Ajker Patrika

ভোরে হোটেল, দুপুরে কলেজ: বাবার হাত ধরেই ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন বুনছেন নাসরিন

জয়পুরহাট প্রতিনিধি
বাবার হোটেলের চুলায় পুরি ভাজছেন কলেজছাত্রী নাসরিন আক্তার। ছবি: আজকের পত্রিকা
বাবার হোটেলের চুলায় পুরি ভাজছেন কলেজছাত্রী নাসরিন আক্তার। ছবি: আজকের পত্রিকা

হাজারো খাবার হোটেলের ভিড়ে চোখ থেমে যায় ছোট্ট একটি হোটেলে। নাম তার ‘নাসরিন হোটেল’। তবে এই নাম শুধু ব্যবসার জন্য নয়; নামের আড়ালে লুকিয়ে আছে এক সংগ্রামী কিশোরীর গল্প। বাবার সঙ্গে হোটেলে কাজ করে সংসার চালাচ্ছেন এবং নিজের পড়াশোনার খরচও তুলছেন ১৮ বছরের মেধাবী কলেজছাত্রী নাসরিন আক্তার।

বাবা মোকাব্বর মণ্ডলের সঙ্গে জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার বৈরাগীহাট মোড়ে গত পাঁচ বছর ধরেই এই হোটেল চালাচ্ছেন নাসরিন। এসএসসিতে জিপিএ-৫ পাওয়া এই ছাত্রী বর্তমানে কালাই সরকারি মহিলা কলেজের বিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষে পড়ছেন।

প্রতিদিন ভোর থেকে রাত পর্যন্ত তাঁর জীবনযুদ্ধ চলে। ভোর ৫টা থেকে ৮টা পর্যন্ত হোটেলের সব আয়োজন সামলে তিনি ছুটে যান কলেজে। বিকেল ৪টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত আবারও বাবার পাশে দাঁড়িয়ে রান্না, খাবার পরিবেশনসহ সব কাজ সামলান তিনি।

নিজের জীবনসংগ্রামের কথা বলতে গিয়ে নাসরিন বলেন, ‘আমার বাবা গরিব মানুষ। হোটেলে কারিগর রাখার সামর্থ্য নেই। তাই আমিই সব কাজ করি—পুরি, পিঁয়াজু, শিঙাড়া বানাই, ভাত-মাছ-মাংস রান্না করি, আবার কাস্টমারের সামনে পরিবেশনও করি। পড়াশোনার পাশাপাশি বাবার কাজে সাহায্য করি। দিনে গড়ে তিন-চার হাজার টাকার বেচাকেনা হয়। স্বপ্ন দেখি ভালো ফলাফল করে একদিন মেডিকেলে পড়ব।’

ট্রাকচালক, ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে স্থানীয় বাসিন্দারাও নাসরিনের হোটেলের খাবারের প্রশংসা করেন। তাঁদের ভাষায়, ‘এখানে খাবার সুস্বাদু, দাম কম আর পরিবেশনে আন্তরিকতা আছে।’

নাসরিনের বাবা মোকাব্বর মণ্ডল মেয়ের জন্য গর্ব প্রকাশ করে বলেন, ‘আমার মেয়েই আমাকে সব কাজে সহযোগিতা করে। মেয়ে হয়েও সে একজন ছেলের মতো পাশে দাঁড়ায়। এতে আমি গর্বিত।’

কালাই মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ নাজিম উদ্দিন বলেন, ‘নাসরিন ব্যবসা করে লেখাপড়া চালায় এবং কষ্টের মধ্য দিয়েই এসএসসিতে এ+ পেয়েছে। সত্যিই অবাক হই তার দৃঢ়তা দেখে। যদি সহযোগিতা করা যায়, এই মেয়েটা অনেক দূর যেতে পারবে।’

কালাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শামিমা আক্তার জাহানও নাসরিনের প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, ‘শুনেছি পড়াশোনার পাশাপাশি বাবার হোটেল সামলাচ্ছে নাসরিন নামের ওই শিক্ষার্থী। এটা প্রশংসনীয় উদ্যোগ। তবে তার পড়াশোনায় যেন কোনো ক্ষতি না হয়—সেদিকে খেয়াল রাখাও জরুরি। উপজেলা প্রশাসন থেকে প্রয়োজনীয় আর্থিক সহযোগিতা করা হবে।’

ছোট্ট হোটেলের চুলার আগুন আর খাতার পাতার অক্ষরের মাঝেই নাসরিন বুনে চলেছেন তাঁর স্বপ্ন। পরিবারকে ভরসা দেওয়ার পাশাপাশি দেশের জন্যও সম্পদ হয়ে ওঠার প্রতিজ্ঞা তাঁর। সংগ্রামী এই কলেজছাত্রী বিশ্বাস করেন, একদিন মেডিকেলে ভর্তি হয়ে তিনি ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন পূরণ করতে পারবেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সাংবাদিক বিভুরঞ্জন সরকারের খোঁজ মিলছে না

সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের নতুন বেতন নির্ধারণে কমিটি

চাকরির নামে মিরপুর-শেওড়াপাড়ায় বাসায় ডেকে নারীর সঙ্গে ভিডিও ধারণের পর টাকা হাতিয়ে নিত ‘হানি ট্র্যাপ’ চক্র

দুস্থদের ৩৪ লাখ টাকা নিয়ে লাপাত্তা মোহনগঞ্জ সমাজসেবা কর্মকর্তা

৫ দুর্বল ব্যাংক একীভূতকরণে অর্থায়ন নিয়ে শঙ্কা

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত