Ajker Patrika

রাবির গণনিয়োগের নথিতে মিথ্যা তথ্য

প্রতিনিধি
রাবির গণনিয়োগের নথিতে মিথ্যা তথ্য

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) সম্প্রতি যে ‘গণনিয়োগ’ দেওয়া হয়েছে, তার একটি নথিতে মিথ্যা তথ্য ব্যবহার করা হয়েছে। নিয়োগপত্রে স্বাক্ষর দিতে রাজি না হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ে রেজিস্ট্রার ও অতিরিক্ত রেজিস্ট্রারকে ‘অনুপস্থিত’ দেখানো হয়েছে সেই নথিতে। তারপর অন্য একজনকে নিয়োগপত্রে স্বাক্ষরের জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

গত বৃহস্পতিবার (৬ মে) রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য (ভিসি) হিসেবে শেষ কর্মদিবস ছিল অধ্যাপক এম আবদুস সোবহানের। আগের দিন তিনি ১৩৭ জনকে নিয়োগ দেন। আর এই নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ করার জন্য নিজের ইচ্ছামতো সব নথিপত্র তৈরি করেন তিনি।

বিতর্কিত সেই নিয়োগ প্রক্রিয়ার দাপ্তরিক একটি নথির একটি ছবি পাওয়া গেছে। এতে দেখা গেছে, নিয়োগপত্রে স্বাক্ষরের জন্য রেজিস্ট্রার ও অতিরিক্ত রেজিস্ট্রারের বদলে অন্য একজনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আর এই দায়িত্ব অর্পণের বিষয়টি অনুমোদনের জন্য এ সম্পর্কিত একটি নোট পাঠানো হয়েছে উপাচার্যের কাছে। মজার বিষয় হলো উপাচার্যের কাছে এই নোট পাঠানোর মৌখিক নির্দেশটি আবার এসেছে উপাচার্যের কাছ থেকেই। এর পর ভিসিই আবার সেই নোটে অনুমোদন দেন। অনুমোদন করা এই নোটে নিয়োগপত্র স্বাক্ষরের দায়িত্ব উপ-রেজিস্ট্রার ইউসুফ আলীকে দেওয়া হয়। ইউসুফ আলীও নির্দেশ মেনে নিয়োগপত্রে সই দেন। এমনকি নিজের ছেলের নিয়োগপত্রেও সই করেছেন তিনি।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ভিসির বিদায় আর সদ্য নিয়োগপ্রাপ্তদের যোগদানের দিন ইউসুফ আলীর ছেলে রাজশাহীতে ছিলেন না। ইউসুফই তাঁর ছেলের স্বাক্ষর দিয়েছেন। বিষয়টি অবশ্য অস্বীকার করেছেন ইউসুফ আলী।

এদিকে ইউসুফ আলীকে দায়িত্ব দিতে উপাচার্যের কাছে উপস্থাপন করা নোটে লেখা রয়েছে—‘উপাচাযের্র মৌখিক নির্দেশে নিম্নোক্ত নোট উপস্থাপন করা হলো।’ এর পর নোটের মূলে লেখা রয়েছে—‘রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে রেজিস্ট্রার ও অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার অনুপস্থিত থাকায় বিভিন্ন পদে নিয়োগপত্রে স্বাক্ষরের জন্য সংস্থাপন শাখার অফিসার ইউনিটের উপ-রেজিস্ট্রার মো. ইউসুফ আলীকে দায়িত্ব দেওয়া যেতে পারে।’ উপাচার্য আবদুস সোবহান নোটটি অনুমোদন করেন। আর সেই নোট ব্যবহার করেই নিয়োগের পরবর্তী প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টির রেজিস্ট্রার মো. আবদুস সালাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, `বিষয়টা তো এ রকম নয় যে আমি দেশের বাইরে গেছি, কিংবা ছুটি নিয়েছি। তাহলে কেন আমাকে `অনুপস্থিত’ দেখানো হলো? এ থেকেই বোঝা যায়- এ নিয়োগ নিয়মতান্ত্রিকভাবে হয়নি। তদন্ত কমিটির কাছেও আমি এ কথা বলেছি।’ তিনি বলেন, কয়েকবার বলার পরও যখন তিনি স্বাক্ষর দিতে রাজি হননি, তখনই উপাচার্য অন্য কাউকে দিয়ে নিয়োগপত্র স্বাক্ষরের এ আয়োজন করেন।

অবশ্য এই নিয়োগ কেলেঙ্কারি প্রকাশের পরদিনই একে ‘অবৈধ’ বলেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। কারণ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগদানের ব্যাপারে মন্ত্রণালয় আগে থেকেই নিষেধাজ্ঞা দিয়ে রেখেছিল। নিয়োগের পরদিন শিক্ষা মন্ত্রণালয় একটি তদন্ত কমিটিও গঠন করে। গতকাল শনিবার কমিটির চার সদস্য বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে সাতজনের সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেন। এ জন্য সদ্য সাবেক উপাচার্য আবদুস সোবহানকেও গাড়ি পাঠিয়ে ক্যাম্পাসে ডেকে আনা হয়। অধ্যাপক সোবহান পুলিশের পাহারায় ক্যাম্পাসে যান। তাঁকে ঘিরে ছিলেন সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত ছাত্রলীগের কিছু নেতাকর্মী।

এদিকে তদন্ত কমিটির সদস্যরা চলে যাওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছেন, যেহেতু শিক্ষা মন্ত্রণালয় এই নিয়োগকে অবৈধ বলেছে এবং একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে, তাই বিষয়টির নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত নিয়োগপ্রাপ্তদের যোগদান কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত