Ajker Patrika

কিশোরগঞ্জের সারদারঞ্জন রায়: উপমহাদেশে যার হাতে ক্রিকেটের পত্তন

শাহজাহান সাজু
আপডেট : ২৪ এপ্রিল ২০২১, ২১: ৫৭
কিশোরগঞ্জের সারদারঞ্জন রায়: উপমহাদেশে যার হাতে ক্রিকেটের পত্তন

কিশোরগঞ্জ: কিশোরগঞ্জের সারদারঞ্জন রায়ের হাত ধরে উপমহাদেশে সর্বপ্রথম ক্রিকেট চালু হয়। তিনি ১৮৫৮ সালের ২৬ মে তৎকালীন খুকুরপাড়া গ্রামের বিখ্যাত রায় পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। এই গ্রামেই গঠিত হয়েছিল উপমহাদেশের সর্বপ্রথম ক্রিকেট টিম।

ক্রিকেট দিয়ে বিখ্যাত হলেও সারদারঞ্জন রায় কীভাবে ক্রিকেট শিখেছেন সেই ইতিহাস স্পষ্ট নয়। ঢাকা কলেজে ভর্তির পর থেকে তিনি ক্রিকেটের পরিপূর্ণ চর্চা শুরু করেন। তাঁর ভাইদের মধ্যে কুলদারঞ্জন, প্রমদারঞ্জন রায়ও ক্রিকেট খেলতেন। প্রমদারঞ্জন রায় তখন 'সায়েন্টিফিক বোলার’ হিসেবে বিখ্যাত ছিলেন।

সারদারঞ্জন রায়ের নেতৃত্বে ১৮৮০ সালের দিকে ঢাকা কলেজ ক্লাব গড়ে ওঠে। এরপর ঢাকায় ক্রিকেটের প্রচলন বাড়তে থাকে। অবিভক্ত বাংলায় প্রথম ক্রিকেট ক্লাব হিসেবে সেটি খ্যাতি অর্জন করে। ১৮৮৪ সালে কলকাতার ইডেন গার্ডেনে ক্যালকাটা প্রেসিডেন্সি ক্লাবের সঙ্গে এক খেলায় ঢাকা কলেজ জয়লাভ করে। এরপর একের পর এক এই ক্লাবটি সাফল্য লাভ করতে থাকে।  

অপরদিকে তখন ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে এ দেশের মানুষদের সংগ্রাম চলছিল। তখন তিনি জাতীয়তাবাদি চেতনা উজ্জীবিত করতে আরও শক্তিশালী ক্রিকেট দল তৈরি করেন। তাঁর প্রতিষ্ঠিত এ স্বদেশী দল ব্রিটিশদের কয়েকবার পরাজিত করে নির্যাতিত মানুষদের সংগ্রামী করে তুলতে সাহায্য করে। শুধু যে বিদেশি দখলদারদের বিরুদ্ধে লড়েছেন তিনি এমন নয়, যেখানে অন্যায় দেখেছেন, সেখানেই সোচ্চার হয়েছেন।

ক্রিকেটকেই তিনি বেছে নিয়েছিলেন জীবনের সবকিছুতে। ক্রিকেট খেলার সামগ্রী উৎপাদন করে জীবন নির্বাহের মতো একটা কঠিন পথ বেছে নিয়েছিলেন তিনি। পরবর্তী সময়ে এ প্রতিষ্ঠান ক্রিকেট খেলার সরঞ্জামাদি সহজপ্রাপ্যতায় যেমন উল্লেখ্যযোগ্য ভূমিকা রেখেছিল, তেমনি খ্যাতিও পেয়েছিল অনেক। ১৮৯৫ সালে ‘এস রায় অ্যান্ড কোম্পানি’ বাংলার প্রথম ক্রিকেট সামগ্রী বিক্রয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্বীকৃত। সারদারঞ্জন পেশায় ছিলেন শিক্ষাবিদ, অধ্যাপক, অধ্যক্ষ। ক্রিকেট ছিল তাঁর নেশা। 

কলকাতায় যখন পূর্ববাংলার খেলোয়াড়দের প্রতি অবহেলা বৃদ্ধি পায় তখন কলকাতায় প্রতিষ্ঠিত পূর্ব বাংলার মানুষজন মিলে তাঁদের প্রতি অবহেলার প্রতিবাদে ১৯২০ সালে ইস্ট বেঙ্গল ক্লাব প্রতিষ্ঠা করেন। এই ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের প্রথম প্রতিষ্ঠাতা প্রেসিডেন্টও ছিলেন তিনি।

ব্রিটিশরা ক্রিকেটকে সীমাবদ্ধ রেখেছিল অভিজাতদের মধ্যে। সেখান থেকে বের করে ক্রিকেটকে সাধারণ মানুষের খেলা করে তোলেন সারদারঞ্জন রায় চৌধুরী। ক্রিকেট কোচ হিসেবেও সারদারঞ্জন ছিলেন অনন্য। তৎকালীন সময়ে সারদারঞ্জনকে ইংল্যান্ডের ড. ডব্লু ডি গ্রেসের সঙ্গে তুলনা করা হতো। এই তুলনা আরেক কারণে যুক্তিযুক্ত ছিল। ড. গ্রেসকে যেমন বলা হতো ইংল্যান্ডের ‘জনক’ তেমনি অধ্যক্ষ সারদারঞ্জনের এক পরিচয় ছিল বাংলার ক্রিকেটের ’জনক’ রূপে।

সারদারঞ্জন রায়ের নানা পদ্ধতি সেই সময় তরুণদের ক্রিকেটে অনুরাগ ও উৎসাহকে বাড়িয়ে তুলেছিল। এই মহান ক্রিকেটার নিজের সীমাবদ্ধতার মাঝেও ক্রিকেট খেলার বিকাশে অক্লান্ত পরিশ্রম করে গেছেন।

ইএসপিএন, টেন স্পোর্টসের ক্রিকেট গবেষক ড. বড়িয়া মজুমদারের মতে, ভারতে প্রথম ক্রিকেট খেলা শুরু করে পার্সিরা, মুম্বাইয়ে। কিন্তু ক্রিকেটকে তাঁরা সীমাবদ্ধ করে রেখেছিল অভিজাত মানুষদের মধ্যে। সারদারঞ্জন রায়ই প্রথম মানুষ, যিনি ক্রিকেটকে গণমানুষের কাছে নিয়ে এসেছিলেন। ক্রিকেটের জন্য যা যা করা দরকার সবকিছুই করেছেন দুই হাত খুলে। তাই তাঁকে উপমহাদেশের ক্রিকেটের অগ্রদূত তো বটেই উপমহাদেশের ক্রিকেটের জনক বললেও ভুল কিছু হবে না।

উপমহাদেশে ক্রিকেটের জনক সারদারঞ্জন রায় চৌধুরী ১ নভেম্বর ১৯২৫ সালে মৃত্যুবরণ করেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ডাকসুতে শিবিরের জয়ে উদ্বেগ শশী থারুরের, জবাব দিলেন মেঘমল্লার

‘বেয়াদবি ছুটায় দেব’: সরি বলতে অসুবিধা নেই, বললেন সেই জামায়াত নেতা

স্বাস্থ্য খাতে দুর্নীতির হোতা মোতাজ্জেরুল ইসলাম মিঠু গ্রেপ্তার

নতুন ট্রেন্ড ন্যানো ব্যানানা, নিজের থ্রিডি ফিগারিন বানাবেন যেভাবে

ইসরায়েলের হামলার কী জবাব হবে—আরব-ইসলামিক সম্মেলন ডাকল কাতার

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত