Ajker Patrika

৩ জন চিকিৎসক দিয়ে চলছে পাবনা মানসিক হাসপাতাল

শাহীন রহমান, পাবনা 
আপডেট : ১০ অক্টোবর ২০২১, ১২: ৫০
৩ জন চিকিৎসক দিয়ে চলছে পাবনা মানসিক হাসপাতাল

জনবলের সংকটে খুঁড়িয়ে চলছে পাবনা মানসিক হাসপাতালের কার্যক্রম। চিকিৎসকের সংকটে ব্যাহত হচ্ছে সেবা। এমন বাস্তবতার মধ্যেই আজ রোববার পালিত হচ্ছে বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস। এ বছরের প্রতিপাদ্য ‘অসম বিশ্বে মানসিক স্বাস্থ্য’। 

কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, মানসিক স্বাস্থ্যসেবার একমাত্র বিশেষায়িত এই হাসপাতালে পদ আছে ৬৪৩টি। দীর্ঘদিন ধরে শূন্য রয়েছে ২০১টি পদ। মাত্র তিনজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসককে ৫০০ শয্যার এই হাসপাতালের সেবা দিতে হিমশিম খেতে হয়। 

পাবনা শহরের শীতলাই হাউসে ১৯৫৭ সালে অস্থায়ীভাবে স্থাপন করা হয় পাবনা মানসিক হাসপাতাল। এর দুই বছর পর ১৯৫৯ সালে সদরের হেমায়েতপুরে ১১১ দশমিক ২৫ একর জায়গায় স্থানান্তর করা হয়। গত বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার দিকে সরেজমিনে দেখা যায়, পুরোনো ছোট্ট একটি ভবনে চলছে বহির্বিভাগের কার্যক্রম। বহির্বিভাগে রোগী ও স্বজনদের ভিড়। 

ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ডু থেকে মেয়েকে নিয়ে এসেছেন রবিউল ইসলাম। তিনি বলেন, বছরখানেক আগে একবার নিয়ে এসেছিলেন। মেয়েটি চিকিৎসায় সুস্থ হয়েছিল, কিন্তু আবার পাগলামি শুরু করেছে। তাই তিনি নিয়ে এসেছেন এখানে। কিন্তু এখানে একটু বসা বা বিশ্রামের কোনো ব্যবস্থা নেই। 

কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলার আলম আলী বিশ্বাস তাঁর স্ত্রী কনা খাতুনকে পাঁচ বছর ধরে চিকিৎসা করাচ্ছেন পাবনা মানসিক হাসপাতালে। কিন্তু প্রতিবারই তাঁকে দুর্ভোগ পোহাতে হয়। সিরিয়াল দিয়ে অপেক্ষা করতে হয়। 

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, মোট পদসংখ্যা ৬৪৩। এর বিপরীতে শূন্য রয়েছে ২০১টি পদ। এর মধ্যে প্রথম শ্রেণির চিকিৎসকের ৩১টি পদের মধ্যে শূন্য ২০টি। ৭টি প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তার পদের মধ্যে শূন্য ৩টি। এ ছাড়া দ্বিতীয় শ্রেণির কর্মকর্তার ৩১৬টি পদের মধ্যে ৪১টি শূন্য রয়েছে। ১১৯টি তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী পদের মধ্যে শূন্য ৩৭টি। চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী ১৭০টি পদের মধ্যে ১০০টিই শূন্য রয়েছে। 

পাবনা মানসিক হাসপাতালের আবাসিক সাইকিয়াট্রিস্ট মাসুদ রানা বলেন, তাঁরা মাত্র তিনজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ৫০০ শয্যার হাসপাতালের অন্তর্বিভাগ ও বহির্বিভাগ সামলাচ্ছেন। এটা খুবই কষ্টকর একটা ব্যাপার। তাঁদের অনেক সময় নাভিশ্বাস উঠে যায়।

হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) শাহিন রেজা বলেন, হাসপাতালের অনেকগুলো ওয়ার্ড রয়েছে। কোনো ওয়ার্ডে ৪০ জন রোগী আছে। একজন চিকিৎসকের পক্ষে ৪০ জনের সেবা দেওয়া কঠিন। সেখানে প্রতিটি ওয়ার্ডে দুজন করে চিকিৎসক থাকলে প্রত্যেক রোগী আরও ভালো চিকিৎসাসেবা পেতেন। 

পর্যাপ্ত লোকের অভাবে হিমশিম খেতে হয় নার্সদেরও। নার্সিং সুপারভাইজার রাশেদা খাতুন ও আব্দুল কাদের বলেন, রোগীদের কেউ খেতে না চাইলে তাঁকে বুঝিয়ে খাওয়াতে হয়। গোসল করিয়ে দিতে হয়। নখ কেটে দিতে হয়। ওষুধ খাইয়ে দিতে হয়। তা না হলে তাঁদের সামলানো কঠিন হয়ে পড়ে। তবে লোকবলের অভাবে তাঁদের দায়িত্ব পালনে কষ্ট হচ্ছে। এ ছাড়া তাঁদের অনেক ঝুঁকি নিয়ে দায়িত্ব পালন
করতে হয়। রোগীদের হাতে মার পর্যন্ত খেতে হয়। কিন্তু তাঁদের জন্য নেই ঝুঁকিভাতা। সরকারের উচিত ঝুঁকিভাতা চালু করা। 

এ বিষয়ে হাসপাতালের পরিচালক আবুল বাশার মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান বলেন, চিকিৎসক পদায়নসহ জনবলের সংকটের বিষয়টি বারবার চিঠি দিয়ে মন্ত্রণালয়কে জানানো হয়েছে। কিন্তু পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। উন্নত চিকিৎসাসেবা দিতে হলে জনবল বাড়াতেই হবে। বিশেষ করে চিকিৎসকের সংখ্যা বাড়ানো জরুরি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

পেহেলগাম হামলা: ধরা খেয়ে গেল মোদির কাশ্মীর ন্যারেটিভ

ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা: বিমানবাহিনীকে সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিতে বললেন প্রধান উপদেষ্টা

সারজিসের সামনেই বগুড়ায় এনসিপি ও বৈষম্যবিরোধীদের মধ্যে হাতাহাতি-সংঘর্ষ

‘ঘুষের জন্য’ ৯১টি ফাইল আটকে রাখেন মাউশির ডিডি: দুদক

রাখাইনে মানবিক করিডর কি প্রক্সি যুদ্ধের ফাঁদ হবে, ভারত-চীন কীভাবে দেখবে

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত