Ajker Patrika

এক মাস ধরে যমুনায় ভাঙন অব্যাহত, দিশেহারা নদীপারের বাসিন্দারা

­­শাহীন রহমান, পাবনা
বর্ষা মৌসুমের শুরুতে ভাঙন শুরু হয়েছে যমুনা নদীতে। ভাঙছে বসতবাড়ি। বুধবার দুপুরে পাবনার বেড়া উপজেলার চর বক্তারপুর গ্রামে। ছবি: আজকের পত্রিকা
বর্ষা মৌসুমের শুরুতে ভাঙন শুরু হয়েছে যমুনা নদীতে। ভাঙছে বসতবাড়ি। বুধবার দুপুরে পাবনার বেড়া উপজেলার চর বক্তারপুর গ্রামে। ছবি: আজকের পত্রিকা

এবার বর্ষা মৌসুমের শুরুতে ভাঙন শুরু হয়েছে পাবনার বেড়া উপজেলার যমুনা নদীতে। প্রায় এক মাস ধরে এই ভাঙন অব্যাহত থাকায় দুশ্চিন্তায় পড়েছে নদীপারের বাসিন্দারা। এরই মধ্যে নদীতে বিলীন হয়েছে অন্তত ২০টি বাড়িঘর। মাথা গোঁজার ঠাঁই হারিয়ে দিশেহারা পরিবারগুলো। হুমকির মুখে রয়েছে একটি মসজিদ, একটি বিদ্যালয়সহ শতাধিক পরিবার।

পাবনার বেড়া উপজেলার পুরান ভারেঙ্গা ইউনিয়নের চর বক্তারপুর গ্রামে কৃষক হানিফ শেখের স্ত্রী আক্তার বানু দুই ছেলে, এক মেয়েকে নিয়ে যমুনার পারে বসবাস করেন প্রায় দুই যুগ। বর্ষা মৌসুম এলেই তাঁর কপালে দেখা দেয় চিন্তার ভাঁজ। সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা গেছে, নদীর পারে বসে তিনি ভাবছিলেন কীভাবে পরিত্রাণ পাবেন ভাঙন থেকে।

আলাপকালে আক্তার বানু জানান, গত তিন বছরে তিনবার তাঁদের ঘর হারিয়েছেন যমুনার গর্ভে। এবারও একই চিন্তায় দিশেহারা তিনি। গেল কোরবানির ঈদের আনন্দ কেড়ে নিয়েছে ভাঙন-আতঙ্ক। শুধু ভয়ে থাকেন, কখন না জানি আবার ভাঙন শুরু হয় আর ঘর সরানোর জন্য চিৎকার করতে হয়।

শুধু আক্তার বানুই নন, তাঁর মতো একই কান্না নদীপারের অন্য মানুষগুলোর। বক্তারপুর, চর বক্তারপুর, চর বুড়ামারা, সিংহাসন, আগবাকশো গ্রামের কয়েক হাজার মানুষের দিন কাটছে ভাঙন-আতঙ্কে। স্থানীয়রা জানান, এরই মধ্যে গত এক মাসে অন্তত ২০টি বাড়িঘর ও অর্ধশত বিঘা ফসলি জমি বিলীন হয়েছে নদীগর্ভে। ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে একটি মসজিদ, একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ শতাধিক পরিবার।

চর বক্তারপুর গ্রামের বাসিন্দা বেল্লাল শেখ, সেকেন বিশ্বাস বললেন, ‘গেল কোরবানির ঈদের দিন নদীতে ভেঙে যায় কয়েকটি বাড়ি। বাধ্য হয়ে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছেন তাঁরা। কেউবা ঘর ভেঙে রেখেছেন, কিন্তু নতুন করে ঘর তৈরি করতে পারছেন না অর্থাভাবে। বর্ষা মৌসুম এলেই আতঙ্কে থাকতে হয়।’

বর্ষা মৌসুমের শুরুতে ভাঙন শুরু হয়েছে যমুনা নদীতে। ভাঙছে বসতবাড়ি। বুধবার দুপুরে পাবনার বেড়া উপজেলার চর বক্তারপুর গ্রামে। ছবি: আজকের পত্রিকা
বর্ষা মৌসুমের শুরুতে ভাঙন শুরু হয়েছে যমুনা নদীতে। ভাঙছে বসতবাড়ি। বুধবার দুপুরে পাবনার বেড়া উপজেলার চর বক্তারপুর গ্রামে। ছবি: আজকের পত্রিকা

শাজাহান আলী, নাদের শেখ, মামুন শেখ বলেন, ‘এই বয়সে তাঁরা অন্তত ৬ বার এই নদীভাঙন দেখেছেন। বর্তমানে যেখানে বসবাস করছেন তাঁরা, আগে নদীর প্রায় আধা কিলোমিটার দূরে বসতবাড়ি ছিল। নদী ভাঙতে থাকায় সেখান থেকে সরে এসেছেন। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাছে দাবি, ভাঙন রোধে দ্রুত ব্যবস্থা নিলে মানুষ বাঁচবে। তবে এবার একটা স্থায়ী ব্যবস্থা দরকার।’

ভুক্তভোগী রওশন বিশ্বাসের স্ত্রী জোসনা খাতুন বলেন, ‘শিশুসন্তান আর গবাদিপশু নিয়ে নির্ঘুম রাত কাটাতে হয়। কতবার ঘর ভাঙবে, আর কতবার করে সরিয়ে নেব? গত কোরবানির ঈদের দিনও ভাঙন হয়েছে। এলাকার লোকজনকে ডেকে ঘর দ্রুত সরিয়ে নিতে হয়। ঈদের দিন আমাদের রান্নাবান্না খাওয়া—কিছুই হয়নি। এভাবে আর কত দিন।’

এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে বেড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী (ভারপ্রাপ্ত) হায়দার আলী বলেন, কিছু ভাঙন দেখা দিয়েছে। ভাঙনকবলিত এলাকা পরিদর্শন করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে ভাঙন রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত