Ajker Patrika

ভোটের মাঠে: সাতক্ষীরায় ভিন্ন চিত্র বিএনপি-জামায়াতে

  • বিএনপি সম্ভাব্য প্রার্থীদের নাম ঘোষণার পর দুটি আসনে অসন্তোষ
  • বিভেদ ভুলে সবাইকে এক হওয়ার আহ্বান বিএনপির প্রার্থীদের
  • চারটি আসন পুনরুদ্ধারে মরিয়া জামায়াত
  • বড় দুই দলের লড়াই বেশ জমজমাট হবে বলে মনে করছেন ভোটাররা
আবুল কাসেম, সাতক্ষীরা 
আপডেট : ১৬ নভেম্বর ২০২৫, ১৫: ৫১
(ওপরে বা থেকে) হাবিবুল ইসলাম হাবিব, কাজী আলাউদ্দীন, শহিদুল আলম, আব্দুর রউফ (নিচে বা থেকে) আব্দুল আলিম, তাজকিন আহমেদ চিশতি, অধ্যক্ষ ইজ্জতুল্লাহ ও মুহাদ্দিস রবিউল বাশার।
(ওপরে বা থেকে) হাবিবুল ইসলাম হাবিব, কাজী আলাউদ্দীন, শহিদুল আলম, আব্দুর রউফ (নিচে বা থেকে) আব্দুল আলিম, তাজকিন আহমেদ চিশতি, অধ্যক্ষ ইজ্জতুল্লাহ ও মুহাদ্দিস রবিউল বাশার।

ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনের দিনক্ষণ ঠিক না হলেও সাতক্ষীরার চারটি আসনে জমজমাট প্রচার চলছে। বড় দুই দল ইতিমধ্যে প্রার্থী ঘোষণা করেছে। প্রার্থিতা নিয়ে জামায়াতের কোন্দল না থাকায় তুলনামূলক ভালো অবস্থানে রয়েছে দলটি। তবে ভিন্ন চিত্র বিএনপিতে; গত ৩ নভেম্বর সম্ভাব্য প্রার্থীদের নাম ঘোষণার পর দুটি আসনে অসন্তোষ দেখা দেয়। পরদিন থেকে প্রার্থী বদলের দাবিতে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালিত হচ্ছে।

নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা যায়, ১৯৯১ সালের পঞ্চম সংসদ নির্বাচনে সাতক্ষীরায় আসন ছিল পাঁচটি। এর মধ্যে চারটি আসনেই জামায়াত জয়লাভ করে। অপরটি পায় আওয়ামী লীগ। ৭ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ চিত্র পাল্টে যায়। শুধু সাতক্ষীরা সদর আসনে জামায়াত ছাড়া আর বাকি আসনে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টি নির্বাচিত হয়। ২০০১ সালে জামায়াত আবারও তিনটি আসনে জয়লাভ করে। জেলার মধ্যে সেবারই প্রথম বিএনপির টিকিটে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন হাবিবুল ইসলাম হাবিব। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে একটি আসন কমিয়ে সাতক্ষীরায় সংসদীয় আসন হয় চারটি। এ নির্বাচনে জামায়াত ও বিএনপি একটি আসনও পায়নি। আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টি (এরশাদ) দুটি করে আসনে জয়লাভ করে।

সাতক্ষীরা সীমান্তঘেঁষা জেলা হওয়ার সুবাদে এখানকার মুসলিম ভোটারদের উল্লেখযোগ্য একটি অংশ ভারত থেকে আসা। সে কারণে সাতক্ষীরায় জামায়াতের একটি ভালো প্রভাব রয়েছে। বরাবরের মতো জামায়াত এবারও চারটি আসনে জিততে চায়। অভ্যন্তরীণ কোন্দল না থাকায় মাস দুয়েক আগে থেকে চারটি আসনে জামায়াতের পক্ষ থেকে প্রার্থী ঘোষণা দেওয়া হয়। সাতক্ষীরা-১ (তালা-কলারোয়া) আসন থেকে জামায়াতের মনোনয়ন পেয়েছেন অধ্যক্ষ ইজ্জতুল্লাহ, সাতক্ষীরা-২ (সাতক্ষীরা সদর-দেবহাটা) আসনে মুহাদ্দিস আব্দুল খালেক, সাতক্ষীরা-৩ (কালীগঞ্জ ও আশাশুনি) থেকে মুহাদ্দিস রবিউল বাশার ও সাতক্ষীরা-৪ (শ্যামনগর) আসনে গাজী নজরুল ইসলাম। অপর দিকে সাতক্ষীরা-১ আসনে বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছেন কেন্দ্রীয় নেতা হাবিবুল ইসলাম হাবিব, সাতক্ষীরা-২ আসনে আব্দুর রউফ, সাতক্ষীরা-৩ আসনে কাজী আলাউদ্দীন ও সাতক্ষীরা-৪ আসনে ড. মনিরুজ্জামান মনির।

সাতক্ষীরা-১ আসনে ২০০১ সালে চারদলীয় জোটের পক্ষ থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন ছাত্রদল ও ডাকসুর সাবেক নেতা হাবিবুল ইসলাম হাবিব। এরপর থেকে বিএনপির জনসমর্থন বাড়তে থাকে। এ আসনে জামায়াতেরও শক্ত অবস্থান রয়েছে। এবার হাবিব ও জামায়াতের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ইজ্জতুল্লাহর মধ্যে লড়াইটা বেশ জমজমাট হবে বলে মনে করছেন ভোটাররা।

বিএনপির প্রকাশনা সম্পাদক হাবিব বলেন, ‘তালা-কলারোয়ার এমন কোনো জায়গা নেই, যেখানে আমার প্রচেষ্টায় উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি। আমি নির্বাচিত হলে পাটকেলঘাটাকে উপজেলায় উন্নীত করার পদক্ষেপ নেব। জলাবদ্ধতা দূরীকরণে ব্যবস্থা নেব।’

সাতক্ষীরা-২ আসনে বিএনপি থেকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে বিএনপির বহিষ্কৃত নেতা আব্দুর রউফকে। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগের অন্ত নেই। রউফকে মনোনয়ন দেওয়ায় ফুঁসে উঠেছে মনোনয়নবঞ্চিতসহ সাধারণ জনগণ। মনোনয়ন ঘোষণার দিন রাতে সাতক্ষীরা-খুলনা মহাসড়কের বিনেরপোতায় টায়ার জ্বালিয়ে ব্লকেড তৈরি করে বিক্ষোভ করেন মনোনয়নবঞ্চিত জেলা বিএনপির সাবেক সদস্যসচিব আব্দুল আলিমের সমর্থকেরা। তাঁকে মনোনয়ন দেওয়ার দাবিতে সদর উপজেলার ১২ ইউনিয়নের ৩৩ জন দায়িত্বশীল নেতা বিএনপি মহাসচিবের কাছে আবেদন করেছেন।

এ আসনে বিএনপির আরেক মনোনয়নপ্রত্যাশী তাজকিন আহমেদ চিশতি। বর্তমানে জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক চিশতি সাতক্ষীরা পৌরসভার দুবারের নির্বাচিত মেয়র। তারপক্ষে পৌরসভার ওয়ার্ড পর্যায়ের বিএনপি নেতারাও মহাসচিব বরাবর আবেদন করেছেন।

বিএনপির দ্বন্দ্বের কারণে এ আসনে জামায়াত মনোনীত প্রার্থী মুহাদ্দিস আব্দুল খালেককে এগিয়ে রাখছেন ভোটাররা।

সাতক্ষীরা-৩ আসনে বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছেন কেন্দ্রীয় সদস্য ও সাবেক সংসদ সদস্য কাজী আলাউদ্দীন। তবে এ আসনে কাজী আলাউদ্দীনের মনোনয়ন পাওয়ার পর থেকে গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত টানা ১১ দিন বিক্ষোভ সমাবেশ করে কালীগঞ্জ ও আশাশুনি উত্তাল রেখেছেন কেন্দ্রীয় বিএনপির সদস্য, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ছাত্র সংসদের সাবেক জিএস ও মনোনয়নপ্রত্যাশী ডা. শহিদুল আলমের সমর্থকেরা।

শহিদুলের সমর্থক জেলা বিএনপির সদস্য শেখ নূরুজ্জামান বলেন, ‘গরিবের ডাক্তার বলে খ্যাত ডা. শহিদুল আলমকে মনোনয়ন না দেওয়া পর্যন্ত আমরা ঘরে ফিরে যাব না। যে মানুষটি তাঁর সবকিছু ব্যয় করেছেন জনকল্যাণে, তাঁকে মনোনয়ন দিতে হবে।’

এ আসনে কাজী আলাউদ্দীনও গণসংযোগ শুরু করেছেন। বৃহস্পতিবার বিকেলে আশাশুনির বালির মাঠে আয়োজিত সংবর্ধনা সভায় অংশগ্রহণ করেন তিনি।

মনোনয়নের বিষয়ে কাজী আলাউদ্দীন বলেন, ‘আমি সকল সময়ে জনগণের পাশে ছিলাম। বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের সময়ে হামলা-মামলায় জর্জরিত ছিলাম। তবুও জনগণ থেকে আমাকে বিচ্ছিন্ন করা যায়নি।’ বিভেদ ভুলে দল যাকে মনোনীত করবে, তাঁর পক্ষে সবাইকে কাজ করার অনুরোধ আলাউদ্দীনের।

সাতক্ষীরা-৪ (শ্যামনগর) আসনটি একটি উপজেলা নিয়ে গঠিত। বিগত নির্বাচনগুলোতে এ আসনে বিএনপি তাদের শক্তিমত্তা দেখাতে পারেনি। তবে এবার বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছেন নতুন মুখ লন্ডনপ্রবাসী ড. মনিরুজ্জামান মনির। তিনি জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। অপর দিকে জামায়াতের গাজী নজরুল ইসলাম সাবেক দুবারের সংসদ সদস্য হওয়ায় এ আসনে তাঁর নিজস্ব একটি ভোটব্যাংক রয়েছে।

মনিরুজ্জামান বলেন, ‘সংসদ নির্বাচনে আমি হয়তো নতুন মুখ। তবে পাঁচ বছর ধরে আমি শ্যামনগরের আপামর জনগণের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছি।’

সার্বিক বিষয়ে জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি আব্দুল আজিজ বলেন, ‘২০০১ সালে সাতক্ষীরা থেকে চারটি আসন পেয়েছিল জামায়াত। আমরা এবারও সবকটি আসনে বিজয়ী হওয়ার আশা করছি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

রাজধানীতে অপরাধ: ১৪ ভাগ করে মিরপুর নিয়ন্ত্রণ করছে চার শীর্ষ সন্ত্রাসী

ওসমান হাদিকে হত্যাচেষ্টায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেলের মালিক আটক

উত্তরায় জুলাই রেভেলসের দুই সদস্যকে কুপিয়ে জখম

নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র চলছে: তিন দলের সঙ্গে বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা

আজকের রাশিফল: প্রাক্তন ফোন করবে ও পুরোনো পাওনা টাকার কথা স্মরণ হবে, তবে পরিণতি একই

এলাকার খবর
Loading...