Ajker Patrika

চোর সন্দেহে যুবককে পিটিয়ে হত্যা, গ্রেপ্তার আতঙ্কে পুরুষশূন্য গ্রাম

সৈয়দপুর (নীলফামারী) প্রতিনিধি
আপডেট : ১৭ জানুয়ারি ২০২২, ১৮: ৩৪
চোর সন্দেহে যুবককে পিটিয়ে হত্যা, গ্রেপ্তার আতঙ্কে পুরুষশূন্য গ্রাম

নীলফামারীর সৈয়দপুরে চোর সন্দেহে গণপিটুনিতে নিহত যুবকের পরিচয় মিলেছে। নিহত যুবক পঞ্চগড় জেলা শহরের চানপাড়ার মফিজ উদ্দিনের ছেলে আব্দুর রহিম (৪০)। এ ঘটনায় দিনাজপুরের চিরিরবন্দর উপজেলার ফতেজংপুর ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের গ্রামপুলিশ আব্দুর রহিম বাদী হয়ে মামলা করেছেন। মামলায় তিনি ১৫ জনের নাম উল্লেখ এবং অজ্ঞাতনামা আরও ১৫ জনকে আসামি করেন। এরই মধ্যে তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। 

এদিকে ঘটনায় দায়ের করা মামলায় গ্রেপ্তারের আতঙ্কে রয়েছেন নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলার বোতলাগাড়ী ইউনিয়নের পশ্চিম বালাপাড়া গ্রামের মানুষ। 

মামলা ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, গত শনিবার সৈয়দপুর উপজেলার বোতলাগাড়ী ইউনিয়নের পশ্চিম বালাপাড়ার হোসেন আলীর বাড়িতে গভীর রাতে প্রবেশ করেন ওই যুবক। চোর সন্দেহে আটক করে তাঁকে গণপিটুনি দিলে সেখানে তাঁর মৃত্যু হয়। পরে মরদেহটি গুম করতে পাশের জেলা দিনাজপুরের ঠাকুরেরহাট-সংলগ্ন ডালিয়া ক্যানেলে পানির নিচে কচুরিপানা দিয়ে ঢেকে রাখা হয়। হত্যা করে মরদেহ গুম করা হয়েছে গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়লে সৈয়দপুর থানা-পুলিশ মরদেহ খোঁজাখুঁজি শুরু করে। সোর্সের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে উল্লেখিত এলাকার ডালিয়া ক্যানেল থেকে ওই মরদেহ উদ্ধার করা হয়। পরে চিরিরবন্দর থানা-পুলিশ এসে সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে মরদেহ থানায় নিয়ে যায়। 

এ ঘটনার পর ওই দিনই হোসেন আলীর স্ত্রী তাহেরা বেগম (৫২) ও ছোট ছেলে খায়রুল ইসলাম (২৮) এবং একই এলাকার আব্দুর রহমানের ছেলে মোখলেছুর রহমান মোখলেছকে (৪০) জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে করে চিরিরবন্দর থানা-পুলিশ। 

এদিকে মামলার কারণে গ্রেপ্তার আতঙ্কে রয়েছেন এলাকার পুরুষেরা। এ গ্রামে এখন থমথমে অবস্থা। গ্রেপ্তার আর পুলিশের ভয়ে কোনো পুরুষ বাড়িতে থাকছেন না। পুরুষশূন্য হয়ে পড়েছে প্রতিটি বাড়ি। এতে স্বামী ছাড়া সন্তানদের নিয়ে বিপাকে পড়েছেন গ্রামের নারীরা। 

সরেজমিনে ইউনিয়নটির বিভিন্ন পাড়ায় গেলে কথা বলার মতো কোনো পুরুষ পাওয়া যায়নি। তবে এ প্রতিবেদককে দেখে কয়েকজন নারী এসে জানান, গ্রেপ্তার আতঙ্কে পুরুষেরা বাড়িতে থাকছেন না। এ ছাড়া দিনের বেলা অপরিচিত কোনো লোককে পাড়ায় ঘোরাঘুরি করতে দেখলেই পুরুষেরা লুকিয়ে পড়ছেন। 

খেতে কাজ করা কিছু কৃষিশ্রমিকের কাছে ঘটনা সম্পর্কে জানতে চাইলে তাঁরা কাছে আসার সাহস পাচ্ছিলেন না। কমপক্ষে ১০ গজ দূরে দাঁড়িয়ে কথা বলেন তাঁরা। 

ইলিয়াস হোসেন নামে এক কৃষিশ্রমিক বলেন, ‘ঘটনার পর প্রতিদিনই পুলিশ এ গ্রামে আসছে। আমরা তাদের দেখে লুকিয়ে যাই। আর রাতে বাইরে থাকি।’ 

এ ব্যাপারে সৈয়দপুর থানার ওসি আবুল হাসনাত খান আজকের পত্রিকাকে বলেন, হত্যার ঘটনা যদিও সৈয়দপুরে কিন্তু মরদেহ উদ্ধার হয়েছে দিনাজপুরের চিরিরবন্দর থেকে। তাই এ ঘটনাটি তারাই তদন্ত করছে। 

চিরিরবন্দর থানার ওসি সুব্রত কুমার সরকার আজকের পত্রিকাকে বলেন, আটক ওই তিনজনকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে গতকাল রোববার দিনাজপুর আদালতে পাঠানো হয়েছে। তাঁদের কাছ থেকে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি নেওয়া হয়েছে। তিনি আরও বলেন, বাকি আসামিদেরও গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত