Ajker Patrika

মাছ লুট করে অব্যাহতি পাওয়া ছাত্রদল নেতা এখন কলেজের সভাপতি

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী
কলেজ পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি ও উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক পদ থেকে নানা অভিযোগে অব্যাহতি পাওয়া মহব্বত হোসেন। ছবি: আজকের পত্রিকা
কলেজ পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি ও উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক পদ থেকে নানা অভিযোগে অব্যাহতি পাওয়া মহব্বত হোসেন। ছবি: আজকের পত্রিকা

পুকুরের মাছ লুট, চাঁদাবাজি ও ভয়ভীতি প্রদর্শনের অভিযোগে অব্যাহতি পেয়েছিলেন রাজশাহীর বাগমারা উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক মহব্বত হোসেন। সম্প্রতি তাঁকে উপজেলার মোহনগঞ্জ ডিগ্রি কলেজ পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি করা হয়েছে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ পরিদর্শক আব্দুল হাই সিদ্দিক সরকার ৭ সেপ্টেম্বর এ-সংক্রান্ত চিঠিতে স্বাক্ষর করেন।

এর আগে কলেজ কমিটির সভাপতি ছিলেন জেলা যুবদলের সদস্যসচিব রেজাউল করিম টুটুল। অভিযোগ উঠেছে, টুটুলের শিক্ষা সনদ নিয়ে প্রশ্ন থাকায় তাঁর অনুসারী মহব্বতকে কলেজ কমিটির সভাপতি করা হয়েছে। এ ঘটনায় শিক্ষক-শিক্ষার্থী, অভিভাবক এবং স্থানীয় বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ও অসন্তোষ বিরাজ করছে।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মোহনগঞ্জ কলেজের অধ্যক্ষের কাছে পাঠানো চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘বর্তমান সভাপতি রেজাউল করিম দায়িত্ব পালনে অপারগতা প্রকাশ করায় তার মনোনয়ন পরিবর্তনপূর্বক তদস্থলে সভাপতি হিসেবে মহব্বত হোসেনকে মনোনয়ন দেওয়া হলো।’

এদিকে অভিযোগ রয়েছে, ছাত্রদল নেতা মহব্বত উপজেলার পোড়াকয়া গ্রামের রুবেল হক নামের এক মাছচাষিকে পুকুরপাড়ে তাঁর ঘরে অবরুদ্ধ করে মাছ লুট করেন। এ ঘটনায় রুবেল ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে মহব্বতের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত বছরের ১৯ অক্টোবর তাঁকে উপজেলা আহ্বায়কের পদ ছাড়াও প্রাথমিক সদস্যপদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের ২০ অক্টোবর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সাবেক অতিরিক্ত সচিব সুলতান মাহমুদকে সভাপতি করে মোহনগঞ্জ ডিগ্রি কলেজ পরিচালনা পর্ষদের একটি অ্যাডহক কমিটি গঠন করে। কিন্তু সেই অ্যাডহক কমিটির মেয়াদ থাকা অবস্থায় এ বছরের ২৬ জানুয়ারি সুলতান মাহমুদকে সরিয়ে যুবদল নেতা টুটুলকে সভাপতি করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

অভিযোগ রয়েছে, যুবদল নেতা টুটুল রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে এলাকার সম্মানিত ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত সাবেক আমলা সুলতান মাহমুদকে সভাপতির পদ থেকে সরিয়ে দেন। এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে কয়েকজন শিক্ষানুরাগী ব্যক্তি ও অভিভাবক অ্যাডহক কমিটির সভাপতি যুবদল নেতা টুটুলের শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদপত্র যাচাইয়ের আবেদন জানিয়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বরাবর লিখিত আবেদন করেন।

আবেদনে অভিযোগকারীরা উল্লেখ করেন, ‘রেজাউল করিম টুটুল প্যারামেডিকেলে অধ্যয়ন করেছেন, এটি উচ্চমাধ্যমিক সমমান। তিনি কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করেছেন—এটি আমাদের জানা নেই। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতিমালা অনুযায়ী, স্নাতকোত্তর ডিগ্রি না থাকলে কলেজ কমিটির সভাপতি হতে পারবেন না। এরপরেও একজন সম্মানিত ব্যক্তিকে সরিয়ে টুটুলকে সভাপতি করা হয়েছে। এটির সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত হওয়া দরকার বলে আমরা মনে করি।’

অভিযোগকারীদের অন্যতম বাগমারা উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক রাশেদুজ্জামান রাসেল। তিনি বলেন, পুকুরের মাছ লুটের ঘটনায় মহব্বত হোসেনকে উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়কের পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু কোনো বিশেষ ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর স্বার্থ রক্ষার জন্যই তাঁকে ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির সভাপতি করা হয়েছে। যুবদল নেতা টুটুলের শিক্ষাগত যোগ্যতা না থাকায় তিনি রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে তাঁর অনুসারী মহব্বতকে সভাপতি করেছেন।

সাবেক অতিরিক্ত সচিব সুলতান মাহমুদ বলেন, ‘আমি এলাকার মানুষ হিসেবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির উন্নয়ন করতে চেয়েছিলাম। এলাকায় যেন শিক্ষার বিস্তার ঘটে, এটিই ছিল আমার মূল উদ্দেশ্য। অথচ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আমাকে কোনো কিছু না জানিয়েই রেজাউল করিম টুটুলকে সভাপতি করেছে। এটি আমার অজ্ঞাতেই হয়েছে। এখন যোগ্য মানুষেরা বড় একা।’

জাল সনদে সভাপতি হওয়ার অভিযোগের ব্যাপারে জেলা যুবদলের সদস্যসচিব রেজাউল করিম টুটুলের কাছে তিন সপ্তাহ আগেই জানতে চাওয়া হয়েছিল। তিনি দফায় সময় নিয়েছেন এই বলে যে, তিনি তাঁর সনদের ফটোকপি এই প্রতিবেদককে দেবেন। শেষপর্যন্ত তিনি তা দেননি। এর মধ্যে তিনি সভাপতির দায়িত্ব ছেড়ে মহব্বতকে সভাপতি করেন। এ বিষয়ে কথা বলার জন্য আজ বুধবার বিকেলে তাঁকে আবার ফোন করা হলে তিনি ধরেননি। কথা বলার জন্য নতুন সভাপতি ও অব্যাহতিপ্রাপ্ত ছাত্রদল নেতা মহব্বত আলীকেও কয়েকবার ফোন দেওয়া হয়। কিন্তু তিনিও তা ধরেননি। তাই এ বিষয়ে তাঁরও মন্তব্য জানা যায়নি।

একজন ‘বিতর্কিত’ ব্যক্তিকে ঐতিহ্যবাহী একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সভাপতি করার বিষয়ে কলেজের উপাধ্যক্ষ নুরুল হুদার কাছে জানতে চাইলে তিনি উত্তেজিত হয়ে ওঠেন। তিনি বলেন, ‘এ ব্যাপারে শিক্ষা মন্ত্রণালয়, অধিদপ্তর ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে জিজ্ঞাসা করেন। আমি এ প্রশ্নের উত্তর দিতে পারব না।’ এ বিষয়ে বক্তব্যের জন্য জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ পরিদর্শক আব্দুল হাই সিদ্দিক সরকারের নম্বরে ফোন দেওয়া হয়। এরপর হোয়াটসঅ্যাপে ফোন ও মেসেজ দিলেও তিনি সাড়া দেননি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত