Ajker Patrika

‘উল্টো পথে’ বারবার কয়েদি মুক্তির চেষ্টা

প্রতিনিধি, রাজশাহী
আপডেট : ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১৩: ৫০
‘উল্টো পথে’ বারবার কয়েদি মুক্তির চেষ্টা

রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারের এক কয়েদি মুক্তির আশায় বারবার আইনজীবীর মাধ্যমে হাইকোর্টে রিট করছেন। তাঁর আইনজীবী চারটি মামলার বর্ণনা দিয়ে হাইকোর্টকে বলছেন, সাজা খাটার মেয়াদ শেষ হয়ে গেলেও তাঁকে জেলখানায় আটকে রাখা হয়েছে। 

তবে কারা কর্তৃপক্ষ বলছে, এই আসামির মোট মামলার সংখ্যা ১১। কোনো রায়েই উল্লেখ নেই যে সব মামলার সাজা একসঙ্গে কার্যকর হবে। তাই জেল কোড অনুযায়ী একটার পর একটা সাজা কার্যকর করা হবে। এভাবে তাঁকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত কারাগারে থাকতে হবে।

এই কয়েদির নাম জহির উদ্দিন। তাঁর বাড়ি রাজশাহী নগরীর বোয়ালিয়া থানার শিরোইল এলাকায়। রাজশাহী মহানগর দায়রা জজ দ্বিতীয় আদালতের বিচারক মুত্তাহিদা হোসেন ২০১৭ সালে জহিরকে তিনটি মামলায় ছয় মাস করে এবং একটি মামলায় তিন মাসের কারাদণ্ড দেন। রায়ে উল্লেখ ছিল না যে একসঙ্গেই সবগুলো কার্যকর হবে।

সে হিসাবে চার মামলায় মোট ২১ মাস কারাভোগ করেছেন জহির। এই চার মামলার সাজা খাটা শেষ হয়েছে। এলাকায় প্রতারক হিসেবে পরিচিত জহির গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে গিয়েছিলেন ২০১৮ সালের ২৫ জানুয়ারি। চার মামলার কারাদণ্ড কার্যকর হওয়ার পর অন্যান্য মামলার সাজার হিসাব শুরু করেছে কারা কর্তৃপক্ষ। 

তবে এবার ‘ভিন্ন পথে’ মুক্তির চেষ্টা চালাচ্ছেন কয়েদি জহির। সম্প্রতি আইনজীবীর মাধ্যমে তিনি হাইকোর্টে রিট করেন। এতে রাষ্ট্র সচিব, আইন সচিব, রাজশাহী যুগ্ম মহানগর দায়রা জজ, রাজশাহীর জেলা প্রশাসক, রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারের জেল সুপারসহ সাতজনকে বিবাদী করা হয়। রিটে হাইকোর্টকে জানানো হয়, ২১ মাস সাজা খাটা শেষ হলেও আরও ২৩ মাস আটকে রাখা হয়েছে তাঁকে। গত ১৩ সেপ্টেম্বর বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চে এর শুনানি হয়। আদেশে জহিরকে কারাবন্দী রাখা কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না এবং মেয়াদের ‘বেশি’ সাজা খাটার পরও তাঁকে কেন মুক্তির নির্দেশ দেওয়া হবে না তা জানতে চেয়েছেন হাইকোর্ট। 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার সুব্রত কুমার বালা বলেন, ‘জহিরের বিরুদ্ধে মোট ১১টি মামলা। সব মামলাতেই সে সাজাপ্রাপ্ত। মামলাগুলো প্রতারণা, চেক জালিয়াতি—এ ধরনের। কোনোটিতে ছয় মাস, কোনোটিতে চার মাস—এভাবে সাজা আছে। কোনো মামলার রায়ে উল্লেখ নেই যে, একসঙ্গে সব মামলার সাজা কার্যকর হবে। তাই জেল কোড অনুযায়ী আমরা একটার পর একটা সাজা কার্যকর করছি। ২০২৫ সাল পর্যন্ত তাঁকে জেলে থাকতে হবে। কিন্তু যে মামলাগুলোর সাজার মেয়াদ শেষ, শুধু সেগুলোর বর্ণনা হাইকোর্টে দিয়ে রিট করা হয়।’ 

জেল সুপার বলেন, ‘সাজার মেয়াদ শেষেও আটকে রাখা হয়েছে দাবি করে এর আগেও হাইকোর্টের একটি বেঞ্চে আসামি জহির আইনজীবীর মাধ্যমে রিট করেছিলেন। সেই বেঞ্চকে আমরা বিষয়টা জানিয়েছি। ওখানে লাভ না হওয়ায় আরেকটি বেঞ্চে রিট করা হয়েছে। এখানেও আমাদের জহিরের অন্য মামলার সাজার বিষয়টা জানাতে হবে।’ 

একাধিক মামলায় দণ্ড থাকলে এবং আসামিও কারাগারে থাকলে কীভাবে সাজা কার্যকর হবে এমন প্রশ্নে রাজশাহীর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী এন্তাজুল হক বাবু বলেন, ‘রায়ে যদি আদালত উল্লেখ করে দেন যে সবগুলো সাজা একসঙ্গে কার্যকর হবে, তাহলে সেভাবেই হবে। কিন্তু সেটা না থাকলে আলাদা আলাদাভাবেই একটার পর একটা সাজা কার্যকর হবে।’ তবে সবগুলো সাজা একসঙ্গে কার্যকর করার সুযোগও আসামির আছে বলে জানান আইনজীবী এন্তাজুল হক বাবু। 
 

এন্তাজুল হক বাবু জানান, সে ক্ষেত্রে আসামি যখন কারাগারে যান, তখন আইনজীবীর মাধ্যমে বিষয়টা সেই সব আদালতকে অবহিত করতে হয়, যে যে আদালতে তাঁর দণ্ড হয়েছে। আদালতগুলোতে আবেদন করতে হয়, যে মামলায় গ্রেপ্তার, সেই মামলার সঙ্গে যেন অন্য মামলায়ও তাঁর সাজা কার্যকরের হিসাব শুরু করা হয়। তাহলে আদালত আদেশ দিতে পারেন। এ ক্ষেত্রে অন্য মামলার সঙ্গে আরেক মামলারও সাজা কার্যকর হয়।

তাই এই আসামির প্রয়োজন ছিল নিম্ন আদালতকে তাঁর গ্রেপ্তার হওয়ার বিষয়টি অবহিত করা। এটি না করেই মুক্তির জন্য রিট করা ‘উল্টো পথে’ হাঁটা বলে মন্তব্য করেন এই আইনজীবী। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত