Ajker Patrika

বিএমডিএতে অস্থিরতা, সেচ কার্যক্রম ব্যাহতের আশঙ্কা

  • রাসিকের সাবেক মেয়র ও আ.লীগ নেতা খায়রুজ্জামান লিটনের সহকারী ছিলেন ইডি শফিকুল
  • বদলির আদেশের পরও ২৫ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে বদলি করেন তিনি
  • মামলা, বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো, সাময়িক বরখাস্ত ও শোকজের ঘটনাও ঘটে
  • বিষয়টা মন্ত্রণালয় দেখছে বলে জানান বিএমডিএর ভারপ্রাপ্ত সচিব এনামুল কাদির
নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী
আপডেট : ১১ এপ্রিল ২০২৫, ০৮: ৫৬
বিএমডিএতে অস্থিরতা, সেচ কার্যক্রম ব্যাহতের আশঙ্কা

বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) সদ্য সাবেক নির্বাহী পরিচালক (ইডি) শফিকুল ইসলামকে তাঁর দপ্তর থেকে বের করে দেওয়াকে কেন্দ্র করে চরম অস্থিরতা বিরাজ করছে সংস্থাটিতে। এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে শফিকুলের মামলা, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো, দুই কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত ও আটজনকে শোকজের মতো পদক্ষেপের ফলে কর্মকর্তা-কর্মচারীর মধ্যে অসন্তোষ বিরাজ করছে। তাঁরাও পাল্টা কর্মসূচি দিতে যাচ্ছেন। এসব কারণে ভরা মৌসুমে যেকোনো সময় বন্ধ হতে পারে সেচ কার্যক্রম।

এদিকে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের তোপের মুখে শফিকুল অফিস ছাড়ার পর গত সোমবার নতুন ইডি নিয়োগ দেয় সরকার। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে অতিরিক্ত সচিব তরিকুল আলমকে ইডি নিয়োগ করা হয়। এ নিয়েও সংস্থার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মাঝে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। তাঁরা বলছেন, বিএমডিএর কাজ প্রকৌশলবিদ্যার। প্রশাসনের কর্মকর্তারা এ পদে অযোগ্য।

কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে উত্তেজনা

গত ১৪ জুলাই বিএমডিএর ইডি হিসেবে নিয়োগ পেয়েছিলেন অতিরিক্ত সচিব শফিকুল ইসলাম। সূত্র বলছে, তিনি একসময় রাজশাহীর সাবেক সিটি মেয়র ও আওয়ামী লীগ নেতা এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটনের সহকারী ছিলেন। গত ২৩ ফেব্রুয়ারি তাঁকে বাংলাদেশ রেশম উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালক হিসেবে বদলি করা হয়। কিন্তু এক মাস পেরিয়ে গেলেও তিনি বিএমডিএ ছাড়ছিলেন না।

ফলে ২৩ মার্চ একদল কর্মকর্তা-কর্মচারী গিয়ে তাঁকে দপ্তর ছাড়তে বাধ্য করেন। এরপরই হেনস্তার অভিযোগে মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ করেন শফিকুল। ১৩ কর্মকর্তা-কর্মচারীর নাম উল্লেখ করে তিনি মামলাও করেন। মামলায় অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয় ৫০ থেকে ৬০ জনকে। ঘটনার পরপরই তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলম খানকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়। একজন নির্বাহী প্রকৌশলী ও একজন সহকারী প্রকৌশলীকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। শোকজ করা হয়েছে আটজনকে। ২৫ মার্চ স্বাক্ষর করা শোকজের এই চিঠি তাঁরা পেয়েছেন গত মঙ্গলবার। একের পর এক এই পদক্ষেপের ফলে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। এসবের বিরুদ্ধে তাঁরাও পাল্টা কর্মসূচি গ্রহণের পরিকল্পনা করছেন। গত ২৬ মার্চ রাজশাহী এবং ২৭ মার্চ রংপুর ও ঠাকুরগাঁওয়ে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে।

বিএমডিএর একজন পদস্থ কর্মকর্তা বলেন, ইডি শফিকুল ছিলেন প্রশাসনের কর্মকর্তা। তাই তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে তিনি নিজের ক্ষমতা দেখিয়ে অর্ধশত কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। প্রভাব খাটিয়ে একজনকে বাধ্যতামূলক অবসর এবং দুজনকে সাময়িক বরখাস্ত করিয়েছেন। তদন্তের আগেই এভাবে অব্যাহতি ও সাময়িক বরখাস্ত করা একেবারেই নজিরবিহীন। ফলে বিএমডিএর সব স্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ক্ষুব্ধ। তাঁরাও আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এ ক্ষেত্রে সেচ কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হতে পারে।

বিরোধ কেন ইডির সঙ্গে খায়রুজ্জামান লিটনের সুপারিশে শফিকুল বিএমডিএর ইডি হয়েছিলেন বলে জানান কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। ফলে আওয়ামী সরকারের পতনের পরই তাঁর সঙ্গে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দূরত্ব বাড়তে থাকে। পরিস্থিতি আরও প্রকট হয় যখন আওয়ামী সরকারের পতনের পরও সেই দলের সমর্থক ও সুবিধাভোগী কর্মকর্তাদের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে পদায়ন করতে থাকেন তিনি।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, মাহফুজুর রহমান নামের এক তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ছাড়া কাউকেই পাত্তা দিতেন না শফিকুল। মাহফুজুর বঙ্গবন্ধু প্রকৌশলী পরিষদের রাজশাহী অঞ্চলের চাকরিবিষয়ক সম্পাদক ও বঙ্গবন্ধু প্রকৌশলী পরিষদ মনোনীত আইইবি রাজশাহী কেন্দ্রের সদস্য। তাঁর পরামর্শ মোতাবেক ইডি ১৭ বছর ধরে বঞ্চিত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের রাজশাহীতে বদলি করে না এনে বিগত সরকারের সুবিধাভোগীদেরই একের পর এক নানা সুবিধা দিতে থাকেন। নিজের বদলির আদেশের পরও ইডি শফিকুল ইসলাম বিএমডিএর নাজিরুল ইসলাম নামের এক তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীকে রাজশাহী সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী হিসেবে বদলির আদেশ জারি করেন। অথচ নাজিরুল বিগত সরকারের আমলে অনুমোদিত ২৫০ কোটি টাকার প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক (পিডি) হিসেবে কাজ করছেন। নাজিরুল গত সরকারের আমলে মোট তিনটি প্রকল্পের পিডি হিসেবে কাজ করেছেন। তাঁর বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে।

জানা গেছে, বদলির আদেশের পরও ইডি শফিকুল গত ১৩ মার্চ দুটি আদেশে ২৫ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে বদলি করেন। এর আগে ১৮ ফেব্রুয়ারি আরও দুই আদেশে ২৭ জনকে বদলি করা হয়। আর যেসব কর্মচারী জুলাই আন্দোলন দমনে সরাসরি লাঠি হাতে মাঠে নামেন, তাঁদের বহাল রাখা হয়। ইডির বদলির আদেশের পর মাহফুজুর রহমান কর্মচারী ইউনিয়নের নেতাদের ডেকে মন্ত্রণালয়ে একটি আবেদনপত্র পাঠানোর নির্দেশনা দেন। এতে শফিকুল ইসলামকে বিএমডিএতেই রাখার দাবি জানাতে বলা হয়।

এসব বিষয়ে কথা বলতে সদ্য সাবেক ইডি শফিকুলকে কয়েক দফা ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি।

বিএমডিএর ভারপ্রাপ্ত সচিব এনামুল কাদির বলেন, ‘উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বিএমডিএতে একটা অস্থিরতা তৈরি হয়েছে, তা ঠিক। তবে এটা নিয়ে আমি কোনো মন্তব্য করতে চাই না। বিষয়টা এখন মন্ত্রণালয় দেখছে।’

মনগড়া তদন্ত কমিটির অভিযোগ

এদিকে শফিকুলকে তাঁর দপ্তর থেকে বের করে দেওয়ার ঘটনায় সংস্থার চেয়ারম্যান মনগড়া তদন্ত কমিটি করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। তিনি কৃষি উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর নির্দেশনা অমান্য করে নিজের ইচ্ছেমতো তদন্ত কমিটি করেছেন বলে অভিযোগ।

বিএমডিএ পরিচালনা বোর্ডের সদস্য সাইফুল ইসলাম হীরকের দাবি, কৃষি উপদেষ্টা তাঁকে প্রধান করে তদন্ত কমিটি করতে বলেছিলেন। কিন্তু বিএমডিএ চেয়ারম্যান ড. এম আসাদুজ্জামান উপদেষ্টার নির্দেশনা আমলে না নিয়ে ইচ্ছেমতো তদন্ত কমিটি করেছেন। এই কমিটি ভেঙে দিতে তিনি গতকাল বৃহস্পতিবার বিএমডিএ চেয়ারম্যানকে চিঠি দিয়েছেন। চেয়ারম্যানের ব্যক্তিগত সহকারী চিঠিটি গ্রহণ করেছেন।

সার্বিক বিষয়ে জানতে ফোন করা হয় বিএমডিএ চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামানকে। তিনি পরিচয় পেয়েই সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। পরে আর ফোন ধরেননি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ঘন কুয়াশায় মেঘনায় মধ্যরাতে দুই লঞ্চের সংঘর্ষে নিহত ২

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ঘন কুয়াশায় জাকির সম্রাট-৩ ও অ্যাডভেঞ্চার-৯ লঞ্চের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। ছবি: সংগৃহীত
ঘন কুয়াশায় জাকির সম্রাট-৩ ও অ্যাডভেঞ্চার-৯ লঞ্চের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। ছবি: সংগৃহীত

ঘন কুয়াশার কবলে পড়ে চাঁদপুরের মেঘনা নদীতে যাত্রীবাহী দুই লঞ্চের মুখোমুখি সংঘর্ষে দুই জন যাত্রী নিহত হয়েছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত আনুমানিক ২টার দিকে হাইমচর উপজেলা ও হরিণা এলাকার মাঝামাঝি স্থানে এই দুর্ঘটনা ঘটে।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) চাঁদপুরের ট্রাফিক পরিদর্শক বাবু লাল বৌদ্ধ গণমাধ্যমকে জানান, সংঘর্ষের ফলে ঘটনাস্থলেই একজন নিহত হন এবং পরবর্তীতে আরও একজন যাত্রীর মৃত্যু হয়। তাৎক্ষণিকভাবে নিহতদের নাম-পরিচয় জানা সম্ভব হয়নি।

নৌ-পুলিশ ও বিআইডব্লিউটিএ সূত্র জানায়, ভোলার ঘোষেরহাট থেকে ছেড়ে আসা ঢাকা অভিমুখী ‘এমভি জাকির সম্রাট-৩’ লঞ্চটি রাত ২টার দিকে হাইমচর এলাকা অতিক্রম করার সময় বিপরীত দিক থেকে আসা ঢাকা-বরিশাল রুটের ‘এমভি অ্যাডভেঞ্চার-৯’ লঞ্চের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। দুর্ঘটনার সময় নদীতে প্রচণ্ড ঘন কুয়াশা থাকায় দৃশ্যমানতা অত্যন্ত কম ছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে।

লঞ্চ দুটির মধ্যে সংঘর্ষে জাকির সম্রাট-৩ লঞ্চটি ক্ষতিগ্রস্ত হলে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন যাত্রীরা। পরবর্তীতে যাত্রীদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে ‘এমভি কর্ণফুলী-৯’ নামক আরেকটি লঞ্চের মাধ্যমে জাকির সম্রাট-৩-এর যাত্রীদের গন্তব্যস্থল ঢাকায় পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়। তবে পথিমধ্যে গুরুতর আহত আরও এক যাত্রীর মৃত্যু ঘটে।

নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, দুর্ঘটনার কারণ খতিয়ে দেখতে তদন্ত শুরু হয়েছে। কুয়াশাচ্ছন্ন আবহাওয়ায় লঞ্চ চলাচলের ক্ষেত্রে চালকদের আরও সতর্ক থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। দুর্ঘটনার পর নদীতে নৌ-পুলিশের টহল জোরদার করা হয়েছে এবং ক্ষতিগ্রস্ত লঞ্চ দুটি উদ্ধার বা সরিয়ে নেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

কৃষকেরা ধানের বীজতলা পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখেন যে কারণে

নিয়ামতপুর (নওগাঁ) প্রতিনিধি
তীব্র শীত ও ঘন কুয়াশার কারণে বোরো বীজতলা রক্ষায় পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখছেন কৃষক। ছবি: আজকের পত্রিকা
তীব্র শীত ও ঘন কুয়াশার কারণে বোরো বীজতলা রক্ষায় পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখছেন কৃষক। ছবি: আজকের পত্রিকা

উত্তরের জনপদ নওগাঁর নিয়ামতপুরে কয়েক দিন ধরে জেঁকে বসেছে তীব্র শীত। তাপমাত্রা ক্রমেই কমে যাওয়ার সঙ্গে হিমেল হাওয়া ও ঘন কুয়াশায় রাতে শীতের তীব্রতা বাড়ছে। কুয়াশার কারণে অনেক দিন দুপুর পর্যন্ত সূর্যের দেখা মিলছে না। এতে জনজীবনের পাশাপাশি কৃষিকাজেও প্রভাব পড়ছে।

কৃষিপ্রধান এই অঞ্চলে তীব্র শীত উপেক্ষা করেই বোরো আবাদের প্রস্তুতি নিচ্ছেন কৃষকেরা। সামনে উপজেলাজুড়ে বোরো ধান রোপণের মৌসুম শুরু হবে। তার আগে বীজতলা তৈরি ও পরিচর্যার কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন তাঁরা। তবে তীব্র শীত ও ঘন কুয়াশার কারণে বোরো বীজতলা রক্ষায় পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখছেন তাঁরা।

স্থানীয় কৃষকেরা জানান, ঠান্ডা ও কুয়াশার প্রভাবে বোরো বীজতলা হলদে ও লাল হয়ে নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখলে বীজতলার ক্ষতির আশঙ্কা অনেকটা কমে।

সরেজমিনে উপজেলার ভাবিচা ইউনিয়নের কয়েকটি মাঠ ঘুরে দেখা গেছে, অধিকাংশ বীজতলাই পলিথিনে ঢাকা। ভাবিচা গ্রামের কৃষক বিমল প্রামাণিক জানান, তিনি তিন বিঘা জমিতে বোরো আবাদ করবেন। সে জন্য আগেই বীজতলা তৈরি করেছেন। শীত ও কুয়াশা থেকে রক্ষার জন্য বীজতলা পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছে।

একই গ্রামের কৃষক উজ্জ্বল সরকার জানান, বীজ ফেলার আট দিন পর বীজতলা পলিথিন দিয়ে ঢেকে দিয়েছেন। ২২ দিন পর পলিথিন তুলে ফেলবেন। এতে বীজতলায় রোগবালাইয়ের আক্রমণ কম হয় এবং রোপণের জন্য ভালো চারা পাওয়া যায়। পাশাপাশি পলিথিন ব্যবহার করায় কীটনাশক দিতে হয় না। ফলে বাড়তি খরচও কমে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বলেন, তীব্র শীত ও ঘন কুয়াশার কারণে বীজতলায় ‘কোল্ড ইনজুরি’ দেখা দেয়। এতে বীজ ঠিকমতো বেড়ে উঠতে পারে না, অনেক সময় হলদে ও লাল হয়ে পচে যায়। পলিথিন দিয়ে বীজতলা ঢেকে রাখলে ভেতরের তাপমাত্রা কিছুটা উষ্ণ থাকে এবং চারাগাছ নষ্ট হয় না। এতে কৃষকেরা উপকৃত হন। বীজতলা রক্ষায় পলিথিন ব্যবহারের জন্য কৃষকদের আহ্বান জানান তিনি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

উলিপুরে হাসপাতালে বাড়ছে শীতজনিত রোগীর চাপ

উলিপুর (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি 
শিশুসন্তানকে হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা নেওয়া হচ্ছে। ছবি: আজকের পত্রিকা
শিশুসন্তানকে হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা নেওয়া হচ্ছে। ছবি: আজকের পত্রিকা

কুড়িগ্রামের উলিপুরে তীব্র শীত ও ঘন কুয়াশার প্রভাবে শীতজনিত রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। ডায়রিয়া ও শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত হয়ে প্রতিদিনই শিশু ও বয়স্ক ব্যক্তিরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হচ্ছেন। কয়েক দিন ধরে সূর্যের দেখা না মেলায় ও কনকনে ঠান্ডায় এসব রোগের প্রকোপ আরও বেড়েছে।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা যায়, ৫০ শয্যাবিশিষ্ট এই হাসপাতালে গত সাত দিনে ডায়রিয়া ও শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত অর্ধশতাধিক রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন। এর মধ্যে শিশু ও বয়স্ক রোগীর সংখ্যা বেশি। অধিকাংশ রোগী সর্দি, কাশি, ডায়রিয়া ও শ্বাসকষ্টে ভুগছেন। প্রতিদিন গড়ে প্রায় ১০ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। কিছুটা সুস্থ হলেই তাঁরা বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন। রোগীর চাপ সামলাতে গিয়ে কর্তব্যরত চিকিৎসক ও নার্সদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। বর্তমানে মাত্র পাঁচজন চিকিৎসক দিয়ে হাসপাতালের চিকিৎসাসেবা চালানো হচ্ছে।

বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) দুপুরে সরেজমিনে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে কথা হয় চিকিৎসা নিতে আসা বজরা ইউনিয়নের আমিনপাড়া এলাকার ইউনুস আলীর (৭০) সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘সাত দিন ধরে শ্বাসকষ্ট নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি আছি। তীব্র শীতের কারণেই এই সমস্যা দেখা দিয়েছে।’

এইচএসসি পরীক্ষার্থী আঞ্জু আরা বেগম বলেন, ‘ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে কয়েক দিন ধরে এখানে চিকিৎসা নিচ্ছি।’ ধামশ্রেণী ইউনিয়নের খলিলুর রহমান (৬৯) জানান, তিন দিন ধরে শ্বাসকষ্ট নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন।

শিশুসন্তানকে হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা নেওয়া হচ্ছে। ছবি: আজকের পত্রিকা
শিশুসন্তানকে হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা নেওয়া হচ্ছে। ছবি: আজকের পত্রিকা

গুনাইগাছ ইউনিয়ন থেকে ভর্তি হওয়া ১৭ মাস বয়সী শিশু তাসিনের মা নুরে জান্নাত বলেন, তিন দিন ধরে তাঁর সন্তানের বমি ও ডায়রিয়া হচ্ছে। কনকনে ঠান্ডার কারণে এই সমস্যা দেখা দিয়েছে। এ ছাড়া সাত মাস বয়সী শিশু সাব্বিরকে শ্বাসকষ্ট নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তার মা সুমাইয়া বেগম বলেন, ঠান্ডার কারণে ছয় দিন ধরে শিশুর শ্বাস-প্রশ্বাসে সমস্যা হচ্ছে।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা মেহেরুল ইসলাম বলেন, গত কয়েক দিনে শীতজনিত ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া ও শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। এর মধ্যে শিশু ও বয়স্ক রোগীই বেশি। শীতের তীব্রতা বাড়লে রোগীর সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ঘন কুয়াশা ও তীব্র শীতে পঞ্চগড়ে জনজীবন বিপর্যস্ত

পঞ্চগড় প্রতিনিধি
আপডেট : ২৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১: ০২
পঞ্চগড় পাসপোর্ট অফিস এলাকা থেকে তোলা । ছবি: আজকের পত্রিকা
পঞ্চগড় পাসপোর্ট অফিস এলাকা থেকে তোলা । ছবি: আজকের পত্রিকা

বৃষ্টির মতো কুয়াশা ঝড়ছে পঞ্চগড়ে। উত্তরাঞ্চলের এই জেলায় ঘন কুয়াশা আর তীব্র শীতে জনজীবন প্রায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। ভোর থেকে ঘন কুয়াশায় ঢেকে থাকে পঞ্চগড়ের সড়ক। কুয়াশার কারণে দৃশ্যময়তা কমে যাওয়ায় যান চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে। এর প্রভাব পড়েছে জেলার হাসপাতালগুলোতেও। শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে প্রতিদিনই বাড়ছে রোগীর সংখ্যা।

শুক্রবার (২৬ ডিসেম্বর) সকাল ৬টায় তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ সময় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ১০০ শতাংশ। ঘন কুয়াশার কারণে ভোর থেকেই যানবাহনগুলোকে হেডলাইট জ্বালিয়ে চলাচল করতে দেখা গেছে।

এর আগে গতকাল বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) সকাল ৯টায় তেঁতুলিয়ায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১০ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। দুপুরে সূর্যের দেখা মিললেও শীতের তীব্রতা কমেনি। ওই দিন সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ২২ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। দিন ও রাত—দুই সময়েই শীত অনুভূত হচ্ছে প্রায় সমানভাবে।

ঘন কুয়াশার কারণে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েছেন যানবাহনের চালকেরা। মোটরসাইকেলচালক রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘এত কুয়াশায় রাস্তায় কিছুই দেখা যায় না। খুব সাবধানে মোটরসাইকেল চালিয়ে আসতে হয়েছে। শীত এলেই আমাদের এই সমস্যা হয়; ঘন কুয়াশায় সামনে কিছু বোঝা যায় না।’

আরেক মোটরসাইকেলচালক আব্দুল মালেক জানান, কুয়াশা এত বেশি যে হেডলাইট জ্বালিয়েও রাস্তা বুঝতে কষ্ট হচ্ছে। সামান্য অসতর্ক হলেই দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকে।

টানা কুয়াশা ও কনকনে শীতে খেটে খাওয়া মানুষ পড়েছেন চরম দুর্ভোগে। সকালে অনেকেই কাজে যেতে পারছেন না। শীত নিবারণের জন্য বিভিন্ন স্থানে মানুষকে খড়কুটো জ্বালিয়ে আগুন পোহাতে দেখা গেছে। অটোরিকশাচালক সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘শীতের কারণে লোকজন বাইরে বের হয় না। যাত্রী নাই, ভাড়াও নাই। খুব কষ্টে আছি, কিন্তু বের না হয়েও পারি না; সংসার চালাতে হবে।’

তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জিতেন্দ্রনাথ রায় জানান, ১১ থেকে ১৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত তেঁতুলিয়ায় মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে গেছে। আজ সকাল ৬টায় তেঁতুলিয়ায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১১ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

জেলা প্রশাসক কাজী সাইমুজ্জামান জানান, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রায় ১৫ হাজার শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়েছে। আরও শীতবস্ত্রের চাহিদা পাঠানো হয়েছে। এসব শীতবস্ত্র প্রতিটি উপজেলায় সমানভাবে ভাগ করে শীতার্ত মানুষের মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত