Ajker Patrika

৩ সন্তানের উচ্চশিক্ষা সম্পন্ন, এবার নিজেই এসএসসি পাস করতে চান কালাম

ফরিদ আহম্মেদ রুবেল, শ্রীবরদী (শেরপুর)
আপডেট : ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১৮: ০৮
৩ সন্তানের উচ্চশিক্ষা সম্পন্ন, এবার নিজেই এসএসসি পাস করতে চান কালাম

ছোটবেলায় বাড়িতে ঘটে অগ্নিকাণ্ড। সেখানে পুড়ে যায় বইখাতাসহ বাড়ির সবকিছু। পরিবার আর্থিক সংকটে পড়ায় পড়াশোনা ছেড়ে নেমে পড়েন কাজে। দেশ-বিদেশে কাজ করে তিন সন্তানকে উচ্চশিক্ষিত করেছেন। এখন জীবনের শেষ প্রান্তে অসমাপ্ত এসএসসি পাস করতে চান ৬৭ বয়সী আবুল কালাম আজাদ।

শ্রীবরদী উপজেলার লঙ্গরপাড়া গ্রামে আবুল কালাম আজাদের বাড়ি। এলাকায় তিনি ‘কবি কালাম’ নামে পরিচিত। পড়াশোনার জন্য উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে শ্রীবরদী উপজেলার পার্শ্ববর্তী বকশীগঞ্জ উপজেলার রাহিলা কাদির উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে এসএসসি সমমান পরীক্ষায় অংশ নেবেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী, তাঁর জন্মতারিখ ১৯৫৫ সালের ১ মার্চ। স্কুলজীবনে দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করার পর পারিবারিক সংকটের কারণে এসএসসি পরীক্ষা দিতে পারেননি। সেই দুঃখ তিনি ভুলতে পারেননি। তিন ছেলেকে উচ্চশিক্ষিত করেছেন। বড় ছেলে শামসুদ্দীন মৌলভীবাজারের একটি মাদ্রাসার ইংরেজির প্রভাষক। মেজ ছেলে আরিফুল ইসলাম ইসলামিক ফাউন্ডেশনে চাকরি করেন। আর ছোট ছেলে আনিসুর রহমান গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তড়িৎ প্রকৌশলে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করে চাকরির প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

বৃদ্ধ বয়সে পড়াশোনা করার বিষয় নিয়ে কথা হয় আবুল কালাম আজাদের সঙ্গে। তিনি জানান, ১৯৭৬ সালে তিনি দশম শ্রেণির ছাত্র ছিলেন। ওই বছর তাঁদের বাড়িতে আগুন লাগে। আগুনে তাঁর বইখাতাসহ পরিবারের সবকিছু পুড়ে যায়। আর্থিক সংকটে পড়ে তাঁর পরিবার। অর্থ উপার্জনের জন্য কাজ শুরু করতে হয় তাঁকে। পড়াশোনা আর শেষ করা হয়নি তাঁর।

এরপর তিনি ঢাকায় চলে আসেন। চাকরি নেন একটি ডকইয়ার্ডে। ঢাকায় থাকেন ২২ বছর। সেখানেই করেন বিয়ে। ১৯৯৫ সালে চাকরি নিয়ে সৌদি আরব চলে যান। সেখানে দীর্ঘ ১৮ বছর প্রবাসজীবন কাটান। ২০১৩ সালে শ্রীবরদীর গ্রামের বাড়িতে ফিরে আসেন আবুল কালাম আজাদ।

আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘পড়ালেখার প্রতি আমার ভীষণ দুর্বলতা। সব সময় সংবাদপত্র ও বই পড়ি। গান লিখি। কবিতা লিখি। কয়েকটি উপন্যাস ও ছোটগল্প লিখেছি। এসবের পাণ্ডুলিপি যত্নের সঙ্গে সংরক্ষণ করছি।’

আবুল কালাম আজাদ আরও বলেন, ‘পড়াশোনার প্রতি দুর্বলতা থেকেই আমি ২০২০ সালে বকশীগঞ্জের চন্দ্রাবাজ রশিদা বেগম হাইস্কুলে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতাধীন এসএসসি প্রোগ্রামে ভর্তি হই। ২০২১ সালে প্রথম সেমিস্টারে উত্তীর্ণ হই। এখন চলছে দ্বিতীয় সেমিস্টারের পরীক্ষা। আগামী ১৬ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশের ইতিহাস ও বিশ্বসভ্যতা বিষয়ের পরীক্ষার মাধ্যমে আমার এসএসসি পরীক্ষা শেষ হবে। পাস করলে এসএসসি পাসের সনদ পাব।’

৬৭ বছর বয়সী আবুল কালাম আজাদের পড়াশোনার প্রতি আগ্রহে মুগ্ধ স্থানীয় তরুণেরা। শামছুল হক (২৭) নামের স্থানীয় এক তরুণ বলেন, ‘অনেকে তরুণ বয়সেই পড়ালেখা করতে চান না। আর কামাল চাচা বৃদ্ধ বয়সেও পড়ালেখা করছেন। তিনি আদর্শবান শিক্ষানুরাগী। তাঁকে দেখে অন্যরা পড়ালেখার প্রতি আগ্রহী হবেন।’

লঙ্গলপাড়া গ্রামের আ. জব্বার (৮৫) বলেন, ‘কালাম ছোট থেকে অনেক কষ্ট করেছে। বাড়ি পোড়ার পর ঢাকা গিয়েছে। আবার বিদেশ গিয়েছে। তবে ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা করিয়েছে। শুনতাছি এবার সে নিজেই এসএসসি পরীক্ষা দিবে। আল্লাহ তার মনের আশা পূরণ করুক।’

এ বিষয়ে আবুল কালামের মেজ ছেলে আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘বাবা আমাদের জন্য অনেক কষ্ট করেছেন। এখন আমরা তাঁর ইচ্ছা পূরণের জন্য কাজ করছি। বাবার যতটুকু পড়তে মন চায়, আমরা তাঁকে সমর্থন দেব।’

খড়িয়াকাজীরচর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. দুলাল মিয়া বলেন, সশিক্ষিত আবুল কালাম বেশি পড়ালেখা না করেও কবিতার বই প্রকাশ করে এলাকায় ‘কবি কালাম’ নামে পরিচিত। এখন তিনি বৃদ্ধ বয়সে ধৈর্য ধরে এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছেন। এতে এলাকাবাসী খুব খুশি। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ওসমান হাদির শারীরিক অবস্থার উন্নতি নেই

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
ওসমান হাদির শারীরিক অবস্থার উন্নতি নেই

ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ও ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী শরিফ ওসমান বিন হাদির শারীরিক অবস্থার উন্নতি হয়নি। তাঁর সার্বিক অবস্থা এখনো অত্যন্ত আশঙ্কাজনক। সর্বশেষ সিটি স্ক্যানে তাঁর মস্তিষ্কের ফোলা (সেরিব্রাল ইডেমা) আগের তুলনায় বেড়েছে।

রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি ওসমান হাদির চিকিৎসায় গঠিত মাল্টিডিসিপ্লিনারি মেডিকেল বোর্ড আজ রোববার বিকেলে বিবৃতিতে এসব তথ্য জানিয়েছে। বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেন ওই হাসপাতালের আইসিইউ ও এইচডিইউ সমন্বয়ক এবং জ্যেষ্ঠ কনসালট্যান্ট ডা. মো. জাফর ইকবাল।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, হাসপাতালের ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটে চিকিৎসাধীন ওসমান হাদির সর্বশেষ সিটি স্ক্যানে দেখা গেছে, তাঁর মস্তিষ্কের ফোলা আগের তুলনায় বেড়েছে, যা চিকিৎসাবিজ্ঞানের দৃষ্টিতে একটি অত্যন্ত উদ্বেগজনক ক্লিনিক্যাল পরিস্থিতি। ১২ ডিসেম্বর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রয়োজনীয় অস্ত্রোপচারের পর তাঁকে এভারকেয়ার হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। আজ আবার তাঁর শারীরিক অবস্থা মূল্যায়ন করা হলে মস্তিষ্কে অতিরিক্ত চাপ ও ফোলাজনিত ঝুঁকি আরও স্পষ্ট হয়ে ওঠে।

মেডিকেল বোর্ডের চিকিৎসকদের ভাষ্য অনুযায়ী, ব্রেন স্টেমে আঘাত এবং বাড়তি সেরিব্রাল ইডেমার কারণে রোগীর রক্তচাপে ওঠানামা হচ্ছে। এদিন তাঁর হৃৎস্পন্দন স্বাভাবিকের তুলনায় কিছুটা বেশি লক্ষ করা গেছে। তবে রক্তচাপ ও হৃদযন্ত্রের স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে প্রয়োজনীয় মেডিকেল সাপোর্ট অব্যাহত রয়েছে। ফুসফুসের কার্যকারিতা ও ভেন্টিলেটর সাপোর্ট বর্তমানে স্থিতিশীল রয়েছে। এ ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য কোনো উন্নতি বা অবনতি হয়নি।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ওসমান হাদির কিডনির কার্যক্ষমতা আপাতত বজায় আছে এবং ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা কিছুটা কমেছে। তবে মস্তিষ্কে আঘাতের কারণে শরীরের হরমোনগত ভারসাম্যহীনতা দেখা দেওয়ায় প্রতি ঘণ্টায় ইউরিন উৎপাদনে তারতম্য হচ্ছে। এ কারণে অ্যাসিড-বেস ব্যালেন্স, ফ্লুইড ও ইলেকট্রোলাইট নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। একই সঙ্গে ব্লাড সুগার সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে, যা এ ধরনের সংকটাপন্ন রোগীর ক্ষেত্রে একটি বড় ক্লিনিক্যাল চ্যালেঞ্জ।

মেডিকেল বোর্ড আরও বলেছে, ওসমান হাদির সার্বিক অবস্থা এখনো অত্যন্ত আশঙ্কাজনক। তবে সর্বোচ্চ পেশাদারত্ব ও সমন্বয়ের মাধ্যমে তাঁকে সর্বোত্তম চিকিৎসা দেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছেন চিকিৎসকেরা। পরিবার অথবা পরিবারের মাধ্যমে সরকার চাইলে তাঁকে দেশের বাইরে উন্নত চিকিৎসার জন্য স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত নিলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও মেডিকেল বোর্ড সর্বাত্মক সহযোগিতা করবে।

ওসমান হাদির প্রথম অস্ত্রোপচারে অংশ নেওয়া ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিউরোসার্জারি বিভাগের আবাসিক চিকিৎসক মো. আব্দুল আহাদ আজ এভারকেয়ার হাসপাতাল থেকে গণমাধ্যমকে বলেন, শনিবারের মতো আজও মেডিকেল বোর্ডের সব সদস্যের উপস্থিতিতে বৈঠক হয়েছে। রোগীর কেস সামারি প্রস্তুত করে ইতিমধ্যে বিদেশের বিভিন্ন হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

এদিকে, হাদিকে আগামীকাল সোমবার দুপুরে একটি এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে সিঙ্গাপুরে নেওয়া হবে। আজ রোববার প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নির্দেশে সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী, প্রধান উপদেষ্টার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়বিষয়ক বিশেষ সহকারী অধ্যাপক মো. সায়েদুর রহমান, এভারকেয়ার হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক জাফর, ওসমান হাদির ভাই ওমর বিন হাদির মধ্যে এক জরুরি কল কনফারেন্সে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। পরে প্রেস উইং থেকে পাঠানো বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়।

গত শুক্রবার বেলা সোয়া ২টার দিকে পুরানা পল্টনের বক্স কালভার্ট রোডে মোটরসাইকেলে আসা দুই দুর্বৃত্ত চলন্ত রিকশায় থাকা ওসমান হাদিকে মাথায় গুলি করে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

সুদান হামলা: সন্তান ভূমিষ্ঠের আগেই পৃথিবী ছেড়ে যেতে হলো শান্তিরক্ষী শান্তকে

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি
শান্ত মণ্ডল। ছবি: সংগৃহীত
শান্ত মণ্ডল। ছবি: সংগৃহীত

সুদান থেকে পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীর সঙ্গে ভিডিও কলে যখন কথা বলতেন, তখন অনাগত সন্তান নিয়ে কত শত স্বপ্ন বুনতেন শান্তিরক্ষী শান্ত মণ্ডল। সন্তান যেন একটা সুন্দর ভবিষ্যৎ পায়, সে জন্য পরিবারের সবাইকে ছেড়ে বিদেশ বিভুঁইয়ে থাকার কষ্ট হাসিমুখে মেনে নিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু সেই সন্তানের মুখ দেখার আশা তাঁর আর পূরণ হলো না। সন্তান ভূমিষ্ঠের আগেই এই পৃথিবী ছেড়ে যেতে হলো তাঁকে।

গতকাল শনিবার সুদানের আবেই এলাকায় জাতিসংঘ শান্তি রক্ষা মিশনের আওতাধীন কাদুগলি লজিস্টিক বেসে সন্ত্রাসীদের ড্রোন হামলায় ছয় বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী প্রাণ হারিয়েছেন। তাঁদের একজন কুড়িগ্রামের শান্ত মণ্ডল (২৬)। তাঁর বাড়ি রাজারহাট উপজেলার সদর ইউনিয়নের সাটমাধাই ডারারপাড় গ্রামে। তাঁর বাবা সাবেক সেনাসদস্য (মৃত) নূর ইসলাম মণ্ডল এবং মা সাহেরা বেগম। শান্তর বড় ভাই সোহাগ মণ্ডল সেনাবাহিনীতে কর্মরত। তিনি কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্টে ল্যান্স করপোরাল পদে রয়েছেন।

আজ রোববার (১৪ ডিসেম্বর) নিহত শান্তর বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে, তাঁর মা সাহেরা বেগম শোকে স্তব্ধ হয়ে বিছানায় বসে রয়েছেন। বড় ভাই সোহাগ মণ্ডলের চোখ কান্নায় লাল হয়ে আছে। স্বজন ও প্রতিবেশীরা বাড়িতে গিয়ে সহমর্মিতা প্রকাশ করছেন।

সোহাগ মণ্ডল বলেন, শান্ত ২০১৮ সালে সেনাবাহিনীতে সৈনিক পদে যোগদান করেন। তিনি সর্বশেষ বগুড়া ক্যান্টনমেন্টে সৈনিক পদে ছিলেন। গত ৭ নভেম্বর তিনি শান্তিরক্ষী মিশনে সুদানে যান। সোহাগ মণ্ডল আরও বলেন, ‘মাত্র এক বছর আগে শান্ত বিয়ে করেছে। তার স্ত্রী বর্তমানে পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা। সে তার বাবার বাড়িতে আছে। সেও খবর পেয়েছে। গতকাল সন্ধ্যায় শান্ত ভিডিও কলে বাড়ির সবার সঙ্গে কথা বলেছে। রাত সাড়ে ১০টার দিকে খবর পাই, ওদের ক্যাম্পে হামলা হয়েছে। হামলায় শান্ত মারা গেছে। হামলার সময় সে অস্ত্র পরিষ্কার করতে ছিল। তার এমন মৃত্যুতে আমরা দিশেহারা। আমরা এখন তার লাশের অপেক্ষায় আছি। বাড়িতে বাবার কবরের পাশে তাকে কবর দিতে চাই।’

পরিবার থেকে জানানো হয়, স্ত্রীর সঙ্গে নিয়মিতই কথা হতো শান্তর। গতকাল শান্তর মৃত্যুর খবর পেয়ে তাঁর অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী শোকে বিহ্বল হয়ে গেছেন। কারও সঙ্গে কথা বলার মতো অবস্থায় এখন তিনি নেই।

শান্তর বাল্যবন্ধু সুমন বলেন, ‘শান্তর মৃত্যুর খবরে এলাকার মানুষ শোকে স্তব্ধ হয়ে গেছে। নামের মতোই সে শান্ত ছিল। কোনো দিন কারও সঙ্গে খারাপ আচরণ বা কটু কথা বলেনি। এমন বন্ধুর মৃত্যুতে আমরা অত্যন্ত ব্যথিত।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

সুপ্রিম কোর্টের এজলাসে আইনজীবী ছাড়া প্রবেশ সীমিত

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

নিরাপত্তার স্বার্থে সুপ্রিম কোর্টের আপিল ও হাইকোর্ট—উভয় বিভাগের এজলাস কক্ষে আইনজীবী ছাড়া বিচারপ্রার্থী বা অন্য কোনো অপ্রত্যাশিত ব্যক্তির প্রবেশাধিকার সীমিত করা হয়েছে। আজ রোববার প্রধান বিচারপতির নির্দেশে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন এ বিষয়ে একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করেছেন।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সুপ্রিম কোর্ট দেশের বিচার অঙ্গনের সর্বোচ্চ স্থান এবং গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা হিসেবে বিবেচিত। প্রধান বিচারপতি ও উভয় বিভাগের বিচারপতিরা এখানে বিচারকার্য পরিচালনা করেন, তাই সুপ্রিম কোর্টের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা জরুরি।

সম্প্রতি লক্ষ করা যাচ্ছে যে, আদালতে আগত কিছু বিচারপ্রার্থী, মামলাসংশ্লিষ্ট ও অপ্রত্যাশিত ব্যক্তি এজলাসে প্রবেশ করছেন, যা আদালতের নিরাপত্তা, শান্তিপূর্ণ পরিবেশ ও বিচারকার্য পরিচালনায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে।

নিরাপত্তাজনিত কারণে সুপ্রিম কোর্টের উভয় বিভাগের আইনজীবী বাদে বিচারপ্রার্থী কিংবা অপ্রত্যাশিত যেকোনো ব্যক্তির এজলাস কক্ষে প্রবেশাধিকার সীমিত অথবা নিয়ন্ত্রিত থাকবে।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে যেকোনো সমাবেশ ও মিছিল, বৈধ ও অবৈধ যেকোনো প্রকার অস্ত্র, মারণাস্ত্র, বিস্ফোরক ও মাদকদ্রব্য বহন সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ করা হলো। এই আদেশ ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বলবৎ থাকবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

‘কুকুরের বাচ্চা হত্যার বিচার হয় অথচ নিষ্পাপ শিশু হত্যার বিচার নেই’

উত্তরা-বিমানবন্দর (ঢাকা) প্রতিনিধি 
‘বিমান দুর্ঘটনায় হতাহত পরিবারের পক্ষ থেকে সরকার কর্তৃক ঘোষিত ক্ষতিপূরণ প্রত্যাখ্যান’ শীর্ষক মানববন্ধনে অভিভাবকেরা। ছবি: আজকের পত্রিকা
‘বিমান দুর্ঘটনায় হতাহত পরিবারের পক্ষ থেকে সরকার কর্তৃক ঘোষিত ক্ষতিপূরণ প্রত্যাখ্যান’ শীর্ষক মানববন্ধনে অভিভাবকেরা। ছবি: আজকের পত্রিকা

দেশে কুকুরের বাচ্চা হত্যার বিচার হয়, অথচ ফুলের মতো এতগুলো নিষ্পাপ শিশুর মৃত্যু এত দিনেও বিচার পায় না। মাইলস্টোন ট্র্যাজেডির প্রায় পাঁচ মাস পর নিহত ও আহত শিক্ষার্থীর পরিবারগুলো এভাবেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। তারা সরকারের পক্ষ থেকে প্রস্তাবিত ক্ষতিপূরণও প্রত্যাখ্যান করেছে।

আজ রোববার দুপুরে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের সামনে গোলচত্বরে ‘বিমান দুর্ঘটনায় হতাহত পরিবারের পক্ষ থেকে সরকার কর্তৃক ঘোষিত ক্ষতিপূরণ প্রত্যাখ্যান’ শীর্ষক মানববন্ধনে অভিভাবকেরা এই ক্ষোভ ব্যক্ত করেন।

মানববন্ধনে অংশ নেওয়া অভিভাবকেরা বলেন, তাঁদের বাচ্চার জীবনের মূল্য কি ২০ লাখ টাকা? আহতদের ভবিষ্যতের মূল্য কি পাঁচ লাখ টাকা? এ দেশে একটি কুকুরের বাচ্চা হত্যার বিচার হয়, অথচ ফুলের মতো বাচ্চাদের জীবনের মূল্য নেই। তাঁরা অভিযোগ করেন, সরকারের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত কোনো খোঁজখবর নেওয়া হয়নি।

১২ ডিসেম্বর প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে নিহতদের পরিবারকে ২০ লাখ এবং আহতদের পাঁচ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণের ঘোষণা দেন। এ সময় আহতদের বিনা মূল্যে চিকিৎসাসেবা দেওয়ার কথাও বলা হয়।

তবে সরকারের পক্ষ থেকে প্রস্তাবিত ক্ষতিপূরণ প্রত্যাখ্যান করেছে নিহত ও আহত শিক্ষার্থীর পরিবারগুলো।

মানববন্ধনে উপস্থিত ছিল বিমান দুর্ঘটনায় আহত সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী রবিউল ইসলাম নাবিল রোহান। দুই মাস চিকিৎসা নিয়ে সে এখন মোটামুটি সুস্থ। রোহানের বাবা নিজাম উদ্দিন বলেন, ‘উপদেষ্টা বা সরকারের পক্ষ থেকে এখনো আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেনি। আমাদের ৩৬টা বাচ্চা মারা গেছে, ৫০-৬০ জন আহত হয়েছে। আমরা চাই বিচার। ৫ লাখ টাকা দিয়ে কী হবে? আমরা চাই, ন্যায়বিচার নিশ্চিত হোক।’

নিহত সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী জারিফ ফারহানের মা রাশিদা ইয়াসমিন বলেন, ‘বর্তমান সরকার আমাদের খোঁজখবর নেয়নি। আমরা আমাদের দাবি জানাতে এখানে দাঁড়িয়েছি। ক্ষতিপূরণের ঘোষণা আমাদের কাছে অসম্মানজনক।’

আহত ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী আহনাফ হোসেন নিলয়ের মা আইভি হোসেন নিঝুম জানান, তাঁর সন্তান ২৫ শতাংশ দগ্ধ। আরও তিনটি অপারেশন বাকি। বুক থেকে হাড় নিয়ে কান বানাতে হবে। হাত শক্ত হয়ে যাচ্ছে। নতুন চামড়া লাগাতে হবে। তিনি ক্ষতিপূরণ হিসেবে সরকারের ৫ লাখ টাকা প্রত্যাখ্যান করেছেন। তিনি দাবি করেন, হতাহতদের সারা জীবনের চিকিৎসার জন্য স্বাস্থ্য কার্ড ও নিহতদের পাঁচ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণসহ শহীদের মর্যাদা দেওয়া হোক।

মানববন্ধনে অংশ নিয়েছিলেন ঢাকা-১৮ আসনের বিএনপি মনোনীত প্রার্থী এস এম জাহাঙ্গীর হোসেন। তিনি বলেন, ‘জীবনের মূল্য পাঁচ কোটি টাকাও না, ৫০০ কোটিও টাকাও না। জীবন, জীবনই। জীবনের মূল্য ২০ লাখ টাকা হয়, এটা আমরা কোনোভাবেই মেনে নিতে পারি না।’ তিনি আশা প্রকাশ করেন, হাইকোর্টের নির্দেশনা এবং সরকারের আগের ঘোষণার সমন্বয় করে সরকার একটি নতুন ঘোষণা দেবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত