Ajker Patrika

জীবন থাকতে কবর থেকে ছেলের লাশ তুলতে দেব না: হাফেজ আজিজুলের বাবা-মা

লালমনিরহাট প্রতিনিধি 
আজিজুল ইসলামের বাবা আব্দুর রহিম ও মা রেজিয়া বেগম। ছবি: আজকের পত্রিকা
আজিজুল ইসলামের বাবা আব্দুর রহিম ও মা রেজিয়া বেগম। ছবি: আজকের পত্রিকা

‘আমাদের ছেলে শহীদ আজিজুল ইসলাম ৩০ পারা কোরআনের হাফেজ। তার লাশ তুললে তিনটা কবর খুঁড়তে হবে। একটায় থাকব ছেলে। বাকি দুইটায় আমরা স্বামী-স্ত্রী। জীবন থাকতে কবর থেকে হাফেজ ছেলের লাশ তুলতে দেব না।’ জুলাই আন্দোলনে শহীদ আজিজুল ইসলামের বাবা আব্দুর রহিম ও মা রেজিয়া বেগম এমন কথা জানান।

তাঁদের বাড়ি লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার শ্রীরামপুর ইউনিয়নের ঝালঙ্গী গ্রামে। জুলাই শহীদ ছেলের লাশ না তুলতে কর্তৃপক্ষের নিকট লিখিত আবেদনও করেছেন তাঁরা।

শহীদ আজিজুলের পরিবার ও স্থানীয় বাসিন্দারা জানায়, আজিজুল ইসলাম বরিশালের চরমোনাই মাদ্রাসা থেকে কোরআনের হাফেজ হয়ে ফিরে আসে। পরে স্থানীয় আউলিয়ার হাট আলিম মাদ্রাসায় ভর্তি হয়। গত দাখিল পরীক্ষায় তার অংশ নেওয়ার কথা ছিল। এরই মাঝে দেশে জুলাই আন্দোলন শুরু হলে বাড়িতে ফাঁকি দিয়ে আন্দোলনে যায় আজিজুল ইসলাম।

গত বছরের ৫ আগস্ট বিকেলে বিজয় মিছিল বের হলে সবার সঙ্গে কাউয়ামারী বাজারে বিজয় মিছিলে অংশ নেয় আজিজুল। সেখানে মোশারফ হোসেন প্রধান কলেজের মূল ফটকের ডিজিটাল সাইনবোর্ড খুলে ফেলেছিল আজিজুল ইসলাম। দুর্ভাগ্যবশত সেখানে বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে ঘটনাস্থলে তার মৃত্যু হয়।

পরদিন তাকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। জুলাই আন্দোলনের বিজয় মিছিলে দুর্ঘটনায় মৃত্যু হলেও আজিজুল ইসলাম শহীদ হিসেবে গেজেটভুক্ত হয়েছে। এরপর চলতি বছরের ৩০ জুন ঘটনার প্রায় ১০ মাস পরে পাটগ্রাম থানায় আজিজুল হত্যায় মামলা করেন পার্শ্ববর্তী উপজেলার সিংগিমারী এলাকার আব্দুস সালামের ছেলে মোশারফ হোসেন।

অপরিচিত ব্যক্তির করা হত্যা মামলার খবর শুনে আট দিন পরে তা প্রত্যাহার করতে স্বরাষ্ট্রসচিব, পুলিশ মহাপরিদর্শকসহ ঊর্ধ্বতন বিভিন্ন মহলে আবেদন করেন শহীদ আজিজুলের বাবা আব্দুর রহিম।

সেই মামলায় শহীদ আজিজুলের লাশ কবর থেকে তুলে ময়নাতদন্তের অনুমতি চেয়ে আদালতে আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই শাহাজাহান আলী। এটা শুনে ক্ষিপ্ত হয় শহীদ পরিবারসহ পুরো এলাকাবাসী।

তাদের দাবি, কোরআনের হাফেজের লাশ এক বছর পরে কবর থেকে তুলতে দেওয়া হবে না। শহীদ আজিজুলের লাশ কবর থেকে না তুলতে আদালতসহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত আবেদন করেন শহীদ আজিজুলের বাবা আব্দুর রহিম।

শহীদ আজিজুলের দাদি রুপজান বেওয়া বলেন, ‘আমার নাতির রক্তে দেশ স্বাধীন হয়েছে। স্বাধীন দেশে নিরপরাধ মানুষকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে হয়রানি করলে শহীদের আত্মা কষ্ট পাবে। আমার নাতি বিদ্যুতায়িত হয়ে মারা গেছে। আমাদের কারও প্রতি কোনো অভিযোগ নেই। এখন নাতির লাশ তুললে আমি বাঁচব না।’

আব্দুর রহিম বলেন, ‘আমার ছেলে শহীদ আজিজুল ইসলাম কোরআনের একজন হাফেজ। সে জুলাই আন্দোলনে যোগ দিয়েছিল এবং বিজয় মিছিলে গিয়ে কলেজের সাইনবোর্ড ভাঙতে গিয়ে বিদ্যুতায়িত হয়ে মারা যায়। আমরা তাকে দাফন করেছি। রাষ্ট্র তাকে শহীদের মর্যাদা দিয়ে গেজেট প্রকাশ করেছে। তার মৃত্যু নিছক দুর্ঘটনামাত্র।

‘কারও প্রতি কোনো ক্ষোভ বা অভিযোগ ছিল না এবং নেই। মৃত্যুর ১০ মাস পরে বর্তমান ওসি মিজানুর রহমান আমাদের মামলা করার চাপ দিয়েছিল। আমরা মামলা করিনি। পরে মোশারফ নামে অপরিচিত একজন বাদী হয়ে মামলা করেছে।

‘শহীদের বাবা ও একজন সাক্ষী হিসেবে সে মামলা প্রত্যাহার করতে আবেদন করেছি। মিথ্যা মামলায় মানুষকে হয়রানি করলে আমার হাফেজ ছেলের কবরে আজাব হবে, আমরা তা চাই না।’

আজিজুলের মা রেজিয়া বেগম বলেন, ‘আমার কলিজা আজিজুল ৩০ পারা কোরআন মুখস্থ করেছে। তার লাশ কবর থেকে তুলতে দেব না। কেউ জোর করে তুললে তিনটা কবর খুঁড়তে হবে। একটা ছেলের, অপর দুইটাতে আমরা স্বামী-স্ত্রী থাকব। এক বছর পর কোরআনের হাফেজের লাশ দেখলে আমরা মরে যাব। আমরা মামলা চাই না। আমার ছেলের লাশকে পুঁজি করে কেউ কেউ মামলা-বাণিজ্য করবে। আমরা বেঁচে থাকতে তা হতে দেব না। ওসি বারবার ডেকেছিল মামলা করতে। আমরা বলেছি, ছেলে বিদ্যুতায়িত হয়ে মারা গেছে। আমরা মামলা করব না। অপরিচিতদের দিয়ে মামলা করেছে পুলিশ।’

এ মামলার বাদী মোশারফ হোসেন বলেন, ‘শহীদ আজিজুল আমার সহযোদ্ধা ছিল। তার পরিবার মামলা করতে সাহস করেনি এবং তাদের নির্দেশে আমি বাদী হয়ে মামলা করেছি। তবে মামলা-বাণিজ্যের প্রমাণ দিতে পারলে সব শাস্তি মেনে নেব। বাণিজ্যের অভিযোগটি ভিত্তিহীন।’

গত বছরের ৫ আগস্ট বিজয় মিছিলে গিয়ে পাটগ্রামের দুজনের মৃত্যু হয়েছে। একজন শহীদ আজিজুল ইসলাম (১৯), অপরজন শহীদ নুরুজ্জামান (৪৫)। তাদের বাড়িও পাশাপাশি এলাকায়। নুরুজ্জামান আউলিয়ারহাট এলাকায় বিজয় মিছিলে গিয়ে হোঁচট খেয়ে সড়কে পড়ে গিয়ে গুরুতর আহত হন। পরে পাটগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে ৬ আগস্ট রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে ৮ আগস্ট চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। নুরুজ্জামানের মৃত্যুর ঘটনায়ও ১০ মাস পরে চলতি বছরের ৩০ জুন পাটগ্রাম থানায় ৪১ জনের নামসহ অজ্ঞাতনামা ৫০-৬০ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন নিহত ব্যক্তির পরিবারের অপরিচিত আলী হোসেন। যিনি মামলার ৮ দিনপর তা প্রত্যাহারের আবেদন করেন।

জুলাই আন্দোলনের ঘটনায় পাটগ্রাম থানায় চলতি বছরের ৩০ জুন করা দুই মামলায় (২১ ও ২২ নম্বর) বিএনপিরও পাঁচ থেকে সাতজন নেতাকে আসামি করা হয়েছে। মামলা দুটি প্রত্যাহার করতে বাদী ও দুই শহীদ পরিবার একই দিনে পৃথক পৃথক প্রত্যাহারেরও আবেদন করেছে। যা নিয়ে তৈরি হয়েছে ধূম্রজাল। মামলায় গ্রেপ্তার এড়াতে বিএনপি নেতারাও পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। মামলা দুটিতে ব্যাপক বাণিজ্য হয়েছে বলেও দাবি বাদী ও নিহত ব্যক্তির পরিবারের।

নুরুজ্জামান হত্যা মামলায় ২৭ থেকে ৩১ নম্বর আসামির তালিকায় শ্রীরামপুর ইউনিয়ন ছাত্রদল, কৃষক দল, স্বেচ্ছাসেবক দলের পদধারী নেতাদের নাম দেওয়া হয়েছে। রয়েছেন ইউনিয়ন ছাত্রদলের সম্পাদক, কৃষক দলের সহসভাপতি, স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্যসচিব ও যুগ্ম আহ্বায়ক।

নুরুজ্জামান হত্যা মামলার ২৭ নম্বর আসামি শ্রীরামপুর ইউনিয়ন কৃষক দলের সহসভাপতি হিটলার বলেন, ‘জুলাই আন্দোলন করেছি, এখন সেই আন্দোলনের হত্যা মামলার আসামিও হলাম আমরা পাঁচজন। আমার ছেলে, শ্যালক, চাচাত ভাই, বন্ধুর ছেলে সবাই বিএনপির সহযোগী সংগঠনের নেতা। দলীয় কোন্দল থেকে আমাদের আসামি করা হয়েছে। যা দলীয় উচ্চপর্যায়ে বলা হয়েছে।’

নুরুজ্জামানের স্ত্রী সুফিয়া বলেন, ‘আমার স্বামী মিছিলে গিয়ে আহত হয়ে পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। আমরা মামলা করিনি। মামলার বাদীকে চিনি না। তাকে মামলা করতে বলিওনি। আমার স্বামীর লাশ না তুলতে আদালতে আমি আবেদন করেছি। শহীদ স্বামীর লাশ তুললে আমি বাঁচব না।’

শহীদ নুরুজ্জামান হত্যা মামলার বাদী আলী হোসেন বলেন, ‘জুলাই আন্দোলনেরর সময় আমি ঢাকায় ছিলাম। পরে চলতি বছরের জুন মাসে ভাইদের সঙ্গে জমি নিয়ে বিরোধের কারণে গ্রামে আসি। ৩০ জুন ভাইদের বিরুদ্ধে জমি নিয়ে মামলা দিতে পাটগ্রাম থানায় গেলে ফক্কর আলী নামে একজন ওসি স্যার তাঁর রুমে নিয়ে যান।

‘তখন ওসি স্যার মামলা নেবেন বলে জানান। এরপর ফক্কর আলী ও একজন পুলিশ একটা কাগজ লিখে এনে আমাকে স্বাক্ষর করতে বললে আমি তা পড়ে দেখতে চাই। কিন্তু ওসি স্যার তা পড়তে দেননি। ওসি স্যার বলেন, আপনার মামলা স্বাক্ষর করেন। কী লেখা আছে, তা স্বাক্ষরের পরে দেখতে পাবেন। আমি স্বাক্ষর করার পর স্যার (ওসি) কাগজটা রেখে দেন।

‘এর তিন দিন পর বিএনপির তিনজন লোক বাড়ি এসে বলেন, আমি কেন তাঁদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেছি। তখন আমি বুঝতে পারি, ওসি স্যার ভাইদের বিরুদ্ধে মামলা না নিয়ে নুরুজ্জামান হত্যা মামলার বাদী আমাকে বানিয়েছেন। এখন জীবনের ভয়ে আমি পালিয়ে বেড়াচ্ছি। মামলার আট দিন পর তা প্রত্যাহার করতে বিভিন্ন মহলে আবেদনও করেছি। আমি শহীদ নুরুজ্জামানের কেউ না, তাকে চিনিও না। ঘটনাও জানি না, আসামিদেরও চিনি না।’ মিথ্যে মামলায় তাকে কৌশলে বাদী করা হয়েছে বলেও দাবি করেন আলী হোসেন।

জুলাই আন্দোলনের পাটগ্রাম উপজেলা সমন্বয়ক ও এনসিপির যুগ্ম সমন্বয়কারী কবির আহমেদ রাব্বী বলেন, ৫ আগস্ট পাটগ্রামে আন্দোলন হয়নি, বিজয় মিছিল হয়েছিল। সেখানে পৃথক দুর্ঘটনায় দুজন শহীদ হয়েছে। এ ঘটনায় নিহত ব্যক্তিদের পরিবার কোনো মামলা করেনি। বাণিজ্য করতে অপরিচিত ব্যক্তিদের দিয়ে মিথ্যা মামলা করা হয়েছে। এর তীব্র প্রতিবাদসহ নিন্দা জানিয়ে মামলার সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করেন তিনি।

দুই হত্যা মামলায় চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে দাবি করে পাটগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিজানুর রহমান বলেন, কাউকে জোর করে মামলা নেওয়া হয়নি। বাদীরা সশরীরে উপস্থিত হয়ে লিখিত দেওয়ায় মামলা নেওয়া হয়েছে। তাঁরা হয়তো কোনো ভয়ে মামলা প্রত্যাহারের আবেদন করতে পারেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

দৌড়ে ট্রেনে উঠতে গিয়ে পা পিছলে বেঁচে গেলেও শেষ রক্ষা হয়নি

গাজীপুর (শ্রীপুর) প্রতিনিধি
পা পিছলে পড়ে যাওয়ার মুহূর্তে জালাল উদ্দীন। ছবি: ফেসবুক থেকে নেওয়া
পা পিছলে পড়ে যাওয়ার মুহূর্তে জালাল উদ্দীন। ছবি: ফেসবুক থেকে নেওয়া

গাজীপুরের শ্রীপুরে দৌড়ে ট্রেনে উঠতে গিয়ে পা পিছলে চলন্ত ট্রেনের নিচে পড়ে যান কৃষক জালাল উদ্দীন। পুরো ট্রেন তাঁর ওপর দিয়ে গেলেও অলৌকিকভাবে বেঁচে যান তিনি। গতকাল রোববার রাত পৌনে ৯টার দিকে শ্রীপুর রেলস্টেশনে এ ঘটনা ঘটে। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি তাঁর। ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে রাত পৌনে ১২টার দিকে তাঁর মৃত্যু হয়েছে। নিহত জালাল উদ্দীন (৪৫) ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলার চরআগলী ইউনিয়নের নিধিরচর গ্রামের মো. তৈয়ব উদ্দিনের ছেলে।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গুরুতর আহত অবস্থায় মৃত্যুর আগে জালাল উদ্দীনের সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। তিনি জানান, শ্রীপুর রেলস্টেশনে দাঁড়ানো মোহনগঞ্জগামী ব্রহ্মপুত্র এক্সপ্রেস ট্রেন। এ সময় তিনি ট্রেনে উঠতে দৌড় দেন। একই সময়ে স্টেশনের এক নম্বর লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা দেওয়ানগঞ্জ কমিউটার ট্রেনটিও ছেড়ে দেয়। এ সময় পা পিছলে ট্রেনের ইঞ্জিনের নিচে চলে যান তিনি। এর পরের ঘটনা বলতে পারেননি গুরুতর আহত জালাল উদ্দীন।

স্থানীয় দোকানি মনির হোসেন জানান, স্টেশনে দুটি ভিন্ন লাইনে দুটি ট্রেন দাঁড়ানো ছিল এবং একই সঙ্গে ট্রেন দুটি ছাড়া শুরু করে। হঠাৎ জালাল উদ্দীন এক নম্বর লাইনে দৌড়ালে পা পিছলে চোখের পলকে ট্রেনের নিচে পড়ে যান। জামালপুর কমিউটার ট্রেনটি তাঁর ওপর দিয়ে চলে যায়। ট্রেনটি চলে যাওয়ার পরপরই স্টেশনের লোকজনের সহযোগিতায় তাঁকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। হাসপাতালে তিনি স্বাভাবিকভাবে কথা বলছিলেন এবং নিজের নাম-ঠিকানা বলতে পারছিলেন। সেখানে চিকিৎসা নিয়ে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যাওয়ার পথে তাঁর মৃত্যু হয়।

মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে চরআগলী ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য শহিদুল ইসলাম দুলু বলেন, রাতেই তিনি মারা গেছে। আজ সোমবার বেলা ১১টায় জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে।

শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, ‘গতকাল রোববার রাত ৯টার পর গুরুতর আহত অবস্থায় কয়েকজন মানুষ জালাল উদ্দীন নামে একজনকে হাসপাতালে নিয়ে আসে। তার অবস্থা সংকটাপন্ন ছিল। প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।’

শ্রীপুর রেলস্টেশন মাস্টার মো. সাইদুর রহমান বলেন, ‘এ রকম একটি ঘটনা ঘটেছে। তাৎক্ষণিকভাবে স্থানীয়রা হাসপাতালে নিয়ে যায়।’

শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি মহম্মদ আব্দুল বারিক বলেন, ‘এমন ঘটনা ঘটার পরপরই ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হতে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। মৃত্যুর বিষয়টি এখনো নিশ্চিত হতে পারিনি। তা ছাড়া বিষয়টি রেলওয়ে পুলিশ দেখবেন।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

নোয়াখালীতে এনসিপি নেতা পাটওয়ারীর কুশপুতুল পোড়াল জিয়া সাইবার ফোর্স

নোয়াখালী প্রতিনিধি
আপডেট : ০৩ নভেম্বর ২০২৫, ১২: ৩২
এনসিপি নেতা নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারীর কুশপুত্তলিকা পোড়ানো হয়। ছবি: আজকের পত্রিকা
এনসিপি নেতা নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারীর কুশপুত্তলিকা পোড়ানো হয়। ছবি: আজকের পত্রিকা

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে জাতীয়তাবাদী দল—বিএনপির পক্ষে সোশ্যাল মিডিয়ায় অনলাইন অ্যাকটিভিস্টদের করণীয় এবং ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা নিয়ে নোয়াখালী জেলা বিএনপির নেতাদের সঙ্গে জিয়া সাইবার ফোর্স (জেডসিএফ) নোয়াখালী জেলা শাখার মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

গতকাল রোববার রাতে নোয়াখালী জেলা আইনজীবী সমিতি মিলনায়তনে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারীর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ মিছিল এবং তাঁর ছবিসংবলিত কুশপুত্তলিকা দাহ করে সভায় অংশগ্রহণকারীরা।

নোয়াখালী জিয়া সাইবার ফোর্সের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অ্যাডভোকেট জসিম উদ্দিন বাদলের সভাপতিত্বে সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন নোয়াখালী জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মাহবুব আলমগীর আলো।

বিশেষ অতিথি ছিলেন জেলা বিএনপির সদস্যসচিব হারুনুর অর রশিদ আজাদ, নোয়াখালী জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রবিউল ইসলাম পলাশসহ আরও অনেকে।

এনসিপি নেতা নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারীর কুশপুত্তলিকা পোড়ানো হয়। ছবি: আজকের পত্রিকা
এনসিপি নেতা নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারীর কুশপুত্তলিকা পোড়ানো হয়। ছবি: আজকের পত্রিকা

সভায় বক্তারা বলেন, অদৃশ্য শক্তি ক্রমশ দৃশ্যমান হয়ে বিএনপির বিরুদ্ধে নানা ধরনের অপপ্রচার করে ভোটারদের বিভ্রান্ত করছে। এ অপপ্রচার রুখে দিতে হলে বিএনপির জিয়া সাইবার ফোর্স ও অনলাইন অ্যাকটিভিস্টদের সঠিক তথ্য ছবি ও প্রমাণ দিয়ে জনগণকে বোঝাতে হবে এবং দল থেকে যাকে ধানের শীষ দিয়ে মনোনয়ন দেওয়া হয় তাঁর পক্ষে সবাইকে কাজ করতে হবে।

সভা শেষে বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠন সম্পর্কে বিভিন্ন সময়ে আপত্তিকর বক্তব্য দেওয়ার কারণে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারীর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ মিছিল এবং তাঁর ছবিসংবলিত কুশপুত্তলিকা দাহ করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

মুন্সিগঞ্জে তরুণকে গুলি করে হত্যা, বিএনপির দুই গ্রুপে উত্তেজনা

মুন্সিগঞ্জ প্রতিনিধি
আপডেট : ০৩ নভেম্বর ২০২৫, ১০: ৩৫
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

মুন্সিগঞ্জের মোল্লাকান্দি ইউনিয়নের বেহেরকান্দি গ্রামে প্রতিপক্ষের গুলিতে তুহিন দেওয়ান (২২) নামের এক যুবক নিহত হয়েছেন। রোববার রাত ১০টার দিকে এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। নিহত তুহিন দেওয়ান মোল্লাকান্দি ইউনিয়নের দক্ষিণ বেহেরকান্দি এলাকার ইউনিয়ন কৃষক লীগের সভাপতি সেলিম দেওয়ানের ছেলে।মোল্লাকান্দি ইউনিয়ন বিএনপির বিবদমান দুই গ্রুপের পূর্ববিরোধের জেরে এ হত্যাকাণ্ড ঘটে বলে গ্রামবাসী সূত্রে জানা গেছে।

এ ঘটনার পর থেকে মোল্লাকান্দি ইউনিয়নের বেহেরকান্দি ও মুন্সিকান্দি গ্রামের বিএনপির দুই গ্রুপের মধ্যে উত্তেজনা চলছে। এতে স্থানীয় গ্রামবাসীর মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। নিহত তুহিন মোল্লাকান্দি ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি ওয়াহিদ মোল্লা ও বিএনপি নেতা আতিক মল্লিকের অনুসারী।

নিহতের চাচাতো ভাই আকাশ দেওয়ান জানান, রোববার রাতে তুহিন হাঁটার জন্য বাসা থেকে বের হয়। এ সময় মুন্সিকান্দি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে মোল্লাকান্দি ইউনিয়ন বিএনপির নেতা ওজির আলী ও আওলাদ গ্রুপের অনুসারী লিটন ব্যাপারীর নেতৃত্বে পেছন থেকে তুহিনকে লক্ষ্য করে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায় ও গুলি করে। এ সময় তুহিন গুলিবিদ্ধ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। স্থানীয়রা গুরুতর আহত অবস্থায় তাঁকে উদ্ধার করে মুন্সিগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে দায়িত্বরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। স্থানীয় রাজনৈতিক আধিপত্য নিয়ে তাদের মধ্যে পূর্বের বিরোধ ছিল বলেও জানান তিনি।

এ বিষয়ে মুন্সিগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগের দায়িত্বরত চিকিৎসক প্রান্ত সর্দার জানান, হাসপাতালে নিয়ে আসার আগেই তাঁর মৃত্যু হয়েছে। তাঁর পিঠে ও ঘাড়ে একাধিক গুলির চিহ্ন রয়েছে।

এ বিষয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ফিরোজ কবির জানান, কী কারণে এ ঘটনা ঘটেছে, তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তদন্ত করলে বিষয়টি পরিষ্কার হবে। উত্তেজনা নিয়ন্ত্রণে এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ পাঠানো হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

রাজশাহীতে মৌসুমের প্রথম কুয়াশা: তাপমাত্রা কমে ২০-এর নিচে

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী
শিশিরভেজা ঘাসে খেলায় মত্ত শিশুরা। ছবি: আজকের পত্রিকা
শিশিরভেজা ঘাসে খেলায় মত্ত শিশুরা। ছবি: আজকের পত্রিকা

রাজশাহীতে নেমে এসেছে এ বছরের প্রথম কুয়াশা। সোমবার (৩ নভেম্বর) ভোর থেকেই রাজশাহী শহর ও আশপাশের উপজেলার গ্রামগুলোর চারপাশ মোড়ানো ছিল ঘন কুয়াশার চাদরে। এই কুয়াশাময় সকাল যেন জানিয়ে দিয়েছে, আসছে শীত, আসছে স্নিগ্ধতার মৌসুম।

শীতের এমন আগমনী ছোঁয়ায় বদলে গেছে প্রকৃতির রূপ। কুয়াশাঢাকা সকাল জানিয়ে দিচ্ছে, শীত আর বেশি দূরে নয়। এদিন ভোরের আলো ফুটলেও মহাসড়কে যানবাহনগুলোকে চলতে দেখা যায় হেডলাইট জ্বালিয়ে। কুয়াশা ভেদ করে গন্তব্যের পথে ছুটে যায় মানুষ।

এদিকে গ্রামের মাঠে শিশিরভেজা ঘাসে খেলায় মত্ত শিশুরা যেন প্রকৃতির সঙ্গে একাত্ম হয়ে ওঠে। মাকড়সার জালে ঝুলে থাকা শিশিরবিন্দু আর ধূসর আকাশে সূর্যের মিটিমিটি আলো মিলেমিশে সৃষ্টি করে এক মনোমুগ্ধকর দৃশ্য।

মাকড়সার জালে ঝুলে থাকা শিশিরবিন্দু আর ধূসর আকাশে সূর্যের মিটিমিটি আলো। ছবি: আজকের পত্রিকা
মাকড়সার জালে ঝুলে থাকা শিশিরবিন্দু আর ধূসর আকাশে সূর্যের মিটিমিটি আলো। ছবি: আজকের পত্রিকা

শহরের রেলগেট এলাকায় কাজের সন্ধানে আসা শ্রমিক আবদুল জব্বার বলেন, ‘আজকের সকালেই এবার প্রথমবার শীত টের পেলাম। এখন থেকে হয়তো শীত বাড়বে।’

রাজশাহী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের পর্যবেক্ষক লতিফা হেলেন জানান, সোমবার ভোরে রাজশাহীর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১৯ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আগের দিন রোববার ভোরে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ২২ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা উঠেছিল ২৭ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। এখন থেকে তাপমাত্রা কমবে বলেও জানান তিনি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত