Ajker Patrika

নাতির ছেলের সঙ্গে প্রথম শ্রেণিতে ষাটোর্ধ্ব মান্নান

মোমেনুর রশিদ সাগর, পলাশবাড়ী (গাইবান্ধা) 
আপডেট : ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ২২: ০৪
নাতির ছেলের সঙ্গে প্রথম শ্রেণিতে ষাটোর্ধ্ব মান্নান

আব্দুল মান্নান। বয়স ৬৫ বছর। একজন শ্রমজীবী মানুষ। তাঁর জীবনের বেশির ভাগ সময় কেটেছে শ্রম বিক্রি করে। এতটা বয়সেও ছুটি মেলেনি তাঁর। বর্তমানে স্থানীয় বাজারে ছোট একটি দোকানে বসে পানের খিলি বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। বয়সের ভারে শরীরের জোর কমে গেছে মানুষটির। জীবনের এতটা পথ পেরিয়ে এলেও কখনো সুযোগ হয়নি লেখাপাড়া শেখার। কিন্তু দোকানের হিসাব-নিকাশ তাঁকে বুঝিয়ে দিয়েছে, শিক্ষার কোনো বিকল্প নেই। তাই বৃদ্ধ বয়সে এসে নাতি মাহফুজারের ছেলে কাওসারের (৫) সঙ্গে এ বছর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছেন তিনি। গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলার কিশোরগাড়ী ইউনিয়নে কাশিয়াবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তিনি ভর্তি হন। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মনিরুজ্জামান মিথুন মণ্ডল আজকের পত্রিকাকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। 

সরেজমিনে গত বৃহস্পতিবার কাশিয়াবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দেখা গেছে, শ্রেণিকক্ষে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে লেখাপড়া শিখছেন আব্দুল মান্নান। তাঁর রোল নম্বর ৩৭। বই ও কলম হাতে পুতির হাত ধরে নিয়মিত বিদ্যালয়ে যান তিনি। আব্দুল মান্নানের বাড়ি ওই ইউনিয়নের কাশিয়াবাড়ী গ্রামে। তাঁর বাবার নাম মৃত তছিম উদ্দিন। 

বৃদ্ধ বয়সে স্কুলে যাওয়ার কারণ জানতে চাইলে দীর্ঘ জীবনের স্মৃতিচারণা করে আব্দুল মান্নান আজকের পত্রিকাকে বলেন, বাবা-মায়ের অভাবের সংসারে ৬ ভাই, ১ বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন তৃতীয়। সংসারে সব সময় অভাব লেগেই থাকত। কাঁঠাল সেদ্ধ খেয়েও জীবন ধারণ করতে হতো। কখনো লেখাপড়া শেখার সুযোগ পাননি। 

ছোটবেলা থেকেই বাবার মতো অন্যের বাড়ি-জমিতে কাজ করতেন তিনি। সারা দিন শ্রম বিক্রি করে মিলত ১ থেকে ২ টাকা অথবা ১ কেজি চাল। এরপর টানা দুই যুগ চালাতেন প্যাডেলচালিত রিকশা-ভ্যান। একপর্যায়ে শরীরে বার্ধক্য নেমে আসে। জীবিকার তাগিদে নিরুপায় হয়ে বাজারে ছোট দোকানে পানের খিলি বিক্রি শুরু করেন। 

তিনি আরও বলেন, গ্রামের দোকানে মোট বিক্রির অর্ধেকই হয় বাকিতে। মুখে মুখে এত হিসাব বৃদ্ধ বয়সে মনে রাখা সম্ভব হয় না। সেখান থেকেই বাকি লেনদেনের হিসাব লিখে রাখার তীব্র প্রয়োজন অনুভব করি। বাধ্য হয়ে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের পেছনে অনেক ঘুরে অবশেষে ভর্তি হতে পেরে আমি অত্যন্ত আনন্দিত। সকালে বিদ্যালয়ে আসি। ছুটির পর দোকানে বসে ব্যবসা করেন বলে জানান। 

আব্দুল মান্নান বলেন, ১৭ বছর বয়সে বিয়ে করেন তিনি। তাঁর দুই মেয়ে ও এক ছেলে। দুই মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন অনেক আগে। ছেলে মমিরুল পলাশবাড়ী সরকারি কলেজ থেকে স্নাতক পরীক্ষা দেবে। বড় মেয়ের ছেলে মাহফুজার বিয়ে হয়েছে। তাঁর ছেলের নাম কাওসার। যে সম্পর্কে পুতি। তার সঙ্গে একত্রে একই শ্রেণিতে ভর্তি হন তিনি। 

পলাশবাড়ীর কাশিয়াবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে খুদে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে প্রথম শ্রেণিতে ক্লাস করছেন ষাটোর্ধ্ব আব্দুল মান্নান। গত বৃহস্পতিবারের তোলা ছবি। আজকের পত্রিকাকাশিয়াবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মনিরুজ্জামান মিথুন মণ্ডল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘পেশায় পানদোকানি আব্দুল মান্নান একজন ধার্মিক মানুষ। তিনি বিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার জন্য দীর্ঘদিন থেকে অনুরোধ করে আসছেন। তাঁর অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে চলতি বছর প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি দেখিয়ে বই দেওয়া হয়েছে। তিনি বই হাতে করে নিয়মিত বিদ্যালয়ে এসে বাচ্চাদের সঙ্গে মনোযোগের সঙ্গে ক্লাসে লেখাপড়া করছেন। তা ছাড়া তাঁর আচার-ব্যবহার ভালো। তাঁর ক্লাসের সহপাঠীরা তাঁকে পেয়ে আনন্দের সঙ্গে পড়ালেখা করছে।’ 

পলাশবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কামরুজ্জামান নয়ন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘অনেক দেরিতে হলেও আব্দুল মান্নান লেখাপড়া শেখার প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করতে পেরেছেন। তিনি যেহেতু শিক্ষা গ্রহণ করতে ইচ্ছুক, সেটা খুব ভালো কথা। যদি তিনি এই বয়সে শিক্ষা গ্রহণ করে নিজে পড়তে, লিখতে, হিসাব রাখতে পারেন, তাহলে তাঁরই কাজে লাগবে। এটা তাঁর অত্যন্ত ভালো একটা উদ্যোগ এবং অন্যদের জন্যও শিক্ষণীয়।’ 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

টাকা দিয়ে নারীর চাবুকের ঘা খাচ্ছিলেন পুরুষ, দুজন গ্রেপ্তার

ভারতের সঙ্গে সংঘাতে পাকিস্তানের ভাগ্যনিয়ন্তা সেনাপ্রধান জেনারেল মুনির

প্রবাসীর রেমিট্যান্সের অর্থ আত্মসাৎ, নারী ব্যাংক কর্মকর্তা কারাগারে

পাকিস্তানে কীভাবে হামলা চালাতে পারে ভারত, ইতিহাস যা বলছে

কোটি টাকা ‘ভর্তুকি’র জিম্বাবুয়ে সিরিজে বাংলাদেশ যা পেল

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত