Ajker Patrika

একসঙ্গে মৃত্যুর পর আলাদা হলেন তাঁরা

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী
বামনশিকড় গ্রামে মিনারুল ও তাঁর ছেলে মাহিমের জানাজা হয়। ছবি: আজকের পত্রিকা
বামনশিকড় গ্রামে মিনারুল ও তাঁর ছেলে মাহিমের জানাজা হয়। ছবি: আজকের পত্রিকা

বাড়ির সামনে, উঠোনে বসে আছেন নারীরা। তাঁরা মুখে কাপড় দিয়ে কান্না আড়াল করছেন। ভেজা চোখে স্বজনদের কেউ কেউ আবার বিলাপ করছেন। দীর্ঘশ্বাসের সঙ্গে তাঁরা স্মৃতিচারণা করছেন মিনারুল, মনিরা, মাহিম আর ছোট্ট মিথিলাকে নিয়ে। আজ শনিবার দুপুরে রাজশাহীর পবা উপজেলার বামনশিকড় গ্রামে মিনারুলের বাড়িতে গিয়ে এমন দৃশ্যই চোখে পড়ে।

মিনারুল আর তাঁর স্ত্রী ছেলেমেয়ের মৃত্যুতে শোকে স্তব্ধ হয়ে গেছে বামনশিকড় গ্রাম। প্রতিবেশীরা বলেছেন, একসঙ্গে একই পরিবারের চারজনের মৃত্যুর মতো এমন মর্মান্তিক ঘটনা তাঁরা দেখেননি। একসঙ্গে চারজনের মৃত্যু হলেও তাঁদের লাশ পৃথক গোরস্থানে দাফন করা হয়েছে। বামনশিকড় গ্রামের গোরস্থানে আজ বিকেলে মিনারুল ইসলাম (৩০) ও তাঁর ছেলে মাহিমকে (১৪) পাশাপাশি কবরে দাফন করা হয়। আর মিনারুলের শ্বশুরবাড়ির ইচ্ছা অনুযায়ী, স্ত্রী মনিরা খাতুন (২৮) ও মেয়ে মিথিলাকে (৩) দাফন করা হয় রাজশাহী নগরের টিকাপাড়া গোরস্থানে।

গতকাল শুক্রবার লাশ চারটি বাড়ি থেকে নিয়ে গিয়ে রাজশাহী মেডিকেল কলেজের মর্গে রাখা হয়েছিল। আজ দুপুরের পর ময়নাতদন্ত শেষে হস্তান্তর করা হয়। এর মধ্যে মিনারুল এবং তাঁর ছেলে মাহিমের লাশ তাঁর বাবা রুস্তম আলী এবং বড় ভাই রুহুল আমিনের কাছে হস্তান্তর করা হয়। আর মনিরা এবং তাঁর মেয়ে মিথিলার লাশ তাঁর বাবা আব্দুস সালাম এবং মা শিউলী বেগম তাঁদের রাজশাহী মহানগরীর তালাইমারি এলাকার বাড়ি নিয়ে যান।

পবার পারিলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শায়েদ আলী মোর্শেদ বলেন, ‘আব্দুস সালাম এবং শিউলী বেগমসহ নিকটাত্মীয়রা মনিরা ও মিথিলার লাশ তাঁদের নিজ এলাকায় দাফনের জন্য আমাদের কাছে অনুরোধ করেন। তাঁরা তাঁদের মেয়ে এবং নাতনির লাশ নিজ এলাকায় দাফন করলে মানসিক শান্তি পাবেন বলছিলেন। তাই মনিরা ও মিথিলার লাশ তাঁদের দেওয়া হয়। মিনারুল আর তাঁর ছেলের লাশ বাবাকে দেওয়া হয়। তাঁরা গ্রামে লাশ দাফন করেন।’

আজ বিকেলে মিনারুল এবং তাঁর ছেলে মাহিমের লাশ বামনশিকড় গ্রামে পৌঁছালে সেখানে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা ঘটে। শুরু হয় শোকের মাতম। বাবা ও ছেলেকে শেষবারের মতো একনজর দেখার জন্য মানুষের ঢল নামে। কয়েক শ মানুষ চোখের পানি ফেলে বাবা-ছেলের জানাজায় অংশ নেন।

শোকার্ত মিনারুলের বাবা রুস্তম আলী বলেন, ‘সবাই একসঙ্গে দুনিয়া ছেড়ে চলে গেল। আমরা চারজনেরই লাশ চেয়েছি। ইচ্ছে ছিল, তাদের দাফন একসঙ্গেই হবে। কিন্তু সেটি আর হলো না। মৃত্যুর পরেও তারা ঠাঁই ঠাঁই হয়ে গেল। একসঙ্গে থাকতে পারল না। মনিরার বাবা-মায়ের অনুরোধে আমরা পৃথক স্থানে দাফনের বিষয়টি মেনে নিয়েছি।’

ছেলে, ছেলের বউ আর নাতি-নাতনিদের হারিয়ে শোকে কাতর দাদি আঞ্জুয়ারা বেগম। ছোট্ট মিথিলা আধো আধো শব্দে কথা বলত। তার জন্য দাদি আঞ্জুয়ারা বেগমের ছিল অগাধ স্নেহ ও ভালোবাসা। মিথিলার যেকোনো ছোট্ট আবদারও নিমেষেই পূরণ করতেন তিনি। গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আদরের মিথিলা দাদির কাছে মাছ খাওয়ার বায়না ধরেছিল। কিন্তু এটিই যে তার জীবনের শেষ ইচ্ছে হয়ে থাকবে, তা ভাবতেও পারেননি দাদি। নাতনির স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন আঞ্জুয়ারা। বারবার বিলাপ করতে করতে তিনি বলেন, ‘দাদু আমার মাছ খেতে খুব ভালোবাসত। আগের দিন দুপুরে আমাকে মাছ রান্না করে দিতে বলেছিল। কিন্তু তখন বাড়িতে মাছ ছিল না। তাই সকালেই বাজার থেকে মাছ কিনে এনেছিলাম। সকাল ৭টার মধ্যে রান্না শেষও করেছিলাম। কিন্তু মিথিলা আর ওঠেনি। তার মাছ খাওয়ার শেষ ইচ্ছে আমি পূরণ করতে পারিনি।’

গতকাল শুক্রবার সকালে মিনারুল, তাঁর স্ত্রী মনিরা, ছেলে মাহিম ও মেয়ে মিথিলার লাশ উদ্ধার করা হয়। একটি ঘরের বিছানায় ছিল মনিরা ও মিথিলার লাশ। আর পাশের ঘরের বিছানায় ছিল মাহিমের লাশ। এ ঘরেই ফ্যানের সঙ্গে ঝুলছিলেন মিনারুল। ঘর থেকে দুই পাতার একটি চিরকুট উদ্ধার করা হয়। এটি মিনারুল লিখে গেছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

চিরকুটে লেখা ছিল, ‘আমি নিজ হাতে সবাইকে মারলাম। এ কারণে যে আমি একা যদি মরে যাই, তাহলে আমার বউ, ছেলে, মেয়ে কার আশায় বেঁচে থাকবে? কষ্ট আর দুঃখ ছাড়া কিছুই পাবে না। আমরা মরে গেলাম ঋণের দায়ে আর খাওয়ার অভাবে। এত কষ্ট আর মেনে নিতে পারছি না। তাই আমাদের বেঁচে থাকার চেয়ে মরে গেলাম, সেই ভালো হলো।’ এতে আরও লেখা আছে, ‘আমি মিনারুল প্রথমে আমার বউকে মেরেছি। তারপর আমার মাহিনকে মেরেছি। তারপর আমার মিথিলাকে মেরেছি। তারপর আমি নিজে গলায় ফাঁস দিয়ে মরেছি।’

মিনারুল আর তাঁর স্ত্রী-সন্তানদের এমন মৃত্যু নিয়েই গ্রামে সর্বত্র আলোচনা চলছে। মিনারুলের আচার-ব্যবহার, মানুষের সঙ্গে কথাবার্তা আর চলাফেরা নিয়ে কথা বলছেন প্রতিবেশীরা। গ্রামের কৃষক হাসান আলী বলেন, ‘মিনারুল খুব ভালো ছেলে ছিল। কারও সঙ্গে খুব বেশি মিশত না, খুব ভদ্র ছিল। মাথা নিচু করে চলত। কিন্তু ঋণের কারণে, এক কথা এনজিওর চাপে স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে মিনারুল এমনটি করেছেন।’ তিনি বলেন, ‘কিস্তির টাকা দিতে দেরি হলে এনজিওর লোকেরা মিনারুলের বাড়িতে এসে বসে থাকত। যতক্ষণ পর্যন্ত টাকা না দিত, ততক্ষণ উঠতেন না। রাত ৮টা থেকে ৯টা পর্যন্তও তাঁরা বসে থাকতেন। এগুলো নিয়ে মিনারুল খুব বিব্রত হতো। তারও মানইজ্জত ছিল। এটি নিয়ে মিনারুল লজ্জা পেত। কিস্তি দিতে গিয়ে অভাব লেগে থাকত। শুনেছি, অনেক টাকা ঋণও ছিল। এ কারণেই হয়তো মিনারুল পরিবারের সবাইকে নিয়ে চলে গেল।’

এদিকে একই পরিবারের চারজনের লাশ উদ্ধারের ঘটনায় দুটি মামলা হয়েছে। একটি হত্যা মামলা, অন্যটি অপমৃত্যুর মামলা। গতকাল শুক্রবার রাতেই রাজশাহীর মতিহার থানায় মামলা দুটি দায়ের করা হয়। মতিহার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল মালেক জানান, মিনারুলের আত্মহত্যার ঘটনায় তাঁর বাবা রুস্তম আলী বাদী হয়ে অপমৃত্যুর মামলা করেছেন। আর মনিরা, মাহিম ও মিথিলাকে শ্বাসরোধে হত্যার অভিযোগে হত্যা মামলাটি দায়ের করেছেন মনিরার মা শিউলী বেগম। তবে আসামি হিসেবে মামলা দুটিতে কারও নাম উল্লেখ নেই। আসামি অজ্ঞাত। তদন্তের পর এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান ওসি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

প্রতারণার মামলায় বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ডের ২ কর্মকর্তা কারাগারে

ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

প্রতারণা, অর্থ আত্মসাৎ ও দুর্নীতির অভিযোগে বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ড কোম্পানি লিমিটেডের (বিজিএফসিএল) সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ দুই শীর্ষ কর্মকর্তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

আজ সোমবার (৩ নভেম্বর) দুপুরে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক শারমিন জাহান এই আদেশ দেন।

কারাগারে পাঠানো কর্মকর্তারা হলেন বিজিএফসিএলের তৎকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক নুরুল আবছার ও জিএম (প্রশাসন) মো. নাসিবুজ্জামান তালুকদার।

মামলার বিবরণী সূত্রে জানা গেছে, প্রধান আসামি বিজিএফসিএলের সাবেক মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) এ টি এম শাহ আলম চাকরি চলাকালে তাঁর শিক্ষা সনদ ও এনআইডি থেকে জন্ম সাল ১৯৬১-এর পরিবর্তে ১৯৬২ সাল দেখিয়ে বয়স জালিয়াতি করেন। বয়স প্রতারণার মাধ্যমে তিনি ২০২১ সালের ২৭ ডিসেম্বর অবসরের (পিআরএল) সময় পার হওয়ার পরও অতিরিক্ত আরও এক বছর দায়িত্ব পালন করেন। এ সময়ে তিনি বিজিএফসিএল থেকে অনৈতিকভাবে ৭৪ লাখ ৪ হাজার টাকার বেশি বেতন-ভাতা হিসেবে উত্তোলন করে আত্মসাৎ করেন।

এ টি এম শাহ আলমের প্রতারণা সামনে এলে বিজিএফসিএল তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। তদন্ত কমিটি সনদ জালিয়াতির প্রমাণ পেয়ে প্রতিবেদন জমা দিলে বিজিএফসিএলের ৭১৭তম বোর্ড সভায় তাঁর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।

বিবরণীতে বলা হয়, এই প্রতারণায় সহযোগিতা করার অভিযোগে তৎকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক নুরুল আবছার ও জিএম (প্রশাসন) মো. নাসিবুজ্জামান তালুকদারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।

বিজিএফসিএলের তৎকালীন উপমহাব্যবস্থাপক মো. আবুল বাসার মিজি বাদী হয়ে ২০২৪ সালের ২২ অক্টোবর মামলাটি করেন। মামলা করার পরপরই প্রধান আসামি এ টি এম শাহ আলম দেশ ত্যাগ করেন। অপর দুই আসামি নুরুল আবছার ও মো. নাসিবুজ্জামান তালুকদার উচ্চ আদালত থেকে জামিন নিয়েছিলেন। আজ দুপুরে নিম্ন আদালতে হাজির হলে আদালত তাঁদের জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

এ ব্যাপারে ব্রাহ্মণবাড়িয়া আদালতের অতিরিক্ত পিপি মাহবুবুর রহমান জানান, আদালতে শুনানি শেষে তাঁদের বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য অপরাধের ধারা থাকায় দুজনকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনায় যুবক কারাগারে

রংপুর প্রতিনিধি
গ্রেপ্তার আশিকুর রহমান। ছবি: সংগৃহীত
গ্রেপ্তার আশিকুর রহমান। ছবি: সংগৃহীত

রংপুরের পীরগঞ্জে কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে (টিটিসি) তিন সাংবাদিককে মারধরের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে আশিকুর রহমান নামের এক যুবককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গতকাল রোববার দিবাগত রাত ২টার দিকে উপজেলার মদনখালী ইউনিয়নের বাবনপুর শালপাড়া এলাকায় নিজ বাড়ি থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তার আশিকুর রহমান ওই এলাকার আজাদুল ইসলামের ছেলে। আজ সোমবার তাঁকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

পুলিশ জানায়, গত ১২ মার্চ পীরগঞ্জের স্থানীয় সাংবাদিক আব্দুর রহিম, রতন মিয়া ও আশিকুর রহমান স্থানীয় টিটিসিতে বিভিন্ন অনিয়মের তথ্য সংগ্রহ করতে যান। অধ্যক্ষকে না পেয়ে ফেরার সময় প্রশিক্ষণের জন্য ব্যবহৃত বিকল একটি মাইক্রোবাস ঠেলে নিয়ে যাওয়ার দৃশ্য ভিডিও ধারণ করছিলেন তাঁরা।

এ সময় বাঁধন, আব্দুল মান্নান, শাহজাহান ও সোহাগের নেতৃত্বে ১০ থেকে ১২ জন যুবক ওই সাংবাদিকদের ওপর হামলা চালান এবং তাঁদের মোবাইল ফোন কেড়ে নেন। এতে তিন সাংবাদিকই গুরুতর আহত হন। পরে আহত সাংবাদিকদের উদ্ধার করে পীরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।

এ ঘটনায় সাংবাদিক রতন মিয়া বাদী হয়ে পীরগঞ্জ থানায় মামলা করেন। মামলার তদন্তে পুলিশ ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণ করে আসামি আশিকুর রহমানকে শনাক্ত শেষে গ্রেপ্তার করে।

এ বিষয়ে পীরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, অভিযোগ ও ভিডিও ফুটেজের ভিত্তিতে আশিকুর রহমানের ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার সত্যতা পাওয়া গেছে। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে তাঁকে গ্রেপ্তার করে আজ আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। ঘটনায় জড়িত অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ছাত্রলীগ নেতা বিজয় হত্যা মামলা: সাবেক এমপিসহ ১৭ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি  
সাবেক সংসদ সদস্য হাবিবে মিল্লাত মুন্না। ছবি: সংগৃহীত
সাবেক সংসদ সদস্য হাবিবে মিল্লাত মুন্না। ছবি: সংগৃহীত

সিরাজগঞ্জে ছাত্রলীগ নেতা এনামুল হক বিজয় হত্যা মামলায় সাবেক সংসদ সদস্য হাবিবে মিল্লাত মুন্না, পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি হেলাল উদ্দিনসহ আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের ১৭ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

আজ সোমবার বিকেল সাড়ে ৪টায় সিরাজগঞ্জ সদর আমলি আদালতের সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা (জিআরও) জুয়েল রানা চার্জশিট দাখিলের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, মামলার তদন্ত শেষে সিআইডি ১৭ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট জমা দিয়েছে। তাঁদের মধ্যে পাঁচজন জামিনে ও ১২ জন পলাতক রয়েছেন। আগামী ১৪ ডিসেম্বর চার্জশিট গ্রহণের বিষয়ে শুনানি হতে পারে।

নিহত এনামুল হক বিজয় ছিলেন কামারখন্দ উপজেলার হাজী করোপ আলী সরকারি কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ও উপজেলার চালা গ্রামের আব্দুল কাদেরের ছেলে। চার্জশিটভুক্ত আসামিরা হলেন সিরাজগঞ্জ-২ (সদর-কামারখন্দ) আসনের সাবেক এমপি ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হাবিবে মিল্লাত মুন্না, পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি হেলাল উদ্দিন, জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি আহসান হাবিব খোকা, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক শিহাব আহমেদ জিহাদ, যুবলীগ নেতা এমদাদুল হক এমদাদ, ছাত্রলীগ নেতা আশিকুর রহমান বিজয়, আল-আমিন, জাহিদুল ইসলাম, সাব্বির হোসেন, সোহাগ, পারভেজ রেজা, তারিকুজ্জামান লিয়ন, মামুন, রাশিদুল হাসান রাশেদ, জুবায়ের হোসেন ও আল-আমিন বাবু।

এর আগে ২০২১ সালের ১৩ এপ্রিল জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) ১২ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেছিল। তখন পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি হেলাল উদ্দিন, জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি আহসান হাবিব খোকা ও যুবলীগ নেতা এমদাদুল হক এমদাদকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। পরে মামলার বাদী ওই প্রতিবেদন নিয়ে নারাজি আবেদন করলে আদালত ২০২২ সালের ৩ নভেম্বর মামলাটি পুনঃ তদন্তের নির্দেশ দেন সিআইডিকে। তদন্ত শেষে সংস্থাটি সম্প্রতি আদালতে নতুন চার্জশিট জমা দেয়।

মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০২০ সালের ১৬ জুন বিকেলে সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমের শোকসভায় যোগ দিতে বাড়ি থেকে বের হন বিজয়। শহরের বাজার স্টেশন এলাকায় পৌঁছালে জেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শিহাব আহমেদ জিহাদ, ছাত্রলীগ নেতা আল-আমিন, আশিকুর রহমান বিজয়সহ কয়েকজন তাঁকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে আহত করেন। গুরুতর অবস্থায় প্রথমে সিরাজগঞ্জ জেনারেল হাসপাতাল ও পরে ঢাকা নিউরোসায়েন্সেস হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

আধিপত্য বিস্তার নিয়ে বিএনপির দুই পক্ষের সংঘর্ষ, আহত ১৫

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি
ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আহত ব্যক্তিরা। ছবি: আজকের পত্রিকা
ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আহত ব্যক্তিরা। ছবি: আজকের পত্রিকা

ঝিনাইদহ সদরের কলামনখালী বাজারে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বিএনপির দুই পক্ষের সংঘর্ষে অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছেন। আজ সোমবার সকালে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

স্থানীয়রা জানান, সদর উপজেলার কলামনখালী এলাকায় রাজনৈতিক আধিপত্য বিস্তার নিয়ে জেলা বিএনপির সহসভাপতি ও দোগাছি ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার আসাদ চৌধুরী গ্রুপ এবং আরাফাত রহমান কোকো ক্রীড়া পরিষদের থানা কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক মাসুদ জোয়ার্দার গ্রুপের মধ্যে অনেক দিন ধরে বিরোধ চলছে। কয়েকদিন আগে উভয় পক্ষের সমর্থকদের মধ্যে বাগ্‌বিতণ্ডা হয়। এর জেরে আজ সকাল সাড়ে ৮টার দিকে কলামনখালী বাজারে উভয় পক্ষের লোকজন ধারালো দেশীয় অস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। এতে অন্তত ১৫ জন আহত হন। আহত ব্যক্তিদের মধ্যে আব্দুর রহিম মোল্লা, হাসেম আলী, গোলাম রসুল, বসারত জোয়ার্দার, সুরুজ ও ইয়ালিদসহ ১০ জনকে ঝিনাদহ সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বাকিরা স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা নিয়েছেন।

সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক সুলতানা মেফতাহুল জান্নাত জানান, আহতদের শরীরে ধারালো অস্ত্রের এবং ইটের আঘাতের ক্ষত রয়েছে। এখন তাঁরা সবাই শঙ্কামুক্ত বলে জানান তিনি।

হাসপাতালে ভর্তি বসারত জোয়ার্দার বলেন, মাসুদ গ্রুপের লোকজন গ্রামের উত্তরপাড়ার আসাদ গ্রুপের কয়েকজনকে বাড়ি থেকে বের করে দেয়। এ ছাড়া আমিরুল নামের এক ব্যক্তিকে মেরে পা ভেঙে দেয়। এ নিয়ে মীমাংসা করার কথা বললেও নেতারা কারও কথা শোনেন না। এরই জেরে সকালে বাজারে দুই পক্ষের সংঘর্ষ হয়।

জেলা বিএনপির সহসভাপতি ও দোগাছি ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আসাদ চৌধুরী বলেন, ‘মাসুদের লোকজন আমাদের এক সমর্থক আমিরুলকে কিছুদিন আগে মেরে পা ভেঙে দেয়। পরে তারা বাজার দখল করে রাখে। আজ সকালে এসে তারা বাজারের দোকানপাট সব বন্ধ করে দেয় । এরই জেরে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।’

আরাফাত রহমান কোকো ক্রীড়া পরিষদের থানা কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক মাসুদ জোয়ার্দার বলেন, ‘বাজার দখল বা দোকানপাট বন্ধের কোনো ঘটনা ঘটেনি। তারা আমাদের ওপর মিথ্যা অভিযোগ দিচ্ছে। আর আমিরুলকে আমরা মারধর করিনি। আমিরুলের জমাজমি নিয়ে পারিবারিক দ্বন্দ্বের কারণে তার পরিবারের লোকজনেরা তাকে মারধর করে।’

ঝিনাইদহ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। পরিস্থিতি এখন আমাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। উত্তেজনা থাকায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। তবে এ ঘটনায় এখনো কেউ থানায় লিখিত অভিযোগ দেয়নি।’

এ বিষয়ে জেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট এম এ মজিদ বলেন, এটা দলীয় কোনো ব্যাপার নয়। এটা সামাজিক দ্বন্দ্ব।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত