Ajker Patrika

ভুক্তভোগীদের ফাঁসিয়ে ৬ লাখ টাকা আত্মসাৎ, এসআইয়ের অডিও ফাঁস

রাণীশংকৈল (ঠাকুরগাঁও) প্রতিনিধি 
প্রতারণার অভিযোগে গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা। ছবি: আজকের পত্রিকা
প্রতারণার অভিযোগে গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা। ছবি: আজকের পত্রিকা

নকল সোনার পুতুল ও রুপার মুদ্রা দেখিয়ে প্রতারণার অভিযোগে পাঁচজনকে গ্রেপ্তারের পর ঠাকুরগাঁও রাণীশংকৈল থানার এসআই শহিদুল ইসলামের কথোপকথনের একটি অডিও ফাঁস হয়েছে। এতে বেরিয়ে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য।

গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে সামাজিক মাধ্যমে এটি ছড়িয়ে পড়েছে। অডিও ফাঁসের পর স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

ফাঁস হওয়া অডিও থেকে জানা গেছে, রাণীশংকৈল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আরশেদুল হক, উপপরির্দশক (এসআই) শহিদুল ইসলামসহ কয়েকজনের যোগসাজশে ওই ঘটনায় আটক ব্যক্তিরা হলেন ক্রেতা।

প্রতারক বানিয়ে তাঁদের কাছে কাছে থাকা ৬ লাখ ৮০ হাজার টাকা আত্মসাৎ করা হয়। বিক্রেতা বা প্রতারণার ফাঁদ পাতা অপরাধীদের না ধরে ভুক্তভোগী ব্যক্তিদের প্রতারক বানিয়ে মামলা দিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

পুলিশকে তথ্য সরবরাহকারী আকাশ নামের এক ব্যক্তির সঙ্গে এসআই শহিদুল ইসলামের কথোপকথনের ফাঁস হওয়া অডিওতে এসব চাঞ্চল্যকর তথ্য জানা গেছে।

১৩ মিনিট ৪২ সেকেন্ডের অডিওতে তথ্য প্রদানকারী আকাশ এসআই শহিদুল ইসলামকে বলেন, ‘আমি আগে থেকেই জানতাম, যাদের আটক করে জেলে দিয়েছেন, তারা ক্রেতা হিসেবে না বুঝে নকল সোনা কিনতে আসছিল। তাদের কোনো দোষ নেই। তাদের কাছে ৬ লাখ ৮০ হাজার টাকা ছিল। আমার সঙ্গে আপনাদের (পুলিশের সঙ্গে) কন্ট্রাক হয়, তাদের ধরিয়ে দিলে লাখে ৩০ হাজার টাকা দেবেন। কেন দিলেন না?’

এসআই শহিদুল ইসলাম উত্তরের বলেন, ‘স্যার (ওসি) আমাকে আপনার নম্বর দিয়ে আপনার সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেছেন, আপনি না আসলে লোক পাঠাবেন, তা-ও পাঠাননি। কাউকে পাঠান।’

আকাশ—আপনারা কনফার্ম না করলে বা না ডাকলে কীভাবে পাঠাব। তাদের কাছে ৬ লাখ ৮০ হাজার টাকা।

শহিদুল—না তাদের কাছে এত টাকা ছিল না। পাওয়া গেছে ৩ লাখ। ওই টাকাও তাদের ফেরত দেওয়া হয়েছে। তখন খুশি হয়ে স্যারকে ৫০ হাজার টাকা দেয় তারা।

আকাশ—তারা কেউ টাকা ফেরত পায়নি। তারা সবাই তো জেলে। আর কাকে টাকা ফেরত দিলেন, তা আমি দেখব কেন? সোর্সের সঙ্গে যা কন্ট্রাক হয়েছে, তা দিয়ে দেবেন। আর তারা তো নিরপরাধ মানুষ ছিল। তারা কিনতে আসছিল।

এসআই শহিদুল—তারা সত্যি নির্দোষ ছিল। বড় স্যারও বলেছিল, তাদের মামলা দেওয়া হলো। তবে ওসি স্যার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কী করার। আর তাদের যে টাকা ফেরত দিয়েছে, ওখানে সাংবাদিকেরাও ছিল। আমিও আগে থেকে জানতাম এই ব্যবসা চলে সেখানে। যাক, আপনি লোক পাঠান।

এর বাইরেও অর্থ লেনদেনসহ বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলতে শোনা যায় অডিওতে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অডিও পোস্টের কমেন্টে নেটিজেনরা লেখেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকার পতন হলেও তার রেখে যাওয়া দোসররা এখনো বহাল তবিয়তে রয়েছে বিভিন্ন থানায়। তারা ৫ আগস্টের পর থেকে গ্রামের সাধারণ মানুষদের জিম্মি করছে।’

ফাঁস হওয়া কলরেকর্ডের মাধ্যমে স্পষ্ট, পুলিশের অভিযানে গত সোমবার (১ সেপ্টেম্বর) যাঁদের আটক করা হয়েছিল, তাঁরা নির্দোষ। ওসির চক্রান্তে তাঁদের ক্রেতা থেকে প্রতারক সাজিয়ে মিথ্যা মামলা দিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

আর এর পেছনে রাণীশংকৈল থানার ওসিসহ পুলিশের বেশ কিছু পুলিশ কর্মকর্তা জড়িত রয়েছেন। অবিলম্বে ওই থানার ওসি আরশেদুল হকসহ জড়িত ব্যক্তিদের দ্রুত ব্যবস্থা নিতে ঊর্ধ্বতনদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়।

ফাঁস হওয়া কলরেকর্ডের বিষয়ে কথা বলতে রাণীশংকৈল থানার ওসি আরশেদুল হককে একাধিকবার কল করে সাড়া না পাওয়ায় তাঁর বক্তব্য জানা যায়নি। তবে কলরেকর্ডের কথা স্বীকার করেছেন অভিযুক্ত এসআই শহিদুল ইসলাম। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ওসি সাহেবের নির্দেশেই আকাশের সঙ্গে কথা হয়। এখানে আমার কোনো দোষ নেই।’

এ বিষয়ে সহকারী পুলিশ সুপার (রাণীশংকৈল সার্কেল) শ্নেহাষীশ কুমার দাস বলেন, ‘বিষয়টি অবগত হয়েছি। তদন্ত করে পুলিশ সুপারের নির্দেশে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

ঠাকুরগাঁওয়ের পুলিশ সুপার জাহিদুল ইসলাম বলেন, ঘটনার বিষয়টি নজরে এসেছে। তদন্ত করা হচ্ছে। এর সঙ্গে জড়িত থাকলে ছাড় নয়, তাঁদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

উল্লেখ্য, এর আগে গত সোমবার নকল সোনার পুতুল ও রুপার মুদ্রা দেখিয়ে প্রতারণার অভিযোগে পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এ সময় প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত সোনালি রঙের মূর্তি, পুরোনো নকশার রুপার মুদ্রা ও নগদ টাকা উদ্ধার করা হয়েছে। গত মঙ্গলবার তাঁদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত