Ajker Patrika

পঞ্চগড়ে সংঘর্ষ: ট্রাফিক অফিসে ফাইলের আলমারি থেকে এখনো ধোঁয়া উঠছে 

আল মামুন জীবন ও শিপুল ইসলাম, পঞ্চগড় থেকে
পঞ্চগড়ে সংঘর্ষ: ট্রাফিক অফিসে ফাইলের আলমারি থেকে এখনো ধোঁয়া উঠছে 

পঞ্চগড়ে আহমদিয়া জামাতের ‘সালানা জলসা’ বন্ধের দাবিতে বিক্ষোভকারী ও পুলিশের মধ্যে সংঘর্ষ ও অগ্নিসংযোগের ঘটনার ১ দিন পেরিয়ে গেলেও পঞ্চগড় ট্রাফিক অফিসে এখন পর্যন্ত আগুন জ্বলছে। সেই আগুনে অফিসের ফাইলপত্র জ্বলছে, উঠছে ধোঁয়া। 

আজ শনিবার বিকেল ৫টায় জেলা শহরের প্রবেশদ্বার করতোয়া বীজ সংলগ্ন পঞ্চগড় ট্রাফিক অফিসে সরেজমিনে এ চিত্র দেখা গেছে। এ দিকে আহমাদিয়া সম্প্রদায়ের (কাদিয়ানি) বেশ কিছু ব্যক্তির বাড়িতে এখন পর্যন্ত কয়লা থেকে ধোয়া উড়তে দেখা গেছে। 

দেখা যায়, রাস্তার পশ্চিম পাশে পঞ্চগড় ট্রাফিক অফিসের পুলিশ বক্স পুড়ে গেছে। ট্রাফিক অফিস ভাঙচুর করা জানালার কাচ বাইরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে। অফিসের ভেতরে থাকা মোটরসাইকেল, আলমারি ও অন্যান্য আসবাবপত্র এবং ফাইল পুড়ে গেছে। 

ট্রাফিক অফিসে পুড়ে যাওয়া মোটরসাইকেলসহ অন্যান্য জিনিসপত্রট্রাফিক অফিসে এসব ভাঙচুর ও পুড়ে যাওয়া কয়লা দেখছিলেন নিমনগর গ্রামের শাওন আলী নামে এক যুবক। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘গতকাল দুপুরে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এরপরে আমরা কেউ ঘর থেকে বের হয়নি ভয়ে। সকাল থেকেও আতঙ্কে ছিলাম। বিকেলের পর পুলিশ, বিজিবিকে রাস্তায় দেখে বের হয়েছি। শুনেছিলাম ট্রাফিক পুলিশের অফিস ভাঙচুর করা হয়েছে। এখন এসে দেখলাম আগুন এখনো জ্বলছে, ফাইলপত্র পুড়ছে। কিছু ফাইলপত্র এখনো রক্ষা করা সম্ভব। কিন্তু ফায়ার সার্ভিসের লোকজন কেউ আসেনি।’

ট্রাফিক অফিস দেখতে আসা রহিমুল্লাহ নামের অপর এক যুবক বলেন, ‘আমি এখানে আসার আধা ঘণ্টা হলো। অফিসের কাউকে দেখিনি। অফিসের সব পুড়ে কয়লা হয়ে গেছে। দেয়াল আর টিন ছাড়া কিছুই বাদ যায়নি।’

পঞ্চগড় ট্রাফিক অফিসের দায়িত্বে থাকা ট্রাফিক ইন্সপেক্টর কাজী কামরুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের ৭টি মোটরসাইকেল,১টি কম্পিউটারসহ ৬টি কক্ষে থাকা যাবতীয় আসবাবপত্র, সরকারি ফাইল এবং কাপড়চোপড় পুড়ে গেছে। গতকাল থেকে সকলেই অফিসের বাইরে। আমি এখন অফিসের দিকে যাচ্ছি। এ ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।’ 

অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত বাড়িঘরপঞ্চগড় ফায়ার সার্ভিসের উপসহকারী পরিচালক শেখ মো. মাহাবুবুল ইসলাম বলেন, ‘জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে আমরা পুরো টিম সতর্ক অবস্থানে রয়েছি। কোনো স্থানে আগুনের খবর দিলে আমরা যাব, যদি পুলিশের নিরাপত্তা পাই।’ 

এ দিকে পঞ্চগড় শহর থেকে ‍দুই কিলোমিটার দুরে আহমাদিয়া গ্রাম, শালসিড়ি ও ফুলতলা গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, বেশির ভাগ বাড়ির সব আসবাবপত্র পুড়ে গেছে। অনেক বাড়ির আংশিক জ্বললেও ভেঙে ফেলা হয়েছে টিনের বেড়া, দরজা ও জানালা। কিছু বাড়ির পোড়া কয়লা থেকে এখনো ধোঁয়া বের হচ্ছে। 

ফুলতলা গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হানিফের সঙ্গে কথা হলে তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘যখন আগুন লাগিয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা, তখন আমরা সবাই সালানা জলসার মাঠে ছিলাম। ভয়ে বের হয়নি। সকাল ১০টার সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর লোকজন এলাকায় আসার পর আমরা নিজ বাড়িতে ফিরেছি। যে কাপড় পড়ে সালানা জলসায় গিয়েছিলাম। সেটা ছাড়া সবই পুড়ে গেছে। আমার প্রায় ১৫ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।’ 
 
তাঁর মতো ওই এলাকার প্রত্যেকটি বাড়ি সবকিছু পুড়ে গেছে। অনেকের গরু-ছাগল, নগদ টাকা পয়সা এবং স্বর্ণালংকার লুট করে নিয়ে গেছে দুর্বৃত্তরা। যেসব নিতে পারেনি সেগুলো জ্বালিয়ে অথবা ভেঙে দেওয়া হয়েছে। 

এদিকে শনিবার বিকেল ৪টায় পঞ্চগড়ের সালানা জলসার মাঠে সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ আহমদিয়া মুসলিম জমা’ত এর গণযোগাযোগ, প্রেস ও মিডিয়া বিভাগের বহিঃসম্পর্ক সম্পাদক আহমদ তবশির চৌধুরী বলেন, ‘তিনটি গ্রামে প্রায় দেড় শতাধিক বাড়ি পুড়ে গেছে। এর মধ্যে অধিকাংশ বাড়ির কোনো কিছুই রক্ষা করা যায়নি। ক্ষতির পরিমাণ কয়েক কোটি টাকা হবে। সেটা আমরা লোক পাঠিয়ে নিরূপণ করছি। পরে আপনাদের বিস্তারিত জানাতে পারব।’ 

অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত বাড়িঘরশনিবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটলেও শহরের চৌরঙ্গীর মোড়, ধাক্কামারার মোড়, গোল চত্বরসহ শহরের বিভিন্ন এলাকার মানুষের মাঝে আতঙ্ক দেখা গেছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেও যান চলাচলসহ লোকজনের উপস্থিতি কম দেখা গেছে। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া শহরে বেরোচ্ছেন না কেউ। আর কঠোর টহলে রয়েছে পুলিশ, বিজিবি, র‍্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। শহরে মানুষের আনাগোনা কমে যাওয়ায় ক্রেতা ও যাত্রীসংকটে অলস সময় পার করছেন স্থানীয় ব্যবসায়ীসহ রিকশা ও ইজিবাইকের চালকেরা। 

উল্লেখ্য, পঞ্চগড়ের আহমদিয়া জামাতের ‘সালানা জলসা’ বন্ধের দাবিতে বিক্ষোভকারী ও পুলিশের মধ্যে প্রায় ছয় ঘণ্টা ধরে চলা সংঘর্ষে আরিফুর রহমান (২৮) ও জাহিদ হাসান (২৩) নামের দুই তরুণ নিহত হয়। সংঘর্ষে পুলিশের ৯ সদস্য ও ২ সাংবাদিকসহ অন্তত ৫০ জন আহত হয়েছেন। 

নিহত আরিফুর রহমান পঞ্চগড় পৌরসভার মসজিদপাড়া এলাকার বাসিন্দা। তিনি শহরের একটি ছাপাখানার ব্যবস্থাপক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। জুমার নামাজ পড়ে বাড়ি ফেরার সময় তিনি সংঘর্ষের মধ্যে পড়লে তাঁর মাথায় গুলি লাগে। স্থানীয় লোকজন আরিফুরকে উদ্ধার করে প্রথমে পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে নিয়ে যান। পরে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে তাঁর মৃত্যু হয়। শনিবার বিকেলে তাঁর নামাজে জানাজা শেষে পারিবারিক গোরস্থানে দাফন করা হয়েছে। 

অপর দিকে নিহত জাহিদ হাসান নাটোর জেলার বনপাড়া উপজেলার চিরোইল নোটাবাড়ীয়া গ্রামের বাসিন্দা বলে জানা গেছে। তাঁকে করতোয়া নদীর ধারে কুপিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা বলে অভিযোগ করেছেন আহমদিয়া জামাতের সালানা। 

আরও পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

নারী কমিশনের রিপোর্ট বাতিল হলে অন্যগুলোও বাতিলযোগ্য: উমামা ফাতেমা

খালেদা জিয়ার দেশে ফেরার ফ্লাইট থেকে সরানো হলো দুই কেবিন ক্রু

নারী কমিশন তৈরির জন্য জুলাই বিপ্লবে কেউ জীবন দেয়নি: মাহমুদুর রহমান

প্রাথমিকে আবার চালু হচ্ছে বৃত্তি পরীক্ষা: গণশিক্ষা উপদেষ্টা

১৯৪৭ থেকে ২০২৫: ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ ও ফলাফল

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত