Ajker Patrika

বৃষ্টি নেই, দুশ্চিন্তায় নওগাঁর কৃষকেরা

নওগাঁ প্রতিনিধি
আপডেট : ১৯ জুলাই ২০২২, ১৪: ২৫
বৃষ্টি নেই, দুশ্চিন্তায় নওগাঁর কৃষকেরা

আষাঢ়-শ্রাবণ মাসেও বৃষ্টি না হওয়ায় ধানের রাজ্য খ্যাত উত্তরের জেলা নওগাঁয় রোপা আমন চাষাবাদে বিরূপ প্রভাব পড়েছে। ভরা মৌসুমেও কৃষকেরা আমনের চারা রোপণ করতে পারছেন না। এদিকে প্রখর রোদে বীজতলা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চলতি বছর বোরো ধান কাটা-মাড়াইয়ের সময়ে অতিরিক্ত বৃষ্টির কারণে কৃষকের বেশ ক্ষতি হয়েছে। এরপর বৃষ্টি কমতে শুরু করে জেলাজুড়ে। ধীরে ধীরে আবাদি জমিতে জমে থাকা পানি শুকিয়ে যায়। বর্তমানে এমন অবস্থায় অনেক কৃষক বীজতলার চারা প্রস্তুত করলেও সেই চারা বীজতলাতেই নষ্ট হতে বসেছে। তবে কেউ কেউ বাড়তি খরচ করে গভীর নলকূপের মাধ্যমে সেচ দিয়ে আমনের চারা রোপণ করছেন।

বদলগাছি আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা যায়, এবার চলতি বছরের ১ থেকে ১৫ জুলাই পর্যন্ত বদলগাছিতে বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে ১৫ দশমিক ৬ মিলিমিটার। অথচ এর আগে গত বছরের (২০২১) জুলাই মাসে বদলগাছি আবহাওয়া অফিসে বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছিল ২১৭ দশমিক ৪ মিলিমিটার।

গত কয়েক দিন জেলার সদর, নিয়ামতপুর, পত্নীতলা, সাপাহার, মহাদেবপুর, বদলগাছী, ধামুইরহাট, পোরশাসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, পানি না থাকায় বেশির ভাগ জমিই অনাবাদি হিসেবে পড়ে আছে। বৃষ্টি না হওয়ায় কৃষকদের আমন বীজতলাগুলো প্রখর রোদে হলুদ ও লালচে বর্ণ ধারণ করতে শুরু করেছে। এসব বীজতলার চারা রোপণ করলে পর্যাপ্ত ফল না-ও হতে পারেন বলে আশঙ্কা করছেন কৃষকেরা। এতে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন তাঁরা।

কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জেলায় সাধারণত মধ্য আষাঢ় থেকে শুরু করে শ্রাবণ মাস পর্যন্ত আমন ধানের চারা জমিতে রোপণ করা হয়। কিন্তু এবার তেমন বৃষ্টি না হওয়ায় তাঁরা আমন চাষাবাদ নিয়ে দুর্ভোগে পড়েছেন। মূলত বর্ষাকালে বৃষ্টিতে জমে থাকা পানিতে কৃষকেরা রোপা আমন চাষ করে থাকেন। সাধারণত বীজতলায় তৈরি হওয়া চারা ২৫ থেকে ৩০ দিনের মধ্যে জমিতে লাগানো হয়। কিন্তু অনেক কৃষকের চারার বয়স দেড় মাস পেরিয়ে গেছে। 

শেষ মুহূর্তে অনেক কৃষক বাড়তি খরচ করে গভীর নলকূপের মাধ্যমে সেচ নিতে জমি প্রস্তুত করছেন। পত্নীতলা উপজেলার গোপীনগর এলাকার কৃষক আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘বৃষ্টির অভাবে জমিতে চাষ করতে পারছেন না। এ ছাড়া বীজতলায় চারার বয়স বেশি হয়ে যাওয়ায় সেগুলোও লালচে হয়ে যাচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে আমনের চারারও সংকট দেখা দেবে।’ 

নিয়ামতপুর এলাকার কৃষক ইমরান হোসেন বলেন, ‘সব জমি শুকিয়ে গেছে। সময়মতো রোপণ না করলে চারা নষ্ট হবে আশঙ্কায় ডিপ টিউবওয়েল দিয়ে সেচ দিয়ে জমি প্রস্তুত করেছেন। এতে বিঘাপ্রতি তাঁর বাড়তি ১ হাজার ৫০০ থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকা খরচ করতে হয়েছে। 

পোরশার নিতপুরের কৃষক সানোয়ার মণ্ডল বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে বৃষ্টি নেই। ফসলের মাঠ পানির অভাবে ফেটে চৌচির হয়ে গেছে। আষাঢ়-শ্রাবণ মাসে এমন পরিস্থিতি তৈরি হবে কখনো ভাবতেই পারিনি। এর জন্য এবার আমন ধান লাগানোর সাহস পাচ্ছি না।’ 

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্যমতে, এবার জেলায় ১ লাখ ৯৭ হাজার ১১০ হেক্টর জমিতে আমন ধান চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। জেলায় এ পর্যন্ত লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ২ দশমিক ২ শতাংশ আমন চারা রোপণ করতে পেরেছেন চাষিরা। 

বদলগাছি আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের জ্যেষ্ঠ পর্যবেক্ষক (সিনিয়র অবজারভার) মো. হামিদুল হক বলেন, গত বছরের তুলনায় এ বছর এখন পর্যন্ত বৃষ্টি কম হয়েছে। তবে আগামী দুই-তিন দিনের মধ্যে জেলায় সামান্য বৃষ্টি হতে পারে। এ ছাড়া ২২ জুলাইয়ের পর থেকে মাঝারি থেকে ভারী বর্ষণ হতে পারে। 

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত উপপরিচালক এ কে এম মনজুরে মাওলা বলেন, ‘যে সব কৃষকের চারার বয়স বেশি হচ্ছে, তাঁদের সেচ দিয়ে চারা রোপণের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া আগামী দুই-তিন দিনের মধ্যে বৃষ্টির পূর্বাভাস পাওয়া গেছে। এ অবস্থায় বৃষ্টির কারণে এবার আমন চাষ কিছুটা বিলম্বিত হতে পারে। তবে লক্ষ্যমাত্রা ব্যাহত হবে না বলেও আশা করছেন তিনি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

অপারেশন সিন্দুর ঘিরে আলোচিত কে এই কর্নেল সোফিয়া কুরেশি

পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে ‘প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপের’ নির্দেশ

কাশ্মীরে বিধ্বস্ত বিমানের অংশবিশেষ ফরাসি কোম্পানির তৈরি, হতে পারে রাফাল

সীমান্তে সাদা পতাকা উড়িয়ে আত্মসমর্পণের ইঙ্গিত দিয়েছে ভারত: পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রী

পাকিস্তানে হামলায় ‘লোইটারিং মিউনিশনস’ ব্যবহারের দাবি ভারতের, এটি কীভাবে কাজ করে

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত