়ে যেতে দেখেছি। সেই ছেলে এই কাজ করে থাকতে পারে। তবে আমি নিশ্চিত নই।’

এ বিষয়ে বটতলা মন্দির কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও স্থানীয় যুবক শৌমিক আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘শহরের ব্যস্ততম জায়গায় এ ধরনের ঘটনা কোনোভাবে কাম্য নয়। আগে ভাবতাম আমাদের এলাকায় ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে কখনো এমন হামলা হবে না। কিন্তু ২০২১ সালের পর থেকে আমরা আতঙ্কিত থাকি।’

কুড়িগ্রামের উলিপুরে গত দুদিনে একাধিক মন্দিরে প্রতিমা ভাঙচুর ও মন্দির থেকে প্রতিমা তুলে নিয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছেশৌমিক আরও বলেন, ‘হঠাৎ করে আবারও এ ধরনের ঘটনা সামনের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে উসকানিমূলক হতে পারে। আমরা এ বিষয়ে শঙ্কিত।’

ওই মন্দির কমিটির সাধারণ সম্পাদক কৃষ্ণ চন্দ্র সরকার বলেন, ‘কোনো একটি মহল পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করতে এই কাজ করছে। স্থানীয় কারও ইন্ধনে বাইরের কোনো গোষ্ঠী পরিকল্পিত ও উদ্দেশ্যমূলকভাবে মন্দিরে হামলা চালাচ্ছে।’

উপজেলার কেন্দ্রীয় শ্মশান মন্দিরের কালী প্রতিমাও ভাঙচুর করা হয়েছে। দিনের বেলা শ্মশান এলাকায় লোক সমাগম থাকলেও রাতে থাকে সুনসান নীরবতা। ওই মন্দিরের কালী প্রতিমাসহ একাধিক প্রতিমা লাঠি দিয়ে খুঁচিয়ে ভেঙে ফেলা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার সকালে মন্দিরে গেলে সেখানে ক্ষোভ প্রকাশ করেন স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের নারী ও পুরুষেরা। তারা বলছেন, ‘এটা উদ্দেশ্যমূলকভাবে ঘটানো হয়েছে। সবগুলো মন্দিরে হামলার পেছনে একই গোষ্ঠীর হাত রয়েছে।’

সেখানে উপস্থিত যোদ্দার পাড়া এলাকার এক নারী পাখি রানী বলেন, ‘এটা কোনো সুস্থ মানুষের কাজ হতে পারে না।’

এদিকে সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে উলিপুর উপজেলা পূজা উদ্‌যাপন পরিষদের সভাপতি সৌমেন্দ্র প্রসাদ পান্ডে গবা আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘একটি প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠী পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করতে এসব কর্মকাণ্ড করছে। প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনায় আমরা খুব মনঃকষ্ট পেয়েছি। বিষয়টি আমরা স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশকে অবহিত করেছি। তারা জড়িত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করতে কাজ করছেন।’

এ বিষয়ে উলিপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ আশরাফুজ্জামান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমরা পরিস্থিতি গুরুত্বের সাথে দেখছি। জড়িত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করার চেষ্টার পাশাপাশি, উপজেলার সকল মন্দিরের নিরাপত্তা বাড়াতে আমাদের লোকজন মাঠে কাজ করছে।’

প্রসঙ্গত, ২০২১ সালে শারদীয় দুর্গা উৎসব চলাকালীন উলিপুরের বিভিন্ন স্থানে স্থায়ী ও অস্থায়ী কয়েকটি মন্দিরে হামলা চালিয়ে মন্দির ও প্রতিমা ভাঙচুর করা হয়। ওই ঘটনায় একাধিক মামলা হয়। মামলায় বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সরকারি টাকায় ব্যক্তিগত সড়ক কার্পেটিং বিচারপতি খিজির হায়াতের, প্রমাণ পেয়েছে দুদক

মামলার আসামিসহ বিএসইসির ২২ কর্মকর্তাকে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত

অভিনেতা সিদ্দিককে মারধর করে থানায় সোপর্দ, ছিঁড়ে ফেলা হয় পরনের পোশাক

এনবিআর চেয়ারম্যানের কক্ষের সামনে কর্মকর্তাদের অবস্থান

‘ভারতে ঢুকে’ পাকিস্তানি সেনাদের গুলি, সীমান্তে সংঘাত গড়াল ষষ্ঠ দিনে

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত