Ajker Patrika

রাবিতে ছাত্রদলের নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি ও মারধরের অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী
শিক্ষার্থীর কাছ থেকে চাঁদা আদায়ের ঘটনায় অভিযুক্ত ব্যক্তিরা। ছবি: সংগৃহীত
শিক্ষার্থীর কাছ থেকে চাঁদা আদায়ের ঘটনায় অভিযুক্ত ব্যক্তিরা। ছবি: সংগৃহীত

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) ছাত্রদলের কয়েকজন নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি ও মারধরের অভিযোগ উঠেছে। পুলিশে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে টাকা আদায়ের পাশাপাশি ছাত্রদলের রাজনীতিতে যুক্ত হওয়ার জন্য চাপও দেওয়া হয় বলে অভিযোগ জানিয়েছেন ভুক্তভোগী এক শিক্ষার্থী।

রাবির ইনস্টিটিউট অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (আইবিএ) শিক্ষার্থী জসিমউদ্দীন আজ বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও ছাত্র উপদেষ্টা দপ্তরে এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। এর আগে গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়সংলগ্ন মেহেরচন্ডী এলাকার জিয়া স্কুল রোডে এ ঘটনা ঘটে। অভিযুক্ত ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছেন রাবি শাখা ছাত্রদলের অব্যাহতিপ্রাপ্ত যুগ্ম আহ্বায়ক আহসান হাবীব, বহিষ্কৃত কর্মী হাসিবুর ইসলাম হাসিব, অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী বিশালসহ আরও ১০-১২ জন ছাত্রদল নেতা-কর্মী।

লিখিত অভিযোগে জসিমউদ্দীন বলেন, ‘মাগরিবের নামাজ শেষে এক বন্ধুর সঙ্গে হাঁটার সময় ৩-৪টি মোটরসাইকেল এসে আমার পথরোধ করে। এরপর আমাকে আলাদা করে নিয়ে গিয়ে চাঁদা দাবি করে এবং একটি ছবি দেখিয়ে আমার রাজনৈতিক পরিচয় নিয়ে প্রশ্ন তোলে।’

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী আরও বলেন, ‘তারা আমার কাছে দুই হাজার টাকা দাবি করে। আমি তাদের জানাই, হলে থাকার জন্য অতীতে ছাত্রলীগের কয়েকটি প্রোগ্রামে বাধ্য হয়ে অংশ নিয়েছিলাম, তবে কখনো কোনো অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়াইনি। আমি জুলাই অভ্যুত্থানে অংশগ্রহণের প্রমাণ হিসেবে আমার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের পোস্ট ও ছবি দেখাই। এ ছাড়া এলাকার সংস্কারকাজে যুক্ত ছিলাম বলেও তাদের জানাই।’

জসিমউদ্দীনের ভাষ্য অনুযায়ী, তাঁর অবস্থান আমলে না নিয়ে অভিযুক্ত ব্যক্তিরা তাঁকে মারধর করেন এবং দেড় হাজার টাকা দিতে বাধ্য করেন। পাশাপাশি ভবিষ্যতে ছাত্রদলের কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ ও সংগঠনের রাজনীতিতে যুক্ত হওয়ার শর্ত দেন।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের একজন আহসান হাবীব বলেন, ‘আমি গতকাল একটি প্রোগ্রামে যাওয়ার সময় ওই ছেলের সঙ্গে দেখা হয়। তখন আমার সঙ্গে থাকা এক ছোট ভাইয়ের মাধ্যমে জানতে পারি, এই ছেলে আগে ছাত্রলীগের সঙ্গে জড়িত ছিল এবং আমাদের দলীয় নেতা-কর্মীদের হয়রানি করেছে। বিষয়টি জানার পর আমি তার সঙ্গে কথা বলি এবং তার ফোন দেখতে চাই। পরে কিছু না পেয়ে তাকে চলে যেতে বলি। কোনো ধরনের টাকা-পয়সার লেনদেন এখানে হয়নি।’

অভিযোগের বিষয়ে শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক সুলতান আহমেদ রাহী বলেন, ‘যেহেতু তারা দুজন বহিষ্কৃত, রাবি ছাত্রদলের সঙ্গে তাদের কোনো সম্পর্ক নেই। তাদের কোনো অপরাধের দায় শাখা ছাত্রদল নেবে না। একটা চক্র সব সময়ই মিথ্যা অভিযোগ এনে আমাদের ওপর দায় চাপানোর অপচেষ্টা চালায়। আমি জানি না এ ঘটনা সত্য কি না। তবে যদি সত্য প্রমাণিত হয়, তাহলে আমি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে আহ্বান করব, তারা যেন এ বিষয়ে প্রচলিত আইনে ব্যবস্থা নেয়। আর এতে রাবি শাখা ছাত্রদল সর্বাত্মক সহায়তা করবে।’

লিখিত অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে প্রক্টর অধ্যাপক মাহবুবর রহমান জানান, ‘আমরা লিখিত অভিযোগের একটি কপি পেয়েছি। প্রাথমিকভাবে আমরা পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখব। তদন্তসাপেক্ষে অভিযোগ প্রমাণিত হলে দোষীদের যথাযথ শাস্তি নিশ্চিত করা হবে।’ প্রক্টর মাহবুবর রহমান আরও জানান, ‘একই দিনে এই চক্রের বিরুদ্ধে আরও একটি চাঁদাবাজি চেষ্টার অভিযোগ আমরা পেয়েছি। পরে ঘটনাস্থলে প্রক্টরিয়াল বডি উপস্থিত হয় এবং ঘটনার মীমাংসা করে। যথাযথ প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই আমরা প্রত্যেকটি অভিযোগের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।’

উল্লেখ্য, এর আগেও নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগের এক সদস্যের সঙ্গে চাঁদাবাজির ফোনালাপ ফাঁস হওয়ার ঘটনায় আহসান হাবীব ও হাসিবুর ইসলাম হাসিবকে কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের পক্ষ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত