Ajker Patrika

পথ আটকে শিক্ষার্থীকে উত্ত্যক্ত, পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা না নেওয়ার অভিযোগ

ডিমলা (নীলফামারী) প্রতিনিধি
আপডেট : ১৯ অক্টোবর ২০২৩, ১১: ৪৭
পথ আটকে শিক্ষার্থীকে উত্ত্যক্ত, পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা না নেওয়ার অভিযোগ

এক মাস ধরে গৃহবন্দী সপ্তম শ্রেণির এক স্কুলছাত্রী। যায় না বিদ্যালয়ে। পড়াশোনার পাশাপাশি থমকে গেছে তার দৈনন্দিন কার্যক্রম। স্থানীয় এক যুবকের নিয়মিত উত্ত্যক্তে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত এই ছাত্রী আতঙ্কে বাইরে যায় বন্ধ করে দিয়েছে। বিচার পেতে ওই ছাত্রীর পরিবার মামলা করতে গেলেও মামলা নেয়নি পুলিশ। উল্টো মামলা না করতে চাপ দেয়। একপর্যায়ে ১৫ হাজার টাকাও দাবি করে পুলিশ। বাধ্য হয়ে ওই ছাত্রীর পরিবার দ্বারস্থ হয় আদালতে। 

নীলফামারীর ডিমলার উপজেলার ছাতনাই এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনা ধামাচাপা দিতে অভিযুক্তরা ওই ছাত্রীর পরিবারকে বিভিন্নভাবে হুমকি দিচ্ছেন। 

ওই ছাত্রীর স্বজনদের অভিযোগ, শিক্ষার্থীর বাবা বাদী হয়ে চারজনের নাম উল্লেখ করে লিখিত অভিযোগ করলেও মামলা নেয়নি ডিমলা থানা-পুলিশ। মামলা রুজুর জন্য উপপরিদর্শক (এসআই) নিসার আলী ১৫ হাজার টাকা ঘুষ দাবি করেছেন। পরে ১০ সেপ্টেম্বর নীলফামারী আদালতে মামলা করেন। 

অভিযুক্তরা হলেন নুর আলম (২৪), নাসিরুল ইসলাম (নাসু) (৪২), আবু তৈয়ব আলী (৪২) ও আবু সায়েদ। তাঁরা উপজেলার মধ্য ছাতনাই এলাকার বাসিন্দা। নুর আলম বেকার, নাসিরুল ইসলাম পশ্চিম ছাতনাই ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যানের ছোট ভাই, তৈয়ব আলী দলিল লেখক ও আবু সায়েদ সাবেক ইউপি সদস্য। 

মামলার অভিযোগ ও ভুক্তভোগী ছাত্রীর পরিবার জানায়, ছাতনাই উচ্চবিদ্যালয়ের ওই শিক্ষার্থীকে বিদ্যালয়ে যাতায়াতের সময় মধ্য ছাতনাই গ্রামের নুর আলম দীর্ঘদিন ধরে উত্ত্যক্ত করছিল। গত ২৬ আগস্ট বিকেলে বাড়ি থেকে কিশোর-কিশোরী ক্লাবে যাওয়ার পথে ঠাকুরগঞ্জ এলাকায় ওই শিক্ষার্থীকে জোর করে জড়িয়ে ধরে নুর। হাত ধরে টানাটানির একপর্যায়ে স্কুলছাত্রীর ওড়না খুলে ফেলেন। পরে শিক্ষার্থীর চিৎকারে নুর পালিয়ে যাওয়ার সময় স্থানীয়রা তাঁকে আটক করে ক্লাবে নিয়ে যান। পরে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের ভাই নাসিরুল ইসলামসহ তৈয়ব আলী ও আবু সায়েদ নামের ব্যক্তি ঘটনাস্থলে এসে নুর আলমের পক্ষ নিয়ে এ বিষয়টি বাড়াবাড়ি না করার জন্য ভুক্তভোগী ছাত্রীকে হুমকি দেন। তখন সহপাঠীরা ওই ছাত্রীকে বাড়িতে নিয়ে যায়। ঘটনার দিন সন্ধ্যায় থানায় চারজনের নাম উল্লেখ করে লিখিত অভিযোগ দেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর বাবা। অভিযোগের তিন দিন পর পুলিশ ঘটনাস্থলে যায় তদন্ত করতে। 

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর বাবা বলেন, ‘পুলিশি তদন্তের পর মামলা রুজু করতে আমরা অন্তত সাতবার থানায় গিয়েছি। সেখানে আমাদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসিয়ে রাখা হতো। পরের দিন আবার থানায় যাই। একপর্যায়ে মামলার তদন্তকারী এসআই নিশার আলী আমাকে মামলা না করার জন্য চাপ দেন। তিনি আমাকে বলেন, “মামলা করে লাভ কি? আসামি পক্ষ দুই লাখ টাকা দেবে আপস করেন।” তাঁর কথায় রাজি না হয়ে মামলা করতে চাইলে খরচ বাবদ ১৫ হাজার টাকা দাবি করেন এসআই এবং শর্তজুড়ে দেন আসামিকে আমাকেই ধরিয়ে দিতে হবে। এরপর আমি সেখান থেকে বাড়ি চলে যাই। পরে ঘটনার ১০ দিন পর ১০ সেপ্টেম্বর নীলফামারী আদালতে অভিযোগ দায়ের করি। এখনো তদন্তে আসেনি।’

তিনি অভিযোগ করেন, আদালতে মামলা করায় এসআই নিসার আলী নসরুল, তৈয়ব, সায়েদসহ অভিযুক্ত যুবক তাঁকে বিভিন্নভাবে হুমকি দিচ্ছেন। 

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর মা বলেন, ‘আমাদের মানসিক অবস্থা খুবই বিপর্যস্ত। আমার মেয়েও বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। সে ট্রমার মধ্যে চলে গেছে। এদিকে প্রভাবশালীরা মামলা না করার জন্য হুমকি দিচ্ছে। বখাটে নুর ও লোকজন আমার মেয়ের মুখে অ্যাসিড নিক্ষেপসহ তাকে তুলে নেওয়ার হুমকি দিচ্ছে। স্থানীয় প্রভাবশালীরা আমাদের মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর হুমকি দিচ্ছে। বখাটেদের ভয়ে এক মাস স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দেয় মেয়েটি। পুলিশ একটু আন্তরিক হলে আমার মেয়ে এ যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেত।’ 

ভুক্তভোগী ওই শিক্ষার্থী বলে, ‘এক মাসের বেশি সময় ধরে বখাটের ভয়ে স্কুলে যাইতে পারতেছি না। ওই বখাটে যদি আবার আসে। আপনারা আমার স্কুলে যাওয়ার ব্যবস্থা করে দিন।’ 

কিশোর-কিশোরী ক্লাবের শিক্ষক সোহেল ইসলাম বলেন, ‘আমরা তখন ক্লাবেই ছিলাম। চিৎকার শুনে তাড়াহুড়ো করে গিয়ে দেখি নুরকে অনেক লোকজন ঘিরে ধরে রেখেছে। ওই ছাত্রী কান্নায় ভেঙে পড়েছে। অনেক কষ্টে তার কাছে জানতে পারি, তাকে নুর অশ্লীল কিছু করার চেষ্টা করেছেন। আটক নুর আলমও অপরাধ স্বীকার করেন। বিষয়টি তৎক্ষণাৎ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। পরে ক্লাবের কো-অর্ডিনেটর সংরক্ষিত মহিলা সদস্য রশিদা বেগম ও স্থানীয় কয়েকজন নুরকে শাসিয়ে ছেড়ে দেন।’ 

অন্য শিক্ষার্থীর অভিভাবকেরা বলছেন, ‘মহিলা অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে কিশোর-কিশোরী ক্লাবে নারী নির্যাতন, ইভ টিজিং, যৌন হয়রানি প্রতিরোধসহ ১৭টি বিষয়ে শিক্ষা দেওয়া হয়। অথচ এই ক্লাবের শিক্ষার্থীই যৌন হয়রানির শিকার হলো। তাহলে এখানে পাঠিয়ে কি লাভ?’ 

উপজেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা পুরবী রানী জানান, ঘটনাটি তিনি শুনেছেন। তবে তিনি জানতেন বিষয়টি মীমাংসা হয়ে গেছে। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

ছাতনাই উচ্চবিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘ওই ঘটনার পর থেকে মেয়েটি আজও বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত রয়েছে।’ 

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে এসআই নিসার আলী বলেন, ‘শিক্ষার্থীর পরিবারের অভিযোগ মিথ্যা। অভিযোগ তদন্তের পর মামলা রুজু করার জন্য আমিই তাদের থানায় আসতে বলেছি। কিন্তু তারা আসেনি।’ 

ডিমলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) লাইছুর রহমান বলেন, ‘ওই শিক্ষার্থীর পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ পাওয়া গেছে। অভিযোগ তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছিলাম। পরবর্তীকালে মামলার তদন্ত অফিসার আমাকে জানায় তাঁরা মামলা করবে না।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সাবেক সিইসি নূরুল হুদার গলায় ‘জুতার মালা’ দিয়ে পুলিশে সোপর্দ

ইরানের পতন হলে, এরপরই রাশিয়া—অভিমত রুশ বিশ্লেষকদের

যুক্তরাষ্ট্রের হামলার পর মোদির সঙ্গে ইরানের প্রেসিডেন্টের ফোনালাপ

অনেক দেশ ইরানকে পারমাণবিক অস্ত্র দিতে প্রস্তুত, দাবি পুতিনের শীর্ষ সহযোগীর

মার্কিন হামলার পর ইসরায়েলে ‘খোররামশহর-৪’ ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ল ইরান

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত