Ajker Patrika

দোলপূর্ণিমা উপলক্ষে আক্কেলপুরে শুরু হয়েছে ঘোড়ার মেলা

আক্কেলপুর (জয়পুরহাট) প্রতিনিধি
আপডেট : ১০ মার্চ ২০২৩, ১৭: ০১
দোলপূর্ণিমা উপলক্ষে আক্কেলপুরে শুরু হয়েছে ঘোড়ার মেলা

প্রতিবছরের মতো এবারও দোল পূর্ণিমা উপলক্ষ্যে জয়পুরহাটের আক্কেলপুরের গোপীনাথপুরে শুরু হয়েছে ঐতিহ্যবাহী ঘোড়ার মেলা। গত মঙ্গলবার থেকে গোপীনাথপুর মন্দির ঘিরে এই মেলা শুরু হয়। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে মানুষ এখানে ঘোড়া বেচা-কেনা করতে এখানে আসে। ঘোড়ার মেলা বলে খ্যাত হলেও এই মেলায় গরু-মহিষও বিক্রি হয়। এ ছাড়া মেলায় জামা-কাপড়, গৃহস্থালিসামগ্রী, মসলা, কাঠ ও প্লাস্টিকের আসবাব, কম্বলসহ নানা রকম পণ্যেরও দোকানপাট বসে। ১৩ দিনব্যাপী এই মেলা শেষ হবে আগামী ১৯ মার্চ। 

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দোল পূর্ণিমা উপলক্ষ্যে পাঁচ শ বছর ধরে গোপীনাথপুর মন্দির ঘিরে এই মেলা বসে। শুরুতে মেলাটি মাসব্যাপী চলত। ধীরে-ধীরে তা কমে ১৫ দিনে নেমে আসে। শুরু থেকেই মেলাটি ঘোড়ার জন্য প্রসিদ্ধ। এবারও নেপাল, ভুটান, ভারত, পাকিস্তানসহ বিভিন্ন দেশ থেকে উন্নত জাতের ঘোড়া মেলায় আসবে। মেলায় নিরাপত্তার জন্য অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প বসেছে। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে মেলায় এসেছেন ব্যবসায়ীরা। দোলপূর্ণিমা শুরুর দুই দিন আগেই এখানে এসে দোকানঘরের বরাদ্দ নেন তাঁরা। গত কয়েক বছর ধরে মেলার প্রধান আকর্ষণ যাত্রা-সার্কাস এবার বন্ধ রয়েছে। 

গত বৃহস্পতিবার বিকেলে মেলা ঘুরে দেখা গেছে, গোপীনাথপুর ইউনিয়ন পরিষদ চত্বর থেকে শুরু হয়েছে এই মেলা। এবার মেলায় বড় ঘোড়ার সংখ্যা খুবই কম। মাঝারি ও ছোট ঘোড়ার সংখ্যাই বেশি। বিকেলে ঘোড়া ব্যবসায়ীরা তাঁদের ঘোড়া নিয়ে মেলার এক প্রান্তে ঘোড়ার দৌড়ের আয়োজন করেন। সেখানে ক্রেতারা সুস্থ ও দ্রুত গতিতে দৌড়াতে পারে এমন ঘোড়া নির্বাচন করে কিনতে পারেন। মেলায় এবার বড় বড় মহিষও এনেছেন অনেক ব্যবসায়ী। ব্যবসায়ীরা বলছেন, এবার ক্রেতার সংখ্যা অনেক কম। তাই হতাশ হয়েছেন অনেকেই। তবে আজ শুক্রবার গোপীনাথপুর হাটের দিন। এই দিন মেলায় বেশি বিক্রি হবে বলে আশা করছেন তাঁরা। 

আক্কেলপুর উপজেলার গোপীনাথপুর ইউনিয়ন পরিষদ চত্বরের পাশে বসেছে পাঁচ শ বছরের পুরোনো ঐতিহ্যবাহী দোল পূর্ণিমার মেলা। মেলার এক প্রান্তে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা ব্যবসায়ীরা অস্থায়ী তাবু ফেলে করছেন ঘোড়া বেচা-কেনা

দিনাজপুর থেকে মেলায় আসা ঘোড়া ব্যবসায়ী শাহিদুর রহমান বলেন, ‘গত মঙ্গলবারে মেলায় দুটি ভুটানি জাতের ঘোড়া নিয়ে এসেছি। প্রতিটির দাম রেখেছি এক লাখ পঞ্চাশ হাজার টাকা করে। কিন্তু ক্রেতার সংখ্যা খুবই কম। এবার বাজারের অবস্থা ভালো না।’

নওগাঁর ধামইরহাট থেকে মেলায় ঘোড়া নিয়ে এসেছেন আমির হামজা। তিনি ভুটানি ক্রসের দুটি ঘোড়া এনেছেন। গত তিন দিন ধরে একজন ক্রেতাও তাঁর ঘোড়ার দাম করেননি। তবে আগামী দু-এক দিনের মধ্যে ঘোড়া দুটি বিক্রি হবে বলে আশা তাঁর।

জামালপুরের ঘোড়া ব্যবসায়ী শাবলু হোসেন বলেন, ‘আমি দেশি ঘোড়া এনেছি মেলায়। প্রতি বছর এ মেলায় ঘোড়া আনি বিক্রির জন্য। দেশের মধ্য সব চেয়ে বড় মেলা এটি। এবার জিনিসপত্রের দাম বেশি থাকায় ক্রেতার সংখ্যা খুবই কম।’ 

আক্কেলপুর উপজেলার গোপীনাথপুর ইউনিয়ন পরিষদ চত্বরের পাশে বসেছে পাঁচ শ বছরের পুরোনো ঐতিহ্যবাহী দোল পূর্ণিমার মেলা। মেলার এক প্রান্তে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা ব্যবসায়ীরা অস্থায়ী তাবু ফেলে করছেন ঘোড়া বেচা-কেনাগোপীনাথপুর মন্দিরের সেবায়েত রনেন্দ্র কৃষ্ণ প্রিয়া আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘দোল পূর্ণিমায় এখানে ১৩ দিনের পূজা হয়। এই কয়দিন রাধা কৃষ্ণের দোল পূজা অনুষ্ঠিত হয়। পূজা শেষ হলে মেলাও শেষ হয়ে যায়। কিন্তু স্থানীয়দের অনুরোধে পরবর্তীতে এই মেলার সময় বাড়ানো হয়। এবার বাড়ানো হবে কী না তা এখুনি বলা যাচ্ছে না।’ 

গোপীনাথপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ও পদাধিকার বলে গোপীনাথপুর দোল পুর্ণিমা মেলা কমিটির সভাপতি হাবিবুর রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘পাঁচ শ বছর ধরে মেলাটি হচ্ছে। এটি একটি ঐতিহ্যবাহী মেলা। মহামারি করোনার কারণে এক বছর মেলার কেনা-বেচা বন্ধ ছিল। মেলা ঘিরে মানুষের মধ্যে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। স্থানীয় প্রশাসনের পাশাপাশি মেলা কমিটিও মেলার সার্বিক নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছে।’ 

আক্কেলপুরের গোপীনাথপুর ইউনিয়ন পরিষদ চত্বরের পাশে বসেছে পাঁচ শ বছরের পুরোনো ঐতিহ্যবাহী দোল পূর্ণিমার মেলা। মেলার এক প্রান্তে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা ব্যবসায়ীরা গরু ও মহিষ বেচা-কেনা করছেনএ নিয়ে জানতে চাইলে জয়পুরহাটের জেলা প্রশাসক (ডিসি) সালেহীন তানভীর গাজী সাংবাদিকদের বলেন, ‘গোপীনাথপুরের মেলাটি অনেক পুরোনো। এটি এলাকার ঐতিহ্য। মেলায় লোকজন যেন নির্বিঘ্নে কেনাকাটা করতে পারে সে জন্য নিরাপত্তার ব্যবস্থা রয়েছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত