Ajker Patrika

‘রাস্তাটার জন্য এলাকাত বিয়ার সম্বন্ধ আইসে না’

তারাগঞ্জ (রংপুর) প্রতিনিধি
আপডেট : ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১৬: ৪০
‘রাস্তাটার জন্য এলাকাত বিয়ার সম্বন্ধ আইসে না’

‘ভালো করি ফটো তুলি নেও। হামার র্দুদশা কাঁয়ও দ্যাখেনা। কাদার জন্যে বর্ষার সময়ে ঘর থাকি বেরার পাই না। হামার গ্রামের নাম শুনলে রিকশা-ভ্যান আইসে না। হাটি যাওয়া আইসা করা নাগোছে। হামরা দশ সের পাঁচ সের চাউল চাই না। হামাক রাস্তাটা পাকা করি দেও।’

বর্ষায় বেহাল রাস্তায় এভাবেই দুর্দশার বর্ণনা দেন রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলার কামারপাড়া গ্রামের বৃদ্ধ বলরাম রায় (৬৫)। 

উপজেলা সদর থেকে আট কিলোমিটার দূরে সয়ার ইউনিয়নের কামারপাড়া-চেংপাড়া কাঁচা রাস্তাটির দৈর্ঘ্য তিন কিলোমিটার। রাস্তার দুই পাশে কামারপাড়া, ডাঙ্গাপাড়া, মুচিপাড়া, ভাদুপাড়া, মিস্ত্রিপাড়া, চেংপাড়া, বকসিপাড়া, কাজীপাড়া, ফকিরপাড়া, আশ্রমপাড়া, চেংপাড়াসহ ১১টি গ্রাম। উপজেলা সদরসহ বিভিন্ন স্থানে যাতায়াতের একমাত্র পথ এটি। বর্ষা এলেই এক হাঁটু কাদাপানি জমে থাকে। 

আজ শনিবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, রাস্তাটিতে ১০-১৫ মিটার পরপর বড় বড় গর্ত। গর্তে জমে আছে কাদাপানি। লোকজন কাদাপানি মাড়িয়ে চলাচল করছে। 

কামারপাড়া গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা তরনী কান্ত রায় বলেন, রাস্তাটিতে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা নেই। যার ফলে বৃষ্টির পানি জমে কাদাপানির সৃষ্টি হয়। কাদার কারণে এলাকার লোকজন যাতায়াত করতে পারছে না। গ্রামে গাড়িঘোড়া আসে না। কৃষকেরা ফসল ভারে করে অন্য সড়কে নিয়ে যাওয়ার পর ভ্যানে করে শহরে হাটে বাজারে নিয়ে যায়। রাস্তাটি পাকা করার জন্য বিভিন্ন সময় সংশ্লিষ্টদের অনুরোধ করেছি। কিন্তু কেউ পদক্ষেপ নেয়নি। রাস্তাটি পাকা হলে কয়েকটি গ্রামের মানুষের জীবন পাল্টে যাবে। 

চেংপাড়া মোড়ে কাদাপানির ওপর দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে মোটরসাইকেল চালিয়ে রাস্তা পার হচ্ছিলেন ডালিম রায়। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, ‘ভাই মেম্বার-চেয়ারম্যানকে একশবার পার হইছে সড়কটা পাকা বানার কথা কবার জন্যে। তাও কাঁয়ও শোনে না। কাদার জন্যে হামরা চলাচল করিবার পাওছি না। গ্রামের সউগ লোক এবার একটে হছি (ঐক্যবদ্ধ হয়েছি), যাঁয় রাস্তা পাকা বানাইবে, তাকে ভোট দিমো।’ 

চেংপাড়া মোড়। রাস্তাটির ১০-১৫ মিটার পরপরই এমন অবস্থাএই রাস্তার কারণে এলাকার মানুষেরা শুধু অর্থনৈতিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে তা নয়, এখানে কিছু সামাজিক সমস্যাও তৈরি হচ্ছে। রাস্তার দুই পাশের গ্রামগুলোতে বর্ষাজুড়ে সামাজিক কর্মকাণ্ড প্রায় বন্ধ থাকে।

মুচিপাড়া গ্রামের গৃহবধূ প্রজাপতি রানী বলেন, ‘এই রাস্তাটাই যত সমস্যার। রাস্তাটার জন্য এলাকাত বিয়ার সম্বন্ধ আইসে না। বর্ষার সময় বিয়া সাদিও হয় না। ছাওয়া ছোটোর বিয়াও খড়ার সময় ছাড়া দিবার পারি না। সাগাই সোদরও (আত্মীয়-স্বজন) বিরক্ত। এমনতোন আরও কতো সমস্যাত আছি। তাঁক তোমাক কয়া বুঝির পামো না। সরকারেরটে হামরা কিছু চাই না, খালি হামাক রাস্তাটা পাকা বানে দেউক।’ 

জানতে চাইলে সয়ার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন আজম বলেন, ওই রাস্তাটিসহ আমার ইউনিয়নের বেশ কিছু রাস্তা পাকা করণের জন্য উপজেলা উন্নয়ন কমিটির সভায় একাধিকবার উপস্থাপন করেছি। কিন্তু কাজ হয়নি। ফলে কামারপাড়া-চেংপাড়া রাস্তার পাশের গ্রামের মানুষ পানি মারিয়ে অতি কষ্টে ওই রাস্তা দিয়ে চলাচল করছে। 

তারাগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলী আহম্মেদ হয়দার জামান বলেন, ওই কাঁচা রাস্তাটি ছাড়াও উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নে বেশ কিছু কাচা রাস্তা রয়েছে। বর্ষার সময় কাদায় লোকজনের দুর্ভোগের কথা জানা আছে। বরাদ্দ এলে পর্যাক্রমে রাস্তাগুলো পাকা করা হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত