Ajker Patrika

যোগাযোগব্যবস্থা ‘গলার কাঁটা’দিন দিন কমছে পর্যটকও

মাহিদুল ইসলাম, মৌলভীবাজার
প্রায়ই যানজট লেগে থাকে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে। নষ্ট হয় অনেক মূল্যবান সময়। সম্প্রতি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ অংশে। ছবি: আজকের পত্রিকা
প্রায়ই যানজট লেগে থাকে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে। নষ্ট হয় অনেক মূল্যবান সময়। সম্প্রতি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ অংশে। ছবি: আজকের পত্রিকা

মৌলভীবাজার জেলায় প্রায় ২২ লাখ মানুষের বাস। পাশাপাশি রয়েছে লাখো পর্যটকের চাপ। তবে স্থানীয় বাসিন্দা এবং এসব পর্যটকের জন্য গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে জেলার যোগাযোগব্যবস্থা। ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে দীর্ঘ যানজট, রেলের তীব্র টিকিট সংকট ও শমশেরনগর বিমানবন্দর বন্ধ থাকায় স্থানীয় বাসিন্দা ও পর্যটকদের সীমাহীন ভোগান্তিতে পড়তে হয়। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, যোগাযোগব্যবস্থা খারাপ হওয়ায় এ মৌসুমে পর্যটক কম এসেছে বিগত সময়ের তুলনায়।

জানা গেছে, মৌলভীবাজারের সঙ্গে সারা দেশের যোগাযোগের মাধ্যম রয়েছে তিনটি। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো সড়ক ও রেলপথ। গত এক বছর ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে ধীরগতির কাজ হওয়ার কারণে বেশির ভাগ সময়ে তীব্র যানজট লেগেই থাকে সড়কের ব্রাহ্মণবাড়িয়া অংশে। ৫ ঘণ্টার পথ পাড়ি দিতে অনেক সময় লাগে ১০-১৫ ঘণ্টা। এমন ঘটনাও আছে, তীব্র যানজটে পড়ে বিদেশযাত্রীরা বিমানের ফ্লাইট ধরতে পারেননি। অনেক সময় মুমূর্ষু রোগী দীর্ঘক্ষণ যানজটে আটকে থেকে পথেই মারা গেছেন।

সড়ক পথে যখন তীব্র যানজট—এই অবস্থায় ট্রেনের টিকিট যেন অমাবস্যার চাঁদ। সিলেট-আখাউড়া রেলপথ ব্রিটিশ আমলের তৈরি। এই পথের অতি গুরুত্বপূর্ণ চারটি স্টেশন হলো মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল, কুলাউড়া, ভানুগাছ ও শমশেরনগর।

স্টেশনগুলো পর্যটকের যাতায়াতের অন্যতম স্থান। জেলায় বছরে লাখো পর্যটক আসা-যাওয়া করেন এই পথে। তবে রেলস্টেশনগুলোয় ট্রেনের টিকিট সাধারণ যাত্রীরা কোনো অবস্থায় পান না। অভিযোগ রয়েছে, সব টিকিট অনলাইনে আসার কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে গায়েব হয়ে যায়। দীর্ঘদিন ধরে চলছে এ সংকট। ফলে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে পর্যটক ও স্থানীয়দের।

এ জেলায় শমশেরনগর বিমানবন্দর রয়েছে; যা দীর্ঘদিন ধরে নানান সমস্যার কারণে চালু করা যাচ্ছে না। এটি চালু হলে মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জসহ কয়েকটি জেলার মানুষেরা সহজেই যাতায়াত করতে পারত।

ঢাকা থেকে আসা পর্যটক তপু আহমেদ বলেন, ‘আমরা সাতজন ট্রেনে মৌলভীবাজার যেতে চেয়েছিলাম। কিন্তু টিকিট পাইনি। পরে মাইক্রোবাস ভাড়া নিয়ে এসেছি। যানজটের কারণে ১০ ঘণ্টায় মৌলভীবাজার এসেছি। ১০ হাজার টাকার ভাড়ার বদলে চালক ১৫ হাজার টাকা নিয়েছেন।’

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন কমলগঞ্জের সাবিনা আক্তার জানান, তিনি গত মাসে জটিল অপারেশন করিয়েছেন। এই মাসের প্রথম সপ্তাহে ঢাকায় গিয়ে আরও একটি অপারেশন করানোর কথা। সেই অবস্থায় সড়ক পথে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হয়েছিলেন। যানজটে দীর্ঘ সময় আটকে থাকার পর হাসপাতালে গিয়ে তাঁকে আইসিইউতে ভর্তি হতে হয়েছে।

রাজনগর উপজেলার শওকত আহমেদ নামের এক প্রবাসী বলেন, ‘ঢাকা থেকে আমার ফ্লাইট ছিল। আমি কোনোভাবেই ট্রেনের টিকিট সংগ্রহ করতে পারিনি। সড়ক পথে তীব্র যানজট ছিল। পরে সিলেট থেকে বিমানে ঢাকা গিয়েছি। ৪-৫ হাজার টাকার টিকিট আমাকে ১১ হাজার টাকায় কিনে নিয়ে ঢাকা যেতে হয়েছে। আমার সঙ্গের একজন সড়কপথে যানজটে আটকা পড়ে ফ্লাইট মিস করেছেন।’

কুলাউড়ার স্টেশনমাস্টার রুমান আহমেদ বলেন, ‘আমরা কোনোভাবেই টিকিটের চাহিদা পূরণ করতে পারছি না। যাত্রীর তুলনায় অতি সামান্য টিকিট রয়েছে। লাইন সংস্কার, টিকিট বৃদ্ধি করা একান্ত প্রয়োজন।’

সার্বিক বিষয়ে জেলা প্রশাসক মো. ইসরাইল হোসেন বলেন, ট্রেনের টিকিট বৃদ্ধি, শমশেরনগর বিমানবন্দর চালুসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বরাবর চিঠি পাঠিয়েছি। রেলের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করবেন বলে জানান তিনি।

রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক পার্থ সরকার বলেন, ‘আমরা বিভিন্ন ট্রেনের কোচ বৃদ্ধি করেছি। এ ছাড়া অতিরিক্ত যাত্রী থাকলেও কোচ বৃদ্ধি করা হয়। টিকিটের চাহিদা বেশি থাকলে আমাদের কাছে আবেদন করলে তা দেখা হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র থাকছে জুলাই সনদে, স্পষ্ট হলো নোট অব ডিসেন্ট

৬ বছর কানাডায় বাস, সীমান্তে আটক বাংলাদেশিকে নিয়ে বিপাকে মার্কিন কর্তৃপক্ষ

নির্বাচন কীভাবে হবে, তা রাজনৈতিক নেতারা ঠিক করবেন: প্রধান উপদেষ্টা

জুলাই সনদে যা যা আছে

পীরগাছায় বিএনপি নেতার ওপর হামলার জেরে সড়ক অবরোধ, চেয়ারম্যানের গাড়ি ভাঙচুর

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

চাঁপাইনবাবগঞ্জের ৩ আসন: দ্বন্দ্বে দুর্বল বিএনপি, সক্রিয় জামায়াত

আব্দুল বাশির, চাঁপাইনবাবগঞ্জ
(ওপরে বাঁ থেকে) হারুনুর রশীদ, শাহজাহান মিঞা, নুরুল ইসলাম বুলবুল (নিচে বাঁ থেকে) নুরুল ইসলাম বুলবুল, মিজানুর রহমান ও  শাহীন শওকত।
(ওপরে বাঁ থেকে) হারুনুর রশীদ, শাহজাহান মিঞা, নুরুল ইসলাম বুলবুল (নিচে বাঁ থেকে) নুরুল ইসলাম বুলবুল, মিজানুর রহমান ও শাহীন শওকত।

জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে চাঁপাইনবাবগঞ্জের তিনটি আসনে জমে উঠেছে রাজনৈতিক তৎপরতা। জেলার সর্বত্র এখন বিএনপি ও জামায়াতের প্রার্থীদের প্রচার, গণসংযোগ ও উঠান বৈঠক চলছে। তবে বিএনপির অভ্যন্তরীণ কোন্দল, বিভক্ত নেতৃত্ব ও একাধিক প্রার্থীর কারণে মাঠে তাদের অবস্থান দুর্বল। বিপরীতে জামায়াত একক প্রার্থী ঘোষণা করায় দলের নেতা-কর্মীরা উৎসাহ-উদ্দীপনায় মাঠে রয়েছেন।

জেলার তিনটি আসনেই বিএনপির বিভক্তি এবং জামায়াতের সুশৃঙ্খল সংগঠনকাঠামোর কারণে ধানের শীষ ও দাঁড়িপাল্লা প্রতীকের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আভাস মিলছে। এর মধ্যে সীমান্তঘেঁষা চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১ (শিবগঞ্জ) আসনে বিএনপির একাধিক প্রার্থী মনোনয়ন দৌড়ে আছেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও পাঁচবারের সংসদ সদস্য (এমপি) অধ্যাপক শাহজাহান মিঞা, বিএনপির রাজশাহী বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক শাহিন শওকত, সমাজসেবক ও ব্যবসায়ী বেলাল-ই-বাকী ইদ্রিসী। জামায়াতের প্রার্থী হিসেবে রয়েছেন রাজশাহী মহানগরীর আমির ও দুবারের উপজেলা চেয়ারম্যান কেরামত আলী। এ ছাড়া মাঠে না থাকলেও দলীয় প্রার্থী ঘোষণায় আছেন ইসলামী আন্দোলনের জেলা সহসভাপতি মনিরুল ইসলাম। আর জাকের পার্টির দলীয় প্রার্থী রাজশাহী বিভাগের জাকের পার্টির ছাত্রফ্রন্টের মুহাম্মাদ আব্দুর রহিম।

নাচোল, গোমস্তাপুর ও ভোলাহাট নিয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসন। এখানে বিএনপির প্রার্থী হতে চাচ্ছেন দলের কেন্দ্রীয় শিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য আমিনুল ইসলাম, জেলা মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক মাসউদা আফরোজ হক শুচি ও গোমস্তাপুর উপজেলা বিএনপির সদস্যসচিব ও সাবেক ছাত্রনেতা নুরুল ইসলাম সেন্টুসহ কয়েকজন। এ আসনে দলের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব ও বিভক্তি স্পষ্ট। জামায়াতের একক প্রার্থী মিজানুর রহমান নিয়মিত গণসংযোগে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। এ ছাড়া ইসলামী আন্দোলনের দলীয় প্রার্থী ইব্রাহিম খলিল। আর জাকের পার্টির প্রার্থী জেলার সাধারণ সম্পাদক মানিক বিশ্বাস।

তিনটি আসনের মধ্যে প্রার্থীদের দিক থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ (সদর)। বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও চারবারের এমপি হারুনুর রশীদ, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক গোলাম জাকারিয়া ও সদস্যসচিব রফিকুল ইসলাম ওরফে চায়নিজ রফিক এই আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী। অন্যদিকে জামায়াতের ঢাকা দক্ষিণের আমির ও সাবেক শিবির নেতা নুরুল ইসলাম বুলবুল একক প্রার্থী হিসেবে মাঠে তৎপর। এই আসনের চর এলাকায় বিএনপির দাপট আগে থেকে থাকায় এসব এলাকার ভোটব্যাংকে প্রার্থীরা বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন। ইসলামী আন্দোলনের জেলার সভাপতি ডা. মনিরুল ইসলাম আর জাকের পার্টির প্রার্থী জেলার সভাপতি বাবলু হোসেনকেও মাঠে দেখা যাচ্ছে। এ আসনে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী, সনাতনী এবং আওয়ামী লীগের কিছু ভোট ধানের শীষ এবং দাঁড়িপাল্লা প্রতীকের যে প্রার্থী টানতে পারবেন, সেই প্রার্থী জয়ের মালা গলায় পরবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার সাধারণ সম্পাদক মনোয়ার হোসেন জুয়েল বলেন, ‘আগামী সংসদ নির্বাচনে সব রাজনৈতিক দলের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ থাকতে হবে। এবং নির্বাচনের দায়িত্ব পালনে প্রিসাইডিং ও পোলিং কর্মকর্তাদের নিরপেক্ষ আচরণ থাকতে হবে। সেই নিশ্চয়তা নির্বাচন কমিশনকে দিতে হবে। এ ছাড়া নির্বাচনে স্বচ্ছতা আনয়নের জন্য গণমাধ্যম ও পর্যবেক্ষকদের অবাধ ও স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ দিতে পারলেই আমরা সুষ্ঠু নির্বাচনের আশা করতেই পারি। গ্রহণযোগ্য নির্বাচন না হলে সেটা দেশের জন্য ভালো হবে না।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র থাকছে জুলাই সনদে, স্পষ্ট হলো নোট অব ডিসেন্ট

৬ বছর কানাডায় বাস, সীমান্তে আটক বাংলাদেশিকে নিয়ে বিপাকে মার্কিন কর্তৃপক্ষ

নির্বাচন কীভাবে হবে, তা রাজনৈতিক নেতারা ঠিক করবেন: প্রধান উপদেষ্টা

জুলাই সনদে যা যা আছে

পীরগাছায় বিএনপি নেতার ওপর হামলার জেরে সড়ক অবরোধ, চেয়ারম্যানের গাড়ি ভাঙচুর

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

শিক্ষা কার্যক্রম: চার ইস্যুতে অস্থির শিক্ষাঙ্গন

  • বাড়িভাড়াসহ তিন দাবিতে আন্দোলনে এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা
  • ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি নিয়ে জটিলতা বাড়ছে
  • প্রাথমিকের সহকারী শিক্ষকেরা অনশন কর্মসূচি দিয়ে স্থগিত করেছেন
  • বিভিন্ন ইস্যুতে ক্ষোভ বাড়ছে শিক্ষা ক্যাডারে
রাহুল শর্মা, ঢাকা 
শহীদ মিনারের সামনে এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের অবস্থান কর্মসূচি। ছবি: আজকের পত্রিকা
শহীদ মিনারের সামনে এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের অবস্থান কর্মসূচি। ছবি: আজকের পত্রিকা

হঠাৎ অস্থির হয়ে উঠেছে দেশের শিক্ষাঙ্গন। প্রাথমিক থেকে বিশ্ববিদ্যালয় স্তর পর্যন্ত আলাদা ইস্যু ঘিরে অস্থিরতা বিরাজ করছে। এতে ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষা কার্যক্রম। তৈরি হচ্ছে প্রশাসনিক জটিলতাও। শঙ্কা দেখা দিচ্ছে সেশনজটসহ নানা সংকটের।

শিক্ষাসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে শিক্ষাক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব পড়তে পারে। কারণ, গত বছরের জুলাই-আগস্টে হওয়া আন্দোলনের অভিঘাত থেকে এখনো পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়নি শিক্ষা কার্যক্রম।

সার্বিক বিষয়ে মন্তব্য জানতে চাইলে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন ও অর্থ) মো. মজিবর রহমান বলেন, শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের যেকোনো দাবি পূরণে সরকার আন্তরিক। এসব বিষয়ে পর্যায়ক্রমে পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।

আন্দোলনে এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা

বাড়িভাড়া ভাতা বৃদ্ধিসহ তিন দফা দাবি আদায়ে গতকাল শুক্রবার দুপুর থেকে আমরণ অনশন কর্মসূচি শুরু করেছেন এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীরা। একই সঙ্গে তাঁদের ডাকা ‘অব্যাহত কর্মবিরতির’ কর্মসূচিও চলছে। এতে স্থবির হয়ে পড়েছে শ্রেণি কার্যক্রম।

এ ছাড়া আজ শনিবার সকালে শহীদ মিনার থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে সমাবেশ করার ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষকেরা।

এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা তাঁদের মূল বেতনের ২০ শতাংশ বাড়িভাড়া ভাতা, এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের চিকিৎসা ভাতা ৫০০ থেকে বাড়িয়ে ১ হাজার ৫০০ টাকা করা এবং এমপিওভুক্ত কর্মচারীদের উৎসব ভাতা মূল বেতনের ৫০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৭৫ শতাংশ করার দাবি তুলেছেন।

বর্তমানে দেশে ২৬ হাজার ১০৪টি বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত আছে। এসব প্রতিষ্ঠানে কর্মরত প্রায় সাড়ে পাঁচ লাখ শিক্ষক-কর্মচারী।

এমপিওভুক্ত শিক্ষা জাতীয়করণ প্রত্যাশী জোটের ব্যানারে ১২ অক্টোবর থেকে আন্দোলন করে আসছেন শিক্ষক-কর্মচারীরা। এর মধ্যে গত বৃহস্পতিবার শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক চৌধুরী রফিকুল আবরারের (সি আর আবরার) সঙ্গে বৈঠক করে শিক্ষকনেতাদের একটি প্রতিনিধিদল। বৈঠক শেষে শিক্ষা উপদেষ্টা বলেছেন, বাড়িভাড়া ৫ শতাংশের বেশি বাড়ানো সম্ভব নয়। শিক্ষকেরা রাজি হলে ১ নভেম্বর থেকে ৫ শতাংশ বাড়িভাড়া বৃদ্ধি বাস্তবায়ন সম্ভব। তবে শিক্ষা উপদেষ্টার এই ঘোষণা প্রত্যাখ্যান করে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষকনেতারা।

সাত কলেজ নিয়ে জটিলতা বাড়ছে

রাজধানীর সরকারি সাত কলেজ নিয়ে প্রস্তাবিত ‘ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি’ করা নিয়ে জটিলতা দিন দিন বাড়ছে। উচ্চমাধ্যমিক স্তর না থাকার শঙ্কা এবং প্রস্তাবিত কাঠামো নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। এ ছাড়া প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালয় করা হলে ঢাকা কলেজের ঐতিহ্য হারিয়ে যাবে বলে আশঙ্কা সাবেক শিক্ষার্থীদের।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, বিদ্যমান খসড়া অনুযায়ী প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা হলে ঐতিহ্য হারাবে সাত কলেজ। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় হলে কলেজের তুলনায় আসনসংখ্যা অর্ধেক কমে যাবে, যা উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে পথ সংকুচিত করবে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রাজধানীর সাত কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের আন্দোলনকে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থীরা এখন মোটাদাগে দুই ভাগে বিভক্ত। ১৩ অক্টোবর শিক্ষা ভবন এলাকায় পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি পালন করেছেন তাঁরা।

শিক্ষার্থীদের একাংশ প্রস্তাবিত ‘ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি’র অধ্যাদেশ দ্রুত জারির দাবিতে শিক্ষা ভবন অভিমুখে পদযাত্রা করেছেন। আরেক অংশ দাবি করছে, পদযাত্রার নামে ‘মব’ সৃষ্টি করে সরকারি সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করার চেষ্টা হচ্ছে। এ ছাড়া উচ্চমাধ্যমিক স্তর রাখার দাবিতে ১২ অক্টোবর সায়েন্স ল্যাব মোড় দখল করে বিক্ষোভ করেছেন ঢাকা কলেজের উচ্চমাধ্যমিকের শিক্ষার্থীরা।

একই সঙ্গে প্রস্তাবিত কাঠামোতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিরোধিতা করছেন সাত কলেজে কর্মরত শিক্ষা ক্যাডারের শিক্ষকেরা। তাঁরা কলেজের স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি কলেজের নামে অক্ষুণ্ন রাখা, কলেজগুলোর কার্যক্রম, পাঠদান ও অবকাঠামোর গুরুত্ব বিবেচনায় এনে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস পৃথক স্থানে করাসহ ১১ দফা দাবি জানিয়েছেন।

সাত কলেজের সংকট নিয়ে গত বৃহস্পতিবার শিক্ষা উপদেষ্টা বলেছেন, ‘সাত কলেজ নিয়ে একটি বিশেষায়িত বিশ্ববিদ্যালয় হবে। তবে কিছুটা ভুল-বোঝাবুঝি ও ভুল তথ্য ছড়ানো হয়েছে। সেগুলো নিয়ে নানা দ্বিধাদ্বন্দ্ব রয়েছে। বিভিন্ন গ্রুপ গুজব ছড়াচ্ছে, যেটা মোটেই কল্যাণকর নয়।’

ঢাকার সরকারি সাত কলেজ একসময় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ছিল। এই কলেজগুলো হলো ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, কবি নজরুল সরকারি কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ, সরকারি বাঙলা কলেজ ও সরকারি তিতুমীর কলেজ। ২০১৭ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি কলেজগুলোকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করা হয়। পরে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে গত জানুয়ারিতে কলেজগুলোকে অধিভুক্তি থেকে সরানো হয় এবং নতুন বিশ্ববিদ্যালয় করার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার।

শিক্ষা ক্যাডারে ক্ষোভ

মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা (মাউশি) অধিদপ্তর বিভাজনের উদ্যোগ, সাত কলেজ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় করার উদ্যোগ, দীর্ঘদিন পদোন্নতি আটকে থাকায় ক্ষুব্ধ শিক্ষা ক্যাডারে কর্মরত শিক্ষক ও কর্মকর্তারা। তাঁদের অভিযোগ, মাউশি বিভাজন হলে শিক্ষকদের পেশাগত মর্যাদা ও শিক্ষা প্রশাসনে পদায়নের সুযোগ সীমিত হবে। আর সাত কলেজ নিয়ে প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালয় করা হলে ঢাকায় তাঁদের পদায়নের সুযোগ কমবে এবং বিপুলসংখ্যক পদ বিলুপ্ত হবে। এ ছাড়া দীর্ঘদিন ধরে নতুন পদ সৃষ্টি না হওয়া, পদোন্নতি আটকে থাকা এবং তৃতীয় গ্রেড না পাওয়ার কারণেও হতাশ তাঁরা।

১২ অক্টোবর মাউশি ভেঙে দুটি অধিদপ্তর করার সিদ্ধান্ত জানায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এর একটি মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর, অন্যটি কলেজ শিক্ষা অধিদপ্তর। এ দুটি অধিদপ্তর প্রতিষ্ঠার জন্য পৃথক অর্গানোগ্রাম, কার্যতালিকাসহ পূর্ণাঙ্গ প্রস্তাব প্রণয়নের জন্য ছয় সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে।

কর্মকর্তার সংখ্যার দিক থেকে সবচেয়ে বড় দুটি ক্যাডারের একটি হলো শিক্ষা। এই ক্যাডারে মোট ১৯ হাজার ৮৬৮টি পদের বিপরীতে কর্মরত সাড়ে ১৭ হাজারের বেশি কর্মকর্তা। তাঁদের অধিকাংশ সরকারি কলেজের শিক্ষক। কিছু সদস্য মাউশিসহ শিক্ষাসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে কর্মরত।

জানতে চাইলে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডার অ্যাসোসিয়েশনের আহ্বায়ক অধ্যাপক খান মইনুদ্দিন আল মাহমুদ সোহেল গতকাল বলেন, অংশীজনদের মতামত নিয়ে কোনো সমস্যার সমাধান না হলে তা টেকসই হবে না। এতে সামগ্রিকভাবে দেশের শিক্ষা ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

আশ্বাসে স্থগিত প্রাথমিকের আন্দোলন

সহকারী শিক্ষক পদকে এন্ট্রি পদ ধরে একাদশ গ্রেডে বেতন নির্ধারণ, চাকরির ১০ বছর ও ১৬ বছর পূর্তিতে উচ্চতর গ্রেড পাওয়ার জটিলতা নিরসন এবং প্রধান শিক্ষকের শতভাগ পদে সহকারী শিক্ষকদের পদোন্নতিসহ দ্রুত পদোন্নতি চান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকেরা।

দাবি আদায়ে আমরণ অনশন কর্মসূচি ঘোষণা করা হলেও প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের আশ্বাসে তা আপাতত স্থগিত করা হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় শিক্ষকনেতারা সচিবালয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার এবং মন্ত্রণালয় ও প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনার পর এ ঘোষণা দেন।

তবে আশ্বাস বাস্তবায়নে দীর্ঘসূত্রতার সৃষ্টি হলে আবারও নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক সমাজের সভাপতি মো. আনিসুর রহমান। গতকাল তিনি বলেন, ‘প্রেসক্লাবে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা। এ কারণে আমরণ কর্মসূচি আপাতত স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে আমাদের দেওয়া আশ্বাস বাস্তবায়নে দীর্ঘসূত্রতা সৃষ্টি হলে আবারও নতুন কর্মসূচি দেওয়া হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র থাকছে জুলাই সনদে, স্পষ্ট হলো নোট অব ডিসেন্ট

৬ বছর কানাডায় বাস, সীমান্তে আটক বাংলাদেশিকে নিয়ে বিপাকে মার্কিন কর্তৃপক্ষ

নির্বাচন কীভাবে হবে, তা রাজনৈতিক নেতারা ঠিক করবেন: প্রধান উপদেষ্টা

জুলাই সনদে যা যা আছে

পীরগাছায় বিএনপি নেতার ওপর হামলার জেরে সড়ক অবরোধ, চেয়ারম্যানের গাড়ি ভাঙচুর

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

শ্যামপুর সুগার মিল: ফের আটকে গেল চিনি উৎপাদন

  • ১৩ জুলাই অর্থ মঞ্জুর ও ছাড় করার জন্য শিল্প মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে অর্থ বিভাগে চিঠি পাঠায় সরকার
  • তবে ৩০ জুলাই এক চিঠির মাধ্যমে অর্থ বরাদ্দের বিষয়ে অর্থ বিভাগ অসম্মতি জানিয়েছে
শিপুল ইসলাম, রংপুর 
৯ মাস আগে পুনরায় চালুর ঘোষণা এলেও এখনো বন্ধই পড়ে আছে ভারী শিল্প শ্যামপুর সুগার মিল। ছবি: আজকের পত্রিকা
৯ মাস আগে পুনরায় চালুর ঘোষণা এলেও এখনো বন্ধই পড়ে আছে ভারী শিল্প শ্যামপুর সুগার মিল। ছবি: আজকের পত্রিকা

একসময় আখের মিষ্টি গন্ধে মুখর থাকত রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলার গ্রামগুলো। চিনিকলের সাইরেন বাজলেই প্রাণ ফিরত শ্রমিকপল্লিতে, জমজমাট হতো স্থানীয় বাজার। কিন্তু সেই সাইরেন বহুদিন বন্ধ। ৯ মাস আগে পুনরায় চালুর ঘোষণা এলেও এখনো বন্ধই পড়ে আছে এখানকার একমাত্র ভারী শিল্প শ্যামপুর সুগার মিল। অর্থ বরাদ্দ না পেয়ে থমকে আছে টাস্কফোর্সের পরিকল্পনা, হতাশ শ্রমিক ও চাষিরা।

শ্যামপুর সুগার মিল সূত্রে জানা গেছে, ১৯৬৪ সালে প্রায় ১১১ দশমিক ৪৫ একর জমিতে চিনিকলটি স্থাপিত হয়। ১৯৬৭ সালে আখ মাড়াই শুরু হয়। সক্ষমতা ছিল দৈনিক ১ হাজার ১৬ টন আখ মাড়াইয়ের। বার্ষিক চিনি উৎপাদনক্ষমতা ছিল ১০ হাজার ১৬১ টন। এলাকায় ১০ হাজার একরে আখ চাষ হতো। এর সঙ্গে জড়িয়ে ছিলেন ১০ সহস্রাধিক চাষি। ২২৬ কোটি টাকা লোকসানের মুখে ২০২০-২১ অর্থবছরে ওই চিনিকলে আখ মাড়াই কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হয়। ফলে ওই সব জমিতে আখ চাষ করছেন না চাষিরা। কিন্তু জমিগুলোতে অন্য ফসল চাষে তাঁরা তেমন লাভবানও হচ্ছেন না। এতে ক্রমান্বয়ে ওই চাষিরা অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছেন।

তবে, ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে বন্ধ থাকা চিনিকল পুনরায় চালু ও লাভজনকভাবে চালানোর লক্ষ্যে টাস্কফোর্সের সুপারিশ ও মতামতের আলোকে এবং পর্যাপ্ত আখ পাওয়া সাপেক্ষে শ্যামপুর সুগার মিলে মাড়াই কার্যক্রম চালু করার উদ্যোগ নেয় বর্তমান সরকার।

মিলটি চালু করার জন্য ২০২৪-২৫ অর্থবছরে আখ চাষ উন্নয়ন ও রোপণসংক্রান্ত সম্ভাব্য ব্যয়ের প্রাক্কলন এবং ২০২৫-২৬ ও ২০২৬-২৭ অর্থবছরের সম্ভাব্য ব্যয়ের হিসাব করা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য যথাক্রমে ৫৩৭ কোটি টাকা মঞ্জুর ও ছাড় করার লক্ষ্যে চলতি বছরের ১০ ফেব্রুয়ারি শিল্প মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে অর্থ বিভাগে চিঠি পাঠায় সরকার। পরে ১৩ জুলাই পুনরায় ২০২৪-২৫ ও ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য শ্যামপুর চিনিকলের জন্য অর্থ মঞ্জুর ও ছাড় করার জন্য শিল্প মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে অর্থ বিভাগে চিঠি পাঠায় সরকার। তবে ৩০ জুলাই এক চিঠির মাধ্যমে অর্থ বরাদ্দের বিষয়ে অসম্মতি জানায় অর্থ বিভাগ।

সম্প্রতি শ্যামপুর সুগার মিল সরেজমিনে দেখা যায়, চিনিকল চত্বরজুড়ে এখন নিস্তব্ধতা। চারপাশ গাছগাছালিতে ঢেকে গেছে। নেই কোনো কোলাহল বা যান্ত্রিক শব্দ। আখ পরিবহনের ট্রাক্টর-ট্রলিগুলো অযত্নে পড়ে আছে। ঝোপঝাড় ও লতাপাতায় ঢেকে গেছে সেগুলো। রোদ-বৃষ্টিতে মরিচা পড়ে নষ্ট হওয়ার উপক্রম। চিনিকলের বিভিন্ন যন্ত্রাংশও পড়ে আছে যত্রতত্র।

শ্যামপুর গ্রামের আখচাষি ফজলুল হক বলেন, তাঁরা বিভিন্ন সময় মিল চালুর জন্য আন্দোলন-সমাবেশ করেছেন। শ্যামপুর মিল চালুর আশ্বাসও দিয়েছিল বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার। এখন শুনছেন মিল চালু হবে না। তিনি মিলটি চালু করার দাবি জানান।

আরেক চাষি আনারুল ইসলাম আক্ষেপ করে বলেন, চিনিকল বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর থেকে শ্যামপুর অঞ্চলের অর্থনীতি প্রায় ধ্বংস হয়ে গেছে। একসময় আখ চাষ, কেনাবেচা করে কোটি কোটি টাকার বাণিজ্য হতো। কৃষক, ব্যবসায়ী সবাই শহরের মানের জীবনযাপন করতেন। কিন্তু কল বন্ধ থাকায় অন্য ফসলে তেমন লাভ হয় না। ব্যবসা-বাণিজ্যেও ভাটা পড়েছে।

শ্যামপুর সুগার মিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মোশাররফ হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘প্রথম পর্যায়ে শ্যামপুর চিনিকল চালু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু অর্থ ছাড়ের বিষয় অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে না করেছে। এ কারণে চালু হয়নি। আমাদের চেয়ারম্যান, ডিরেক্টর অর্থ মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করছেন। আমাদের বেতনভাতা আপডেট আছে। আমরা চাই মিল দ্রুত চালু হোক।’

শ্যামপুর এলাকার বাসিন্দা, বন্ধ চিনিকল টাস্কফোর্স কমিটির সদস্য আলতাফ হোসেন বলেন, ‘টাস্কফোর্সের সুপারিশে ছিল কীভাবে মিলগুলোকে আধুনিকায়ন করে লাভজনক করা যায়। অর্থ বরাদ্দ না পাওয়ায় আবারও মিলগুলোর কার্যক্রমে অনিশ্চয়তা দেখা দিল। হাজার হাজার কোটি টাকার এসব সম্পদকে কাজে লাগানো গেলে লোকসান নয়; লাভের মুখ দেখবে এসব প্রতিষ্ঠান।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র থাকছে জুলাই সনদে, স্পষ্ট হলো নোট অব ডিসেন্ট

৬ বছর কানাডায় বাস, সীমান্তে আটক বাংলাদেশিকে নিয়ে বিপাকে মার্কিন কর্তৃপক্ষ

নির্বাচন কীভাবে হবে, তা রাজনৈতিক নেতারা ঠিক করবেন: প্রধান উপদেষ্টা

জুলাই সনদে যা যা আছে

পীরগাছায় বিএনপি নেতার ওপর হামলার জেরে সড়ক অবরোধ, চেয়ারম্যানের গাড়ি ভাঙচুর

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

গাজীপুরের শ্রীপুর: শীতলক্ষ্যার চর দখল করে পাকা স্থাপনা

  • চরের অন্তত দুই বিঘা জমি ঘিরে প্রাচীর নির্মাণের মাধ্যমে দখলচেষ্টার অভিযোগ
  • স্থানীয় ইউপি সদস্য বলছেন, সরকারের প্রয়োজনে জমি ছেড়ে দেওয়া হবে
  • তদন্ত করে আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে উপজেলা প্রশাসন
রাতুল মণ্ডল, (শ্রীপুর) গাজীপুর
গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার গোসিঙ্গা ইউনিয়নের গোসিঙ্গা বাজারের পাশে শীতলক্ষ্যার চরে সীমানাপ্রাচীর নির্মাণ। ছবি: আজকের পত্রিকা
গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার গোসিঙ্গা ইউনিয়নের গোসিঙ্গা বাজারের পাশে শীতলক্ষ্যার চরে সীমানাপ্রাচীর নির্মাণ। ছবি: আজকের পত্রিকা

গাজীপুরের শ্রীপুরে শীতলক্ষ্যা নদীর চরের অন্তত দুই বিঘা জমি দখলচেষ্টার অভিযোগ উঠেছে। এরই মধ্যে চরের এক পাশে ১০ ফুট উঁচু সীমানাপ্রাচীর নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। উপজেলার গোসিঙ্গা ইউনিয়নের গোসিঙ্গা বাজারের পাশের চরে এই স্থাপনা নির্মাণ করা হয়।

সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা যায়, গোসিঙ্গা বাজারের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া শীতলক্ষ্যা তীরের অন্তত দুই বিঘা জমি ঘিরে সীমানাপ্রাচীর নির্মাণের কাজ করেন শ্রমিকেরা। পাশে রাখা হয়েছে বিভিন্ন ধরনের নির্মাণসামগ্রী। প্রাচীরঘেরা জমির একপাশে খেয়াঘাট রয়েছে। সেখানে প্রশাসনের পক্ষ থেকে অস্থায়ী যাত্রীছাউনি করা হয়েছে। অপর পাশে ভূমিহীন এক ব্যক্তি কলাগাছ রোপণ করেছেন। যদিও খাসজমিতে সবুজায়নের ক্ষেত্রে আইনি কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই বলে জানিয়েছেন নদী রক্ষা কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান মনজুর আহমেদ চৌধুরী।

প্রাচীরের কাজ করা নির্মাণশ্রমিকেরা জানান, ওই জমি ঈদগাহ মাঠ হিসেবে ব্যবহার হবে। এ জন্য তাঁদের এই স্থাপনা নির্মাণ করতে বলা হয়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, চরের যে অংশ দখল হচ্ছে, তা বর্ষার সময় নদীর পানি ছাপিয়ে তলিয়ে যায়। তাঁদের অভিযোগ, গোসিঙ্গা বাজারে পাশে মাদ্রাসা মাঠে একটি ঈদগাহ এবং উত্তর পাশে বাজার ঘেঁষে আরেকটি ঈদগাহ রয়েছে। বাজারের পাশে দুটি ঈদগাহ থাকার পরও একটি মহল চর দখলের জন্য এই স্থাপনা নির্মাণ করছে।

গোসিঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা সোহরাব হোসেন বলেন, ‘আমাদের গোসিঙ্গা বাজার ঘেঁষে দুই পাশে দুটি বড় ঈদগাহ মাঠ রয়েছে। নদীর চরে ঈদগাহ মাঠ কেন করা হচ্ছে, কারা করছে, তার কিছুই জানি না।’

গোসিঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘সরকারি জমিতেই তো বেশির ভাগ মাঠ হয়। আমাদের তো কোনো ঈদগাহ মাঠ নেই, তাই করা হচ্ছে। যদি সরকার নিয়ে যায়, আমরা ছেড়ে দেব। ঈদগাহ মাঠ করার জন্য উপজেলা পরিষদ থেকে একটা বরাদ্দ দেওয়ার কথা ছিল, কিন্তু তা আটকে গেছে।’

রিভার ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মো. মনির হোসেন বলেন, নদী বা চর সরকারি সম্পদ। এখানে সবার অবাধ বিচরণ থাকবে। কোনো ধরনের স্থাপনা নির্মাণ করা যাবে না। শুধু বনায়ন করা যাবে, তা-ও সরকারি ব্যবস্থাপনায়।

নদী রক্ষা কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান মনজুর আহমেদ চৌধুরী বলেন, ‘নদীর চরে কোনো অবস্থাতেই স্থাপনা নির্মাণ করা যাবে না। চর রক্ষায় সরকারি ব্যবস্থাপনায় শুধু সবুজায়ন করতে পারবে। নদীর শ্রেণিভুক্ত জমিতে স্থাপনা নির্মাণ কোনোভাবেই আইন সমর্থন করে না। এটা দখলের কৌশল।’

শ্রীপুরের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সজীব আহমেদ বলেন, ‘নদীর চর দখল করে স্থাপনা নির্মাণের সুযোগ নেই। চরে ঈদগাহ মাঠ নির্মাণের অনুমতি নেই। এ বিষয়ে তদন্ত করে আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র থাকছে জুলাই সনদে, স্পষ্ট হলো নোট অব ডিসেন্ট

৬ বছর কানাডায় বাস, সীমান্তে আটক বাংলাদেশিকে নিয়ে বিপাকে মার্কিন কর্তৃপক্ষ

নির্বাচন কীভাবে হবে, তা রাজনৈতিক নেতারা ঠিক করবেন: প্রধান উপদেষ্টা

জুলাই সনদে যা যা আছে

পীরগাছায় বিএনপি নেতার ওপর হামলার জেরে সড়ক অবরোধ, চেয়ারম্যানের গাড়ি ভাঙচুর

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত