Ajker Patrika

বিদ্যুৎহীন আইএইচটি চলছে ভাড়ার শিক্ষকে

  • বিল বকেয়া থাকায় ৬ মাস আগে বিদ্যুৎ-সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়।
  • শিক্ষক মাত্র দুজন, এর মধ্যে একজন মাতৃত্বকালীন ছুটিতে।
আয়শা সিদ্দিকা আকাশী, মাদারীপুর
মাদারীপুরে ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজির ভবন। ছবি: আজকের পত্রিকা
মাদারীপুরে ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজির ভবন। ছবি: আজকের পত্রিকা

মাদারীপুরে ৩২ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজির (আইএইচটি) বহুতল ভবনে দীর্ঘ ছয় মাস ধরে বিদ্যুৎ-সংযোগ নেই। এদিকে প্রতিষ্ঠানটিতে রয়েছে শিক্ষকসংকট। প্রতিষ্ঠানের প্রধান ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ডা. মো. মাহফুজুর রহমানের কর্মস্থল ফরিদপুর হওয়ায় তিনিও নিয়মিত মাদারীপুরে আসেন না। এ অবস্থায় খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষা কার্যক্রম। ভোগান্তিতে রয়েছেন শিক্ষার্থীরা।

সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, মাদারীপুর পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সৈয়দারবালী মৌজায় এ প্রতিষ্ঠানটিতে ৩২ কোটি ৮২ লাখ টাকা ব্যয়ে ৮ তলাবিশিষ্ট একটি ভবন নির্মাণ করে স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর। ২০২০ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি এটি উদ্বোধন করা হয়। এখানে চার বছরমেয়াদি তিনটি কোর্সে রয়েছে। ল্যাবরেটরি, রেডিওগ্রাফি ও ফার্মেসি। বিজ্ঞান গ্রুপ থেকে এসএসসি পাস করার পর চার বছরমেয়াদি এ কোর্সগুলোতে ভর্তি হওয়ার সুযোগ রয়েছে। উদ্বোধনের পর ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষে প্রথম শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়। বর্তমানে তিনটি কোর্সে এখানে ৩৮০ জন শিক্ষার্থী আছেন। বেশির ভাগ শিক্ষার্থী মাদারীপুর জেলার বাইরের থেকে এসেছেন। এখানে আবাসিক ও অনাবাসিকের সুবিধা রয়েছে।

এ কোর্সগুলোতে পাঠদানের জন্য মাত্র দুজন শিক্ষক আছেন। এর মধ্যে একজন মাতৃত্বকালীন ছুটিতে। তাই ১০ জন গেস্ট টিচার দিয়েই চালাতে হয় পাঠদানের কার্যক্রম। অফিস সহকারী একজন ও কম্পিউটার অপারেটর একজন আছেন। এ ছাড়াও ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ দিয়েই চালাতে হচ্ছে আইএইচটির সব কার্যক্রম। এদিকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ডা. মো. মাহফুজুর রহমানের কর্মস্থল ফরিদপুরে হওয়ায় তিনি নিয়মিত মাদারীপুরে আসেন না। ফলে নানা সমস্যার মধ্য দিয়েই এখানকার শিক্ষা কার্যক্রম চালাতে হচ্ছে। এ ছাড়াও ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের পরীক্ষায় ৭০ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ৫৬ জনই ইংরেজিতে ফেল করেছেন বলে জানা গেছে।

এদিকে মার্চ মাস থেকে ৮ তলাবিশিষ্ট ভবনটির বিদ্যুৎ-সংযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। ১২ লাখ ৪১ হাজার ৫৪ টাকা বিদ্যুৎ বিল বকেয়া থাকায় সংযোগবিচ্ছিন্ন করেছে ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ওজোপাডিকো)। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এর আগেও একবার বিল বকেয়া থাকায় বিদ্যুৎ-সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছিল। কবে নাগাদ বিদ্যুৎ-সংযোগ পাওয়া যাবে, তার কোনো নিশ্চয়তাও পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে প্রচণ্ড গরমের মধ্যেই শিক্ষা কার্যক্রম চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ সংশ্লিষ্টদের।

এ বিষয়ে ফার্মেসি কোর্সের শিক্ষার্থী তৃষ্ণা বলেন, ‘ভবনে অনেক দিন হলো বিদ্যুৎ নেই। গরমের মধ্যে ক্লাস করতে আমাদের সমস্যা হয়। তাই এখানে দ্রুত বিদ্যুৎ-সংযোগের দাবি জানাই।’

নাম না প্রকাশে কয়েকজন শিক্ষার্থী বলেন, ‘কয়েক কোটি টাকা খরচ করে ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। অথচ বকেয়া বিলের জন্য বিদ্যুৎ-সংযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। এতে আমাদের পড়াশোনায় বিঘ্ন ঘটছে। তা ছাড়া পর্যাপ্ত শিক্ষক না থাকায় আমাদের ক্লাস করতেও নানা সমস্যায় পড়তে হচ্ছে।’

নাম না প্রকাশ করে আরও কয়েকজন বলেন, ‘আমাদের এখানে অধ্যক্ষ ঠিকমতো আসেন না। তাই জরুরিভাবে অধ্যক্ষসহ শিক্ষকদের স্থানীয় নিয়োগ হলে পড়াশোনার মান বাড়বে।’

প্রতিষ্ঠানের অফিস সহকারী মো. বায়েজিদ বলেন, ‘বিদ্যুৎ বিল বকেয়া থাকায় গত মার্চ মাস থেকে সংযোগ বন্ধ রয়েছে। পর্যাপ্ত শিক্ষক না থাকায় ১০ জন গেস্ট টিচার দিয়েই পাঠদান কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। এখানে জরুরিভাবে শিক্ষক নিয়োগ দরকার।’

ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ডা. মো. মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘আমার মূল কর্মস্থান হলো ফরিদপুরে। একা সব সামলানো কঠিন। তাই মাদারীপুরে নিয়মিত যাওয়া হয় না। তবে সবদিক ম্যানেজ করে নিয়মিত যাওয়ার চেষ্টা করি। তা ছাড়া মাদারীপুরের আইএইচটিতে লোকবল সংকট রয়েছে। ইতিমধ্যে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে ৪৭ জনের লোকবল চেয়ে প্রস্তাবনা চিঠি দেওয়া হয়েছে। তা বাস্তবায়ন হলে সংকট কেটে যাবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত