Ajker Patrika

আমরা এহন না খাইয়া মরবাম

আরিফ আহম্মেদ, গৌরীপুর
আমরা এহন না খাইয়া মরবাম

সারা দেশের মতো ময়মনসিংহের গৌরীপুরে দিন দিন বেড়েই চলছে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম। এতে দৈনিক মজুরিতে খেটে খাওয়া মানুষ ও মধ্যবিত্তরা পড়েছেন সবচেয়ে বেশি বিপাকে। তাঁদের অনেকেই আত্মসম্মানের ভয়ে এ কথা কাউকে বলতেও পারছেন না। 

জানা যায়, অন্যান্য সময় বছরের এই সময়ে সব ধরনের সবজির দাম থাকে অনেক কম। এবার সম্পূর্ণ ভিন্ন চিত্র বাজারে। তরিতরকারির দাম আকাশচুম্বী, তার সঙ্গে মরার ওপর খাঁড়ার ঘা সয়াবিন তেলের দাম! সয়াবিন তেলের দাম লিটারপ্রতি ২০০ টাকা ছাড়িয়েছে। গ্যাসের দাম বৃদ্ধিতেও শুরু হয়েছে প্রতিযোগিতা, থামার নাম নেই। মাংসের দোকানের সামনে সাধারণ মানুষ এখন আর যেতে সাহস পায় না। 

নিম্ন আয়ের একাধিক মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মার্চ মাসের এই সময়টাতে দৈনিক আয়ের মানুষের তেমন কোনো কাজ থাকে না। ফসল লাগানো শেষ হয়ে যায়, অপেক্ষা করতে হয় এপ্রিলের মাঝামাঝি সময় ধান কাটা শুরু পর্যন্ত। এই সময়টাতে তাদের দিনযাপন এমনিতেই অনেকটা কষ্টের হয়। এবার নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম আকাশচুম্বী হওয়ায় অনেকে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। দরিদ্র মানুষতো বটেই মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষও হিমশিম খাচ্ছেন এখন পরিবারের চাহিদা পূরণ করতে। 

দাপুনিয়া গ্রামের কায়সার হোসেন জানান, বৃদ্ধা মা, স্ত্রী ও তিন সন্তানকে নিয়ে তাঁর ছয় সদস্যের পরিবার। অন্যের জমিতে কাজ করে জীবন চালান। এখন কাজ নেই, তাই রিকশা চালাচ্ছেন। মহাজনের টাকা জমা দিয়ে সারা দিনে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা থাকে। এ দিয়ে চাল-ডাল ও তরকারি কেনেন। যেদিন সয়াবিন তেল কিনতে হয় সেদিন কাঁচাবাজার করার টাকা থাকে না। তার ওপর আছে ছেলে মেয়েদের অসুখ-বিসুখ, বৃদ্ধা মায়ের চিকিৎসা। 

কায়সার হোসেন বলেন, ‘এমনে বাঁচা সম্ভব না। আমরা এহন না খাইয়া মরবাম।’ 
 
মধ্যবিত্ত পরিবারেরও অনেকেই জানিয়েছেন, তাঁরা আর কুলিয়ে উঠতে পারছেন না, এভাবে বেঁচে থাকা যায় না। সীমিত আয়ে সীমাহীন খরচের চাপে তাঁরা এখন ক্লান্ত। 

শনিবার গৌরীপুর পৌরসভার বাজার ঘুরে পাওয়া যায় সয়াবিন তেলের দামের ভিন্ন ভিন্ন চিত্র। মূল্যবৃদ্ধির অযুতে প্রায় প্রতিটি দোকানেই রাখা হচ্ছে বোতলের গায়ের মূল্যের চেয়ে ২০-৪০ টাকা বেশি। অস্থিরতার চিত্র দেখা গেছে কাঁচাবাজারেও। 

ক্রেতারা জানান, প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিয়মিত বাজার মনিটরিং না থাকায় বিক্রেতারা ইচ্ছে মতো দাম নির্ধারণ করে পণ্য বিক্রি করছেন। 

গৌরীপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা লুৎফুন্নাহার লিপি বলেন, চাহিদার তুলনায় সবজির আমদানি কম থাকায়, দাম বেড়েছে। বিশেষ করে বিরূপ আবহাওয়ার কারণে এবার পশ্চিমাঞ্চলে সবজি উৎপাদন কম হওয়ায়, বাজারে তার প্রভাব পড়েছে। 

গৌরীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) হাসান মারুফ বলেন, বোতলের গায়ের মূলের চেয়ে অতিরিক্ত দাম রাখার সুযোগ নেই, এ ব্যাপারে শিগগিরই বাজার মনিটরিং করা হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত