Ajker Patrika

নেত্রকোনার দুর্গাপুর

৪৪ করাতকলের ৩৭টিই অবৈধ

  • ফলদসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছ নির্বিচারে কেটে চেরাই করা হচ্ছে এসব করাতকলে।
  • বন বিভাগের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মালিকদের থেকে চাঁদা নেওয়ার অভিযোগ।
  • মারাত্মকভাবে ঝুঁকির মুখে পরিবেশ ও প্রাকৃতিক ভারসাম্য।
রাজেশ গৌর, দুর্গাপুর (নেত্রকোনা)
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

পাহাড় ও বনের মিশেলে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর নেত্রকোনার সীমান্তবর্তী উপজেলা দুর্গাপুর। তবে এ অঞ্চলের বনভূমির চিত্র আর আগের মতো নেই। একসময়ের বিশাল বনভূমি এখন অনেকটাই উজাড় হয়ে গেছে। বনের মূল্যবান গাছের অধিকাংশই শেষ পর্যন্ত ঠাঁই নিয়েছে করাতকলে।

শুধু তা-ই নয়, গ্রাম-শহরের ফলদ ও বিভিন্ন প্রজাতির গাছও নির্বিচারে কেটে চেরাই করা হচ্ছে এসব করাতকলে। নিয়মনীতি উপেক্ষা করে প্রশাসনের চোখের সামনে এই উপজেলায় অবৈধ করাতকলের বিস্তার ঘটেছে। এসব করাতকলের কার্যক্রমে পরিবেশ ও প্রাকৃতিক ভারসাম্য মারাত্মকভাবে ঝুঁকির মুখে পড়েছে।

উপজেলা রেঞ্জ কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, দুর্গাপুর পৌরসভা, কুল্লাগড়া, চন্ডিগড়, বিরিশিরি, বাকলজোড়া, কাকৈরগড়া ও গাঁওকান্দিয়া ইউনিয়নে বর্তমানে ৪৪টি করাতকল রয়েছে। এর মধ্যে অনুমোদন পেয়েছে মাত্র ৭টি। বাকি ৩৭টি করাতকল চলছে সম্পূর্ণ অবৈধভাবে। এর মধ্যে ১৪টি করাতকলের লাইসেন্সের জন্য আবেদন জমা পড়লেও এখনো পর্যন্ত অনুমোদন মেলেনি। আবার অনেক করাতকল লাইসেন্স ছাড়াই বিদ্যুৎ-সংযোগ নিয়ে নির্বিঘ্নে ব্যবসা করছে, যা আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।

বন আইনের বিধান অনুযায়ী, কোনো করাতকলমালিক লাইসেন্স ছাড়া ব্যবসা পরিচালনা করতে পারবেন না। কিন্তু বাস্তবে এ নিয়ম পুরোপুরি উপেক্ষিত হচ্ছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বন বিভাগের কিছু অসাধু ব্যক্তি করাতকল মালিকদের কাছ থেকে সরকারি অনুষ্ঠান দেখিয়ে চাঁদা আদায় করেন। এতে সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে, আর লাভবান হচ্ছেন অসাধু ব্যক্তি ও করাতকলমালিকেরা।

সরেজমিনে দেখা গেছে, এসব করাতকলের অধিকাংশই প্রধান সড়কের পাশে স্থাপিত। করাতকলমালিকেরা রাস্তা দখল করে ছোট-বড় গাছের স্তূপ রাখছেন, যা পথচারী ও যানবাহনের চলাচলে মারাত্মক বাধা সৃষ্টি করছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি বলেন, ‘কিছু করাতকলমালিক প্রভাবশালী। এ কারণে বছরের পর বছর লাইসেন্স ছাড়াই নির্বিঘ্নে ব্যবসা চালাতে পারছেন তাঁরা।’ তবে রাষ্ট্রীয় স্বার্থে প্রশাসনের কার্যকর ও কঠোর পদক্ষেপের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

পরিবেশবাদী পল্টন হাজং বলেন, অবৈধ করাতকলগুলোতে অপরিপক্ব গাছ এনে চেরাই করা হচ্ছে, যা প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট করছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এ সমস্যা আরও প্রকট আকার ধারণ করছে। প্রশাসনের উচিত দ্রুত কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া।

জানতে চাইলে শিমুলতলী গ্রামের করাতকলমালিক মঞ্জুর কাদের সোহেল জানান, তিনি এখনো লাইসেন্সের জন্য আবেদন করেননি। তবুও পল্লী বিদ্যুৎ অফিস থেকে সহজেই সংযোগ পেয়ে করাতকল চালাচ্ছেন। অন্যদিকে উপজেলার সাতাশি গ্রামের করাতকলমালিক আ. রউফ জানান, তিনি লাইসেন্স ছাড়াই করাতকল কিনেছিলেন, পরিচালনাও করেছেন। কিন্তু তিনি দাবি করেন, এক বছর আগে বিক্রি করে দিয়েছেন। অথচ বন বিভাগের হালনাগাদ তালিকায় এখনো তাঁর নাম রয়েছে।

এ বিষয়ে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির দুর্গাপুর জোনাল অফিসের ডিজিএম মো. হাফিজুর রহমান বলেন, ‘সংযোগগুলো পুরোনো। সে সময় নিয়ম ছিল না। তবে বর্তমানে অবৈধ করাতকলমালিকদের এক মাস সময় বেঁধে চিঠি দেওয়া হচ্ছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে লাইসেন্স করতে না পারলে বিদ্যুৎ-সংযোগবিচ্ছিন্ন করা হবে।’

উপজেলা বন কর্মকর্তা মজনু প্রামাণিক বলেন, ‘চাঁদা আদায়ের বিষয়ে আমার জানা নেই, আমি নতুন এসেছি। তবে ইতিমধ্যে অবৈধ ১২টি করাতকলের বিদ্যুৎ-সংযোগ বিচ্ছিন্নের জন্য পল্লী বিদ্যুৎ অফিসে চিঠি পাঠানো হয়েছে। উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় এসব করাতকলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আফরোজা আফসানা বলেন, শিগগিরই ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে এসব অবৈধ করাতকল বন্ধ করার ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

চাকরির নামে মিরপুর-শেওড়াপাড়ায় বাসায় ডেকে নারীর সঙ্গে ভিডিও ধারণের পর টাকা হাতিয়ে নিত ‘হানি ট্র্যাপ’ চক্র

দনবাস চান পুতিন—ন্যাটো তো নয়ই, পশ্চিমা সেনাও থাকবে না ইউক্রেনে

দুস্থদের ৩৪ লাখ টাকা নিয়ে লাপাত্তা মোহনগঞ্জ সমাজসেবা কর্মকর্তা

তথ্য যাচাইয়ের পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শেয়ার করবেন—ইউটিউব চ্যানেলে সিইসির বার্তা

ফরিদপুরে চিকিৎসকের ওপর হামলার প্রতিবাদে সেবা বন্ধের ঘোষণা

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত