Ajker Patrika

নিখোঁজের ৬ বছর পর ‘মানসিক ভারসাম্যহীন’ স্বাধীনা ফিরে পেলেন পরিবার

নীলফামারী প্রতিনিধি
নিখোঁজের ৬ বছর পর ‘মানসিক ভারসাম্যহীন’ স্বাধীনা ফিরে পেলেন পরিবার

নীলফামারীর সৈয়দপুরে নিখোঁজের দীর্ঘ ছয় বছর পর পরিবারের কাছে ফিরে এলেন মানসিক ভারসাম্যহীন স্বাধীনা বেগম (৫১)। রাজশাহী মেডিকেল কলেজের পরিচ্ছন্নতাকর্মী আয়েশা বেগমের সহায়তায় পরিবারের কাছে ফিরে আসতে পেরেছেন তিনি। নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলার কামারপুকুর ইউনিয়নের পূর্ব অসুরখাইয়ের মো. আমুদ্দি মামুদের স্ত্রী স্বাধীনা। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলা কামারপুকুর ইউনিয়নের উত্তর অসুরখাই ডাক্তারপাড়ার আলাউদ্দিন ও জোবেদা বেগম দম্পতির মেয়ে স্বাধীনা। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় জন্মগ্রহণ করেন বলে বাবা-মা তাঁর নাম রাখেন স্বাধীনা। বিয়ে দেন পাশের গ্রাম পূর্ব অসুরখাইয়ের মো. আমুদ্দিনের সঙ্গে। 

এক সময় গৃহবধূ স্বাধীনার স্বামী সন্তান নিয়ে এক সুখের সাজানো গোছানো সংসার ছিল। কিন্তু প্রায় এক যুগ আগে তিন সন্তানের জননী স্বাধীনা বেগমের মানসিক সমস্যা দেখা দেয়। তিনি কিছুটা মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েন। এ অবস্থায় তাঁর স্বামী দ্বিতীয় বিয়ে করেন। চরম অবহেলা আর উদাসীনতায় কখনো স্বামীর বাড়িতে, কখনো বাবার বাড়িতে ঠাঁই হয় তাঁর। এ অবস্থায় বাবার বাড়ি থেকে হঠাৎ একদিন নিখোঁজ হন মানসিক ভারসাম্যহীন গৃহবধূ স্বাধীনা। 

পরিবারের সদস্যরা তাঁকে সম্ভাব্য বিভিন্ন জায়গায় অনেক খোঁজাখুঁজিও করেন। কিন্তু কোথাও কোনো খোঁজ মেলেনি তাঁর। পরবর্তীতে বাবা-মা ও ভাই এবং পরিবারের স্বামী সন্তানেরা ভেবে নেন তিনি হয়তোবা আর এই দুনিয়াতেই বেঁচে নেই। আর এই ভেবে তাঁর আশা একেবারে ছেড়ে দিয়েছিলেন তাঁরা। তখন থেকেই নিখোঁজ ছিলেন স্বাধীনা। 

এদিকে, প্রায় দুই বছর আগে রাজশাহীতে এক সড়ক দুর্ঘটনায় পায়ে ও মাথায় মারাত্মক আঘাত পান স্বাধীনা। তখন দুর্ঘটনাস্থলের আশপাশের লোকজন তাঁকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজে নিয়ে গিয়ে ভর্তি করেন। সেখানে অজ্ঞাতনামা পরিচয়ে হাসপাতালের মেঝেতে চরম অবহেলায় পড়ে ছিলেন স্বাধীনা। 

পরবর্তীতে হাসপাতালের মজুরিভিত্তিক পরিচ্ছন্নতাকর্মী ও স্বেচ্ছাসেবী আলেয়া সড়ক দুর্ঘটনায় আহত স্বাধীনার দেখভালের দায়িত্ব নেন। প্রায় দুই বছর তাঁর সেবায় আহত স্বাধীনা অনেকটাই সুস্থ হয়ে ওঠেন। এ অবস্থায় মানসিক ভারসাম্যহীন স্বাধীনাকে নিয়ে আলেয়া কী করবেন ভেবে পাচ্ছিলেন না। মানসিক ভারসাম্যহীন হওয়ার কারণে তাঁর কোনো নাম-পরিচয়ও মিলছিল না। 

অনেক চেষ্টার পর এক দিন স্বাধীনার সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলার একপর্যায়ে স্বাধীনা তাঁর বাড়ি সৈয়দপুরে বলে জানায়। এরপর ধীরে ধীরে স্বাধীনা সৈয়দপুর শহরের উপকণ্ঠের বিভিন্ন এলাকার নাম বলতে থাকেন। এরপর স্বাধীনার কথাবার্তায় আলেয়া কিছুটা নিশ্চিত হন তাঁর বাড়ি সৈয়দপুরে কোথাও হবে। 

এরপর গত বৃহস্পতিবার আলেয়া স্বাধীনাকে সঙ্গে নিয়ে তাঁর পরিবারের সন্ধানে রাজশাহী থেকে সৈয়দপুরে পৌঁছান। ওই রাতে সৈয়দপুর ১০০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালেই স্বাধীনাকে নিয়ে রাতযাপন করেন আলেয়া। পরদিন সকালে তিনি স্বাধীনাকে নিয়ে সৈয়দপুর শহরের উপকণ্ঠে বিভিন্ন এলাকায় ঘোরেন। কিন্তু কেউই স্বাধীনার পরিচয় কিংবা পরিবারের খোঁজ দিতে পারেনি। 

পরবর্তীতে সৈয়দপুর থানায় গিয়েও কোনো রকম সহযোগিতা মেলেনি। এ অবস্থায় আলেয়া অনেকটা হতাশ হয়ে পড়েন এবং পুনরায় সৈয়দপুর ১০০ শয্যা হাসপাতালে ফিরে যান। স্বাধীনাকে নিয়ে কী করবেন, কার কাছে রেখে যাবেন—এসব নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় পড়েন। এরপর স্থানীয় দুজন সংবাদকর্মী ও এক বাসিন্দার সহযোগিতায় স্বাধীনার পরিবারের খোঁজ মেলে। 

এরপর স্বাধীনাকে পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। স্বাধীনাকে ফিরে পেয়ে তাঁর স্বামী মোমিন, ভাই জোবায়দুল ইসলামসহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। 

এ ব্যাপারে আলেয়া বেগম বলেন, ‘এত দিন মানসিক ভারসাম্যহীন স্বাধীনাকে নিয়ে খুব দুশ্চিন্তায় ছিলাম। কারণ দুর্ঘটনাজনিত কারণে তিনি হাঁটাচলা করতে পারেন না। আমি তাঁর জন্য একটি ক্র্যাচারের ব্যবস্থা করেছি। আজ স্বাধীনাকে তাঁর পরিবারের হাতে তুলে দিতে পেরে আমি অনেকটা ভারমুক্ত হলাম।’ 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ইরানের পতন হলে, এরপরই রাশিয়া—অভিমত রুশ বিশ্লেষকদের

ইসরায়েলে ২০ লাখ রুশভাষীর বাস, রাশিয়াকে তাঁদের কথা ভাবতে হয়: পুতিন

হরমুজ প্রণালিতে প্রবেশ করে ইউটার্ন নিল দুটি জাহাজ

লাইভ-২ (২৩ জুন, ২০২৫) ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় কাঁপল ইসরায়েল, তেহরানে ভয়াবহ বিস্ফোরণ

চট্টগ্রাম বন্দরের এনসিটি থেকে বিদায় নিচ্ছে সাইফ পাওয়ারটেক

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত