Ajker Patrika

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ময়লার ভাগাড়, এক মাসেও আসেনি পৌরসভার গাড়ি

প্রতিনিধি, চুয়াডাঙ্গা
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ময়লার ভাগাড়, এক মাসেও আসেনি পৌরসভার গাড়ি

প্রতিদিনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে বিপাকে পড়েছে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। বর্জ্য ব্যবস্থাপনা না থাকায় হাসপাতালের জরুরি বিভাগ থেকে বিভিন্ন ওয়ার্ডে রোগী নেওয়ার একমাত্র পথটি এখন চলাচলের অনুপযুক্ত হয়ে পড়েছে। জরুরি বিভাগ থেকে অন্তবিভাগে চিকিৎসকদেরও যেতে হয় নাকে রুমাল ঠেসে। হাসপাতাল থেকে চুয়াডাঙ্গা পৌরসভা হঠাৎ করেই বর্জ্য অপসারণ বন্ধ করায় হাসপাতাল চত্বরসহ পুরো এলাকা এখন দুর্গন্ধময়। এ ছাড়া হাসপাতাল প্রাঙ্গণও ময়লা-আবর্জনার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে।

জানা যায়, করোনা রোগী ব্যতীত কাগজে-কলমে হাসপাতালটি ১০০ শয্যার হলেও এখানে প্রতিদিন ১ হাজারের বেশি রোগী চিকিৎসাসেবা নিয়ে থাকে। এ ছাড়া হাসপাতালের অন্তবিভাগে ভর্তি থাকে ২০০ এর অধিক রোগী। এই হাসপাতালে গড়ে প্রতিদিন এক থেকে দুই মণ বর্জ্যের সৃষ্টি হয়। হাসপাতালটিতে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কোনো জনবল, যন্ত্রপাতি বা সুষ্ঠু কোনো ব্যবস্থা না থাকায় গত কয়েক মাস যাবৎ বিপাকে রয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তবে এর আগে চুয়াডাঙ্গা পৌরসভা পক্ষ থেকে পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের দিয়ে হাসপাতালের বর্জ্য অপসারণ করা হতো। বর্তমান পৌর মেয়র জাহাঙ্গীর আলম মালিক খোকন দায়িত্বভার নেওয়ার পর থেকে যেটা পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে। গত কয়েক মাস বর্জ্য নিষ্কাশনে পৌরসভা থেকে একটি ভ্যান গাড়িও সদর হাসপাতালে আসেনি। ফলে হাসপাতালের প্রতিদিনের বর্জ্য জমে এখন স্তূপে পরিণত হয়েছে। 

হাসপাতালের মহিলা মেডিসিন বিভাগে চিকিৎসাধীন সালমা বেগম নামে এক রোগীর স্বজন বলেন, আমার শাশুড়ি স্ট্রোক করলে তাঁকে প্রথমে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে আসি। চিকিৎসক তাঁকে মেডিসিন বিভাগে ভর্তি রাখেন। জরুরি বিভাগ থেকে মেডিসিন বিভাগে শাশুড়িকে নিয়ে যাওয়ার সময় দেখি ওয়ার্ড বয় ট্রলি ঠেলে আবর্জনার স্তূপের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। এইদিকে কোথায় যাচ্ছে জানতে চাইলে সে বলে ওয়ার্ডে যাওয়ার রাস্তা এটাই। উপায় না পেয়ে বর্জ্যের মধ্য দিয়েই ওয়ার্ডে এসেছি। শুধু তাই নয়, ২৪ ঘণ্টায় ওয়ার্ডের মধ্যে বর্জ্য স্তূপের দুর্গন্ধ আসে। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের এক চিকিৎসক বলেন, জরুরি বিভাগে ডিউটি থাকলে মাঝে মধ্যেই হাসপাতালের বর্জ্য স্তূপের কারণে সমস্যায় পড়তে হয়। ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন কোনো রোগী মুমূর্ষু হয়ে পড়লে দ্রুত রোগীদের কাছে যেতে হয়। কিন্তু জরুরি বিভাগ থেকে হাসপাতালে ওয়ার্ডে যাওয়ার পথটি বর্জ্য স্তূপে পরিণত হয়েছে। হাসপাতালের প্রধান ফটক দিয়ে ওয়ার্ডে যেতে হলে অনেক ঘুরতে হয়। তাই বাধ্য হয়ে নাকমুখ চেপে ধরে বর্জ্য স্তূপের মধ্য দিয়েই ওয়ার্ডে যেতে হয়। 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডা. এ এস এম ফাতেহ আকরাম বলেন, হাসপাতালের চিকিৎসা বর্জ্য বা ডিসপোজিবল বর্জ্যগুলো হাসপাতালের মধ্যে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু হাসপাতালের রোগী ও স্বজনদের আনুষঙ্গিক অন্যান্য যে বর্জ্য সৃষ্টি হয় তা পৌরসভা থেকে আগে নিয়মিত অপসারণ করে আসছিল। তবে গত এক মাসের মধ্যে পৌরসভার একটি গাড়িও হাসপাতালের বর্জ্য নিতে না আসায় বর্জ্য স্তূপে পরিণত হয়েছে। 

চিকিৎসক আরও বলেন, আমরা নিয়মিত পৌরসভা কর্তৃপক্ষকে এ বিষয়ে জানিয়ে আসছি। কিন্তু বিভিন্ন সমস্যা দেখিয়ে এই বর্জ্যগুলো অপসারণ করা হচ্ছে না। 

চুয়াডাঙ্গা পৌর মেয়র জাহাঙ্গীর আলম মালিক খোকন বলেন, পৌরসভার ময়লার গাড়ি নিয়মিত হাসপাতালের বর্জ্য অপসারণ করে আসছে। শহরের বিভিন্ন স্থানের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মীরা আটক থাকে। তাই কয়েক দিন যাবৎ হাসপাতালের বর্জ্য অপসারণ করা হয়নি। বিষয়টি জানার পরেই দ্রুত হাসপাতালের বর্জ্য অপসারণের জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগকে নির্দেশ দিয়েছি। আশা করছি দ্রুতই পৌরসভার গাড়ি গিয়ে বর্জ্যগুলো অপসারণ করে নেবে। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত