Ajker Patrika

পোলট্রি ও মাছ চাষে স্বাস্থ্যঝুঁকি চরমে, সুবর্ণচরে বাড়ছে হুমকি

মুজাহিদুল ইসলাম সোহেল, সুবর্ণচর (নোয়াখালী) 
নোয়াখালীর সুবর্ণচরের একটি সমন্বিত খামার। ছবি: আজকের পত্রিকা
নোয়াখালীর সুবর্ণচরের একটি সমন্বিত খামার। ছবি: আজকের পত্রিকা

নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলায় দিন দিন বাড়ছে একসঙ্গে পোলট্রি ও মাছ চাষ (সমন্বিত খামার)। খামারগুলোর নিচে মাছ চাষ, ওপরে মুরগির খামার—এই ব্যবস্থায় দ্রুত লাভবান হলেও মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি ও পরিবেশগত বিপর্যয়ের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের তদারকির অভাবে এলাকায় নিরাপদ সুবর্ণচর অনিরাপদ খামার পদ্ধতির বিস্তার ঘটছে।

স্থানীয় বাসিন্দা জাকির হোসেন জানান, খামারগুলো থেকে দিনরাত ২৪ ঘণ্টায় দুর্গন্ধ ছড়ায়। বর্ষাকালে মুরগির বিষ্ঠা পানিতে মিশে আশপাশের পরিবেশ দূষিত করে। শিশুদের নানা রকম চর্ম ও পেটের রোগ দেখা দিচ্ছে। অনেক এলাকায় ভারী বর্ষণ ও জলোচ্ছ্বাসে পানির সঙ্গে ময়লা ছড়িয়ে পানি বাহিত জটিল রোগের দেখা দেয়।

সুবর্ণচর উপজেলার চর আনানউল্যা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী হোসনেয়ারা বেগম বলেন, ‘বৃষ্টির সময় আশপাশে খামার থেকে খুব বাজে গন্ধ আসে। খাওয়া-দাওয়া করতে পারি না। এতে মাথা ঘোরে, পড়ালেখায় মনোযোগেও সমস্যা হয়।’

পরিবেশবিদরা বলছেন, এই ধরনের খামার মুরগির বিষ্ঠা পানিতে মিশিয়ে মাছকে দ্রুত বড় করলেও তা মানবদেহে দীর্ঘমেয়াদি নানা স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করে। বিশেষ করে বাচ্চাদের নিউমোনিয়া, কিডনি, লিভার ও হজমজনিত সমস্যার আশঙ্কা থাকে।

নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স বিভাগের প্রভাষক ড. মাহবুব হোসেন বলেন, ‘মুরগির বিষ্ঠায় থাকে নানা ধরনের ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া ও অ্যান্টিবায়োটিক। এগুলো পানি ও মাছের শরীরে প্রবেশ করে খাদ্যশৃঙ্খলে যুক্ত হয়। দীর্ঘমেয়াদি এটি মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দিতে পারে এবং ক্যানসারের ঝুঁকি পর্যন্ত তৈরি করতে পারে।’

এ বিষয়ে উপকূলীয় পরিবেশ রক্ষা আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক বাবলু বলেন, ‘এই খামারগুলো শুধু মানবদেহ নয়, পরিবেশ ও প্রাণবৈচিত্র্যকেও ক্ষতিগ্রস্ত করছে। আমরা বারবার প্রশাসনকে বলেছি, কিন্তু তেমন পদক্ষেপ দেখা যায়নি। এখনই কঠোর ব্যবস্থা না নিলে ভবিষ্যতে এর ভয়াবহ পরিণতি হবে।’

অন্যদিকে খামারি রাশেদ বলেন, এই পদ্ধতিতে কম খরচে বেশি লাভ হওয়ায় তারা এটাই বেছে নিচ্ছেন। চরজুবিলী ইউনিয়নের সমন্বিত খামার আজাদ এগ্রোর মালিক আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘আমি জীবিকা নির্বাহের জন্য এই খামার করেছি। নিচে মাছ চাষ আর ওপরে মুরগি রাখলে খরচ কম হয়। যদি সরকার নির্দেশনা দেয়, তাহলে নিয়ম মেনে করব।’

বিশেষজ্ঞ ও স্থানীয়দের মতে, নিরাপদ খাদ্য ও পরিবেশ রক্ষায় এখনই যথাযথ নিয়ন্ত্রণ ও সচেতনতা জরুরি। প্রয়োজনে সমন্বিত খামার স্থাপনের জন্য নির্দিষ্ট গাইডলাইন প্রণয়ন ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

এ বিষয়ে সুবর্ণচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাবেয়া আসফার সায়মা বলেন, ‘সমন্বিত খামার ব্যবস্থার স্বাস্থ্য ও পরিবেশগত ঝুঁকি সম্পর্কে আমরা অবগত রয়েছি। প্রশাসনের পক্ষ থেকে খামারগুলোর তালিকা করা হচ্ছে। নিয়ম বহির্ভূতভাবে পরিচালিত খামারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

গাজায় মার্কিন শান্তি প্রস্তাবে আরব-ইউরোপসহ সবাই একমত, কী আছে ট্রাম্পের ২০ দফায়

ছাত্রলীগ নেতার নেতৃত্বে হামলা, ছুরিকাঘাতে জামায়াত নেতা নিহত

গান গাওয়া ও শোনা নিষিদ্ধের দাবিও উঠবে

পুলিশের জালে জালিয়াতির মামলায় ফাঁসলেন ‘সম্পদের দেবী’, উদ্ধার ৬১ হাজার বিটকয়েন

এখন ভারতের অন্যতম বিশেষত্ব হলো ভুয়া খবর: ড. ইউনূস

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত