Ajker Patrika

রাকসু নির্বাচন: মহাষষ্ঠীতে ভোটের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের আলটিমেটাম

রাবি সংবাদদাতা
রাবিতে শিক্ষার্থীদের সংবাদ সম্মেলন। ছবি: আজকের পত্রিকা
রাবিতে শিক্ষার্থীদের সংবাদ সম্মেলন। ছবি: আজকের পত্রিকা

১৩ দিন পিছিয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচনের ভোট গ্রহণ ২৮ সেপ্টেম্বর নির্ধারণ করেছে নির্বাচন কমিশন। ওই দিন সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বৃহৎ উৎসব দুর্গাপূজার সূচনা মহাষষ্ঠী অনুষ্ঠিত হবে। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় তিন হাজার শিক্ষার্থীর কার্যত ভোটের বাইরে থাকার আশঙ্কা করছে বিভিন্ন ছাত্রসংগঠন ও শিক্ষার্থীরা।

এদিকে নতুন ভোটের তারিখ পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে নির্বাচন কমিশনকে ক্ষমা চাওয়ার দেড় ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়েছে শিক্ষার্থীদের একাংশ। বিকেলে সংবাদ সম্মেলনে তারা এই আলটিমেটাম দেয়।

শিক্ষার্থীরা জানান, সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বৃহৎ উৎসব দুর্গাপূজার সূচনা মহাষষ্ঠী ওই দিন (২৮ সেপ্টেম্বর) অনুষ্ঠিত হবে। এমন একটা দিন ভোটের তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে, যেদিন দুর্গাপূজার সূচনা ‘মহাষষ্ঠী’। ফলে তিন হাজার সনাতন শিক্ষার্থী কার্যত ভোটের বাইরে চলে যাবেন বলে অভিযোগ করেন তাঁরা।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন আইন বিভাগের শিক্ষার্থী ও হল সংসদে সহসভাপতি (ভিপি) পদপ্রার্থী রায়হান হোসেন। উপস্থিত ছিলেন সাবেক সমন্বয়ক সালাউদ্দিন আম্মার, ফাহিম রেজাসহ কেন্দ্রীয় সংসদ ও হল সংসদের স্বতন্ত্র প্রার্থীরা।

রায়হান হোসেন বলেন, নির্বাচন কমিশন যে তারিখ ঘোষণা করেছে, তা প্রত্যাহার করতে হবে। পাশাপাশি নির্বাচন কমিশনকে ক্ষমা চেয়ে বিকেল ৫টার মধ্যে পূর্বনির্ধারিত ভোটের তারিখ পুনর্বহাল রাখার ঘোষণা দিতে হবে। এ সময়ের মধ্যে দাবি মানা না হলে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হবে।

সাবেক সমন্বয়ক আকিল বিন তালেব বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনের এমন সিদ্ধান্ত রাকসু বানচালের একটা পাঁয়তারা মনে হচ্ছে। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজার কারণে প্রায় পাঁচ হাজার শিক্ষার্থী ভোট দেওয়া থেকে বিরত থাকতে পারেন।’

শিক্ষার্থী অর্পণ ধর বলেন, রাকসু নির্বাচনের ভোট গ্রহণের তারিখ ২৮ সেপ্টেম্বর নির্ধারণ করেছে নির্বাচন কমিশন, যেদিন হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের দুর্গাপূজার মহাষষ্ঠী অনুষ্ঠিত হবে। এর ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় তিন হাজারেরও বেশি শিক্ষার্থীকে কার্যত ভোট থেকে দূরে রাখার এক অভিনব কৌশল নেওয়া হয়েছে।

শিক্ষার্থী সৌরভ কর্মকার বলেন, ‘এটার তীব্র প্রতিবাদ জানাই। শুধু হিন্দু ধর্মাবলম্বী নয়, ওই সময়ে ক্যাম্পাস ফাঁকা থাকবে। তাহলে ভোট দেবে কারা? আমরা প্রশাসনের কাছে দাবি জানাব, যেন ভোটের অধিকার থেকে কেউ বঞ্চিত না হয়।’

বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সভাপতি সুলতান আহমেদ রাহী এক ফেসবুক পোস্টে লেখেন, “হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বড় উৎসব ও ক্যাম্পাস ছুটির আগের দিনে রাকসুর ভোট নির্ধারণ কোনো কাকতালীয় নয়, এটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ষড়যন্ত্র।

এতে হিন্দু শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ কঠিন করা হয়েছে এবং ছাত্রদলকে বিভ্রান্ত করার অপচেষ্টা চালানো হয়েছে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এই ভ্রাতৃত্ব-বিরোধী মানসিকতাকে ধিক্কার!’

শাখা ছাত্রশিবিরের সাধারণ সম্পাদক মুজাহিদ ফয়সাল বলেন, ‘আমাদের মনে হয়, নির্বাচন বানচালের অংশ হিসেবে কমিশন একতরফাভাবে একটি দলের দাবিতে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এতে অন্যান্য সংগঠন ও প্রার্থীরা অসন্তুষ্ট। আমরা আশা করি, কমিশন ঘোষণাটি দ্রুত প্রত্যাহার করে নির্ধারিত সময়েই নির্বাচন আয়োজন করবে।’

সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের আহ্বায়ক ফুয়াদ রাতুল বলেন, সনাতন ধর্মাবলম্বীদের উৎসব ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছুটির কারণে অনেক শিক্ষার্থী ভোট দিতে পারবেন না, ফলে একটি অংশকে রাকসু থেকে বাদ দেওয়া হচ্ছে, যা মৌলবাদী গোষ্ঠীকে সুবিধা দিতে পারে।

ছাত্র ইউনিয়নের কোষাধ্যক্ষ কায়সার আহমেদ বলেন, রাকসু নির্বাচনের সময়সীমা বৃদ্ধি ও ভোটের তারিখ পরিবর্তনের পেছনে দুটি লেজুড়বৃত্তিক সংগঠনের প্রভাব রয়েছে। প্রশাসনের একটি গোষ্ঠীর সঙ্গে তাদের যোগসাজশ না থাকলে মহালয়ার দিনে ভোটের তারিখ ঘোষিত হতো না। এতে ক্যাম্পাসের বড় একটি অংশ বাদ পড়বে, যা সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনকে অসম্ভব করে তুলবে।

তবে প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক এফ নজরুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘২৮ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয় খোলা থাকবে। ২৯ সেপ্টেম্বর পাঠদান বন্ধ থাকলেও অফিস কার্যক্রম চলবে। যেহেতু পূজা মূলত অক্টোবর মাসে শুরু হবে, তাই পূজার ছুটিকে সম্মান জানিয়ে এ তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে।’

এর আগে আজ দুপুরে রাকসু কোষাধ্যক্ষ কার্যালয়ের সামনে সংবাদ সম্মেলনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক এফ নজরুল ইসলাম ভোটের এ নতুন তারিখ ঘোষণা করেন। তিনি জানান, তফসিলের কাজে কিছুটা বাধাগ্রস্ত হওয়ায় ভোটের দিন পরিবর্তন করা হয়েছে।

নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ২৪ থেকে ৩১ আগস্ট মনোনয়নপত্র বিতরণ, ১ থেকে ৪ সেপ্টেম্বর মনোনয়নপত্র দাখিল, ৮ ও ৯ সেপ্টেম্বর মনোনয়নপত্র বাছাই, ১১ সেপ্টেম্বর প্রার্থীদের প্রাথমিক তালিকা প্রকাশ, ১৪ সেপ্টেম্বর প্রাথমিক তালিকা সম্পর্কে প্রার্থীদের আপত্তি গ্রহণ ও নিষ্পত্তি, ১৫ সেপ্টেম্বর মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার, ১৬ সেপ্টেম্বর প্রার্থীদের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ এবং ২৮ সেপ্টেম্বর একাডেমিক ভবনে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। ভোট গ্রহণ শেষে একই দিন ফলাফল প্রকাশ করা হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

প্রতি রাতে সাপ হয়ে দংশন করেন স্ত্রী, প্রশাসনে অভিযোগ স্বামীর

চমকে দিয়ে বিসিবির সহসভাপতি হওয়া কে এই শাখাওয়াত

লন্ডন বৈঠকে ড. ইউনূসের সঙ্গে কী আলাপ হয়েছে—বিবিসি বাংলাকে যা বললেন তারেক রহমান

স্বৈরাচারকে আশ্রয় দিয়ে ভারত বাংলাদেশের মানুষের বিরাগভাজন হলে ‘আমাদের কিছু করার নেই’

বিদায় ঘোষণার পর দেশের মঞ্চে তাহসান

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত