Ajker Patrika

দুগ্ধ ও গবাদি উন্নয়ন খামার: সর্বোচ্চ দরেও কাজ আওয়ামী সিন্ডিকেটে

  • সরকারের গচ্চা যাচ্ছে প্রায় ৯২ লাখ টাকা
  • সরকার পতনের পরও খামারে বহাল আওয়ামী লীগের শক্তিশালী সিন্ডিকেট
 রিমন রহমান, রাজশাহী
আপডেট : ০৯ আগস্ট ২০২৫, ০৭: ৩৩
দুগ্ধ ও গবাদি উন্নয়ন খামার: সর্বোচ্চ দরেও কাজ আওয়ামী সিন্ডিকেটে

সরকারি কেনাকাটার ক্ষেত্রে যে ঠিকাদার সর্বনিম্ন দরে মালপত্র সরবরাহ করবেন, তাকেই কাজ দেওয়ার কথা। তবে উল্টো চিত্র দেখা যাচ্ছে রাজশাহী আঞ্চলিক দুগ্ধ ও গবাদি উন্নয়ন খামারে। এখানে সর্বনিম্ন নয়, যাঁরা সর্বোচ্চ দর দিয়েছেন—তাঁদেরই কাজ দেওয়া হয়েছে। এতে সরকারের প্রায় ৯২ লাখ টাকা বাড়তি খরচ হচ্ছে। যাঁরা কার্যাদেশ পেয়েছেন তাঁরা আওয়ামী লীগের শক্তিশালী সিন্ডিকেট। সরকার পতনের পরও খামারে এ সিন্ডিকেট বহাল।

দরপত্রপ্রক্রিয়ার নথিপত্রে দেখা গেছে, রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার রাজাবাড়ীহাটে অবস্থিত আঞ্চলিক দুগ্ধ ও গবাদি উন্নয়ন খামারে ২০২৫-২৬ অর্থবছরে গবাদি পশুর খাবার সরবরাহের একটি প্যাকেজের চারটির মধ্যে তিন গ্রুপের কাজই পেয়েছে আওয়ামী সিন্ডিকেট।

৮ জুলাই প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের পরিচালক (উৎপাদন) ড. এ বি এম খালেদুজ্জামান স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে কার্যাদেশ অনুমোদন দেওয়া হয়। দরপত্রপ্রক্রিয়ায় অংশ নেওয়া সর্বনিম্ন দরদাতাকে কাজ না দেওয়ায় সরকারের ৯১ লাখ ৮১ হাজার ৪৭২ টাকা বাড়তি খরচ হচ্ছে।

তিনটি গ্রুপের মধ্যে দুটির কাজ পেয়েছে রাজশাহী জেলা কৃষক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ইমন মণ্ডলের বাবা রবিউল করিমের মালিকানাধীন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স করিম ট্রেডার্স। বাস্তবে প্রতিষ্ঠানটির সব কার্যক্রমই দেখভাল করেন ইমন মণ্ডল নিজে। ৫ আগস্টের পর থেকে তিনি আত্মগোপনে রয়েছেন। অন্য একটি গ্রুপের কাজ পেয়েছে সাবেক প্রাণিসম্পদমন্ত্রী আব্দুল লতিফ বিশ্বাসের এপিএস হিলটন সাহার মালিকানাধীন এইচএন এন্টারপ্রাইজ।

নিয়মানুযায়ী, অনুমোদিত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মালিককে সশরীরে উপস্থিত থেকে চুক্তি স্বাক্ষর করতে হয়। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে আত্মগোপনে রয়েছেন হিলটন সাহা। তাঁর পক্ষে চুক্তি স্বাক্ষরের জোর তৎপরতা চালাচ্ছেন করিম ট্রেডার্সের মালিক রবিউল করিম এবং সংশ্লিষ্ট কিছু কর্মকর্তা। এ নিয়ে ঠিকাদারদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ বিরাজ করছে।

আমরা যারা চাহিদা অনুযায়ী সুবিধা দিতে পারি না, তাদের কাগজপত্রে ত্রুটি দেখিয়ে কাজ দেওয়া হয় না। আওয়ামী সিন্ডিকেট বেশি দর দিলেও তারা কাজ পায়। এতে সরকারের আর্থিক ক্ষতি হয়। শামসুল খান, সাবেক ঠিকাদার

নথিপত্র অনুযায়ী, প্যাকেজের ২ নম্বর গ্রুপে সর্বোচ্চ দরদাতা করিম ট্রেডার্সকে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি ছোলা ও রাইস ব্রানসহ খাদ্য সরবরাহের জন্য ১ কোটি ৩৬ লাখ ৬ হাজার ৪৪৯ টাকা দর দেয়। অথচ রাজশাহীর মেসার্স সদর অ্যান্ড ব্রাদার্স সর্বনিম্ন দরদাতা দিয়েছিল ৬৯ লাখ ৯১ হাজার ৫৫৫ টাকা। এ ছাড়া আরও দুটি প্রতিষ্ঠান মেসার্স বেতাগা ট্রেডার্স ৭১ লাখ ও এইচএন এন্টারপ্রাইজ ১ কোটি ১১ লাখ টাকা দর দিয়েছিল। এই গ্রুপে সর্বোচ্চ দরদাতাকে অনুমোদন দেওয়ায় সরকারর ৬৬ লাখ ১৪ হাজার ৮৯৪ টাকা গচ্চা যাচ্ছে।

তৃতীয় গ্রুপে আস্তা ভুট্টা ও লাইমস্টোন সরবরাহে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দরদাতা করিম ট্রেডার্সকে কাজ দেওয়া হয়। তাদের প্রস্তাবিত দর ছিল ৮৪ লাখ ৫৯ হাজার ৮৮৩ টাকা। অথচ সর্বনিম্ন দর ছিল বেতাগা ট্রেডার্সের ৬১ লাখ ৯৮ হাজার ৩৮২ টাকা। বেতাগা ট্রেডার্সকে কার্যাদেশ না দেওয়ায় সরকারের আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে ২২ লাখ ৬১ হাজার ৪৯৬ টাকা।

চতুর্থ গ্রুপে ধানের শুকনো খড় ও ডালের ভুসিসহ খাদ্য সরবরাহের অনুমোদন পেয়েছে এইচএন এন্টারপ্রাইজ। তারা ৭০ লাখ ৪৯ হাজার ৯৩৭ টাকার দর দিয়েছিল, যেখানে সর্বনিম্ন দর ছিল সদর অ্যান্ড ব্রাদার্সের ৬৭ লাখ ৪৪ হাজার ৮৫৫ টাকা। এখানেও সর্বনিম্ন দরদাতাকে কাজ না দেওয়ায় সরকারের ৩ লাখ ৫ হাজার ৮২ টাকা অতিরিক্ত খরচ হচ্ছে।

খামারসংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এইচএন এন্টারপ্রাইজ ও করিম ট্রেডার্স পরস্পরের সহযোগী। খামারের পাশের এলাকার করিম ট্রেডার্সই হিলটন সাহার অনুপস্থিতিতে তাঁর কাজগুলো দেখাশোনা করে। এবারও হিলটন সাহার অনুপস্থিতিতে চুক্তি সম্পাদনের জন্য প্রতিষ্ঠানটি তৎপরতা চালাচ্ছে।

তবে এই অভিযোগ অস্বীকার করে করিম ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী রবিউল করিম বলেন, ‘হিলটন সাহার পক্ষে চুক্তি স্বাক্ষরের জন্য আমি কোনো তৎপরতা চালাইনি। এ ধরনের অভিযোগ ভিত্তিহীন।’

খামারের সাবেক ঠিকাদার শামসুল খান অভিযোগ করে বলেন, ‘পাঁচ অর্থবছর ধরে আওয়ামী লীগের ছত্রচ্ছায়ায় এইচএন এন্টারপ্রাইজ ও করিম ট্রেডার্স খামারের সব টেন্ডার দখলে রেখেছে। এই প্রতিষ্ঠানের মালিকেরা আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী হওয়ায় আমরা বারবার অবহেলিত হয়েছি। তাই অনেক আগেই কাজ ছেড়ে দিয়েছি। এ প্রতিষ্ঠান দুটি অবৈধ সুবিধা দিয়ে টেন্ডার বাগিয়ে নেয়। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। আমরা যাঁরা চাহিদা অনুযায়ী সুবিধা দিতে পারি না, তাঁদের কাগজপত্রে ত্রুটি দেখিয়ে কাজ দেওয়া হয় না। আওয়ামী সিন্ডিকেট বেশি দর দিলেও তারা কাজ পায়। এতে সরকারের আর্থিক ক্ষতি হয়।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে টেন্ডার মূল্যায়ন কমিটির সদস্য প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক ডা. মাহমুদুল হাসান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সর্বনিম্ন দরদাতাকে বাদ দিয়ে অনুমোদন দেওয়ার অভিযোগ সঠিক নয়। সবকিছু নিয়ম অনুসরণ করেই কাজের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

লুটপাটে শেষ ৫ কোটির প্রকল্প: ইউএনও-উপজেলা প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে শুনানি কাল

চীন–রাশিয়া থেকে ভারতকে দূরে রাখতে কয়েক দশকের মার্কিন প্রচেষ্টা ভেস্তে দিচ্ছেন ট্রাম্প: জন বোল্টন

‘হানি ট্র্যাপের’ ঘটনা ভিডিও করায় খুন হন সাংবাদিক তুহিন: পুলিশ

আটজন উপদেষ্টার ‘সীমাহীন’ দুর্নীতির প্রমাণ আছে: সাবেক সচিব

স্ত্রীকে মেরে ফেলেছি, আমাকে নিয়ে যান— ৯৯৯–এ স্বামীর ফোন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত