Ajker Patrika

‘১৭০ ট্যাকা দিয়া এক পোয়া মাংস কিনছি’

শিপুল ইসলাম, রংপুর
আপডেট : ১৬ মার্চ ২০২৪, ১৯: ০১
‘১৭০ ট্যাকা দিয়া এক পোয়া মাংস কিনছি’

হাতে ছোট একটি পলিথিনে করে গরুর মাংস নিয়ে বারবার তাকাতে তাকাতে যাচ্ছিলেন ষাটোর্ধ্ব বয়সের শাহিদা বেগম। চোখে-মুখে খুশির ছটা। জানতে চাইতেই বললেন, ‘১৭০ ট্যাকা দিয়া এক পোয়া মাংস কিনছি। মেয়ে-নাতনিদের নিয়া খাব।’ 

আজ শনিবার দুপুরে ঘটনা ঘটে রংপুর প্রেসক্লাব মার্কেটের সামনে। সেখানে শাহিদা বেগমের সঙ্গে কথা হয় আজকের পত্রিকার। তিনি বলেন, ‘সেই গত কোরবানিত গরুর মাংস খাইছি। ইচ্ছা থাকলেও অভাবের সংসারে আধা কেজি মাংস কেনার সামর্থ্য হয় না। শুনছিলাম প্রথম রোজা থাকি ৫০ থেকে ১০০ ট্যাকার গরুর মাংসও কেনা যাইবে। দোকান খুঁজিয়া বাইর করি, মাংস কিনবার আসছি। ১৭০ ট্যাকা দিয়া এক পোয়া মাংস কিনছি। মেয়ে-নাতনিগুলাক নিয়া খাব।’ 

শাহিদা বেগম জানালেন, আট বছর আগে স্বামী মারা গেছে। তিন নাতি-নাতনিসহ পাঁচ সদস্যের সংসার চলে মেয়ের আয়ে। মেয়ে যে আয় করেন তা দিয়ে চাল, ডাল, তেল তরকারি কিনতে হিমশিম খান। বাজারে আধা কেজির নিচে মাংস বিক্রি না করায়, ইচ্ছে থাকলেও এত দিন গরুর মাংস কিনতে পারেনি। 

মূলত রংপুর মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স ইন্ডাস্ট্রির ব্যবস্থাপনায় নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত আয়ের মানুষের নাগালের মধ্যে মাংস বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছেন তিস্তা গ্রুপের মমিনুল ইসলাম ও আবদুর রাজ্জাক নামের দুই ব্যক্তি। ৬৮০ টাকা কেজি দরে সর্বনিম্ন ১০০ টাকার মাংস বিক্রির সিদ্ধান্ত থাকলেও পরে চাহিদার ওপর ভিত্তি করে ৫০ টাকার পরিমাণও বিক্রি করতেন তাঁরা। আর রমজান মাসজুড়ে চলবে গরুর মাংস বিক্রির এই কার্যক্রম। 

এতে শুধু বৃদ্ধা শাহিদা বেগমই নন, সাধ্যমতো গরু মাংস কিনতে পেরে তাঁর মতো নিম্ন আয়ের মানুষের মধ্যে স্বস্তি এসেছে। 

আজ শনিবার রংপুর নগরীর প্রেসক্লাব মার্কেট, কাচারি বাজার, কেরানীপাড়া মোড়, লালকুঠি মোড়, বঙ্গবন্ধু ম্যুরাল মোড় ঘুরে দেখা যায় ‘হালাল মিট’ লেখা সংবলিত পিকআপ ভ্যানে করে ৬৮০ টাকা কেজি দরে গরু মাংস বিক্রি হচ্ছে। সর্বনিম্ন ১০০ গ্রাম পর্যন্ত মাংস কিনতে পারছেন ক্রেতারা। কমমূল্যে স্বল্প পরিমাণ মাংস কিনতে উপচে পড়া ভিড় লক্ষ করা গেছে। 

এ ছাড়া সেখানে প্রতি কেজি গরুর কলিজা ৭৮০ টাকা, প্রসেসিং ভুঁড়ি ৪৫০ টাকা, গরুর পা ৮০০ থেকে ১৬০০ টাকা, গরুর মাথার মাংস ৫০০ টাকা, গরুর মাথার মগজ ৩৫০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। রয়েছে হোম ডেলিভারির ব্যবস্থাও। 

যাত্রীর সঙ্গে এসে গরুর মাংস কিনে রিকশার সিটের ভেতরে রাখছিলেন সিও বাজারে রিকশাচালক নুর হোসেন। তিনি বলেন, ‘ভাই, গরুর মাংসের যে দাম, বহুদিন আগোতে হামার মতো গরিবের নাগালের বাইরে গেইছে। ব্রয়লার মুরগিই এখন হামার গরুর মাংস, তারও দাম বাড়ছে। অ্যাঁটে আসি দেকনো মানুষ ১০০ ট্যাকাতো মাংস কিনোছে। সুযোগ পানু, সেই জন্য দেড়শ ট্যাকার মাংস কিননু পরিবারে জন্যে।’ 

কাচারি বাজারে মাংস কিনতে আসা রংপুর সরকারি কলেজের স্নাতকোত্তর পড়ুয়া নাতিকুন নাহার বলেন, ‘এমনি সময় মাংসের দোকানগুলোতে ৫০০ গ্রামের নিচে মাংস বিক্রি হয় না। কলেজ হোস্টেলে থাকি, আমার জন্য আড়াই শ গ্রাম মাংস কিনলেই হয়। এখানে ১০০ টাকারও গরুর মাংস পাওয়া যাচ্ছে, তাই কিনে নিলাম। এমন উদ্যোগ নগরীতে সারা বছর থাকা উচিত।’ 

মাংস বিক্রয় কার্যক্রমের উদ্যোক্তা আবদুর রাজ্জাকের সঙ্গে কথা হয়ে আজকের পত্রিকার। তিনি বলেন, ‘সর্বনিম্ন ১০০ টাকায় মাংস বিক্রি শুরু করি। কিন্তু মানুষের আবদারে ৫০ টাকায়ও মাংস বিক্রি করা হচ্ছে। এক কথাই আমরা কাউকে বিমুখ করছি না। দেশি জাতের গরু ৬৮০ টাকা কেজিতে বিক্রি করছি।’ 

অপর উদ্যোক্তা মমিনুল ইসলাম বললেন, ‘এখন শুধু শহরের কয়েকটা পয়েন্টে মাংস বিক্রি চলছে। আমরা স্লোগান দিয়েছি “সাধ্য যতটুকু, কিনতে পারবেন ততটুকু”। ইচ্ছে আছে রংপুর সিটি করপোরেশনের প্রত্যেক ওয়ার্ডে পিকআপ ভ্যানে হালাল মিটের মাংস ন্যায্য দামে বিক্রয়ের। আমার চাওয়া—মানুষ যেন তার সাধ্যের মধ্যে মাংস কিনতে পারে।’ 

এ বিষয়ে রংপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ন্যায্য দামে সাধ্যমতো মাংস বিক্রির কার্যক্রম আমি নিজে গিয়ে দেখেছি। মানুষ সাধ্যের মধ্যে মাংস কিনতে পেরে খুশি। এমন উদ্যোগ নিঃসন্দেহে জনহিতকর।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত