Ajker Patrika

রাবি উপাচার্যদের দুর্নীতি, নিয়োগ প্রক্রিয়াকে দায়ী করছেন শিক্ষকরা

প্রতিনিধি, রাব
আপডেট : ১০ এপ্রিল ২০২১, ২২: ২০
রাবি উপাচার্যদের দুর্নীতি, নিয়োগ প্রক্রিয়াকে দায়ী করছেন শিক্ষকরা

সম্প্রতি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) উপাচার্য অধ্যাপক এম আব্দুস সোবহানের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগের প্রমাণ পেয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। এর আগের মেয়াদেও তার বিরুদ্ধে ছিল বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ। এর আগের উপাচার্য অধ্যাপক মিজানউদ্দিনের বিরুদ্ধেও রয়েছে গেস্ট হাউজ ক্রয়ে ১৩ কোটি টাকা দুর্নীতির অভিযোগ। এরও পূর্বে বিএনপি সরকারের সময়ে উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পাওয়া অধ্যাপক আলতাফ হোসেনকেও বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে ইউজিসির তদন্ত কমিটির মুখোমুখি পড়তে হয়েছিল। অধ্যাদেশ অমান্য করে রাজনৈতিক বিবেচনায় উপাচার্য নিয়োগ এবং সামগ্রিক নিয়োগ প্রক্রিয়ার কারণেই উপাচার্যরা দুর্নীতিতে জড়াচ্ছেন বলে মনে করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাদেশ অনুযায়ী প্রতি চার বছর পর সিনেটে নির্বাচনের মাধ্যমে তিনজনের একটি প্যানেল নির্বাচিত হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য রাষ্ট্রপতি এই তিনজন থেকে একজনকে উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দেন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯৯৯ সালে সর্বশেষ সিনেটে নির্বাচনের মাধ্যমে উপাচার্য প্যানেল তৈরি করা হয়। এরপর থেকে তা আর বাস্তবায়িত হয়নি।

গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সভাপতি সহযোগী অধ্যাপক আ-আল মামুন বলেন, বিগত কয়েক বছর যাবৎ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে উপচার্য নিয়োগের ক্ষেত্রে অধ্যাদেশের নিয়ম মানা হচ্ছে না। এখানে রাজনৈতিকভাবে ভিসি নিয়োগ হচ্ছে। এ নিয়োগের ক্ষেত্রে স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ে রাজনৈতিক নেতাদের প্রভাব থাকে। এ অবস্থায় রাজনৈতিক নেতাদের সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার ‘কমিটমেন্ট’ দিয়েই এখানে ভিসি হয়ে আসতে হয়। ফলে রাজনৈতিক নেতাদের চাহিদা পূরণ করতে গিয়ে ভিসিরা অনিচ্ছা সত্ত্বেও অনৈতিক কাজ করতে বাধ্য হন।

উপাচার্যদের দুর্নীতিতে জড়ানোর পেছনে কেবল রাজনৈতিক নিয়োগই দায়ী এমনটি মানতে রাজি নন ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক মলয় ভৌমিক। তিনি বলেন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সর্বপ্রথম অধ্যাদেশ অমান্য করে উপাচার্য নিয়োগ দেওয়া হয় জিয়াউর রহমানের আমলে। এরপর থেকে বিভিন্ন সময় সিনেট থেকে নির্বাচিত না হওয়া সত্বেও এ বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজনৈতিক বিবেচনায় উপাচার্য নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অনিয়মের গুরুতর অভিযোগ ওঠেনি।

তার মতে, কেবল রাজনৈতিক বিবেচনায় নয় বরং নিয়োগ প্রক্রিয়া এবং সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয়ের কারণেই উপাচার্যরা দুর্নীতে জড়াচ্ছেন। অধ্যাপক মলয় ভৌমিক বলেন, ২০০০ সালের পূর্বে রাজনৈতিকভাবে উপাচার্য নিয়োগ হলেও সেক্ষেত্রে সরকারের পক্ষ থেকে সরাসরি দেওয়া হতো। শিক্ষকরা কেউ সরাসরি আগ্রহ প্রকাশ করতেন না। কিন্তু ২০০০ সালের পর দেখা যাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা নিজ থেকে উপাচার্য হওয়ার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করছেন। যারা আগ্রহ প্রকাশ করছেন তারাই উপাচার্য হচ্ছেন। এ ছাড়া দেশের সর্বত্র যে মূল্যবোধের অবক্ষয় ঘটেছে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ও এর বাইরে নয়। এ অবস্থায় একজন উপাচার্য সৎ থাকতে চাইলেও তা অসম্ভব বলেও মনে করেন এ সিনিয়র অধ্যাপক।

আগামী ০৫ মে মেয়াদ শেষ হচ্ছে অধ্যাপক এম আব্দুস সোবহানে ভিসির মেয়াদ। ইতোমধ্যে পরবর্তী ভিসি হতে বিভিন্ন জায়গায় দেন-দরবার শুরু করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষক। এ অবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষকরা বলছেন, ১৯৭৩ অধ্যাদেশ সমুন্নত রেখে সিনেটের মাধ্যমে উপাচার্য নিয়োগ করা গেলে এসব দুর্নীতি কমে আসবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আশরাফুল আলম খান মনে করেন, অধ্যাদেশে বর্ণিত প্রক্রিয়ায় যদি ভিসি নিয়োগ দেওয়া হয়, সেক্ষেত্রে এসব দুর্নীতি অনেকাংশই কমে আসবে। সিনেটে নির্বাচিত প্যানেল থেকে কেউ যদি উপচার্য হয় সেখানে রাজনৈতিক নেতাদের ভূমিকা থাকে না। এ ছাড়া রাজনৈতিক বিবেচনায়ও যদি শিক্ষকদের মধ্যে গ্রহণযোগ্য, প্রশাসনিকভাবে দক্ষ এবং নিজের বিবেকের কাছে দায়বদ্ধ এমন কাউকে নিয়োগ দেওয়া হয়। সেক্ষেত্রেও দুর্নীতি ও অনিয়ম কমে আসবে বলেও মনে করেন আওয়ামীপন্থী এই শিক্ষক।

 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত